শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #৮ম_পর্ব

#এক_মুঠো_ভালোবাসা#৮ম_পর্ব

বাবার বাড়িতে পৌঁছতেই মা নানা রকমের খাবার দিয়ে আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
ইয়াসিরের একটা জিনিস খুব বেশি ভালোলাগলো, সে মাকে, বাবাকেও আমাদের সাথেই টেবিলে খাবারের জন্য বসিয়ে দিলেন, খুব যত্ন করে মা বাবাকে, আমাকে, আম্মাকে, সবাইকে খাবার সার্ভ করছিলো, মনে হচ্ছে আমরা সবাই তার বাড়ির মেহমান। আর নিজে খাবার নিয়ে আমার পাশে বসে মুচকি করে হেসে আস্তে আস্তে বললো,
: আমার বউয়ের পাশের জায়গাটা শুধু আমার।
বলেই আমার হাতটা আলতো করে ধরলো।
আমি খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম, যদি বাবা এদিকে দেখেন! এই পাগলটা একটুকরো মাংস নিয়ে আস্তে করে আমাকে খাইয়ে দিলো। ইশারায় হা করতে বলার পরও যখন করিনি, গোমড়া মুখ করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলো।
হা করার পর মিষ্টি করে হেসে দিলো। আহ! খাতিলানা হাসি, এতো মায়াবী হাসি হৃদয়ের ভেতরে ছেদ করে আসে। কলিজাটা ধক করে উঠে। ওই হাসিতে জনম জনম হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
আমাকে পাগল করে! সাধারণত স্বামীরা স্ত্রীদের মায়াবী হাসিতে পাগল হয়ে যায় কিন্তু আমি ওর মায়া ভরা মুখের অপরূপ হাসিতে পাগল হয়ে যাই।


আমাদের বাসায় সবাই যার যার গ্লাসে করে পানি খায়, সবার গ্লাস আলাদা। মেহমানদের জন্যও সবার টেবিলের সামনে আলাদা গ্লাস দেওয়া হলো। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, ইয়াসির আমার গ্লাসে যে জায়গায় ঠোঁট লাগিয়ে পানি খেলাম ঠিক সে জায়গায় ঠোঁট লাগিয়ে পানি পান করলো।
আমি খুব অবাক হলাম! জিজ্ঞাস না করে পারিনি, বললাম,
--ইয়াসির, আপনাকে তো আলাদা গ্লাস দেওয়া হলো কিন্তু তাও আমার গ্লাসে, আমার ঠোঁট লাগানো জায়গায় ঠোঁট লাগিয়ে পানি খেলেন কেন?
: খাবার গুলো খুব ঝাল তাই মিষ্টি খেয়ে মুখের ঝাল দূর করার জন্য। তোমার ঠোঁটের মিষ্টি ঐখানে লেগে আছে।
আমি খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম,
--দুষ্টুমি করবেন না প্লীজ, আমাদের বাসায় ঝাল খায় না। সুতরাং খাবার ঝাল হয়নি।
বলুন না প্লীজ।
: পরে বলবো। এখন নয়।
আমিও কিছু না বলে চুপ হয়ে থাকলাম।
খাবার পরে মা ডেজার্ট আনতে গেলেন আর ইয়াসির টেবিলের নীচে আমার হাতটা ধরে থাকলেন, বললাম,
--আমি কোথাও পালিয়া যাবো না তো, এভাবে ধরে থাকতে হবে না।
: আহা! আমাকে লুকিয়ে প্রেম করতে দাও, আমার বউয়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম করবো।
বউয়ের সাথে লুকিয়ে হালাল প্রেমে আনন্দ! আহা! আরো আগে কেন তোমায় বিয়ে করলাম না?
-- প্রেম করার সময় কী কোথাও চলে যাচ্ছে?
: বুঝ না কেন, এই সময়টা আর পাবো না।
সে বিশ্রাম নিতে রুমে আসলো সাথে আমি যাইনি। আমি মায়ের সাথে গল্প করছিলাম।
আমার ছোট ভাই এসে বললো,
; আপু তোমার ব্যাগে নাকি দোলাভাইয়ের মোবাইল। উনি খোঁজে পাচ্ছেন না।
উফফ, কেন খোঁজে পাবে না। এই ছোট হাতের ব্যগেও কী মোবাইল খোঁজে পাওয়া যায় না? মা বললো,
; যা'তো মা, খোঁজে দিয়ে আই।
বলে হেসে দিলো। এমন লজ্জা পেলাম।
এসে দেখি উনি মোবাইল নিয়ে টিপাটিপি করছেন।
--আপনি না বললেন, মোবাইল পাচ্ছেন না? মোবাইল তো আপনার হাতেই।
: আমি তোমায় খোঁজছিলাম, খোঁজে পাইনি তো।
--উফফ, অসহ্য মা'য়ের কাছে এসেও একটু গল্প করতে দিবে না। সারাদিন বউ, বউ, বউ।
: জীবনে কখনো কোন মেয়ের দিকে তাকাইনি, কোন মেয়ের প্রেমে পড়িনি। শুধু বউকে দেখবো বলে, শুধু বউয়ের সাথে প্রেম করবো বলে।
--আমার বুঝি মা'য়ের সাথে একটু সময় কাটাতে ইচ্ছে করে না?
: আমার বুঝি আমার বউয়ের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে না। ঠিক আছে যাও মা'য়ের সাথে কথা বলো।
বলেই অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
বুঝতে পারলাম, অভিমান করেছে। তার হাতটি ধরে এদিকে ফিরাতেই ছোট ভাই আচার আর ফ্রুট নিয়ে রুমে ঢুকলো,
: ইশ, শালাবাবু সবসময় ভুল টাইমে আপনার এন্ট্রি। একটু দেরী করা যেত না?
; কী করবো ভাইয়া, মা পাঠালো। বলে চলে গেলো।
--হয়েছে এবার উঠুন। খেয়ে নিন।
: না আমি খাবো না, খাইয়ে দাও।
--এখানে নয়, কেউ এসে দেখে ফেলবে। আমাদের বাসা তো আর আপনাদের বাড়ির মতো বড় নয়। যা ইচ্ছা করলেই, কেউ দেখবে। রুমের সামনে দিয়েই সবাই এই রুম থেকে ওই রুমে যায়।
সে এক লাফে উঠে দরজাটা বন্ধ করে দিলো,
: এবার খাইয়ে দাও। আগে আমি দিচ্ছি।
বলে,
সে একটা কমলার কোয়া নিয়ে খুব যত্ন করে পরিষ্কার করে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলো, আমি বড় হা করে পুরোটা নিতেই সে অর্ধেক থেকে নিয়ে নিজে খেয়ে ফেললো। আমি লজ্জা পেয়ে বললাম,
--অর্ধেক করে করে খেতে হবে কেন, পুরোটা আপনি খান, আরেকটা আমি খাব।
: কারণ

#হযরত আয়শা (রা) যে গ্লাসে করে পানি পান করতেন, আল্লাহর রাসুল (সা) ঠিক প্রিয় সহধর্মিণীর ঠোঁট লাগা অংশে ঠোঁট লাগিয়ে পানি পান করতেন। যখন আয়শা (রা) মাংশ খেতেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সা) আয়শা (রঃ) হতে মাংশটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক আয়শা (রা) যেদিকটায় ঠোঁট লাগিয়ে খেয়েছেন, একই স্থান থেকে তিনি (সা:) ও খাওয়া শুরু করতেন।
--ওহ এইজন্য বুঝি পানিও এভাবে খেয়েছিলেন?
: আমার বউটাকে ভালোবাসাও হলো। প্রিয় নবী (স:) এর সুন্নত পালনের জন্য সওয়াবও হলো। এবার খাইয়ে দাও, নয়তো খাব না।
বলে সে আমার দিকে পরিপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকালো, আবার বললো,
: প্রিয় নবী (সঃ) এর সুন্নত মতে আরো অনেক সওয়াবের কাজ আছে কিন্তু, করবো, করবো?
বলেই আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে আমার কোলে শুয়ে পড়লো।


উফফ খুব লজ্জা পেয়ে বললাম,
--এটাও বুঝি নবী (স:) এর সুন্নত? নাকি আপনার ইচ্ছা?
: আলবৎ, প্রিয় নবী (স:) এর সুন্নতও, আমার ইচ্ছাও।
#আল্লাহর রাসুল (সা:) প্রায় সময় উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা (রা:) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আয়শা (রা:) এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন। যখন আয়শা (রা:) ঋতুবর্তী অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি (সা:) তাঁর উরুর উপর শুয়ে কোর’আন তিলাওয়াত করতেন।
--এভাবে তাকাবেন না, আমার লজ্জা করে খুব।
: দেখি লজ্জা কীভাবে করে, বলে কাছে আসছিলো।
আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে একটু দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। সে নিজের কাছে টেনে নিলো।
আবার ছোট ভাই দরজা নক করলো, আমি খিল খিল করে হেসে দিলাম। সেও মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো।
দরজা খুলে দেখি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাসনি এসেছে।
--আসসালামু আলাইকুম, এতক্ষণ তোর আসার সময় হলো।
; বলিস না দুস্ত জ্যামে আটকা পড়েছিলাম। আচ্ছা, চল হুজুর দোলাভাইয়ের সাথে কথা বলে আসি।
ভাইয়া কেমন আছেন?
সে সালাম দিয়ে বললো,
: আলহামদুলিল্লাহ, আপনি ভালো তো।
তাসনি ইয়াসিরের সাথে অনেক কথাই বললো, কিন্তু ইয়াসির একটি বারের জন্যও ওর মুখের দিকে তাকায়নি।
এমনকি আমার কাছ থেকেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলো। আমি ভেতরে ভেতরে খুব হাসছিলাম, কিছুটা বিরক্তও হলাম। মেয়েদের প্রতি এতো লজ্জা কেন? ভাবখানা এমন, আমি ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানি না। কিন্তু আমার সামনে এতো রোমান্স কোথা থেকে আসে।
আমার বান্ধবী যাওয়ার সময় আমাকে আড়ালে ডেকে বললো,
; সুমু তুই এর সাথে কীভাবে সারা জীবন কাতাবি? তুই সবসময় একজন রোমান্টিক হাজবেন্ড চেয়েছিস। কিন্তু ইনি তো নিজের বউয়ের কাছে আসতেও লজ্জা পায়। তোদের মধ্যে আদৌ কী কোন ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠবে?
--তোর বিয়েও যদি হুজুরের সাথে হয় তাহলে বুঝবি হুজুররা কেমন।
হুজুররা রোমান্টিক, তবে তাদের রোমান্স শুধু বউয়ের সামনে। তারা অন্য কারো সামনে এবং অন্য কারো সাথে রোমান্টিক হয় না। শুধু বউয়ের সামনেই হয়। ও তুই বুঝবি না।
সে এক প্রকার রাগ করেই চলে গেল।
রুমে এসে ইয়াসিরকে বললাম,
--আমার বান্ধবীর দিকে একবার তাকিয়ে কথা বললে কী এমন ক্ষতি হতো। ও একটু খুশি হতো আর কি?
: সুমু জানো?
#কোরানে আছে,
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। {সূরা নূর-৩০,৩১}
#অন্য এক আয়াতে আছে,
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে বিনম্র হয়ে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে পৌরষত্ব আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে। {সূরা আহযাব-৩২}
#হাদিসে এসেছে,
# নবী (সঃ) বলেছেন," যখন কোন বেগানা মহিলার উপর হঠাৎ দৃষ্টি পরে যায় তখন সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে, দ্বিতীয় বার আর দৃষ্টি দিবেনা কারন প্রথম দৃষ্টি তোমার আর দ্বিতীয় দৃষ্টি শয়তানের।"
বুঝতে পারছ?
তাছাড়া পরনারীর দিকে দৃষ্টি দিলে শয়তান ওই নারীকে আমার চোখে সুন্দর বানিয়ে দিবে। ফলে আমার কাছে নিজের স্ত্রীর চেয়ে অন্য মহিলাকে বেশি ভালো লাগবে। আমাদের মধ্যে অশান্তি শুরু হবে।
প্রতিনিয়ত ঝগড়া হবে। শয়তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিতে পারলে।
জানো তো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসতে চাই।
মায়ের বাড়ি থেকে আসার সময় আবার মেসেজ,
" তুমি কেন বুঝ না, আমি চিরজীবন শুধু তোমাকেই ভালোবাসতে চাই। তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে চাই। শুধু তোমায় দেখেই আমার চক্ষু শীতল করতে চাই"
চলবে,,,,
লেখা: Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)

tag 
islamic kitab bangla
sunni bangla islamic book
all islamic books in bangla free download pdf
islamic history books in bangla free download pdf
bangla islamic website
bangla islamic book motiur rahman
bangla islamic dua book
imam ghazali bangla books pdfkolorober gojol badruzzaman kalarab kalarab tvholy tune gojolkalarab newainuddin al azad islamicbangla islamicsalam kalarabkalarab shilpi gosthi new song 2017kalarab allah allahmuhib khan 2018allah boloabu rayhan 2018holy tune recordsabu rayhan islamic songkala movieami dekhini tomayiqbal hjbangla islamic song 2017iqbal hossain jibon



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: