শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #২য়_পর্ব

#এক_মুঠো_ভালোবাসা#২য়_পর্ব

..বিয়ের রাতেই আবার মেসেজ,
" এত রাত পর্যন্ত জেগে আছ কেন? ঘুমিয়ে পড়। শরীর খারাপ হবে!! সারাদিন মোবাইলে কী কর"
আজীব আমি তো প্রতিদিনই রাত জাগি, এই বেটা বোধহয় দেখেই না। ইচ্ছে হচ্ছিলো কঠোর করে রিপ্লে দিতে কিন্তু বরাবরের মতই রিপ্লে না দিয়ে নিউজফীডে চোখ বুলাচ্ছি। আমার বিবাহিত জীবনে আগুন লাগাতে চাই। বিবাহিত জীবন!! আরে কীসের বিবাহিত জীবন যে বিয়ে আমার ইচ্ছাতেই হয়নি সেখানে আবার কীসের বিবাহিত জীবন!! কিন্তু যাই হউক বিয়ে যখন হয়ে গেছে আমি তো এখন কারো ঘরের বউ।
আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছি, নিজের মনেই কী সব বিড়বিড় করে যাচ্ছি!!
কিছুক্ষণ পর সে নীচে থেকে আসলো, বললো,
: তুমি এখনো মোবাইল হাতে বসে আছ? ঘুমিয়ে পড়নি কেন?
--আমি ঘুমালেই আপনার কী? না ঘুমালেই বা কী?

: আজানের আর বেশি বাকি নেই, মা বাবা ফজরের আজানের সাথেই ঘুম থেকে উঠে যায়।
-- তো উনারা উঠলে আমি কী করবো?
: অন্তত মা বাবা যতদিন আছে প্লীজ ভোরে উঠার চেষ্টা করো। উনারা খুশি হবেন।
বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো, কিন্তু আমার তো এত ভোরে উঠার অভ্যাস নেই। বরং সারারাত জেগে ভোররাতেই আমি ঘুমাই। কিন্তু আমার বরের আকুতি ভরা কথাটা কেন জানি মানতে ইচ্ছে হলো। ঘুমাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। ভোর রাতের দিকে ওয়াসরুম থেকে আসার সময় লক্ষ্য করলাম ইয়াসির হাত পা সব এক জায়গায় করে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে, বুঝতে পারলাম, ঠান্ডা লাগছে। তার চেহারায় খুব মায়া বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মায়া হলো তাকে দেখে, বিছানায় চাদর ছিলো, একটা চাদর নিয়ে তার গায়ের উপর জড়িয়ে দিলাম।
আমি আবার এসে শুয়ে পড়েছি, ইয়াসিরকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম চলে আসলো বুঝতেই পারিনি। জানালা দিয়ে আলো এসে ডাইরেক্ট আমার চোখে এসে পড়লো। হঠাৎ ঘুম ভেঙেই, খুব বিরক্ত লাগলো। উফফ! এই বাড়ির লোকগুলো জানালার পর্দাও টেনে দেয় না। কেমন জানি আদ্ভুদ!!
ওর বিছানার দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম সে নেই। এতো ভোরে এখনো সূর্যও উঠেনি সে কোথায় গেলো। তাকে না দেখে শুয়া থেকে উঠে গিয়ে দরজার দিকে এগুতেই উনি রুমে ঢুকলেন, মাথায় সাদা টুপি, শুভ্র পাঞ্জাবী।
আহ! এতো মায়া লাগছিলো, এত নিস্পাপ চেহারা। বুঝতে পারছি মসজিদে গেছে তাও জিজ্ঞাস করলাম,
-- কোথায় গিয়েছেন?

: কেন মসজিদে! আমাকে মিস করছিলে বুঝি! আসলে আমি এমনই যে একবার আমার সাথে কথা বলবে সে আমাকে মিস করবেই। তুমি তো পুরো একটি রাত আমার সাথে একই রুমে ছিলে।
নিজেকে কী মনে করে আল্লাহই জানে, নিজেকে নায়ক ভাবে। আরে এই চেহারা আর দাঁড়ি নিয়ে নায়ক! হেসে দিলাম। বললাম,
--উফ! বাজে কথা বলবেন না। আপনাকে কেন মিস করবো। বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।
: মিথ্যা কথা, তুমি আমাকেই খোঁজছিলে, এখনো ফ্রেশ হওনি, সুতরাং ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হবে আর কী।
-- না না, ফ্রেশ হয়ে কী করবো?
: ফ্রেশ হয়ে আমাকে নাস্তা খাইয়ে দিবে।
--কী! কী বলেন এসব!


: হুম, আচ্ছা আগে ফ্রেশ তো হয়ে নাও।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে লক্ষ্য করলাম উনি নেই, আমি কী করবো ভেবে ভেবে রুমের দিকে যাচ্ছিলাম। আজ খুব কড়া লাল রঙয়ের একটা শাড়ি পড়েছি। নীচে গিয়ে দেখলাম, সে সোফায় বসে আছে। শাশুড়ি মা কীচেনে, আমি তার সামনে গিয়ে বললাম,
--কীচেনে যাই?
সে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
: সেটাও আমার কাছে জিজ্ঞাস করতে হবে? দেখেছ, তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আসলে তুমি আমার সাথে কথা বলতে এসেছ, না? না?
আমি কোন উত্তর না দিয়েই কীচেনে চলে গেলাম। শাশুড়ি মা সাথে সাথেই চিল্লাই উঠলো,
;; ওমা নতুন বউ এখনো একদিনও হয়নি, রাইনতে চইলা আইছ? ও বউ যাও যাও, আমার পোলার লগে বস।
উফ! বিরক্তিকর আবার উনার পাশে গিয়ে বসতে হবে, আর উনি নিজেকে হিরু মনে করা শুরু করে দিবেন। তাও গিয়ে উনার অপজিট চেয়ারে বসলাম। উনার দিকে না তাকিয়ে আবার মোবাইল হাতে নিলাম, আবার মেসেজ,
"কী খবর? কী করতেছ?"
আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বো। এই পোলা আমারে জ্বালাইয়া ছাড়লো। কিন্তু এটা পোলা? কী মাইয়া? কে জানে। "নীলক্ষেত " আইডির নাম। এর আগে যেটা ব্লক করছি সেটা ছিলো, "গৌধুলি লগন" এর আগেরটা ছিলো "শ্যামল ছায়া"। ছেলেই হবে কোন মেয়ে কেন কোন মেয়েকে এভাবে জ্বালাতন করবে!?
আবার ব্লক দিবো, দেখি কয়টা আইডি খুলতে পারে? যতটা থেকেই মেসেজ দিবে সবগুলাকেই ব্লক দিবো। ব্লক করার আগে আইডি থেকে ঘুরে আসলাম, কিছুক্ষণ আগে পোস্ট করছে একটি স্টেটাসে চোখ আটকে গেলো,
"লাল রঙ আমার খুব প্রিয় ছিলো, আমি ছেলে হয়েও লাল পাঞ্জাবী পড়তাম। সবসময় ভাবতাম আমার স্ত্রীকেও সবসময় লাল রঙের জামাই পড়াবো, সেটা শাড়ি হউক বা থ্রি পিস। কিন্তু যখন থেকেই জেনেছি আমার প্রিয় নবী (স:) লাল রং অপছন্দ করতেন তখন থেকেই লাল জামা পড়া ছেড়ে দিয়েছি। প্রিয় নবী (স:) এর সবুজ রঙ পছন্দ তখন থেকেই সবুজ রং হয়ে উঠলো আমার প্রিয়"
কী অদ্ভুদ! মনে হচ্ছে কথা গুলো আমাকেই বলা হচ্ছে। আমিও কড়া লাল শাড়ি পড়ে আছি। খুব আনইজি লাগছিলো, যদিও এত বেশি ধর্ম মানি না। ডেইলি ৩/৪ ওয়াক্ত নামাজও ঠিকমতো পড়া হয় না। কিন্তু তাই বলে প্রিয় নবী (স:) কে মানি না তা নয়। নবিজীর প্রতি একটা ঠান ফীল করি, হয়তো মুসলমান হিসেবেই এই আবেগ!
আইডিটাকে ব্লক করতে গিয়েও ব্লক করলাম না!! কিন্তু খুব অস্বস্তি লাগছে, এই শাড়িটা না খুলা পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না।
সোফা থেকে উঠে রুমে চলে আসলাম। শাড়িটা চেঞ্জ করে নীচে নামতেছি, আবার টুং করে মেসেজ,
" তুমি তো বেশ ভালো মেয়ে, আমার কল্পনায়ও ছিলো না, তুমি এতো ভালো"
কেন আমাকে ভালো বললো, আমি কী এমন ভালো কাজ করলাম?! হঠাৎ আমার সন্দেহ হলো, এই "নীলক্ষেত" এর মালিক ইয়াসির নয় তো? উনার দিকে ভালো করে থাকালাম, না উনার হাতে মোবাইল নেই?
উনি মন দিয়ে হাতে কী যেন একটা বই পড়তেছেন। এখান থেকে বুঝতে পারছি না কী বই, কাছে গিয়ে দেখলাম, "ফেলুদা"!
ওমা আমি অবাক! উনিও রহস্য গল্প ভালোবাসেন? এসব তো আমার পছন্দের বই! ধ্যাত! এখনো পর্যন্ত উনার বুক শেলফটাই দেখলাম না। কী কী বই আছে? তবে বেশ ভালোই লাগছে আমিও বইপোকা, উনিও! টাইম পাস করার প্রচুর উপাদান মওজুদ আছে।
কিন্তু যতই বইয়ে মনযোগী হউক, আমার উনার প্রতি সন্দেহ টা গেলো না। কিন্তু আমি জানতে চাই মেসেজ দানকারী উনিই কি না। হুম উনি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা। যেদিন উনার সাথে আক্বদ হলো, সেদিন থেকেই এইসব মেসেজিং শুরু হয়েছিলো।
আমি সোজা উনার পাশে গিয়ে উনার হাতটা ধরে উপরের দিকে মানে রুমের দিকে রওয়ানা দিলাম।
: আরে কী হলো? হাত ধরে টানতে হচ্ছে কেন? আমাকে বললেই তো আমি যাচ্ছি। হু, হু, বুঝতে পারছি আমার হাত ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে। রুমে গিয়ে কী করবে? বল না।
--চুপচাপ রুমে চলুন কোন কথা বলবেন না।
: কথা বললে বুঝি কেউ শুনে ফেলবে? ঠিক আছে, ঠিক আছে আপনার যাই ইচ্ছা তাই করবেন!!
অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে একবার তার দিকে তাকিয়েই হাটা দিলাম।
চলবে,,
লেখা : Nilofa Nilo( উম্মে জাবির)
বিশেষ দ্রষ্টব্য : পুরুষদের জন‍্য লাল রংয়ের পোশাক
পরা নিষিদ্ধ, এ ব‍্যপারে মহিলাদের বাধ‍্যবাধকতা নেই। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে এমনটিই বলেছেন)

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: