#বেটারহাফ_ফরেভার (পর্ব-০১)
ইসলামিক গল্প
কান্না করতে করতে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে সিনহার।শুধু আজ বলে কথা না।বিয়ের পর থেকে এমন কোনো রাত নেই যে ও এভাবে কাদে না।তাহাজ্জুদ নামাজ পরার সময় প্রতি রাতেই সিজদায় গিয়ে এভাবে অনবরত কাদে সিনহা।কাদতে কাদতে চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়...!!! ওদিকে ইয়াদ হাত-পা ছেড়ে দিয়ে ঘুমুচ্ছে...!!!
সিনহা প্রতি রাতেই ইয়াদকে ডাকে তাহাজ্জদ পরার জন্য।কিন্তু প্রতি রাতেই বাজে ভাষায় বকুনি দেয় ইয়াদ সিনহাকে....!!!
ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করতে মানা করার পরও নামাজ পড়ার জন্য এত ডাকাডাকি করার মানে কি....!!! যত্তসব...!!!
এটা পড়তেই হবে এমন তো না...!!! বাকি ৫ ওয়াক্ত নামাজ তো পড়েই ইয়াদ....!!!
ইয়াদের এসব কথা+বকা শুনার পর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে প্রথম কিছুদিন কাঁদত সিনহা।এখন আর কাদে না।শুনতে শুনতে যে অভ্যাস হয়ে গেছে...!!!
এইতো,,,৩-৪ মাস আগেও এমন কিছু কল্পনা করে নি সিনহা।তখন ও স্বপ্ন দেখত একটা দ্বীনদার স্বামীর।যে কিনা ওকে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ডেকে দিত...!!! ও উঠতে আলসেমি করলে ওর স্বামী ওকে আদর করে বাচ্চাদের মত ডেকে উঠাতো।
বাস্তবতা যে খুব কঠিন।আসলেই খুব কঠিন.....!!!
কল্পনার সাথে বাস্তবতার যে আকাশ-পাতাল তফাত...!!!!
সিনহা সেই ছোট থেকেই একটু ইসলামিক মাইন্ডের মেয়ে ছিল।বড় হওয়ার সাথে সাথে ইসলামের প্রতি নেশাটা বাড়তেই থাকে।স্কুল পেরিয়ে কলেজ,কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটি তে যায় সিনহা।প্রতিটি পদে পদেই ও ইসলামকে আঁকড়ে ধরে এগুতে থাকে।কিন্তু শেষ রক্ষা টা আর হয় না।
ভার্সিটি তে নতুন নতুন একটা মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়।মেয়েটি ছিল ওর মতই পর্দাশালী।যার জন্য অই মেয়েটার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার জন্য ও অস্থির হয়ে যায়..!!!
কখন মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারবে ভাবতে থাকে...।।
এক সময় কথাও বলে,,,মেয়েটির নাম জিনিয়া,,,ফেবু আইডিও নেয়....বাট,সিনহা জিনিয়ার ফেবু আইডি ভিজিট করে রিতিমত থমকে যায়...!!!
এত দেখি সব ছেলে ফ্রেন্ড...!!!
এমন পর্দা করুয়া মেয়ের ফেবু আইডিতে সব ছেলে থাকে কি করে...!!!
সিনহা বুঝতে পারে না জিনিয়ার আসল ক্যারেক্টার টা...!!! জিনিয়া আসলে কেমন মেয়ে...!!! ওর কথা বার্তায় তো বুঝা যায় যে ইসলাম বুঝে।তাহলে ও এমন কেন...!!!
সাত-পাচ না ভেবে এসব চিন্তাভাবনা অফ করে সিনহা। কিন্তু,জিনিয়ার সাথে ও যত মিশে ততই অবাক হয় ওর বিহেভে...!!!
ইসলামিক মেয়েদের বিহেভ কি আদৌ এমন হয়....!!!
সিনহা এমনিতেই শান্তশিষ্ট প্রকৃতির মেয়ে।বেশি কথা বলে না।শুধু চুপচাপ জিনিয়ার ভাব দেখে....!!!কিছু বলতে চেয়েও যেন বলতে পারে না...!!!
একদিন জিনিয়া সিনহাকে জিনিয়াদের বাসায় নিয়ে যায়।জিনিয়ার বাসায় যাওয়ার পর সিনহা জিনিয়ার ব্যবহারে আবারো একটা ধাক্কা খায়...!!!
জিনিয়া একটা ছেলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে...!!! তাও আবার বেপর্দায়...!!!
উফফফ...!!!
জিনিয়া এমন কেন...!!! ওকে সিনহা চিনতে পারতেছে না ভালোভাবে...!!!
ভিডিও কলে কথা বলার মাঝখানে জিনিয়া ক্যামেরা টা সিনহার দিকে ধরে একসময়।তখন সিনহা হিজাব পরে ছিল না।ক্যামেরা টা ধরার সাথে সাথে সিনহা নিজেকে আড়াল করে ফেলে উড়না দিয়ে।আর জিনিয়াকে বলে ক্যামেরা সরাতে।জিনিয়া ক্যামেরা সরিয়ে হাসতে হাসতে বলে যে,একটু দেখলে অসুবিধা কি..!!! আর তাছাড়া, এরা আমার অনেক ক্লোজ...।। এদের সাথে দিনরাত ভিডিও কলে কথা বলি আমি...!!!☺
সিনহা আবারো অবাক হয়....!!! ও বুঝতে পারে যে,এই মেয়ে আসলে ইসলামিক না।এরা ইসলামিক ড্রেসের অপব্যবহার করছে....!!!
মন থেকে ঘৃণা চলে আসে জিনিয়ার প্রতি।
ও জিনিয়াকে বলে যে,
সিনহা:তুমি জানো ইসলামে এসব হারাম...???
জিনিয়া:এত হালাল হারাম বেছে লাইফে চলা যায় না দোস্ত....লাইফটাকে এনজয় করতে শিখ....
সিনহা আর কোনো কথা বলল না।কথা বলার মুড নেই আর ওর......
কিছুক্ষণ পর ও ওর বাসায় চলে যায়.....
তবে,আস্তে আস্তে জিনিয়ার থেকে দূরে থাকার ট্রাই করে সিনহা।কিন্তু যতই দূরে থাকার ট্রাই করে ততই যেন ক্লোজ হতে হচ্ছে আরো...!!!
একদিন জিনিয়া সিনহাকে বলে,,,
জিনিয়া:দোস্ত,,,তোমার ফেবু আইডিতে তো দেখি মেয়ে ভর্তি।এত মেয়ে রাখো কেন...!!! তোমার ফোন টা এদিকে দাও।
সিনহা:কেন..??? কি করবে...???
জিনিয়া:আরে দোস্ত,দাও না....
জিনিয়ার মুখ থেকে এই দোস্ত টা শুনতে ইচ্ছে করে না সিনহার।তবে জিনিয়ার অভ্যাস।সব ক্লাসমেট দেরই দোস্ত বলে।নাম ধরে খুব কম ডাকে সবাইকে।বেশিরভাগ সময়ই দোস্ত বলে।সে ক্লোজ হোক আর না হোক।দোস্ত বলবেই ও....!!!
যাই হোক,,,
সিনহা ফোনটা এগিয়ে দিল জিনিয়ার দিকে।জিনিয়া ফোন টা নিয়ে ফেবু আইডিতে ঢুকে ওর পরিচিত অনেকগুলা ছেলেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিল জিনিয়া...!!!
জিনিয়া:এই নাও দোস্ত,,,কতগুলা স্মার্ট স্মার্ট ছেলেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। সবাই আমার পরিচিত । একসেপ্ট করার পর কথা বইল।ভালো লাগবে।এত হুজুরনি হওয়া ভাল না।বুঝছ...??? সবটাই ঠিক রাখা লাগে.....
চলবে ইন শা আল্লাহ......💜
পরবর্তি পর্ব লিং নিচে দেখুনঃ
0 coment rios: