শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #1 st Part

#এক_মুঠো_ভালোবাসা

Bangla islamnic Story 


মাত্রই শ্বশুর বাড়িতে এসেছি, হঠাৎ করে মেসেঞ্জারে মেসেজ। দেখতে পাচ্ছি না নতুন বউ, চারদিকে মেহেমান, নতুন বউ মোবাইল হাতে ব্যপারটা ভালো দেখায় না। তারউপর যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে মানে আমার হাজবেন্ড, তিনি আমার পাশে নেই।
একটু সুযোগ পেয়েছি, দেখে নিলাম মেসেজটা,
"তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, গাঢ় মেরুন রঙয়ের শাড়িতে তো তোমাকে দারুণ লাগে"
আমি তো অবাক, ইনি কীভাবে আমাকে দেখতে পেলো। চারদিকে দেখতে লাগলাম, না তেমন কাউকেই দেখতে পেলাম না।
আমি মেসেজটা দেখে মোবাইল বন্ধ করে দিলাম, কোন রিপ্লে দিইনি। জিজ্ঞাস করার প্রয়োজনও মনে করিনি। 

কখনো দিইনি।
বিয়ে বাড়ির কোলাহল ভালো লাগছে না, অনেক ক্লান্ত। কখন একটু বিশ্রাম নিব সেই চিন্তায় বিভোর। হঠাৎ আবার মেসেজ,
" চেহারা এমন মলিন দেখাচ্ছে কেন?"
কী আশ্চর্য, ইনি কী আমার বরের পরিচিত কেউ? আমি আঁৎকে উঠলাম! যদি বরের পরিচিত হয়, অনেক বড় ঝামেলায় পড়ে যাবো।
যখন যে পরিস্থিতি আসবে দেখা যাবে। শুধু শুধু ফালতু চিন্তা করে মেজাজ খারাপ করার কোন মানে হয় না।
ফাইনালি সেই ক্ষণ টা আসলো, সবাই আমাদের একা করে দিয়ে চলে গেলো। ওহ হ্যা বলা হয়নি, আমার বরের নাম ইয়াসির। সে বললো,
: তুমি তো আধুনিক মানসিকতার মেয়ে, আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে কীভাবে? যদিও হিজাব পরো। কিন্তু তা প্রপার পর্দা হয় না।
--তাই নাকি? তো শুনি কীভাবে প্রপার পর্দা করে? আপনিই বা আমাকে বিয়ে করতে রাজী হলেন কেন? আপনি চাইলেই বিয়ে না করতে পারতেন! আপনি দাঁড়িওয়ালা হুজুর হয়ে একজন আধুনিক মানসিকতার স্মার্ট মেয়েকে বিয়ে করতে রাজী হলেন কেন?
: সেটা তো তুমি জানোই,
-- না আমি জানি না, আমাকে জানানো হয়নি।
: তাহলে তোমার আব্বু থেকেই জেনে নিও।
--জানার দরকার নেই। জানতে চাই না। আরেকটি কথা কখনো আমার কাছেও আসার চেষ্টা করবেন না। আমাকে ছুঁয়ে দেখারও চেষ্টা করলে অনেক বড় অসুবিধা হয়ে যাবে।
: যাক বাবা, আমি আমার বিয়ে করা বউকে ছুঁতেও পারবো না। এ কেমন শাস্তি!!
-- হ্যা ছুঁতে পারবেন না। আপনি ফ্লোরে ঘুমাবেন আর আমি খাটে। খবরদার খাটে একদম আসবেন না!!
:: সকালে হালকা ঠান্ডা পরে তো। হেমন্তের লাস্টে ভালই শীত পরে, কতদিন এভাবে ফ্লোরে ঘুমাতে হবে। কয়দিন পরে ঠান্ডায় জমে যাবো।
এতক্ষণ এত কথা বলতেছি কিন্তু একবারও ইয়াসিরের দিকে তাকায়নি, এমনকি লোকটা কেমন সেটাও জানি না। মনে হলো একটু দেখি, সে দেখতে কেমন!! পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।
মন্দ নয়, চাপ দাঁড়ি, জোড়া ভ্রু, চওড়া বুক, উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণ, হাসিটাও চমৎকার। কিন্তু দাঁড়িটা না হলে খুবই ভালো হতো। আবার প্যান্টটাও পরেছে কেমন ক্ষেত মার্কা টাকনুর উপর।
সে আমার দিকে তাকানোর সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।
আমাকে তার দিকে তাকাতে দেখে বললো,
: ক্ষুধা পেয়েছে? সারাদিন মনে হয় রাগে কিছুই খাওনি। কিছু খাবে? একটু পরে অবশ্য রাতের খাবার খেতে নীচে নামতে হবে।
-- না আমি কিচ্ছু খাব না, আমার ক্ষুধা নেই।
: আচ্ছা তাহলে, আমি এশার নামাজটা পড়ে নিই, তুমিও কাপড় চেঞ্জ করে অযু করে আসো।
আমি কাপড় চেঞ্জ করেছি, কিন্তু অযু করিনি। মুখ হাত ধুয়ে ফেলেছি।
তারপর বিছানায় আধশোয়া হয়ে প্রিয় লেখকের গল্প পড়তে লাগলাম।
মোবাইলটা এমন হয়ে গেছে, যেন মোবাইল ছাড়া চলেই না।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার প্রিয় লেখকের আইডি থেকে ঘুরে আসি, সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল হাতে নিই।
যদিও বা তিনি ধর্মীয় গল্প লেখেন, আমি আধুনিক হলেও উনার গল্পগুলো আমাকে বেশ টানে। বেশ ভাল লাগে! উনার অসাধারণ আল্লাহ প্রদত্ত লিখনি।
গল্প পড়া শেষ না হতেই ইয়াসির মানে আমার স্বামী বললো,
:চল ভাত খেয়ে আসি। মাঝরাতে ক্ষুদা লাগবে কিন্তু।
--না আমি খাব না। নীচেও যাব না।
: লুকিয়ে নিয়ে আসবো?
-- না নিয়ে আসতে হবে না, আমার হাত পা সবই আছে।
: ঠিক আছে তাহলে, আমি খেতে যাচ্ছি।
আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে গল্প পড়ায় মনযোগ দিলাম।
তিনি এসে ফ্লোরে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়লেন। কেউ একবার ভাত খেতে ডাকতেও আসেনি। জানি না সে নীচে গিয়ে সবাইকে কী বলেছে?

আমিও শুয়ে পড়লাম, কিন্তু ঘুম আসছে না। এত তাড়াতাড়ি কী ঘুম আসে? এই বাড়ির মানুষগুলোও কেমন জানি, ১১ টা বাজার আগেই পুরো বাড়ি মৃত্যুপুরীতে পরিণত। অবশ্য শহরের বাহিরের দিকেই বাড়িটা। কিছুটা গ্রাম গ্রাম ভাবও আছে। শুনেছি আমার বরের বাবা মা গ্রামেই থাকে। গ্রামে বিশাল সম্পদের দেখাশুনা করে। এখানে শুধু ইনিই থাকেন একজন কাজের মানুষসহ। আমার মাথায় আসে না পুরুষ মানুষ কী কাজ করবে!!! অবশ্য ইনার বাবা মা মাঝেমাঝে এসে কিছুদিন থেকে যান।
সারাদিন কী কী হয়েছে আমার সাথে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ক্ষুধা লেগে উঠলো। কিন্তু কী করবো? নতুন বাড়ি, নতুন বউ , কোথায় কী আছে জানি না। কী খাব? এত রাতে নীচে কীভাবে যাই, নীচে গেলেই কে কী বলবে, যদি কেউ দেখে ফেলে।
একবার কী ইয়াসিরকে ডাকবো? না না ডাকবো না উনি তো খেতে বলেছিলেন, আমিই খায়নি আবার উনাকে কীভাবে ডাকবো। আমারও না এত ক্ষুদা লাগে?
আস্তে আস্তে উনার পাশে গেলাম,


--এই যে শুনছেন? শুনুন? শুনুন না!
উফফ বিরক্তিকর এতবার ডাকার পরও কেউ কীভাবে এত এত ঘুমায়।
অনেক ডাকাডাকির পর অবশেষে উনি।চোখ তুলে তাকালেন,
: কী হয়েছে?
-- না মানে ঘুম আসছে না, ভালো লাগছে না। বই হবে?
: কী ধরণের বই?
--থ্রিলার টাইপের।
উনি অন্য রুম থেকে "সাইমুম ১ " নামে একটা বই এনে দিলেন। বইটা দিয়েই উনি আবার ঘুমাতে চলে যাচ্ছেন।
ক্ষুধার কথা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। উনি আবার নাক ডাকা শুরু করলেন। মোটা মানুষেরাই নাক ডাকে, ইনার ওয়েট তেমন নয় তাও নাক ডাকে? আমি আবার ডাকতে গেলাম,
--শুনছেন, এই যে শুনুন!
উফ! উঠে না। একটু আধো আধো চোখ খুলেই বললো,
: আবার কী হলো?
-- শার্লক হোমস আছে?
: হু
শার্লক হোমস এনে দিলো। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি,
: কিছু বলবে?
-- না মানে?
: ক্ষুদা লেগেছে?
যাক বাবা, কীভাবে যেন বুঝে গেলো! নীচের দিকে তাকিয়েই বললাম,
-- হুম,
: আস, নীচে যাই।
নীচে গিয়ে, আমি ডাইনিংয়ে বসে আছি, উনি ফ্রিজ থেকে খাবার নিয়ে ওভেনে গরম করে নিয়ে আসলেন, আর আমি গপাগপ খেয়ে যাচ্ছি।
লক্ষ্য করলাম উনি তৃপ্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বললাম,
"ইনি ধার্মিক হলেও ভালো মানুষ, কেয়ারিং। কিন্তু শুনেছি দাঁড়িওয়ালা হুজুরেরা ভালো হয় না। হয়তো ভালো মানুষের অভিনয় করছে, আমাকে পাওয়ার জন্য"
যাই হউক, এভাবে তাকিয়ে থাকলে কীভাবে খাব? বললাম
-- এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনি খাবেন?
: তুমি তো জিজ্ঞাসই করনি আমি খেয়েছি কি না?
-- জিজ্ঞাস করার কী আছে, আপনি তো খাওয়ার জন্যই নীচে এসেছিলেন।
তিনি কিছু না বলেই মুখটা মলিন করে চুপ হয়ে থাকলেন। কেন জানি না খুব মায়া হলো, বললাম,
--খাননি?
এবারও কিছু বললেন না,
-- আসুন আপনিও খেয়ে নিন!
এবার উনি সহাস্যে প্লেটে খাবার নিলেন, বুঝতে পারলাম সত্যিই উনি খাননি।
-- খাননি কেন?
: আমার মিষ্টি বউটাকে রেখে কীভাবে খাই?!
--খবরদার আমাকে বউ বলবেন না।
: তো বউকে বউ না বলে কী বলবো?
আমি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে উপরে চলে আসলাম।
চলবে,
#১ম_পর্ব
লেখা: Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: