শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #৪র্থ_পর্ব

#এক_মুঠো_ভালোবাসা#৪র্থ_পর্ব

: তোমার হাতটা ধরবো?আমাদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে যখন সে এভাবে বললো, আমি নতুন বউ হিসেবে আমাকে চুপ করে থাকতে হচ্ছে, তাকে কিছু নিষেধ করতে পারছি না কোনমতেই। অন্য রুমে শাশুড়ি মা আছেন শুনতে পাবেন। রাগে গজগজ করতেছি।
কোন জবাব না দিয়ে চুপ হয়ে আছি। আবার ইয়াসিরই বললো,
: ওহ আচ্ছা চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ। সম্মতি দিতে লজ্জা পাচ্ছ!!
বলে সে কোনমতে হাতটা ধরলো সাথেসাথেই ছোট ভাই নাস্তা নিয়ে আসে।
: উফস, শালাবাবু একটু পরে আসলে হতো না।


আমার হাসি পাচ্ছিলো। কিন্তু আবার চুপ হয়ে থাকলাম।
: হাত তো ধরতে পারিনি, ধরবো কিন্তু!! শুধু হাত আর কিছুই না!!
আমি চোখ তুলে থাকালাম।
সে আবার হালকা করে আমার হাত নিজের হাতে নিলো আবার ছোট ভাই চা নিয়ে আসলো।
: ইশ, শালাবাবু আমি কিছু খাবো না তো। তোমার কষ্ট হচ্ছে, আমাকে নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ো না। আর কিচ্ছু এনো না প্লীজ।
সে চা খেয়ে আবার, অমনিতেই ওর মা ডাকলো,
;;ইয়াসির, বাবা চল বাসায় যাই। অনেক রাত হয়ে গেছে।
: ঠিক আছে মা।
তার অবস্থা দেখে আমার অটোমেটিক মুচকি হাসি চলে আসলো।
আমি চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিলাম, বললাম,
--হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

সে মনটা খারাপ করে,
: ধ্যাত! আজ ভাগ্যটাই খারাপ। শুধু হাতটাই তো ধরতে চেয়েছিলাম, এই এতটুকু চাওয়াও পূরণ হলো না।
আমি ঐদিনের এসব কিছু ভেবে মুচকি মুচকি হাসছিলাম। সে বললো,
: কী এখনো কী আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাও? আমাকে অপছন্দের কারণ কী শুধু দাড়ি? না আমার চলাফেরা হুজুরের মতো বলেই।
জানো? তোমার সাথে আমার বিয়েটা আল্লাহর স্পেশাল রহমতের ফসল।
বললাম,


--জানি না, তবে বিয়েটা খুব অদ্ভুদভাবে ঠিক হয়েছে। যেটা কেউ ভাবতেও পারবে না।
হঠাৎ করেই ওকে অপছন্দ হওয়ার কথা ভুলে গেলাম, বললাম,
--আপনার কথা দাদাভাই প্রায় প্রতিদিন বলতেন, মসজিদ থেকে এসেই বলতেন,
" ইয়াসির নামের ছেলেটা এতো অমায়িক, এতো ভদ্র, দ্বীনদার, প্রাণটা ভরে যায়।"
আমি কখনোই কিছু বলতাম না। কোথাকার, কোন ছেলে, দাদাভাইয়ের সাথে মসজিদে দেখা হয় আমার বলার কি আছে? আপনি কোনদিন মসজিদে না আসলেই দাদাভাই চিন্তা করতো, মাকে বলতো,
" ও বউ, ছেলেটা তো এক ওয়াক্ত নামাজও মিস করে না, আজ কেন আসলো না। ছেলেটা সুস্থ আছে তো? "
দাদাভাই খুব চিন্তিত হতো। সেইবার আপনি যখন টানা তিনদিন মসজিদে আসেননি, উনি চিন্তায় খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে কীভাবে যেন জানতে পারেন আপনি দেশের বাইরে গিয়েছিলেন।
ওর পরের বারেই তো আপনার নাম্বার নিয়ে এসেছিলেন।
আমার কথার মাঝখানেই থামিয়ে দিয়ে বললো,
: আর দাদাভাই একদিন আমাকে বললেন,
"তুমি বিয়ে করছো না কেন?
আমি মিষ্টি হেসে বললাম,
" সেটা আমার আব্বা আম্মাকে বলেন! আমার চাওয়াই কিচ্ছু হবে না।"
এমনিতেই বলেছি কিন্তু দাদাভাই যে আমার কাছে বাসার ঠিকানা নিয়ে সত্যি সত্যি আমাদের বাসায় চলে যাবে ভাবতেও পারিনি। আমরা যেহেতু একই এলাকার দাদাভাই আমাদের সম্পর্কে সব জানেন। আসা যাওয়া ছিলো না আর কী!
তোমার দাদাভাই নিজের নাতির জন্যই যে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে ভাবতেই পারিনি।
আচ্ছা, তোমার দাদাভাই হঠাৎ করে আমাকেই কেন তোমার জন্য পছন্দ করলো?
আমি একটু রাগী ভাব নিয়ে বললাম,
--সেটাই তো আমার কষ্টের কারণ। দাদাভাই জানতেন আমার কেমন ছেলে পছন্দ, খুব স্মার্ট, সুদর্শন কিন্তু নামাজী। নামাজি চেয়েছি তাই বলে দাড়িওয়ালা, আনস্মার্ট নয়।
একদিন নাকি দাদাভাই মসজিদে সালাম ফিরিয়েছেন অমনিতেই আপনার দিকে চোখ গেলো; হঠাৎ মনে হলো, এই ছেলেটাই আমার সুমাইয়ার জন্য পারফেক্ট। এই ছেলেটাই আমার অভিমানী, জিদ্দি, নরম হৃদয়ের সুমাইয়াকে সঠিকভাবে সামলাতে পারবে।
ব্যাস ঐদিনই আপনাকে বিয়ের কথা বলেছিলেন।
মনে মনে বললাম, কত যুদ্ধ করেছি বিয়েটা না করার জন্য কিন্তু বাবা, তিনি তো দাদার উপর কথা বলবেন না।
যখন একদমই রাজী হচ্ছিলাম না, শেষে দাদাই বললেন,
;; তুই আমার কথাটা রাখ, অন্তত ঠকবি না। জীবনে সুখী হবি। একদিন নিজেই বলবি, "দাদাভাই, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ এমন একটা ছেলেকে আমার জন্য চয়েস করেছ। আমি কথা দিয়েছি এর চেয়ে বড় কথা ছেলেটা সত্যি খুব ভালো। তোর জন্য এর চেয়ে যোগ্য ছেলে আর পাব না"
হুম সেদিন দাদার সম্মানের কথা ভেবেছিলাম। দাদা কথা দিয়েছেন, সেটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যপার। আমার ভাবনায় ছেদ টেনে ইয়াসির বলে উঠলেন,
: ঠিক ঠিক, দাদা ঠিকই চিনেছেন; আমি একমাত্র আমিই এই ঝাল মরিচিটাকে সামলাতে পারবো। ভালোবাসতে পারবো
এই জিদ্দিটাকে।
--কী আমি ঝাল মরিচ?
: আমি কখন তোমায় ঝাল মরিচ বললাম? তোমার নাম একবারও ধরেছি, বলো?
'বলো' শব্দটা শুনার পর কেমন জানি মায়া হচ্ছিলো, বেশ ভালো লাগছিলো। তার দুষ্টুমি গুলো আমাকে প্রতিনিয়তই মুগ্ধ করে।
আমি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছি দেখে ইয়াসির মোবাইল নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো। হঠাৎ আবার মোবাইলে মেসেজ,
" তুমি জানো? তুমি কত ভালো! তোমার ভেতরে একটা খুব নরম মন আছে যে মনটা কাউকে ভালোবাসতে পারে। গভীর ভালোবাসায় কাছে টানতে পারে। তুমি যেমন মিষ্টি তেমনি তোমার মনটাও। জানো তো? প্রতিদিনই আমি নতুন করে তোমার প্রেমে পড়ি, প্রতিদিন নতুন ভালোবাসি। কীভাবে বলবো বলো, প্রচণ্ড ভালোবাসি!! আমায় একটু ভালোবাসবে? "
মেসেজটা পড়েই রিপ্লে দিলাম, কে আপনি?
আর একটু একটু করে এগিয়ে ইয়াসিরের কাছে বেলকনিতে গেলাম। হাত থেকে মোবাইলটা একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে নিলাম। ফেইসবুকে ঢুকতেই দেখি তার আইডি "ইয়াসির বিন আহমদ"।
আমি খুব বেশি অবাক হলাম। এই "নীলক্ষেত " ইয়াসির ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারে না। তাহলে ইয়াসির হলো না কেন?
বললাম,
--কী করছিলে?
: দেখতেই তো পাচ্ছ, মোবাইল নিয়েছ কেন?
-- ১০০ বার নিবো, আপনার সবকিছতেই আমার অধিকার কারণ আপনি আমার,,,,
: হুম হুম বলো, "আপনি আমার ভালোবাসা"
--কিছুই না।
কেন জানি না দিন দিন উনার কেয়ার, উনার আমাকে নিয়ে মজা করা, আমাকে ভালোবাসা, সবকিছুই কেমন জানি ভালো লেগে যাচ্ছে। আমি কথা বলার সময় উনি কেমন জানি অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেন। বেশ লাগে!
সেদিন দেখলাম, আমি আম্মার সাথে ডাইনিং রুমে কী যেন কাজ করছিলাম, পাশাপাশি গল্পও করছিলাম আর উনি জানালা দিয়ে একমনে তাকিয়ে আছেন, জানি না ঠিক কতক্ষণ এভাবে ছিলেন। আমিও না দেখার ভান ধরে ছিলাম, খুব ভালো লাগছিলো!! কিন্তু কেন?
মাঝেমাঝে আমি বেশ অবাক হয়ে যাই উনার প্রতি এই ফীলিংস কেন?
সেদিন মায়ের বাসায় গিয়েছিলাম, মায়ের বাসা থেকে আসার সময় পুরোটা সময় উনি আমার হাতটা ধরে ছিলেন। আমি এক/ দুই বার ছাড়াতে চেষ্টা করেছি কিন্তু উনি আরো শক্ত করে ধরে থাকলেন। বললেন,
: চুপচাপ বসে থাকো,
-- না বসে থাকবো না। আমার হাত ছাড়ুন।
: একদম ছাড়বো না, হুম না ছাড়লে কী করবে? যেন আরো বেশি জড়িয়ে ধরি তাই তো হাত ছাড়িয়ে নিতে চাচ্ছ, হু, জানি তো!!
হালকা হালকা মেঘ ছিলো, হঠাৎ করে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়ে গেলো।
উফফ! প্রচণ্ড ভালোবাসি বৃষ্টিতে ভিজতে। আমি গাড়ি থামাতে বলবো এমনিতেই ইয়াসির নিজেই বললেন,
: সুমু চলো বৃষ্টিতে ভিজি!
আমি এতটাই অবাক হয়েছি কিছুক্ষণ কথা বলতে পারিনি, ইনি বৃষ্টিতে ভিজতে চাচ্ছেন; আমি ঠিক মেনে নিতে পারছি না।
যাক এতো চিন্তা করার দরকার নেই, আমি বৃষ্টিতে ভিজবো বলে নেমে গেলাম।
ভিজতে ভিজতে কখন উনার হাত ধরে বৃষ্টি বিলাস করছিলাম, বুঝতেই পারিনি।
উনি একবার হাতের দিকে, একবার আমার দিকে তাকিয় ঝুম বৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠেন।
উনাকে কী' যে ভালো লাগছিলো! এক অবাক নিষ্পাপ সোন্দর্য্য উনার চোখে, মুখে। আমাকে অপার মুগ্ধতায় উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করছিলো।
: কী দেখছ গো?
হঠাৎ চমকে উঠে,
-- কই কিছু না' তো।
: জানি তো আমাকে দেখছিলে
-- না একদম না। আচ্ছা, আপনার ফেইসবুক আইডি কয়টা?
: কেন?
--আহ যেটা বলছি সেটার উত্তর দেন,
: কেন না বললে উত্তর দিবো না, বলো বলো।
এখন এসব বাদ দাও, যা করছিলে তাই করো না প্লীজ। বাসায় গিয়ে সব কথা হবে।
চলবে,,,,,
লেখা: Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)

tag.

islamic kitab bangla
sunni bangla islamic book
all islamic books in bangla free download pdf
islamic history books in bangla free download pdf
bangla islamic website
bangla islamic book motiur rahman
bangla islamic dua book
imam ghazali bangla books pdfkolorober gojol badruzzaman kalarab kalarab tvholy tune gojolkalarab newainuddin al azad islamicbangla islamicsalam kalarabkalarab shilpi gosthi new song 2017kalarab allah allahmuhib khan 2018allah boloabu rayhan 2018holy tune recordsabu rayhan islamic songkala movieami dekhini tomayiqbal hjbangla islamic song 2017iqbal hossain jibon



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: