বুধবার

#নিয়তি( পর্ব--১১) লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি

#নিয়তি( পর্ব--১১)
লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি


সকালে নাজিফার ঘুম ভাঙ্গতেই ও ইমাদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায় , চোখ কচলাতে থাকলো, বারবার নিজের হাতে চিমটি দিয়ে দেখতে লাগলো এটা কি স্বপ্ন না বাস্তব??? আমি কিছু ভুল দেখছি, না তো , ইমাদ সাহেব নামাজ পড়ছেন!!!!!!!! এটা কিভাবে সম্ভব!!! আমার তো মাথা ঘুরছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কি তাকে কবুল করে নিয়েছে!!

ইমাদ নামাজ পড়ে মোনাজাত শেষে পিছনে তাকাতেই, নাজিফাকে দেখে মাথা থেকে টুপি টা খুলে ফেললো, আমতাআমতা করে নাজিফাকে বললো ---- এ,এ এভাবে তাকিয়ে থাকার কি হলো???
---- ইয়ে মা, মা,মা, আপনি না,না,নামাজ পড়েছেন????
---তা একথা বলতে গিয়ে এতো আমতাআমতা করার কি হলো????
--- আপনি সত্যি নামাজ পড়েছেন????
.
.
ইমাদ চেঁচিয়ে -- চেঁচিয়ে --- জানেন তো এই জন্য আমি বাসায় নামাজ পড়তে চায়নি, জানতাম আপনি এমন করবেন, মসজিদে যাওয়ার জন্য যেই রওয়ানা দিলাম ওমনেই বাহিরে ঝড় -- বৃষ্টি শুরু হলো। তাই যেতে পারলাম না, এই বলে ইমাদ হাতের জায়নামাজ টা গুছাতে লাগলো।
.
.
নাজিফা ছেলেটির দিকে চেয়ে রইলো, অদ্ভুত মায়াবী চেহারা, বাদামি রংয়ের চোখ, গোলাপি ওষ্ঠদ্বয়, কুচকুচে কালো ভ্রু, আর তার উপরে পরনে নীল কালার পান্জাবি, আর মাথায় সাদা টুপি, সত্যি এ তো সেই মানুষ যে আমার রাত জাগার কবিতা ছিলো , যে আমার গল্পের নায়ক ছিলো ।আজ পবিত্র কোরআনের সেই মধুর প্রশান্তি আয়াত টার কথা খুব মনে পড়ছে-----------
إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
"ইন্নাল্লাহা মা'আস সাবিরিন"
"নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন"
Verily, Allah is with those who are Patient
[Quran 2:153]
নাজিফা উপরের দিকে দুহাত তুলে শুকরীয়া আদায় করলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে।
ইমাদ তখন ভ্রু কুঁচকে বললো ......
---- তা ম্যাডাম দু হাত উপরের দিকে তুলে কি করছেন আজকে কি আপনি নামাজ পড়বেন না???
---- এ্যা, ও হ্যা,পড়বো তো।
ইমাদ জায়নামাজ টা রেখে নাজিফাকে অযুর পানি এনে দেয়।
নাজিফা তখন একটু মলিন মাখা মুখ নিয়ে,,,,
--- তা এভাবে আর কয়দিন আমাকে পানি এনে দিবেন???
---- আপনি যতদিন চাইবেন।
---- আমি যদি বলি সারাজীবনের জন্য।
ইমাদ কি ভেবে হেসে বললো ----তার মানে আপনি সারাজীবন এভাবে পুঙ্গ হয়ে থাকবেন!!!! হা,হা,হা
এই বলে ইমাদ ঘর থেকে বাহিরে চলে যায়। নাজিফা ভাবলো ছেলেটি বুঝলো না তার কথার ভাবার্থ, এভাবে হাসি -- ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিলো!!!!!

ইমাদ ঘর থেকে বের হয়ে পিচ ঢালা পথে, নীল আকাশ কে বন্ধু করে হাঁটতে থাকে, আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে-- হেসে আল্লাহ কে বলতে থাকে ---অভিমান করে তোমায় ভুলে থাকতে গিয়েছিলাম আল্লাহ, কিন্তু এমন একটা মানুষকে জীবনে পাঠালে যে কিনা আমাকে আবার তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলো, আমাকে বুঝিয়ে দিলো তুমি তোমার বান্দা দের প্রতি পদে পরীক্ষা করো কেবল , আর সেই মানুষটাকেই আবার তুমি আমার জীবন থেকে নিয়ে যাবে!!!!
আর এতোই যদি সারাজীবন আমাকে পাশে চান তাহলে সুস্থ হয়ে কেন বলেন চলে যাবেন ???? কেন ও একবার ও বলেননা দেখুন আমি কিন্তু আপনার স্ত্রী আমি আপনাকে ছেড়ে যাবোনা।
ইগো দেখান আমার সাথে তাইনা, চলে যাক তাতে আমার কি, যতসব, আমি ও ইগো দেখাবো এবার থেকে।



-------- এই যে আঙ্কেল ফুল নিবেন?
---- কে??
ইমাদ পাশে তাকিয়ে দেখে রুক্ষ চুলের, ছেড়া ফ্রক পরুয়া, শুকনো, করুন চাহনির একটি ১০ কি ১১ বছরের মেয়ে। হাতে লাল গোলাপের বিশাল তোড়া, আর রজনীগন্ধা ফুল, বকুল ফুলের মালা, আর ও দুই রকমের ফুল।
ইমাদ একটু গম্ভীর হয়ে,,,,,,,
------ না লাগবেনা।
---- কি রাগ করেছেন কারো সাথে???
.
.
ইমাদ চুপ করে একটি গাছের নিচে বসলো, মেয়েটি ইমাদের পাশে বসে বলতে লাগলো ---- নেন না আঙ্কেল, দুটো পয়সা দেন না সবথেকে কম দামে দিবো।।
---- নিয়ে কি করবো বল মা, কাকে দিবো নেওয়ার যে কেউ নেই,আর তাছাড়া এতো ফুল দিয়ে আমি কি করবো?
, তুই বরং ফুল গুলো রেখে দে আর এই নে এই ৫০০ টা টাকা রাখ।
মেয়েটি একটু হেসে--- বুঝছি আনটির সাথে ঝগড়া হয়েছে তাইনা???
--- এতো পাকা বুড়ি কেন তুই??
--- জানেন আঙ্কেল আমার আম্মু যখন আব্বুর সাথে রাগ করতো আব্বু তখন একটি গোলাপ আম্মুকে দিতেই আম্মু মুচকি হাসি দিয়ে সব অভিমান দূরে ঠেলে দিতো। কিন্তু আব্বু মারা যাওয়ার পর আমার আম্মু কোমায় চলে গেছে আর আমি এতিম হয়ে গেছি , নিজের পেট চালাতে এই ফুল বিক্রি করি। আঙ্কেল ফুল পবিত্র এটা যে কারো মন ভালো করে দেয় আপনি বরং এই সবগুলো ফুল আনটিকে দিয়েন। দেখবেন আনটির মন ভালো হয়ে যাবে।



মেয়েটি ফুল গুলোকে ইমাদের পাশে রেখে ৫০০ টাকা নিয়ে খুশিতে পিচ ঢালা পথের সাথে মিলে গেলো। ইমাদ কেন জানি মেয়েটির আবদারটা ফেরাতে পারলো না। আল্লাহ তো আমার মেয়েগুলোকে ওর মতো করলো না, আমাকে তিনি কত ভালোবাসলেন অথচ আমি ওনার উপর অভিমান করে ছিলাম!!!
ইমাদ অনুতপ্ত হয়ে পাশে তাকাতেই ফুল গুলো দেখে মেয়েটির শেষ কথাটি মনে পড়লো --- আঙ্কেল ফুল পবিত্র।
তার মানে এটি পবিত্র কোনো মানুষকেই দেওয়া উচিত।
ইমাদ ফুল গুলো হাতে নিয়ে বাড়িতে গেলো।



রুমে ঢুকার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইমাদ একশো বার ভাবলো --- ভিতরে কি এই ফুল নিয়ে যাবো??? না থাক ফুল গুলো বাহিরে রেখে আসি, না কেন রাখবো আমি কি ওনার জন্য কিনেছি আর তাছাড়া এটা আমার ঘর আমি যেটা ইচ্ছে সেটা নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারবো ।
.
ইমাদ একটা ভাব নিয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখে নাজিফা বিছানা জারছে।
ইমাদ ধমক দিয়ে --- এ কি আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে!!!!
--- কে ও ইমাদ সাহেব, কেন আমার মাথা খারাপ হবে???
--- আপনি এই ভাঙ্গা পা নিয়ে বিছানা থেকে নেমেছেন???
---- আসলে পায়ের ব্যাথা টা না কমে গেছে, আর তাছাড়া এ ভাবে শুয়ে থাকলে হবেনা, কাজ আছে অনেক মেয়েগুলোকে স্কুলে পাঠানো, ওদের জন্য নাস্তা করা,এগুলো তো প্রতিদিন আর আপনি করে দিবেন না।
ইমাদ গোমরা মুখ করে,,,,,,,,,,,,,
---- যা খুশি তাই করুন আপনি।
--- তাইতো করবো। এনিওয়ে আপনার হাতে ওগুলো কি???
--- এলে বাবালে আপনি কি ছোট খুকি যে এগুলোর নাম জানেন না???
----- তা না আসলে এতো ফুল আপনার হতে এগুলো কি আমার.............
ইমাদ একটু হেসে,,,,,,,
--- কি হলো চুপ হয়ে গেছেন কেন ???? যেটা বলতে গিয়েছেন সেটা বলুন।
------ না মানে আসলে এতো ফুল আপনার হাতে, এগুলো কি আমার কাছে বিক্রি করতে আনছেন।।
ইমাদ চেঁচিয়ো --কি!!!!!!
আমি ফুল বিক্রি করবো আপনার কাছে!!!
--- তা নয়তো কি, এতো ফুল পাগলে ও তো আনে না। যারা আনে তাদের এক কথায় ফুল বিক্রেতা বলে। এই আপনার কি চাকরি চলে গেছে???
--- কেন??
--না মানে ফুল বিক্রির পাল্লায় নামছেন যে।



ইমাদ নাজিফার কাছে এসে আঙ্গুল তুলে বলে--- আপনি না কখনো আমাকে বুঝবেন না।কখনো না।
এই বলে ইমাদ অন্য দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে রইলে,
নাজিফা শান্ত কন্ঠে বলে--- এতে বুঝে কি হবে যদি সেই মানুষটা ইগোর জন্য নিজের মনের কথা না বলতে পারে ।
ইমাদ তেড়ে এসে নাজিফার হাত ধরে --- আপনি বুঝি ইগো দেখাচ্ছেন না, আর কিসের মনের কথা বলবো আপনাকে???লিসেন কিছু বলার নেই আপনাকে , আপনে চলে গেলে আমি বরং খুশি হবো।
ইমাদ হাতের সব গুলো ফুল নিচে ফেলে দিলো।
রেগে চলে যেতে চাইলে,
নাজিফা অন্যমনস্ক হয়ে ইমাদকে বললো --- আজ দুপুরে মা আসবে আমায় নিয়ে যেতে।
ইমাদ কথাটির কোনো গুরুত্ব না দিয়ে চলে গেলো।
নাজিফা মুখে হাসি ফুটিয়ে মেঝে থেকে সবগুলো ফুলের তোড়া উঠিয়ে, ঠুনকো হেসে বললো --- আপনার মনের কথা গুলো যদি আমি এতো তাড়াতাড়ি বুঝি , তাহলে যে আপনাকে আমি ইগো থেকে বের করতে পারবোনা , আর আপনাকে চাপা স্বভাবের মানুষ থেকে ও যে আমি মুক্ত করতে পারবোনা।তাই না হয় অবুঝেই রয়ে গেলাম।
(চলবে)
লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।।।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: