শুক্রবার

#নিয়তি( পর্ব--৯) । একটি ইসলামিক গল্প

#নিয়তি( পর্ব--৯)
একটি ইসলামিক গল্প

ইমাদ অবাক হয়ে যায়।  নিশ্চুপ ভাবে নাবার মুখের দিকে চেয়ে রয়।  আমার মেয়েটি আজ অবদি মায়ের ভালোবাসা পায়নি, কিন্তু আজ সে নাজিফাকে নিজের মা মনে করছে, আমি কী করে ওকে কষ্ট দেই।  নাজিফা তো চলে যাবে,  আমি তো ওকে আটকে রাখতে পারবোনা।

-- কী হদো বাবাই তুমি কী ভাবতো???

--- কিছুনা মা,  যা তুই তোর মায়ের কাছে যা আমি আসছি।

নাবা চলে যেতেই ইমাদ রান্নায় ব্যস্ত হয়।হঠ্যাৎ তার মনে হলো আমি নাবাকে কী বলে পাঠালাম।  কথাগুলো  ভাবতেই ইমাদ মুখে হাত দিয়ে ফেলে আমি কী কোনো মায়াজালে পড়ে যাচ্ছি,  না  আমার দ্বারা এরুপ কিছু হওয়া উচিত নয়।


নাজিফা শুয়ে ভাবছিলো --- জীবনটা কত বিচিত্র,  হরেক রকমের মানুষ,  হরেক রকমের জীবন।
হঠ্যাৎ নাজিফার মনে হলো  পর্দার  আড়ালে কেউ লুকিয়ে রয়েছে।  একটু বিস্মিত হয়ে নাজিফা জিজ্ঞাসা করলো --- কে ওখানে???
নাজিফার গলার স্বরে পেয়ে ,   নওরীন ওর সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।  নওরীনকে দেখে নাজিফা মুচকি হেসে বললে --- কী হলো ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন মা???   এদিকে এসো।

নওরীন ওমনেই কান্না করে নাজিফা কে এসে  জড়িয়ে ধরে,  ---- স্যরি আমি তোমাকে ইচ্ছে করে ব্যাথা  দেয়নি।

--- খাদি আপুকে আদর কদলে হবে আমাকে কদবে না।

কথাটি শুনে নাজিফা দরজার দিকে তাকাতেই দেখে নাবা।  চোখের জলগুলো ছেড়ে বললো --- তুই ওখানে দাড়িয়ে কেন???? আয়  এদিকে। 

নাবা খিলখিল করে হাসতে--- হাসতে, নাজিফাকে এসে জড়িয়ে ধরলো।  নাজিফা ওদের দুজনকে শক্ত করে আগলে ধরে চোখের জল গুলো মুছে ভাবতে লাগলো ----- জীবনে কিছু না পেলে ও যে কদিন এই বাড়িতে আছি দুটো  ছোট বাচ্চার ভালোবাসা নিয়েই না হয় থাকবো।

। 
ইমাদ হঠ্যাৎ রুমে চলে আসে, এরুপ দৃশ্য দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে।

নওরীন কান্না মাখা কন্ঠে নাজিফাকে বলে---- বিশ্বাস করো আমি চাইনি তুমি পড়ে যাও, ফুফু আমাকে বলেছিলো  তুমি  নাকি শুধু বাবাইর জন্য পায়েস রেধেছো যা খেলে বাবাই আমাদেরকে ভুলে যাবে , তাই ফুফু আমার হাতে তেল আর কলার খোসা দিয়ে বললো --- এগুলো বাবাইর ঘরের সামনে ফেলে দিতে, আর এগুলোতে  পিছল খেয়ে তোমার হাতের থেকে পায়েসের বাটিটা পড়ে যাবে, ব্যস। আমি ও তার জন্য এমন করেছি, আমাকে মাফ করে দেও।

--- তোমার কেন মনে হলো আমি শুধু তোমার বাবাইর জন্য রান্না করেছি,  আর তাছাড়া তোমাদের বাবাই তোমাদের এতো কম ভালোবাসেন যে আমি সামান্য পায়েস খাওয়া লেই তিনি তোমাদের ভুলে যাবেন!!!!

--- স্যরি আমি আর কখনো এমন কাজ করবোনা।

ইমাদ আড়াল থেকে সব কথা শুনতে পেয়ে প্রচন্ড রেগে নিতুর ঘরে যায়।
গিয়ে দেখে নিতু বসে--- বসে গান শুনছে।  ইমাদ নিতুর হাতটা ধরে ওকে নাজিফার রুমে নিয়ে আসে।

---- কী হলো ভাইয়া তুই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস কেন???
নাজিফা ও ইমাদের এরুপ কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়,  নাবা আর নওরীন কখনোই ইমাদকে এতোটা রাগতে দেখেনি, ভয়ে দুজনে নাজিফাকে আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
----- তুই কী করেছিস তুই জানিস না???
---- ইয়ে মা,মা,মানে কী করেছি????
নিতুর হাতটা ধরে নাজিফার পায়ের সামনে নিয়ে গিয়ে ইমাদ বললো ---- যা নাজিফার পা ধরে মাফ চা।
---- ভাইয়া!!!! তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস???????  আমি কেন ওর পা ধরবো।
------ কারন তোর কারনে  ও পিছল খেয়ে পড়েছে।।।
---- মা,মা, মানে কে বলেছে তোকে এসব???



নাজিফা ও সংকোচ নিয়ে ইমাদকে বলে----- কে বলেছে আপনাকে দেখুন.........
----- চুপ থাকুন,  আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলছিনা, সো প্লিজ আপনে কথা না বললেই আমি সবথেকে খুশী হব।

নাজিফা চুপ হয়ে যায়।
----- কী হলো নিতু তোর কানে কথা যাচ্ছে না??
ইমাদ প্রচন্ড জোরে ধমক দিতেই নিতু --- কাঁপা--কাঁপা কন্ঠে নাজিফার কাছে মাফ চাইতেই নাজিফা একটু সংকোচ নিয়ে নিতুকে বলে  ---- ঠিক আছে,  বাট তুমি নিজে এই কাজটি করলে বিশ্বাস করো আমি  কিছুই  মনে করতাম না, কিন্তু তুমি একটি নয় বছরের বাচ্চাকে দিয়ে.....
আসলে কি এটা উচিত হয়েছে বলো??
  তুমি তো বড়,  তুমি ওর ফুফু তুমি যদি ওকে এসব করতে শিখাও তাহলে বড় হয়ে  ওর কি হবে তুমি বুঝতে পারছো।
নিতু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো, 
--- Next time তুই যদি নাজিফার সাথে খারাপ কিছু করেছিস তাহলে আমার চেয়ে খারাপ  আর কেউ হবেনা।
--- ভাইয়া তুমি না ওকে পছন্দ করোনা তাহলে তোমার এতো জ্বলে কেন????
---- কারন ওকে আমি পছন্দ না করলে ও.......
----- কী ও...
---- ও এ বাড়ির বউ,  ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী।

ব্যস এটুকুই বলেছেন  এতেই আমি খুশি,   আমার আর কিছু লাগবেনা বাকি টা জিবন আপনার মুখের এই কথাগুলো মনে রেখেই কাটিয়ে দিতে পারবো।  জানিনা মন থেকে বলেছেন কিনা, কিন্তু বলেছেন যে এতেই আমি খুশি ।।।।


নাজিফা ইমাদের দিকে চেয়ে মনের সাথে কথা বলতে থাকে।  এদিকে ইমাদের কথায় নিতু ভীষণ রাগ করে রুম থেকে চলে যায়। নিতু চলে যেতেই ইমাদ নাজিফাকে বললো --- আল্লাহ কে তো খুব ভালোবাসেন, যদি সত্যি আল্লাহকে ভালোবেসে থাকেন  তাহলে কখনোই  অন্যায়ের  কাছে মাথা  নিচু  করবেন না।  সেটা যত ছোট কিংবা বড় অন্যায় হোক না কেন । ঠিক আছে??.
ইমাদের কথায় নাজিফা মাথা নেড়ে হ্যা বললো। ওর এতো সুন্দর কথাটি সত্যিই নাজিফার জন্য প্রয়োজন।  আসলেই জিবনে চলার পথে আমাদের অন্যায়কে পশ্রয় দেওয়া সত্যিই উচিত নয় সেটা নিজের  অতি কাছের মানুষ করলে ও।



রাতের দিকে ইমাদ ঘরে আসতেই নাজিফা ইতস্ততভাবে ইমাদকে বলে--

-- আমি আপনাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছি তাইনা????
ইমাদ আশ্চর্য হয়ে,
---- হঠ্যাৎ এমন কথা?

---- না মানে সারাদিন আমি আপনার ঘরে আপনার বিছানার উপর শুয়ে আছি, আপনি একটু বিশ্রাম ও নিতে পারছেন না।
---- এমন করে বলার কী আছে,  এ ঘরটি তো আপনার ও কেননা আপনি আমার........
ছেলেটি চুপ হয়ে যায়,  বড্ড চাপা স্বভাবের কখনোই নিজের মনের কথাগুলো প্রকাশ করেনা,  সবগুলো মনে রেখে নিজেই একা কষ্ট পায়। 
----- আমি আপনার কী???
---- এ্যা, না কিছুনা এনিওয়ে খাবারটা খেয়ে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।  বেশি রাত জাগা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
---- আপনাকে আমি আর কয়দিনেই জ্বালাবো,  আমি সুস্থ হয়ে গেলে, সত্যিই চলে যাবো।
ইমাদ নাজিফার সামনে এসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে চেঁচিয়ে -- চেঁচিয়ে বলতে লাগলো---- কথা - কথায় এতো যাই -- যাই করেন কেন?????
আপনার ভিতরে মায়া-- ভালোবাসা কিছুই নেই,  তাইতো একজন  কে ছেড়ে চলে আসতে পেরেছেন। 
ইমাদ বুঝতে পারলোনা রাগের মাথায় সে মুখ ফসকে এমন একটা কথা বলে ফেললো । 
নাজিফা মুখে ঠুনকো হাসি নিয়ে,,,
------ ও যদি আমার সামান্য টুকু ভালোবাসা গ্রহন করতো আর ও যদি আমাকে সামান্য টুকু ভালোবাসা দিতো তাহলে বিশ্বাস করুন আমি ওকে ছেড়ে চলে  আসতাম না। 
ইমাদ অনুতপ্ত ভাবে নাজিফার দিকে চেয়ে বলে  ----  I am sorry, আসলে রাগের মাথায় মুখ ফসকে কথাগুলো বের হয়ে গেছে।।।।
---- ঠিক আছে, ব্যাপার না এসব শুনার অভ্যাস আমার আছে।
--- প্লিজ রাগ করবেন না, আমি আপনাকে হার্ট করতে চাইনি। 
--- না, না করবো কেন।
--- আচ্ছা আপনাকে একটা  প্রশ্ন করতে পারি???
--- জ্বি বলুন।
---- না মানে আসলে আপনার হ্যাজবেন্ডকে আপনি   কেন ছেড়ে দিয়েছেন তা খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

---- সিরিয়াসলি!!!!!  এইতো কয়দিন আগেই বলেছিলেন আমার অতীত সম্পর্কে জানার আপনার কোনো আগ্রহ  নেই তাহলে আজ কী এমন হলো যে জানতে চাচ্ছেন???
----আসলে আপনি বোধ হয় জানেন না  মানুষের চিন্তা-- ভাবনা মিনিটে- মিনিটে বদলায়, সেদিন যা বলেছিলাম  তখন  হয়তো আপনার সম্পর্কে আমার যে ধারনা ছিলো তা  হয়তো  এখন পুরোটাই পরিবর্তন হয়ে  গেছে ,  আপনি না বলতে চাইলে আমি জোর করবো না।It's oky...

ইমাদ চলে যেতে চাইলে নাজিফা অন্যমনস্ক হয়ে ওর হাতটা আলতো করে স্পর্শ করে,  নয়ন বেয়ে অশ্রু মাটিতে গড়িয়ে পড়ে।



ইমাদ ওর পাশে বসে। 
------ জানেন আমার না কপালটাই খারাপ তাইতো এমন একজনের সাথে বিয়ে হয়েছে যে আমাকে পণ্য করতে চেয়েছিলো।
--- মানে???
---- আসলে আমার হ্যাজবেন্ড মানে মোহন, ও কখনোই চাইতো না আমি পর্দা করি,  ও চাইতো আমি সবসময় ফ্যাশন করে ওর বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেই ,  নাইট ক্লাবে যেনো যাই , 
ওর বসের সাথে যেনো  দেখা করি মিষ্টি করে ওর বসের সাথে, কলিগ দের সাথে , বন্ধু দের সাথে যেনো  কথা বলি, হাসাহাসি করি , ফূর্তি করি,  কিন্তু  আমি ওকে কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না যে, --- আমি শুধু ওর সম্পত্তি,  এখানে কাউকে নজর  দিতে দেওয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা,  আমি ওকে বুঝাতে পারতাম না যে  আজ মরে গেলে কাল দুদিন, এ দুনিয়ার রং তামাশা সবকিছুই ক্ষণিকের।  প্রতিদিন রাতে মদ খেয়ে এসে আমায় মারতো এমন কি বিয়ের প্রথম রাতে ও নেশা করে এসে আমার গায়ে হাত তুলেছিলো  , সেদিনেই বুঝে ফেলেছিলাম মা টাকার বিনিময় এ ছেলেটির কাছে আমায় বিক্রি করে দেয়। 





বিয়ের পর সারাদিন আমার শাশুড়ি আর মোহনের অত্যাচারে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, অনেক বার ওকে বুঝিয়েছি কিন্তু ও উল্টে আমাকে হাতের কাছে যা পেতো তা দিয়ে মারতো।  আয়নার সামনে গিয়ে  যখন ওর মারের আঘাত গুলো নিয়ে দাঁড়াতাম, আয়না ও দেখতাম আমাকে উপহাস করছে ,  আমার হৃদয়টা ও আমাকে উপহাস করতো--- এই আমি শিক্ষিত ব্যক্তি,  এই আমি নিজেকে সম্মান করি,  এটাকেই যদি শিক্ষিত ব্যক্তির  নমুনা বলা  হয় তবে এই শিক্ষার থেকে মুর্খ  থাকা অনেক ভালো।  চোখের জল মুছে ফেললাম সেদিন থেকে  নিজের অধিকার নিজে আদায় করবো ভেবে নিলাম তাইতো রাতে মোহন এসে যখন  আমায় ওর বসের সাথে ফোনে কথা বলতে দেয় , আমি ঠাস করে ওকে একটা থাপ্পড় দিয়ে  দেই,  ও আমাকে সম্মান করতে পারেনা, তাই আমি ও ওকে সম্মান করতে সেদিন থেকে ভুলে গিয়েছিলাম।

চলবে
লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: