শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #৬ষ্ট_পর্ব

#এক_মুঠো_ভালোবাসা#৬ষ্ট_পর্ব

সেদিন একটু একটু করে জ্বর বেড়ে যাচ্ছিলো। আমার ক্লান্তি, শরীরের অবস্থা, কী পরিমাণ জ্বর তা আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো।সেদিন রাতে,: সুমু, এই সুমু উঠো খাবার খেতে উঠো।--না আমি খাবো না, আমার নীচে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।: নীচে যেতে হবে না, মা ভাত পাঠিয়ে দিয়েছেন।উঠে বসার পর, একই প্লেটে দুইজনের জন্য খাবার নিয়ে ইয়াসির আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলো, আর নিজেও খাচ্ছে।
: ইয়াসির, এক প্লেটে নিয়েছেন কেন? দুই জনের জন্য দুই প্লেটেই নিতে পারতেন।
-- এক প্লেটে খাবার খেলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বেড়ে যায়। 


তুমি তো আমাকে ভালোবাস না। তাই এই সুযোগে এক প্লেটে খাবার খেয়ে আমার প্রতি ভালোবাসা বাড়ে কি না একটু চেষ্টায় আছি।
: আমি নিজে খাবো, আমাকে খাইয়ে দিতে হবে না। আমার লজ্জা লাগে তো, এতো বড় মেয়েকে স্বামী খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।
-- চুপচাপ খেয়ে নাও। এতো লজ্জা কীভাবে আসে?
আমি খাচ্ছি আর ওর দিকে লুকিয়ে লুকিয়ে একটু একটু দেখতেছি, জীবনে সুখী হওয়ার জন্য, স্মার্ট, হ্যান্ডসাম দিয়ে কী হবে? একজন দ্বীনদার , এতটা কেয়ারিং , নিজের অনুপস্থিতিতে তাকে নিয়ে ভাবতে হয় না; সে যেখানেই যাক আমারই থাকবে এমন একজন স্বামীই যথেষ্ট।
এতটা কেয়ার আমি কখনো অন্য কারো থেকে দেখিনি।
ওর হাতের প্রতিটি লোকমাতে যেন অমৃত।
ছোট বেলায় এমনকি বড় হয়েও মা ভাত খাইয়ে দিলে খুব মজা লাগতো, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতাম। ঠিক ইয়াসিরের খাইয়ে দেওয়া খাবারেও তেমন একটা স্বাদ।
খাওয়ার পর ইয়াসির যথারীতি ফ্লোরে বিছানা রেডি করছিলেন, আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে ইয়াসির খাটে ঘুমাবে। আর কতদিন নিজের ঘরে, নিজের রুমে, নিজের খাটটা অন্য খাউকে দিয়ে ফ্লোরে ঘুমাবে?! তিনি এত ভালো কেন? কেন একটি বারও অধিকার নিয়ে বললেন না, "এই খাট আমার, আর স্ত্রীও আমার; আমি এখানেই ঘুমাবো, আমার স্ত্রীর সাথে, আমার স্ত্রীর পাশে"
খুব অভিমান হচ্ছিলো। কেন অধিকার দেখায় না। নিজের উপর রাগ হচ্ছে, আমি এতো পাষাণ কেন? কেন উনাকে এতোদিন ফ্লোরে ঘুমাতে বাধ্য করেছি?!
উনাকে খাটে ডাকতে লজ্জা হচ্ছিলো, নিজের লজ্জাকে এক পাশে রেখে বললাম,
--ফ্লোরে বিছানা করবেন না। এখানে ঘুমান, আমার পাশে।
: না ঘুমাবো না, ফ্লোরে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে।
বলে বিছানা ঠিক কর‍তে লেগে গেলো! বুঝতে পারলাম, সাহেবের অভিমান হয়েছে।
--এই শুনুন, উপরে উঠে আসুন। নয়তো আমিও ফ্লোরে ঘুমাবো, বলে দিলাম।
ওহ জানি তো খাটে আসবেন না। কারণ আমি ফ্লোরে ঘুমালেই তো আপনি খুশি।
প্লীজ খাটে চলে আসুন, আমার ভয় করছে, আমার জ্বর বেড়ে যাবে।
: বলছিতো ফ্লোরে ঘুমাতে খুব মজা।
--তাহলে আমিও আসতেছি,
বলে উঠে দাঁড়ালাম।
: এই খবররদার এখানে আসবে না,
বলে আমাকে শুইয়ে দিলো।
আর নিজে মশারি ঠিক করে, বিছানা ঠিক করে নিরাপদ দূরত্বে শুয়ে পড়লো।
একটা পুরুষ, একজন স্বামী এতটা ধৈর্যশীল কীভাবে হয়?! আর পারছি না। বলেই দিলাম,
-- ইয়াসির আপনি এত ভালো কেন?
: আমি ভালো নই। এতটা প্রশংসা কর না।
--যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম। আপনি ভালো, ভালো, ভালো। এত ভাব দেখানোর কী দরকার! নিজে ভালো সেটা মেনে নিন।
: ভাব দেখাচ্ছি না।
আবূ বক্‌র (রাঃ) বর্ণনা করেছেন
তিনি বলেন, নবী (সাঃ)-এর সামনে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করল। তখন রসূল (সাঃ)বললেন, তোমার জন্য আফসোস! তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে, তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে। তিনি এ কথা কয়েকবার বললেন, অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের প্রশংসা করতেই চায় তাহলে তার বলা উচিত, অমুককে আমি এরূপ মনে করি, তবে আল্লাহই তার সম্পর্কে অধিক জানেন। আর আল্লাহর প্রতি সোর্পদ না করে আমি কারো সাফাই পেশ করি না। তার সম্পর্কে ভালো কিছু জানা থাকলে বলবে, আমি তাকে এরূপ এরূপ মনে করি।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৬২)
--আচ্ছা বুঝলাম। ঠিক আছে আপনি ভালো নই।
সেদিন রাতে খুব বেশি জ্বর উঠেছিলো, এই জ্বর টানা চার দিন ছিলো। এই ইনি, আমার ইয়াসির, সেদিন থেকে রাত জেগে মাথায় জলপট্টি দেওয়া, গা মুছে দেওয়া, মাথায় পানি দেওয়া, খাবার খাইয়ে দেওয়া সব, সবই তিনি করেছেন। আমি চোখ বন্ধ, আধা হুশ, আধা বেহুঁশের মধ্যেও উনাকে দেখতাম।
অতিমাত্রায় জ্বরে প্রলাপ বকতাম,
"এই যে শুনুন, জ্বর হয়েছে, গা মুছে দেওয়ার বাহানায় ঘন ঘন আমার গায়ে হাত দেবেন না। খবরদার, আমার গায়ে হাত দিলে, অনেক অসুবিধা হয়ে যাবে কিন্তু"
ইয়াসির আমার কথায় কান না দিয়ে ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে ভিজিয়ে এনে গা মুছে দিতেন।
বেশ কয়েকবার জ্বরের মধ্যেই বাধা দিতে চেষ্টা করেছি, উনি ধমক দিয়ে বললেন
: "চুপ করে শুয়ে থাকো। একটা কথাও বলবে না, যা করছি করতে দাও।
আমিও আর কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিলাম না।
শাশুড়ি মাঝেমাঝে এসে দেখে যান। সেদিন বললেন,
;; মা'রে ভাগ্যগুণে এমন স্বামী আল্লাহ মিলাইয়া দেন। আমার ইয়াসিরকে কষ্ট দিস না। তোকে অনেক ভালোবাসে। নিজে ছেলে বলে কইতাছি না, খুব বড় পূণ্যের কাজের বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে এমন সন্তান দিয়েছে।
সত্যি আমি ভাগ্যবতী, যাকে এত কষ্ট দিয়েছি, সে আমাকে পরম স্নেহে আগলে রেখেছেন।

একটু সুস্থ হওয়ার পর বললাম,
-- আপনি ঘুমান, এতোদিন ঘুমাতে পারেননি।
: ঘুমিয়েছি তো, যখন তুমি ঘুমাতে আমিও ঘুমাতাম।
--তাহলে এখন একটু আমার সাথে ঘুমান আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
: আচ্ছা, মেডাম।
--এতো দূরে নয় জ্বরের সময় যেভাবে আমার হাতটি ধরে ঘুমাতেন। তেমনি ভাবে!
: তো তুমি সব জানো, নিশ্চয় আরো কিছুও জানো জ্বরের সময় কি কি করেছি? সেগুলো করবো কিন্তু।
বলে সে আমার কাছে আসতে চাচ্ছিলো।
আমি দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম।


অনেকদিন মোবাইল হাতে নিইনি। ফেইসবুক লগিং করতেই একগাদা মেসেজ।
প্রতিদিন একটা,
" তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো, তোমায় না দেখলে আমার ভালো লাগে না"
" তোমার ঐ নিস্পাপ চোখের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে"
"তুমি জানো না, তোমাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছি"
" প্লীজ এভাবে চুপ করে থেকো না, সহ্য করতে পারি না। তোমায় খুব বেশি মিস করছি"
" প্লীজ তাড়াতাড়ি ফিরে এসো"
মোবাইল খোলার সাথেসাথে,
"আলহামদুলিল্লাহ "
এই এতগুলা মেসেজ, আমি ২০০% নিশ্চিত ইনি ইয়াসিরই। কিন্তু আমি তাকে কীভাবে জিজ্ঞাস করি?
কোন একটা উপায় তো বের করতেই হবে।
সেদিন দুপুরে আম্মা রুমে খাবার পাঠিয়ে দিলেন। ইয়াসিরকে বললাম,
--আসুন এককসাথে খেয়ে নিই।
: না আমি খাবো না। খিদে নেই।
--খিদে নেই মানে কী? আমি জানি তো, এতোদিন ভালো করে খাবার খাননি।
আম্মা আমাকে সব বলেছেন, আমিও আবছা আবছা দেখেছি, আম্মাকে জড়িয়ে ধরে কে যেন বলছিলো,
" মা, আমার সুমু বিছানায় চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে, আর আমি কীভাবে খাবো? আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না।
ও উঠুক, আমার সাথে ঝগড়া করুক, অভিমান করুক তারপরই আমি শান্তি পাবো। ওকে এমন চুপচাপ সহ্য কর‍্তে পারি না"
সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো!!
--এতো অবাক হতে হবে না, আমি তো বেহুঁশ ছিলাম না। আসুন একসাথে খেয়ে নিই।
আম্মা বলেছেন কাল চলে যাবেন, আম্মার হাতের খাবার অনেকদিন পাবেন না কিন্তু।
: খাবো না, কেউ কী আমায় যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে।
--অহ আচ্ছা, এই কথা।
লজ্জা পাচ্ছি খুব কিন্তু তাও খাইয়ে দিচ্ছি। এই মুহূর্তগুলো আমার জীবনে বার বার আসুক। আমি খাইয়ে দিচ্ছি আর সে অপলক নয়নে আমার দিকে চেয়ে আছে।
--এভাবে কী দেখছ? আমার লজ্জা হচ্ছে না বুঝি। চোখ নামাও নয়তো খাইয়ে দিবো না।
: আমার বউকে দেখছি, দেখেই থাকবো যুগ যুগান্তর। এতো মিষ্টি বউ না দেখে থাকতে পারছি? বলো।
--প্লীজ চোখ নামিয়ে ফেলুন আমার ভীষণ লজ্জা হচ্ছে।
চলবে,,
লেখা: Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)

tag

islamic kitab bangla
sunni bangla islamic book
all islamic books in bangla free download pdf
islamic history books in bangla free download pdf
bangla islamic website
bangla islamic book motiur rahman
bangla islamic dua book
imam ghazali bangla books pdfkolorober gojol badruzzaman kalarab kalarab tvholy tune gojolkalarab newainuddin al azad islamicbangla islamicsalam kalarabkalarab shilpi gosthi new song 2017kalarab allah allahmuhib khan 2018allah boloabu rayhan 2018holy tune recordsabu rayhan islamic songkala movieami dekhini tomayiqbal hjbangla islamic song 2017iqbal hossain jibon



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: