শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #৭ম_পর্ব

#এক_মুঠো_ভালোবাসা#৭ম_পর্ব

--না, এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না।
: তাকাবো, তাকাবো, হাজারবার তাকাবো। এতোদিন পর নারী থেকে নিজের দৃষ্টিকে সংযতো করেছি শুধু নিজের বউয়ের সৌন্দর্য অবলোকন করবো বলে। এতো সুন্দর বউ! আর কী লাগে।
স্বামীর মুখে নিজের প্রশংসা কার না ভালো লাগে!! বেশ ভালো লাগছিলো। যদিও আমি জানি, আমি সুন্দরী নই, শুধু ইয়াসিরের চোখেই আমি সুন্দর। আজ পর্যন্ত কোন প্রেমপত্র পাইনি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে তার দুই হাত দিয়ে আমাকে ধরে, আমার চোখের দিকে পরিপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বললো,
--জানো সুমু যেদিন তোমায় প্রথম দেখি, জানি না আমার মধ্যে কি হয়েছিলো, কিছুক্ষণ নিজের ভেতর হারিয়ে গিয়েছিলাম। শুধু মনে হচ্ছিলো, হুম এর জন্যই আমি জন্ম জন্মান্তর অপেক্ষা করেছি। সেদিনই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু তোমার অস্থির, মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে খুব ভয় হচ্ছিলো।
বার বার মনে হচ্ছিলো তুমি বিয়েতে রাজী নও।

আমি আল্লাহকে বার বার বলেছি,
" হে আল্লাহ এই মেয়েটি যদি আমার আর আমার পরিবারের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য মঙলের হয় তাহলে তাকে আমার জন্য নির্ধারণ করে দাও"
ব্যস কীভাবে যেন বিয়েটা হয়েই গেলো।
আমি লজ্জায় তার দিকে তাকাতে পারছিলাম না, চোখ নামিয়ে নিয়েছি। কিন্তু তার শেষের কথাটা বলতে গিয়ে এতটাই আবেগময় হয়ে গিয়েছিলো, আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো বলতে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, প্রচণ্ড।
আমি কিছুই বলিনি, শুধু তার বাদামী চোখের গভীরতায় হারিয়ে গিয়েছিলাম।
আমি মেসেজের রহস্য উদ্ধার না করা পর্যন্ত নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে চাই না। অন্তত নিজের মুখে নয়! সে কী বুঝে না, আমিও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি?
এসব ভাবতে ভাবতে কতক্ষণ এভাবে দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গিয়েছিলাম জানি না। আম্মার ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম,
;; কীরে বাবজান, তোরা এহনো ভাত খাসনি। এদিকে বউয়ের বাব মাই কল দিয়া কইলো, সবাইরে নিয়া বউয়ের বাবার বাড়িতে দাওয়াতে যাইতে। উঠ, তাড়াতাড়ি রেড়ী হয়ে নে।
: কেন মা, কয়দিন আগেই তো গেলাম। আবার কেন?
;; বেয়াইন কইলো, আমরাও দেশের বাড়ি চইলা যাইবো, আবার কহন দেহা অইবো তার কোন ঠিক নেই, বেয়াই বেয়াইনরে নিয়া একসাথে একবেলা খাইতে পারলে বালা লাগিতো।
: আচ্ছা ঠিক আছে মা, তুমি যাও আমরা রেড়ি হয়ে নিচ্ছি।
আম্মা যাওয়ার সময় আমার হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন। আমি ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম। হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি উনার ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছিলাম। হয়তো উনিই কিছুটা আনইজি ফীল করেছেন। যদিও এই বাড়ির কাউকেই আদবের বরখেলাপ করতে দেখিনি, এমনকি রহিমাও। অন্যের রুমে আসার আগে দূর থেকে গলা ঝাড়া দিয়ে খবর করে দেন, যে উনি এদিকে আসতেছেন রুমের দরজায় এসেও নক করেন। হয়তো আম্মাও আসার সংকেত দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা দুইজন দুইজনের ভালোবাসার মাদকতায় এতটাই মত্ত হয়েছিলাম আম্মার কাশি শুনতে পাইনি।
আলমারির দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, কী পরবো? শাড়ি না থ্রি পিস? যেন আমার মনের কথা বুঝে ইয়াসির বললেন,
: শাড়ি পরো, শাড়িতে তোমায় দারুণ লাগে।
কিছুটা লাজুক হাসি দিয়ে আবার আলমারির প্রতিটি শাড়ি চুল ছেড়া বিশ্লেষণে লেগে গেলাম, কোন শাড়িটা পড়বো? কোনটা পড়লে আমাকে ভালো লাগবে। সে আরো বেশি ফিদা হয়ে যাবে।
উফফ, আমাদের মেয়েদের যত সমস্যা কোথাও যেতে কী পড়বো, কী পড়বো করতে করতেই ছেলেরা কয়েকবার রেডি হয়ে যেতে পারবে।

আবার সে'ই বললো,
: নীল শাড়ীটা পড়ো, বিয়ের তৃতীয় দিন পড়েছিলে। চোখ ফেরাতে পারিনি।
-- অহ তাই বুঝি জানালা দিয়ে বার বার আমাকে দেখা হচ্ছিলো।
: আরো আরো দেখতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু কেউ তো বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকে।
আমাকে একটু প্রাণ ভরে দেখতেও দেয় না।
ওই কাজল টানা চোখ গুলা আমাকে পাগল করে দিচ্ছিলো।


আমি কোন উত্তর না দিয়ে তার পছন্দের শাড়ি পরাতে মনযোগ দিলাম।
কিন্তু কিছুতেই শাড়ির কুচি ঠিক করতে পারছিলাম না। খুব বিরক্তবোধ করছিলাম।
তাকে বলিনি, কিন্তু তাও সে এসে এতো সুন্দর করে আমার শাড়ির কুচি ঠিক করছিলো আমি অবাক না হয়ে পারিনি। শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে আমার দিকে তার তাকানো আমাকে পাগল করে দিচ্ছিলো।
একজন হুজুর, এতটা পাগল প্রেমিক হয়, এতটা কেয়ারিং হয় জানা ছিলো না।
আমার এক দূরসম্পর্কের কাজিনের স্বামী হুজুর, কথায় কথায় সে বলছিলো,
" প্রকৃত দ্বীনদার হুজুরদের চেয়ে রোমান্টিক, প্রেমিক স্বামী কেউ হতে পারবে না।কারণ তারা প্রিয় নবী (সঃ) এর সুন্নত মতে জীবন অতিবাহিত করে। আর প্রিয় নবী (স:) এর চেয়ে রোমান্টিক স্বামী আর কেউ হতে পারবে না। তারা রোমান্স শুধু স্ত্রীর সাথে করে ; তবে কারো সামনে নয়, নিজের বেড রুমে। তাই তোরা ভাবিস হুজুররা আনস্মার্ট, ক্ষেত"
সেদিন আপুর কথা বিশ্বাস করিনি বা বুঝতে পারিনি কিন্তু আজ খুব ভালো করেই বুঝতে পারি।
শাড়ী পড়ার পর সে বোরখা বের করে সুন্দর করে পড়িয়ে দিলো। আমি শাড়ীর উপর হেজাব পড়তে চেয়েছি। কিন্তু সে এত মায়া নিয়ে আমাকে বোরখা পড়িয়ে দিচ্ছিলো মানা করতে পারিনি। বোরখা প্রতিটি বোতাম সে সুন্দর করে ঠিক করে দিলো।
--আচ্ছা ইয়াসির, আমি তো তোমার সাথেই যাচ্ছি আর গাড়িতেও বোরখা পড়তে হবে কেন? নরমালি হিজাব তো পড়লামই।
: শুনো,
#আল্লাহ বলেন,
তোমরা স্বগ্রিহে অবস্থান কর।প্রাচীন জাহিলিয়াতের যুগের নারীদের মত নিজেদের প্রদর্শন করো না।"(সূরা আহযাব-৩৩)
#উম্মে সালামা(রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি এবং মাইমুনা(রাঃ), রাসুল(সঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাখতুম(রাঃ) সেখানে আসতে লাগলেন। তখন রাসুল(স) বললেন তোমরা তার থেকে পর্দা করো, আড়ালে চলে যাও। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি তো অন্ধ। তিনি তো আমাদের দেখতে পাচ্ছেন না। তখন রাসুল(স) বললেন তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছো না? (আবু দাউদ ২/৫৬৮)
: সুমু আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি, আমি তোমার সাথেই জান্নাতে যেতে চাই। প্লীজ আমাকে হেল্প করো।
আমি তাকে কিছুই বলিনি। আমি ইসলাম সম্পর্কে এতো বেশি জানি না তবে জানতে চাই। যে ইসলামকে মেনে ইয়াসিরের মতো একজন আদর্শ মানুষ হতে পারে ; না জানি সেই ইসলাম কতো সুন্দর।
আমার চিন্তাযুক্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে সে খুব মিষ্টি একটা বড়ি স্প্রে আমার গায়ে লাগিয়ে দিলো, সেটা মিষ্টি হলেও আমার পছন্দ এটা নয়। খুব বিরক্ত হয়ে বললাম,
--উহু, ইয়াসিইইর, এই যে এইটা আমার পছন্দ। বেলি ফুলের সুঘ্রাণের লেডিস পারফিউমই আমি ইউজ করি। এইটা কি দিলে, এটার স্মেল কেউ পাবেও না।
: জানো সুমু, সুগন্ধি নারী-পুরুষকে একে অপরের প্রতি আকর্ষণের এমন একটি মাধ্যম যা অনেকসময় প্রকৃত দ্বীনদার ব্যাক্তিকেও আকৃষ্ট করে। সুতরাং এ বিষয়ে কতটা সতর্ক থাকা দরকার তা একবার ভেবে দেখো প্লীজ।
#হাদীসে আছে, রাসুল (স:) বলেন,
‘‘প্রত্যেক চোখ যিনা করে। আর কোন নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায় তাহলে সেও নযরের যিনা বা সরাসরি যিনার প্রতি প্রলব্ধুকারী হিসেবে গণ্য হবে।
(জামেতিরমিযী, হাদীস:২৭৮৬)
কিছুটা ব্যঙ্গ করে বললাম,
--কিন্তু, তুমিই তো আমাকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিলে।
: এইটা এমন বডি স্প্রে, যেটার ঘ্রাণ তুমি ছাড়া আর কেউ পাবে না।
ইভেন আমিও পাচ্ছি না এতো কাছে থেকেও। আরেকটু কাছে গিয়ে দেখি পাই কি না।
বলে দুষ্টু হাসি দিয়ে আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছিলো, আমি দৌড়ে পালাতে পালাতে বললাম,
--ইয়াসির, দেরী হয়ে যাবে। আম্মা অপেক্ষা করছেন, আপনাকে বকা দিবেন কিন্তু।
ওমা নীচে নেমে দেখি কেউই নেই, আম্মার রুমে গিয়ে দেখলাম কেউই নেই।
আবার সেই টুং করে মেসেজ,
" তুমি শুধু আমার, তোমার সবকিছুই আমার। শুধুই আমার। বিশ্বাস করো, আমি নিজেকেও তোমার জন্য পরিপূর্ণ পবিত্র রাখবো। চিরজীবন শুধু তোমার হয়েই থাকবো। শুধুই তোমার"
এতো আবেগ, এতো ভালোলাগা, এতো অধিকার মেসেজের প্রতিটি শব্দে। শুধু ইয়াসিরই এমনভাবে বলতে পারে।
আম্মার ফোন আসলো,
; বউ, আমরা আইয়া পড়ছি। গাড়ি পৌছাইয়া দিছি, তোমরা তাড়াতাড়ি আইয়া পর। বেয়াইন তোমাগো লাইগা অপেক্ষা করতাছেন
--আচ্ছা মা, আসছি।
"ইয়াসির চলুন, আম্মারা সবাই চলে গেছেন।
: ভালোই তো হলো, গাড়ির সময়টাও আমার নিজের মতো করেই পাবো।
--যাহ দুষ্টু! সবসময় দুষ্টুমি ছাড়া আর কিছু নেই।
: আছে তো। বউয়ের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা।
সুমু, চল না একটু দেরী করে যাই।
--না, একদম না। শুধু দুষ্টুমি করার বাহানা খোঁজে।
: না, দুষ্টুমি করার নয়। ভালোবাসার, বউকে বেশি বেশি ভালোবাসার, ভালোবাসায় ভরিয়ে দেওয়ার বাহানা খুঁজি।
: হয়েছে, আর ভালোবাসতে হবে না। এখন চলুন।
গাড়িতেও সারা পথ আমার হাতটা আলতো করে ধরে রেখেছিলো। আমি ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা মোঠেও করিনি।
তার হাতের পরশ আমাকে প্রতিটি মুহূর্ত অন্য রকম ভালোলাগায়, ভালোবাসায় সিক্ত করছিলো।
চলবে,,
লেখাঃ Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)

tag 


islamic kitab bangla
sunni bangla islamic book
all islamic books in bangla free download pdf
islamic history books in bangla free download pdf
bangla islamic website
bangla islamic book motiur rahman
bangla islamic dua book
imam ghazali bangla books pdfkolorober gojol badruzzaman kalarab kalarab tvholy tune gojolkalarab newainuddin al azad islamicbangla islamicsalam kalarabkalarab shilpi gosthi new song 2017kalarab allah allahmuhib khan 2018allah boloabu rayhan 2018holy tune recordsabu rayhan islamic songkala movieami dekhini tomayiqbal hjbangla islamic song 2017iqbal hossain jibon




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: