বুধবার

#নিয়তি( পর্ব--১০) । একটি ইসলামিক গল্প

#নিয়তি ( পর্ব--১০)

লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।


--- জানেন আমি না ওকে ডিভোর্স করতাম না যদি দেখতাম ও আমাকে সামান্য টুকু ভালোবাসে। কিন্তু ও আমাকে নয় বরং বিয়ের পর ও, এক মেয়ের সাথে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছিলো। বুঝতে পেরেছিলাম আমি মোহন আমাকে ভালোবাসেনা। তাই মুক্ত করে দিলাম, মুক্ত আকাশে ও উড়ে চলে গেলো একবার ও ফিরে তাকালোনা ।
.
.
.
নাজিফা নিশ্চুপ হয়ে যায়, ইমাদের দিকে চেয়ে দেখে ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ইমাদ, তাও একটু হেসে, নাজিফার দিকে চেয়ে বলে---- ভালোবাসতে ওকে খুব তাইনা????
----- কেউকে কারো ভালোবাসা পেতে হলে সেই মানুষটাকে অর্জন করতে হয়, ও তো আমাকে কখনোই অর্জন করতে পারেনি তাইতো আমি ও ওকে কখনোই ভালোবাসতে পারিনি, ওকে ছেড়ে চলে আসার সময় হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব হয়নি, বুকের বা পাঁজরে কষ্ট লাগেনি, একবার ও পিছুটানে অনুতপ্ত হয়নি। সোডিয়ামের আলোয় কখনো একা হাঁটা হয়নি, সহজে দুঃস্বপ্ন ভেবে মানুষটাকে ভুলে গিয়েছি।
---- তাহলে আমি কেন মিতুকে ভুলতে পারচ্ছিনা ???
---- কারন আপনি তাকে ভালোবাসেন। অন্তরের সবটুকু অনুভূতি দিয়ে আপনি তাকে অর্জন করতে পেরেছেন , তাই মিতুকে আপনি কখনো ভুলতে পারবেন না। আর যেদিন মিতুকে ভুলে যাবেন সেদিন আপনি নিজেই বুঝে নিবেন আপনি ওকে কখনোই ভালোবাসেন নি তাইতো ওর অনুপস্থিতি আপনাকে ওকে ভুলিয়ে দিলো। কিন্তু তাই বলে চলে যাওয়া মানুষটার জন্য জিবন থমকে দেওয়া মানেই আপনি হেরে গেছেন, কিন্তু তাই বলে চলে যাওয়া মানুষটার জন্য অন্য কাউকে ভালোবাসতে না পারা মানে আপনি ভালোবাসার আসল সংজ্ঞায় জানেন না।
.
.
.
ভালোবাসা মানে প্রথম ভালোবাসাকে শ্রদ্ধার সাথে মনে রেখে পুরনো অনুভূতিতে আবার কাউকে ভালোবাসতে পারা ,আবার কেউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা, আবার কাউকে নিয়ে কল্পনায় হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করা , কেননা জিবনে বাঁচতে হলে আপনাকে ভালোবাসতেই হবে , ভালোবাসা নামের চার অক্ষরের শব্দের সাথে জড়িত হতে হবেই।
---- না তা কখনোই আমার পক্ষে সম্ভব নয়, মিতু ছাড়া আমি আর কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
---- ইমাদ সাহেব বাস্তবতা দেখুন, আবেগে নিয়ে আর যাইহোক বাঁচা যায়না।
ইমাদ নাজিফার কথার আর কোনো উওর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিজের একরাশ আবেগ নিয়ে ছাদের উপর চলে যায়, আকাশের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো, ওই নিশ্চুপ তারাগুলোর সাথে কথা বলতে লাগলো , কিন্তু ছেলেটি বুঝতে পারছেনা তারা গুলো যে নির্বাক এরা না ওর দুঃখ বুঝবে না ওর কষ্ট।


দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীল আকাশের কোনো এক পাশে মিতুর মুখটা খুঁজতে থাকে । হঠ্যাৎ মনে হলো কেউ একজন আলতো করে হাতটাকে স্পর্শ করছে। তাকাতেই দেখে নওরীন।
---- বাবাই ও বাবাই তুমি এতো রাতে ছাদে কি করছো????
----- তুই এখানে এসেছিস কেন????
---- ওই মে....
----- কি হলো??বল তুই এখানে কেন এসেছিস ???
---- বাবাই ওই মেয়েটি পাঠিয়েছে।
---- এরকুম বলতে হয়না মা, ওনি তো....
--- কি বাবাই, ওনি কি??? আচ্ছা বাবাই আমি ওনি কে কি বলে ডাকবো???
ইমাদ হাটু গেড়ে বসে,,,
---- তোর ইচ্ছে মা, তুই যেটা বলে ডাকবি।
---- বাবাই ওকে আমি মামুনি বলে ডাকি???
ও না আমার মায়ের মতো, বাবাই এই মামুনি টা অনেক ভালো, অনেক সুন্দর একেবারে পরীর মতো, আমাকে আর বোনকে অনেক ভালোবাসে, আর!!!
----- আর কি???
---- আর তোমাকে ও অনেক ভালোবাসে।
ইমাদ সহসা অট্টহেসে উঠলো --- ওনি আমাকে ভালোবাসে, যদি তাই হয়তো তাহলে তো এভাবে চলে যাওয়ার কথাই বলতোনা। যদি তাই হতো তাহলে এভাবে আমায় একা ফেলে যাওয়ার চিন্তাই করতো না।
---- কি হলো বাবাই তুমি কি ভাবছো???
----- না কিছুনা, আসলে তোর মামুনিটা সবাইকে ভালোবাসলে ও আমায় ভালোবাসে না।
নওরীন ধমক দিয়ে,,,,
--- কে বলেছো তোমায়???? মামুনি তোমায় অনেক ভালোবাসে তাইতো আমাকে ছাদে পাঠিয়েছে তোমায় ধরে আনতে, তুমি যদি এখন না যাও তাহলে মামুনি নিজে এখন উপরে চলে আসবে এই ভাঙ্গা পা নিয়ে।
----- এসব তোকে ভয় দেখিয়েছে মা , বুঝছিস?
নওরীন ইমাদের হাত ধরে,,, ,
---- বাবাই প্লিজ চলো, না হলে কিন্তু মামুনি উপরে চলে আসবে।
---- বললাম না আসবেনা, তোকে ভয় দেখিয়েছে আমি ওনার কি লাগি যে আসবে।
---- আমাকে বলে দিয়েছে ৫ মিনিটের ভিতরে তোমায় নিয়ে নিচে না নামলে, সত্যি উপরে চলে আসবে।
ইমাদ পকেট থেকে মোবাইল বের করে টিপতে-- টিপতে নওরীনকে বললো --- বুঝলি মা, পৃথিবীর সবাই স্বার্থপর নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ -- কাউকে ভালোবাসেনা, তোর মামুনি ও নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউকে ভালোবাসেনা।
এই বলে ইমাদ মোবাইল টিপায় ব্যস্ত হলো, নওরীন ইমাদের হাত ধরে টানছে।
হঠ্যাৎ নাজিফার গলার চিৎকার পেয়ে ইমাদের হাত থেকে মোবাইল টা নিচে পড়ে যায়।ইমাদ তার দিকে খেয়াল ও করলো না, নিস্তেজ হয়ে গেলো --- নাজিফার আবার কিছু হলো না তো!! ও কি সত্যি উপরে চলে এসেছে!!!



নওরীন ইমাদের হাত ধরে ---- বাবা মামুনির গলার আওয়াজ না!!!!!!!
-- এ্যা, না কি বলছিস তুই।
এই বলে,
ইমাদ এক দৌড়ে ছাদ থেকে নিচে নামতেই দেখে নাজিফা সিঁড়ির মধ্যে বসে পা ধরে কান্না করছে। ইমাদ ওকে সিঁড়িতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়, ওর সামনে গিয়ে প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে বলে---- আপনি এই অবস্থায় সিঁড়িতে উঠলেন কেন????
----- আপনার জন্য।
--- চুপ থাকুন আমার জন্য, যতসব, এখন এই পায়ের ব্যাথা তো আর ও বেড়ে গেছে।
নওরীন অমনেই বললো --- ঠিকে তো তোমার জন্য, কতবার বলেছি মামুনি আমাকে বলেছে তোমাকে নিয়ে পাঁচ মিনিটের ভিতরে নিচে না গেলে উপরে চলে আসবে এই ভাঙ্গা পা নিয়ে এখন বুঝলে।।
--- চুপ থাক তুই আমাকে আগে বলবিনা যে সত্য করে বলেছে।
---- বাবা!!! আমি কি বলেছি মামুনি মিথ্যে করে বলেছে! এখন তুমি সব দোষ আমায় দিচ্ছ?
---- না সব দোষ আমারেই এখন চুপ থাক । যা নিচে গিয়ে বরফ নিয়ে আমার ঘরে আয় প্লিজ ।
--- ওকে বাবাই।
নওরীন চলে যেতেই, ইমাদ নাজিফাকে কোনো সংকোচ না করেই কোলে নিয়ে ঘরের উদ্দেশ্য হাঁটতে নিচে নামতে লাগলো । নাজিফা অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলো। শক্ত করে ওর কাঁধ দুটো কে আকড়ে ধরলো। ওর এভাবে শক্ত করে আকড়ে ধরা দেখে ইমাদ বুঝে ফেললো, মেয়েটি ওর মাঝেই এমন কেউকে খুঁজছে যে ওকে শত বিপদের মাঝে ও শক্ত করে ধরে রাখবে, ওর সুখে সুখী, আর দুখে দুখী হবে।



রুমে নিয়ে নাজিফাকে বিছানার উপর শোয়াতেই নওরীন বরফ নিয়ে ইমাদের ঘরে আসে।
--- বাবাই এই নেও।
----হুম।
Ice হাতে নিয়ে ইমাদ নওরীনকে বললো --- শুন এটা যেনে আর কেউ না জানে???
---- কেন বাবাই???
--- কেন আবার মা জানলে বাবাইকে বকবে।
---- আমি খুশি হব দিদুন তোমায় বকলে। দাঁড়া ও আমি এখনেই দিদুনকে গিয়ে বলছি।
এই বলে নওরীন চলে যেতেই ইমাদ ওকে বারবার ডাকতে থাকে। অতঃপর নাজিফার দিকে চেয়ে গরম চোখে,,,,
---- কে বলেছে উপরে যেতে??
--- আপনি তাহলে কেন আমার উপর রাগ করে উপরে চলে গিয়েছেন???
---- তাই বলে আপনি উপরে চলে আসবেন এই অবস্থায়!!!!
---- হুম যাবো, একশো বার যাবো।
---- আপনার সাথে কথা বলে পারা যায়না।
ইমাদ আর কথা না বাড়িয়ে নাজিফার পায়ের সামনে গিয়ে বসে ওর পায়ে বরফ লাগাতে থাকলো।
( চলবে)
লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।
( দুঃখীত আজ বড় করে লিখার সময় নেই, কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য লেখার সময় হয়নি। মাফ করবেন।)

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: