শুক্রবার

#এক_মুঠো_ভালোবাসা #৯ম_পর্ব

#এক_মুঠো_ভালোবাসা#৯ম_পর্ব

মায়ের বাড়ি থেকে আসার পর আম্মা গ্রামে চলে গেলেন, রহিমাকে রেখে গেলেন। আমি বলেছিলাম,
--আম্মা, রহিমাকে আপনাদের বেশি দরিকার, আমি মেনেজ করতে পারবো।
আম্মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
"না'রে মা, তুই এহনো নয়া বউ, তোর কাজের কোন অভিজ্ঞতা নেই।
আমার বাজানরে সামলাবি কেমনে। আমি গ্রামে অন্য কাউরে পাবো। তুই চিন্তা কইর না।
আমি খুব শীঘ্রই আইবো।

জানি না, আম্মার প্রতি আমার কী এক অদ্ভুদ ভালোলাগায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন।
উনার এতো আন্তরিকতা, এতো ভালোবাসা আমাকে সারাক্ষণ আম্মার কথা ভাবতে বাধ্য করছিলো।
মনে হচ্ছে নিজের মায়ের পর যদি কাউকে ভালোবাসি সে এই শাশুড়ি আম্মা। তিনি আমার প্রতি শাশুড়ি মার মতো কোন আচরণই করেননি। উনার সবকিছুতেই ছিলো মাতৃমমতার চমৎকার উদাহরণ।
ইয়াসির ফযরের নামাজের পর কোরান পড়ে কিছুক্ষণ ঘুমায়। আমি নামাজ, কোরান পড়ে রহিমাকে নিয়ে নাস্তা রেড়ি করি। এতোদিন আম্মা ছিলো কোন টেনশন ছিলো না।
মা চলে যাওয়ার পর থেকেই লক্ষ্য করলাম, আমি নাস্তা রেডি করে ইয়াসিরকে ঘুম থেকে ডাকতে আসলে, ইয়াসির আগে থেকেই উঠে সুন্দর করে বিছানা ঘুছিয়ে দিচ্ছে, আর রাতে ঘুমানোর সময় তিনিই বিছানা ঘুছিয়ে, মশারি টাঙিয়ে দিতেন। আরো বিভিন্ন টুকটাক, এটা সেটা করে দিতো। আমি একদিন অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকলাম! সে আমায় দেখে বললো,
: কী দেখো গো? এভাবে দেখছ কেন?
--আচ্ছা ইয়াসির, রহিমা থাকার পরও কেন আপনি আমায় হেল্প করেন? বেশির ভাগ পুরুষই তো স্ত্রীকে হেল্প করতে নিজের আত্মসম্মানে লাগে। যে স্বামীরা হেল্প করে তাদের বাদাইম্মা বা বউয়ের গোলাম বলে,
: আচ্ছা যারা এই শব্দটা ইউজ করে, তারা কী প্রিয় নবী (সঃ) এর চেয়ে বেশী উপযুক্ত?
--মানে বুঝলাম না।
: বলতেছি,
#হযরত আসওয়াদ (রঃ) বলেন,আমি আয়শা (রা:)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা:) ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন অর্থাৎ গৃহস্থালির কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো নামাজে চলে যেতেন।
--বুঝেছি জনাব, আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাকে পেয়েছি।
উফফ, হুট করে এসেই পিছনে জড়িয়ে ধরবে, হুট করে এসেই ভালোবাসার পরস বুলিয়ে দিবে। খুব লজ্জা পেয়ে যাই। আবার কী, যে ভালো লাগতো!
-- উহহু ইয়াসির, আপনি কী করেন? কথায় কথায় এভাবে এমন করেন কেন? লজ্জা করে না বুঝি। রহিমা দেখবে তো।
: তুমি জানো? বউকে ভালোবাসার প্রকাশ করতে হয়, এইসব ছোট ছোট বিষয় গুলোতেই সোয়াব হয় এবং স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা আরো গভীর থেকে গভীরতর হয়। রাসুল (স:) এর সুন্নত আদায় হয়।
কারণ
#রাসুল (সা:) প্রায় সময় স্ত্রীদের চুমু খেতেন। তাঁদের সাথে আদর আহ্লাদ করতেন। যখন রাসুলুল্লাহ (সা:) রোজা রাখতেন, ঠিক তখন তিনি স্ত্রীদের চুমু দিয়েছেন এমন কথাও হাদিসে পাওয়া যায়।
আমি খুব লজ্জা পেয়ে বললাম,
--আচ্ছা আর বলতে হবে না
কিছুদিন পর গ্রামের বাড়িতে যাই। গ্রামে যাওয়ার পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর খুব বমি হচ্ছিলো। ভাবলাম, খাওয়া দাওয়া বেশি হয়ে গেছে তাই হজমে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এমন এক অবস্থা হচ্ছে ইয়াসিরের গায়ের ঘ্রাণটাও অসহ্য লাগছে।
ইয়াসিরের গায়ের ঘ্রাণ আমার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় সুগন্ধি। ও বাসায় আসার সাথে সাথেই অনেক দূর থেকে ঘ্রাণটা আমার নাকে চলে আসে। বুঝতে পারি আমার সাহেব বাসায় এসেছেন।
এই মুহুর্তে সেই ঘ্রাণটা অসহ্য মনে হচ্ছে। বেশ কয়েকবার বমি হওয়ার পর ইয়াসির আম্মাকে জানাতে চেয়েছে বার বার কিন্তু আমি নিষেধ করি। শুধু শুধু আম্মা টেনশন করবে।
সে খুব ভয় পেয়ে যায়। একটু চেষ্টা করে আমার মাথায় বসে শান্তনা* দেওয়ার জন্য কিন্তু কিছুতেই বসতে পারে না। আমি ঘুমালে হাতটা ধরে থাকে। সে' তো জানে না, আমি ঘুমাইনি। আমি চোখ বন্ধ করে চুপ হয়ে আছি। ওকে একটু সুযোগ দেওয়ার জন্য যেন সে একটু আমার পাশে বসে আমার হাতটা ধরতে পারে। কিন্তু তাও পারলাম না বমি করে দিলাম, প্রচণ্ড বমি।
তার কাপড়, বিছানা সব নষ্ট। আমার খুব চিন্তা হলো, সে রাগ করবে না তো।
বলেই দিলাম,

-- ইয়াসির রাগ করেছেন? আমি ধৈর্য ধরতে পারিনি। ওয়াশরুমে যাওয়ার আগেই বমি চলে আসলো। কী করবো?
: কিছুই করতে হবে না, আমি আছি তো। আর মুখটাকে এতো অপরাধী করে রেখেছো কেন? বমি করা কি অপরাধ? পাগলি কোথাকার।


বলেই বিছানা পরিষ্কার করলো, নিজে গোসল করে সব কিছু ধুয়ে আসলেন। অথচ বাড়িতে রহিমা আছে কিন্তু তাও রহিমাকে না ডেকে নিজেই সব পরিষ্কার করলেন।
আমার ক্লান্ত চেহারা আর সহ্য করতে না পেরে শত নিষেধ সত্বেও আম্মাকে ডেকে নিয়ে আসলেন। আম্মা আমাকে দেখে, সব জানার পর মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
"ইয়াসির যা'তো বাজান, দোকানর থেইক্কা মিষ্টি লইয়া আই। সবাইরে মিষ্টি খাইতে দে আর বউয়ের লাইগা বউয়ের পছন্দের রসমালাই লইয়া আই। তারপর বউরে ডাক্তারের কাছে লইয়া যা"
ইয়াসির খানিকটা অবাক আর কিছুটা রাগ করে বললো,
: কী যে বলো মা, সুমু বমিতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে আর তোমার তাকে রসমালাই খাওয়ানোটাই বেশি হয়ে গেলো। সুমুর রসমলাই খেতে ইচ্ছে হলে, আগে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তারপর রসমালাই।
আম্মা আবার খিল খিল করে হেসে বললেন,
" বাজান এই সময় এমন বমি একটু আধটু হয়, বউয়ের লাইজ্ঞা আচার নিয়া আসিছ। এখন তো বরইয়ের মৌসুম কাল বাজার থেইক্কা বরই নিয়া আসিছ, বেশি করে আচার বানামু"
: কী বলো মা, আচার খেলে আরো বমি হবে তো।
আমিও বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসতেছি। ইয়াসির এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
: সুমু এতো বমির পরও তুমিও হাসতেছ। এখানে কি হচ্ছে কেউ কী আমাকে বলবে?
আম্মা আবার হেসে বললেন,
" মা'রে তুইই বল, এই পাগলডারে। আমি তোর শ্বশুরকে দিয়ে মিষ্টি আনাইতাছি।
: সুমু, আমাকে এতো রহস্যের মধ্যে রেখো না প্লীজ, কি হয়েছে বলো।
--আরে পাগল এখনো বুঝতে পারছেন না, আপনি বাবা হতে চলেছেন।
ইয়াসির চোখ বড় বড় করে, কত বার যে আলহামদুলিল্লাহ বললো জানি না।
: সুমু তুমি আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় খুশি দিয়েছি আল্লাহর ইচ্ছায়, বলো তুমি কী চাও? তুমি যা চাইবে তাই পাবে।
--সময় হলে চেয়ে নিবো।
: না এখনই চাও, যেটাই চাও সেটাই দিবো।
--দিবেন তো? ভেবে নিন। পরে পস্তাবেন কিন্তু।
: দেখই না, পস্তাই না খুশি হই।
--আচ্ছা বলবো, এখন আপাতত একটা ছেলে চাই। আমার ছেলের নাম রাখবো "আম্মার"
: না আল্লাহ যেটা দেন সেটাতেই আলহামদুলিল্লাহ। কারণ আল্লাহ যেটাই দেন ছেলে বা মেয়ে সেটাতেই অবশ্য আমাদের জন্য মঙল।
কারণ, আল্লাহ বলেছেন,

#নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহর জন্য।তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন,,যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র-সন্তান দান করেন,,অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন।নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল""-----[সূরা শূরা :আয়াত ৪৯-৫০]

--তাহলে কন্যা সন্তান বা সন্তান না হওয়ার জন্য আমাদের সমাজ স্ত্রীদের কেন দায়ী করে?
: জানে না বলেই। ওরা জানে না কন্যা সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে কত বড় নিয়ামত।
--হুম বুঝেছি,
আম্মা খাবার নিয়ে আসলেন, বাদামের হালুয়া আরো অনেক ফ্রুটস।
সেই সাথে ফ্রুট জুস। বললেন,
" যা বউরে খাইয়ে দে, বউ বমি কইরা খাহিল হইয়া পড়ছে"
ইয়াসির আস্তে করে বললেন,
: হু হু, আমিই তো খাইয়ে দিবো। এখন তো দুইজনকে খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার। কিন্তু আমার রাণী তো আমার কাছে যাওয়াটাও সহ্য করতে পারছে না।
মা চলে গেলো।
আহ! বেচারা ইয়াসির কতই না কষ্ট পাচ্ছে। সে খুব করে চাচ্ছে আমাকে খাইয়ে দিতে। কিন্তু সে'তো কাছেই আসতে পারছে না।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো, আবার তাকে ফ্লোরে ঘুমাতে হবে।
সোফায় বসা অবস্থায় বললো,
: কী মন খারাপ করেছ কেন? টেনশন করো না আমি তো আছিই।
--কিন্তু ইয়াসির আপনি তো কাছেই আসতে পারছেন না।
: এসব ঠিক হয়ে যাবে।
আমার প্রেগন্যান্সি এতো মারাত্মক ছিলো বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না, কিচ্ছু খেতে পারতাম না। শুধু স্যালাইনের উপর ছিলাম।
প্রায় তিন মাস ইয়াসিরের গায়ের ঘ্রাণ সহ্য করতে পারিনি।
লেখাঃ Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)
দুঃখিত শেষ করতে পারিনি, আজ শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ইন শা আল্লাহ আগামীকাল শেষ করবো


tag 


islamic kitab bangla
sunni bangla islamic book
all islamic books in bangla free download pdf
islamic history books in bangla free download pdf
bangla islamic website
bangla islamic book motiur rahman
bangla islamic dua book
imam ghazali bangla books pdfkolorober gojol badruzzaman kalarab kalarab tvholy tune gojolkalarab newainuddin al azad islamicbangla islamicsalam kalarabkalarab shilpi gosthi new song 2017kalarab allah allahmuhib khan 2018allah boloabu rayhan 2018holy tune recordsabu rayhan islamic songkala movieami dekhini tomayiqbal hjbangla islamic song 2017iqbal hossain jibon



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: