শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #৩য়_পর্ব

#এক_মুঠো_ভালোবাসা#৩য়_পর্ব


বেড রুমে এসে বললাম,--আপনার মোবাইল কোথায়?: মানে? আমার মোবাইল দিয়ে কী করবে? -- কথা ঘুরাববেন না, মোবাইল কোথায় বলুন?: ওই যে দেখুন, নীচে নামার সময় চার্জে দিয়ে গিয়েছি।চার্জে, তার মানে মোবাইল হাতে ছিলো না। তাহলে? এখন ইয়াসিরকে কি বলবো? কেন মোবাইল খোঁজছিলাম জিজ্ঞাস করলে কী বলবো!!? তাকে সন্দেহ হলো মোবাইল তার হাতেই ছিলো না!!
এইসব ভাবতে ভাবতেই সে বললো,
: হু বুঝতে পেরেছি আমাকে পছন্দ হওয়ার সাথে সাথে আমার সব জিনিসকেই ভালোবেসে ফেলেছ, না? এইজন্যই তো আমার মোবাইল চাচ্ছ। হি হি হি
--বিরক্তিকর হাসি, আমি টেনশনে মরে যাচ্ছি আর ইনি হেসে যাচ্ছেন। আমার মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছে তাই আপনার মোবাইল খোঁজছিলাম।


: জানি, জানি, আমার হাত ধরে, আমার সাথে একা রুমে আসতে ইচ্ছে হচ্ছে, না না? তাই তো আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছ। সেটা আমাকে বললেই হলো আমি কোলে করে নিয়ে আসতাম।
--খবরদার একদম ফাজলামি করবেন না।
উনার সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে শাশুড়ি মা নাস্তা করার জন্য ডাকতে পাঠালেন।
--আপনার সাথে পরে কথা হবে, এখন নীচে চলুন।
নাস্তা করার আগে খালি পেটে কুসুম গরম পানিত আমার লেবু পানি, জিরা পানি খাওয়ার অভ্যাস। লেবু পানি কীচেন থেকে নিয়ে এসে, খাওয়ার আগেই হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে যায়। আমি লক্ষ্য করিনি, বুয়া যখন পানি আনছিলো পানি থেকে ধোয়া উঠছিলো। পানি গরম ছিলো। এই আকস্মিকতায় খুব লজ্জা পেয়ে যাই। তাড়াহুড়ো করে ভাঙা গ্লাস নিতে গিয়ে হাত কেটে যায়। শাশুড়ি মা এসব দেখে চিল্লাই উঠে,
;;ও বউ, এ কী হলো! হাত কাইট্টা রক্ত ঝরতাছে! ও ইয়াসির এদিকে আয় তাড়াতাড়ি, বউয়ের হাত দেখ।
মায়ের চিৎকারে সে দৌড়ে চলে আসে, বাড়ির সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কী করবে? কীভাবে করবে?
ইয়াসির ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে নিজেই ড্রেসিং করে দিলো। ওমা আমি অবাক! এই খেত মার্কা হুজুরেও এত সুন্দর করে ড্রেসিং করতে পারে!! 

ড্রেসিং করতে করতেই বকে যাচ্ছে,
: গ্লাস পড়লো কীভাবে? তো পড়ছে, তাড়াহুড়া করে গ্লাস নেওয়ার কী দরকার? বাড়িতে কি লোক নেই এসব করার। হ্যা হ্যা বুঝতে পারছি, আমার হাত থেকে ড্রেসিং করানোর জন্যই তো এসব করছ! ইচ্ছে করেই হাত কেটেছ, না?


আমি রাগে গজগজ করতে করতে ওর দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে এক ফলক তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো। ইতিমধ্যে মা টেবিলে খাবার নিয়ে আসলেন। বললেন,
;;আহা, বউয়ের ডাইন হাত কাইট্টা গেছে, এহন খানা কীভাবে খাইবো। কাইল রাতেও বাপের বাড়ির লাইজ্ঞা কাইন্দা কাইন্দ খাবার খায় নাই। ও ইয়াসির, বাবজান তুই না হয় বউরে খাওয়াই দে। যা বউরে নিয়া রুমে চইলা যা আমি রহিমারে দিয়া খাওয়ন পাঠাইতাছি।
বুঝতে পারলাম এই গ্রামের মানুষগুলো খুব সহজ সরল আন্তরিক। ছেলের বউয়ের উপর শাশুড়িগিরি জিনিসটা নেই বরং মায়ের মমতাই বেশী। বেশ ভালোই লাগলো।
ইয়াসির আমাকে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছে আর এটা সেটা বলে আমাকে রাগাচ্ছে।
--আমার হাতে খেতে ইচ্ছে হচ্ছে বললেই তো হতো, মা'কে এত টেনশন দেওয়ার কী দরকার। মা এখন টেনশন করছে। নতুন বউ, বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে মেহমান আসলে কি বলবে? মনে করবে বউকে দিয়ে কাজ করিয়েছি।
: না আমার আপনার হাতের খাবার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ঠিক আছে আমি নিজেই খাব। বাম হাতে খাব তাও কারো হাতে খাব না।
বকবক করেই যাচ্ছি, করেই যাচ্ছি।
সে কিছুক্ষণ আমার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকলো, সেদিকে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই, আমি বকর বকর করেই যাচ্ছি। সে হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে বললো,
--একদম চুপ, কোন কথা বলবে না। আমি যা বলি তাই করবে। আমিই খাইয়ে দিবো।
আমি জানিতো আমার হাতেই খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। তাইতো হাত কেটে ফেলছ,হু? আমিই খাওয়াই দিব।
বলে আবার সেই অসহ্য হাসি।
যদিও ওর হাসিটা খুব মিষ্টি। হাসির দিকে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু আমাকে ক্ষেপানোর জন্য হাসিটা আমার অসহ্য লাগে।
আহ! সে খাইয়ে দিচ্ছে, আমি অপলক চোখে তার দিকে তাকিয়ে খাচ্ছি। ইশ! সে যদি হুজুর না হতো কী রোমান্টিক মুহূর্ত! সে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসবে, আমি? আমিও। ধ্যাত, কিন্তু ইনি তো হুজুর মানুষ, ইনি এত রোমান্স কীভাবে জানবেন।
আর ইনার দিকে কে তাকাচ্ছে? আমার বয়েই গেলো।
কথাটা, ভাবা শেষ হয়নি ; ইয়াসিরের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম উনি অপলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বললাম,
--এভাবে কী দেখছেন?
: তুমি যা দেখছিলে,
--মানে আমি কী দেখছিলাম?
: তুমি এভাবেইতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে। আর ভাবছিলে আমার বরটা খুব আনরোমান্টিক।
আমি অন্যমনস্ক ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, কীভাবে নিজেই বুঝতে পারিনি।
কিন্তু ইনি কীভাবে বুঝলেন, আমি এমন কিছু ভাবছিলাম।
--না না, আমি এমনটা ভুলেও ভাবিনি। আর ভাবলেও কী? হুজুরতো এমনিতেই এমন হয়। হুজুরদের মধ্যে রোমান্স নেই বললেই চলে।
: কী রোমান্স কাকে বলে দেখাবো? হুওও, হুওও বুঝতে পেরেছি আমার সাথে রোমান্স করতে মন চাচ্ছে না?
মনে মনে ভাবলাম, কী এমন রোমান্স!! এখনো জানতেই পারলাম, ইনি কী করেন?
অবশ্য কী আর করবেন!? কোন মসজিদে ইমামতি বা কোন মাদ্রাসার শিক্ষক হবেন!! বাবার টাকা আছে, এতেই চলে যায়। নয়তো ইমামতি করে আর কয় পয়সায় বা ইনকাম করবে। আমি এসব ভাবতেছি আর উনি সাইমুমের একটা পর্ব নিয়ে আসলেন "ধ্বংস টাওয়ার "
: এটা পড় ভালো লাগবে।
আবার টুং করে মেসেজ,
"এই তুমি কী খুব রাগী? রাগ করলে তোমাকে নিশ্চয় খুব মিষ্টি দেখায়। মিষ্টি মেয়েরা রাগ করলেও আরো মিষ্টি হয়ে যায়। তুমি নিশ্চয় জ্যোৎস্নার চেয়ে বেশি মিষ্টি? "
সামনে ইয়াসির আছে, মোবাইলটা বালিশের পাশে রেখে বইটা হাতে নিলাম।
সে বললো,
: আচ্ছা, মোবাইল সারাদিন কী কর? মোবাইলে কী স্পেশাল কেউ আছে?
--থাকলে আপনার কী?
সে চুপ হয়ে থাকলো, কিছু বললো না। চেয়ারে গিয়ে বসে বসে কি যেন ভাবতেছে।
আমি বইটা নিয়ে পড়তে লাগলাম।
আবার মোবাইলও হাতে নিলো। বললাম,
-- কিছু বললেন নাতো? যদি কেউ থাকে আপনার কী?
: আমার সাথে কথা না বলে পারছ না, তাই তো? এটা সেটা বলে, কথা বলতেছ?
-- বাজে কথা বলবেন না? আমার বয়েই গেছে।
এই যে মুখে তালা লাগালাম আর কিছু বলবো না, হুহ!
: ওহ বুঝেছি তো, আমি সেধে সেধে কথা বলানোর জন্য চুপ করে আছ। বুঝি বুঝি, আর কিছুই বলতে হবে না। তোমার এই স্বভাবের সাথে আমার পরিচয় আছে! মনে আছে তো, আক্বদের পরের দিন যখন আমি তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম, কী করেছিলে।
আমি তাও কিছু বললাম না। কিন্তু মনে পড়ে গেলো, সেদিন শাশুড়ি মা সহ উনি আমাদের বাসায় গিয়েছিলো। উনি রুমে বসেছিলেন; আর শাশুড়ি মা, আমি আর মা অন্য রুমে গল্প করছিলাম। শাশুড়ি মা হঠাৎ করে আমাকে নিয়ে, উনার ছেলে যে রুমে ছিলো সেখানে গিয়ে বসলেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর শাশুড়ি চলে যাচ্ছিলেন, আমিও উনার সাথে চলে আসছিলাম কিন্তু শাশুড়ি মা আমাকে বসিয়ে দিয়ে চলে আসলেন।
আমি তো দাড়িওয়ালা ছেলের সাথে বিয়েতে রাজী ছিলাম না তাই উনার দিকে একবারও না থাকিয়ে মুখ ভার করে বসে আছি। আর আমাকে দেখে সমানে মুচকি হেসে যাচ্ছিলেন, বললেন,
: সুমু তুমি অনেক সুন্দর,
--আমাকে সুমু ডাকবেন না, সুমু শুধু আমার বাবা মা'ই ডাকবে।
সে আবার হেসে দিয়ে বললো,
: তাহলে তো তুমিও বলতে পারবো না, কারণ তোমার পরিবার তোমাকে তুমি ডাকে।
--না, ডাকবেন না।
আমার হাতটা ধরে বললো,
: এই যে হাত ধরলাম, অনুমতি ছাড়া। মিষ্টিও খাওয়াবো।
আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো, বললাম,
--হু খাওয়াবেন, তবে আগে আমি খাওয়াবো।
: আমার বউয়ের তো দেখি আমাকে নিজ হাতে খাওয়াতে মন চাচ্ছে, সেটা আগে বলবে না। নাও নাও খাওয়াও।
বলে মুখটা হা করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো, এবার আমি কাটা চামচ দিয়ে মিষ্টিসহ একটা গুঁতো দিয়ে দিলাম।
উফফ! সে ব্যথায় ককিয়ে উঠছিলো। কী যে মজা লাগছিলো। আমি তার অবস্থা দেখে হেসেই যাচ্ছি, হেসেই যাচ্ছি।
সে আমার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকলো।
--কী দেখেন?
: তোমার হাসিটা খুব সুন্দর!
--আপনাকে ব্যথা দিলাম তাও হাসি সুন্দর লাগছে।
: ব্যথা ভুলে গিয়েছি মিষ্টি হাসির প্রেমে পড়ে।
তখন মজা পেলেও এখন কষ্ট লাগতেছে। কেন যে এভাবে ব্যথা দিয়েছিলাম। মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো। আমার মন খারাপ দেখে সে বললো,
: কী ওইদিনের কথা মনে পড়ে মন খারাপ, আমার জন্য। আমাকে ভালোবেসে ফেলেছ তাই না? জানতাম তো, আমাকে ভালো না বেসে পারবেই না।
--না মোঠেও না।
: মনে আছে চলে আসার সময় কী করছিলে?
--মনে থাকবে না কেন?
বলে ফিক করে হেসে দিলাম।
মনে পড়ে গেলো সেদিন চলে আসার সময়ের কথা,,,
চলবে,,,,,,,
লেখা: Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)

tag .

islamic kitab bangla
sunni bangla islamic book
all islamic books in bangla free download pdf
islamic history books in bangla free download pdf
bangla islamic website
bangla islamic book motiur rahman
bangla islamic dua book
imam ghazali bangla books pdf


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: