শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #৫ম_পর্ব

#এক_মুঠো_ভালোবাসা#৫ম_পর্ব

সেদিন দুইজনে বৃষ্টিতে ভিজে সারা রাস্তা হাঁচি শুরু হয়ে গেলো। একটু পরপরই হাঁচি। ক্লান্ত হয়ে কখন ওর কাঁধে মাথা রেখে দিলাম নিজেই বুঝতে পারিনি। ইয়াসির এক হাত দিয়ে আমার জড়িয়ে নিলো।বাসায় আসার সাথেসাথে আম্মা বলে উঠলেন,; আরে ভিজলি কেমনে তোরা? গাড়ি নিয়ে যাসনে কেন? এখন বউ য়ের ঠান্ডা লাগবে তো। কী যে করিস! ফোন দিলি না কেন? গাড়ি পাঠাইয়া দিতাম।: না না, গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম তো, কিন্তু,,

; আচ্ছা কিন্তু বাদ দে, দেখ বউয়ের ঠান্ডা লাইগা গেছে, তুই বউরে মাথা মুছে দে, কাপড় বদলাইয়া ফেল। আমি রহিমারে দিয়ে গরম পানি পাটাইতাছি। গরম বাস্পের ভাপ নিলে, হাঁচি চইলা যাইবো।
রুমে এসে ইয়াসির নিজের মাথা মুছার আগে তোয়ালে নিয়ে পরম স্নেহে আস্তে আস্তে আমার মাথা মুছে দিচ্ছে আর আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। একটা মানুষ এতটা কেয়ারিং কীভাবে হয়!? কেন জানি না, বাধা দিতে মন চাচ্ছে না। মন চাচ্ছে, আমি আরো অনেকবার ভিজি, আরো, আরো; সে আমারর চুল মুছে দিক আর আমি তার নিস্পাপ দাড়িওয়ালা সুন্দর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকি। যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ। সেও আমায় দেখুক, শুধু আমায়।
অবশ্য, সে তো শুধু আমায় দেখে; অন্য কোন মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাই না। কী অদ্ভুদ লাগছিলো, বাবার বাড়িতে নতুন জামাই গেছে তাই সব কাজিন সিস্টাররা নতুন দোলাভাইয়ের সাথে দুষ্টুমি করতে চলে আসলো। আর এই ইয়াসির, তাদের দিকে একবারও ফিরে তাকালো না! নীচের দিকে তাকিয়েই তারা যা জিজ্ঞাস করে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত তারা রাগ করেই চলে গেলো।
একসময় আমার কাজিন তাসনিকে খুব হিংসে করতাম, ক্লাসের, কলেজের সব ছেলেরা ওর জন্য পাগল ছিলো। কিন্তু কেউ আমার দিকে ফিরে তাকাতো না। এমনকি সবাই দুষ্টুমি করতো সুমুর বিয়ের সময় তাসনিকে লুকিয়ে রাখিও, বরপক্ষ সুমুকে পছন্দ না করে আবার তাসনিকে পছন্দ করে চলে যাবে। মাঝেমাঝে আমার নিজেরও ভয় হতো, যদি আমার হাজবেন্ড তাসনির রুপের প্রেমে পড়ে যায়।
কিন্তু এই ধার্মিক ইয়াসির তো তাদের দিকে একবারও ফিরে তাকালো না।
বেশ লাগছিলো, আমার ইয়াসিরকে নিয়ে আমার কোন চিন্তাই নেই।
নিজে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম, ইনি আবার আমার হলো কখন? 'আমার ইয়াসির' কথাটার মধ্যে খুব অধিকার, খুব ভালোলাগা, খুব বেশী মোহ; যা আমাকে লজ্জায় আচ্ছন্ন করে রাখছিলো।
অবশ্য দাদাভাই বলেছিলেন, সত্যিকারের দ্বীনদার ছেলেরা যথেষ্ট রোমান্টিক হয়, কারণ তারা প্রিয় নবী (স:) এর সুন্নাহ মতো নিজের বিবাহিত জীবনকে সাজায়। আর প্রিয় নবী (স:) আর স্ত্রীদের কাহিনী পড়লে তো মনটা আনন্দেই ভরে উঠে। তাদের জীবন কত রোমান্সে ভরপুর ছিলো।
হুম, হয়তো তাই।

কিন্তু যাই হউক আমি বুঝতে পারছি, ধীরেধীরে আমি উনার ভালো মানসিকতার গভীর প্রেমে দেওয়ানা হয়ে যাচ্ছি।
সে বললো,
: কী ভাবছ? আমার কারণে তোমার এভাবে ঠান্ডা লাগলো, দুঃখিতো। আসলে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসি, তুমিও সাথে আছ; সোনায় সোহাগা। তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজার লোভ সামলাতে পারিনি।
আমাকে ক্ষমা করে,,,,,

সেন্টেন্স শেষ করতে দিইনি, হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরেছি,
--ক্ষমা চাইতে হবে না। আমিও বৃষ্টি ভালোবাসি। এই মুহুর্ত গুলো আমার হৃদয়ের সিন্ধুকে চিরজীবন বন্দি থাকবে, যেন কখনো হারিয়ে না যায়।
সে কেমন পরিতৃপ্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো! তার চেহারায় এক অন্য রকম শান্তি। হয়তো জয় করার।
আমি লজ্জা পেয়ে আবার খাটে বসে পড়লাম।
: জমা করে রাখতে হবে না। এইরকম মুহূর্ত আমাদের জীবনে আরো অনেক আসবে ইন শা আল্লাহ। বরং এর চেয়ে বেশী আনন্দের মুহূর্ত আসবে। রাখার জায়গা পাবে না কিন্তু।
-- জায়গা করে নিব বলে দৌড়ে বেলকনিতে চলে গেলাম।
এদিকে রহিমা বড় বাটিতে ভরে গরম পানি নিয়ে আসলো।
; ভাইজান, আম্মাই কইলো আপনেরা দুইজনে এই বাটিতে মাথায় তইলা দিয়া গরম ভাপ নেন।
ভাবিরেও আপনের লগে একসাথে ভাপ নিতে কইলো।
: ভাবিরে গিয়ে বলো,
; ভাইজান, ভাবি শুনবার পাইছে। আপনে ডাইকা নিয়া আসেন। আমি যাই আম্মাই একলা কাজ করে।
রহিমা যাওয়ার পর, সে বললো,
: সুমু শোন,
আমি না শুনার ভান করে চুপ করে থাকছি। : এ্যাই সুমু শোন না,
সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে যখন, এ্যাই সুমু বলে ডাকে, মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ আমার পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে।
--এতো কেন ডাকছেন,
: এদিকে এসো, গরম বাস্পের ভাপ দাও হাঁচি চলে যাবে। কথাই বলতে পারছো না এই হাঁচির জন্য।
--দুইজন একসাথে? এক বাটিতে?
: এবং একই তোয়ালের নিচেও।
--না হবে না, আলাদা তোয়ালে নিয়ে করো।
: একশ বার হবে,
বলে সে আমাকে সাথে নিয়ে তোয়ালের নীচে গরম ভাপ নিতে লেগে গেলো। খুব বেশি ভালো লাগছিলো। যদি যুগ যুগান্তর এভাবে কাটিয়ে দিতে পারতাম। বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম।
সে ঔষধ নিয়ে এসে সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলো।
তার মধ্যে একটা জিনিস অবাক লাগে, সে বাসায় ঢুকে একবার সালাম দেয়, আমার রুমে এসে একবার সালাম দেয়। বাবার বাড়িতে যখন গিয়েছিলাম, তখনো ছোট বড় সবাইকে সালাম দিচ্ছিলো, অবশ্য আমার কিছুটা বিরক্তও লাগছিলো। এমনকি আমার ছোট ভাই তালহা থেকে শুনলাম, আজ পর্যন্ত তালহা নাকি ইয়াসিরকে আগে সালাম দিতে পারেনি।
আজ মোড ভালো জিজ্ঞাস করতে মন চাইলো,
--আচ্ছা, আপনি ছোট বড় সবাইকে সালাম দেন কেন? রুমে এসে আবার আমাকেও সালাম দেন কেন?
: জানো সুমু? তুমি যখন আমার প্রতি খুব বিরক্ত হতে, নিজেকে বুঝাতাম , আমি ভালোবেসে তোমার মন জয় করবো। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার, সংসারে শান্তি আসার সর্বোত্তম পন্থা হলো সালাম।
সালামের অর্থ জানো তো?
--হুম।
: এই যে এই শান্তি আসার জন্যই সালাম। আর প্রথমে সালাম প্রধানকারী অহংকার থেকে মুক্ত। আর আমি সালাম দেওয়ার পর তুমি যদি সালামের উত্তর না দাও তবে গুনাহগার হবে। মানে সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সালামের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বেড়ে যায়; যেমন আমাদের মধ্যে বেড়ে গেলো।
--আর তাই এই সংসারে এতো এতো শান্তি।
সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো, মিষ্টি, মায়াভরা হাসি দিয়ে বললো,
: আর তুমিও আমায় ভালোবেসে ফেলেছ। হ্যা?
আমি কিছুই না বলে আম্মার কাছে চলে গেলাম।
আম্মাকে সালাম দিয়ে বললাম,
--আম্মা, আজ আমি রান্না করি?
আম্মা অবাক হয়ে বললো,
;; না বউ, আর কয়দিন পরেই আমি চলে যাবো তখন আমার পোলার খেয়াল রাইখ। আমি যতদিন থাকবো কিছু করতে অইবো না। আমার বিশ্বাস তুমি, ইয়াসিরের স্বচ্ছতার রংয়ে রাঙিয়ে যাবে! কি পারবে তো মা? বলে হাত ধরে ফেললেন।
-- হুম মা, দোয়া করবেন।
;; আমি জানতাম, আল্লাহ আমার ইয়াসিরের জন্য যোগ্য জীবন সাথীই দিবেন। এই যে সালামও শুরু কইরা দিয়েছ। কিন্তু তোমার জ্বর আইতাছে, ইয়াসির এতক্ষণেও তোমার জ্বর বুঝতে পারেনি?!
যাও মা তুমি উপরে চইলা যাও।
বলে আম্মা নিজেই আমাকে নিয়ে রুমে চলে আসলেন। বললেন,
;; বাবজান, বউয়ের শরীরে জ্বর উঠছে। তুই বউরে নীচে পাটাইলি কেন?
: কই দেখি বলে, আমাকে বিছানায় শুয়ে দিলো। আম্মা নীচে চলে গেলেন।
চলবে,,,
লেখা: Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)

tag, 


islamic kitab bangla
sunni bangla islamic book
all islamic books in bangla free download pdf
islamic history books in bangla free download pdf
bangla islamic website
bangla islamic book motiur rahman
bangla islamic dua book
imam ghazali bangla books pdfkolorober gojol badruzzaman kalarab kalarab tvholy tune gojolkalarab newainuddin al azad islamicbangla islamicsalam kalarabkalarab shilpi gosthi new song 2017kalarab allah allahmuhib khan 2018allah boloabu rayhan 2018holy tune recordsabu rayhan islamic songkala movieami dekhini tomayiqbal hjbangla islamic song 2017iqbal hossain jibon



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: