বুধবার

#নিয়তি( পর্ব--১২) .লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি

#নিয়তি( পর্ব--১২)
.লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি

.
দুপুর বেলা ইমাদ চেম্বার থেকে বাড়ি ফিরতেই দেখে নাজিফার মা এসেছে। ওনাকে দেখে ইমাদের কপালে ভাজ পড়ে গেলো। তার মানে সকালে নাজিফা যেটা বলেছে সেটা সত্যি!!!!! নিজের ভালো তো পাগল ও বুঝে অথচ এই মেয়েটি নিজের ভালো বুঝেনা।
ইমাদকে দরজার সামনে দেখে সালেহা বললো ----আরে ইমাদ এসেছিস তুই??? এই দেখ কে এসেছে???
নাজিফার মা তখন বললো ----- বাবা কেমন আছো????
---- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন????
সালেহা ইমাদের এরুপ আচরণ দেখে আশ্চর্য হলেন ---- তার মানে নাজিফা যে বললো, ইমাদ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে সেটা সত্যি!!!!!!
--- জ্বি বাবা আমি ও ভালো আছি।
ইমাদ মুখটাকে ম্লান করে সালেহাকে জিজ্ঞাসা করলো---- মা নাজিফা কোথায়????
সালেহা হেসে বললো ---আমার রুমে গেছে।
---- কেন???
---কেন আবার ওর লাগেজ গুছাতে।
এই বলে সালেহা নাজিফার মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে
---- বেয়াইন তো ওকে নিয়ে যেতে এসেছে, তাই মেয়েটি জামা-- কাপড় নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।
ইমাদ প্রখর নয়নে সালেহার দিকে চেয়ে........
------ মা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো!!!!!!এই তোমার কি জ্বর হয়েছে। তুমি এই মহি..........
সালেহা ইমাদের মুখ চেপে ধরে, অতঃপর আস্তে বললো ---- কি হচ্ছে কি এসব? ওনার সামনে কি তুই এভাবে আচরণ করবি????
ইমাদ মুখ থেকে সালেহার হাত সরিয়ে....
-----হ্যা একশো বার করবো।
---- যা তো এখান থেকে, ওনি কি আর জোর করে নাজিফাকে নিয়ে যাচ্ছে । নাজিফা নিজে ও যেতে চাচ্ছে।
--- কি!!!!!! দাড়াও।



ইমাদ সোজা সালেহার রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখে নাজিফা লাগেজে জামা-- কাপড় ঢুকাচ্ছে। ইমাদ কোনো কথা না বলে, ওর হাতটা গিয়ে প্রচন্ড জোরে ধরে উগ্র মেজাজে বলে ------ সমস্যা টা কি আপনার????
----- আমার আবার কি সমস্যা, আর হাতটা ছাড়ুন, ব্যাথা পাচ্ছি খুব।
--- পান আপনার ব্যাথা পাওয়ায় উচিত। আপনি সকালে যেটা বলেছেন তা সত্যি!!!
---- তা নয়তো কি আমি আপনার সাথে মিথ্যে বলেছি!
---- এই আপনার আর মায়ের হলো টা কি, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না কিছুদিন আগে ও তো এ মহিলাটির উপর আপনার অনেক রাগ ছিলো।
---- ওনাকে আপনি মহিলা বলছেন কেন, ওনি তো আপনার গুরুজন।
---- যে আপনাকে এতো কষ্ট দিলো সে আর যাইহোক তাকে আমি সম্মান করতে পারবোনা।
------ বাবা!!! তা আমাকে কেউ কষ্ট দিলে তাতে আপনার কি!!!!
---- আ,আ,আামার কিছুনা, আপনাকে কষ্ট দিলে আমার কি???
---- আবার ইগো দেখাচ্ছেন।
নাজিফা কিছুটা বিরক্ত হয়ে......
---- দেখি আমার হাতটা ছাড়ুন, আমাকে যেতে হবে ।
---- না ছাড়বোনা। কি করবেন আপনি না ছাড়লে???
--- আপনে কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন, আর তাছাড়া আমার হাত ধরার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে???
---- আপনি আমার বিয়ে করা বউ অতএব আপনার হাতটা আমি একশো বার ধরার অধিকার রাখি।
---- তাহলে আপনি বলছেন আমি আপনার বিয়ে করা বউ?
ইমাদ একটু শান্ত হয়ে........
---- তা নয়তো কি যেহুতো মায়ের জোরে বিয়ে করেছি সেহুতো বউ।
---- ও তার মানে আপনি আমাকে বউ হিসেবে মানছেন না তাইতো??
---- ইয়ে মা,মানে আমি তো আ, আপনাকে বিয়ের রাতেই বলে দিয়েছিলাম আপনাকে আমি কখনোই স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবোনা।
নাজিফা জোরে হাতটা ছাড়িয়ে --- তাহলে আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেন??? আমি আপনার কিছু লাগিনা, বরং আমি চলে গেলে আপনি অনেক বেশি খুশি হবেন।
.
.
.
নাজিফা লাগেজ নিয়ে নিচে চলে আসলো , সালেহার তা দেখে মুখটা শুকিয়ে গেলো। তার মানে ইমাদ এখন ও নাজিফাকে নিজের মনের কথা বলতে পারলোনা। কিন্তু এখন যদি নাজিফার মা ওকে নিয়ে চলে যায় তাহলে তো..........
এই বলে সালেহা ভয়ে ঘামাতে লাগলো ---- আমি কি নাজিফার কথায় এই নাটক টা করে ভুল করলাম, ইমাদ যদি ওকে না আটকায় তাহলে..........
নাজিফা সালেহার সামনে এসে--- মা ভালো থাকবেন আমি চলে যাচ্ছি নিজের শরীরের যত্ন নিবেন।
---- সালেহা আস্তে-- আস্তে বললো --- তুমি সত্যি যাচ্ছ!!!!!!
--- দেখ না মা কি হয়।
---- কিরে নাজিফা শাশুড়ির সাথে কি বিড়বিড় করে বলছিস, চল।
--- হ্যা মা।
ইমাদ উপর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে --- মানে কি ওনি সত্যি চলে যাচ্ছে। ওনি আমাকে ছেড়ে সত্যি চলে যাচ্ছে।



নাজিফা আড়চোখে উপরের দিকে বারবার তাকাতে লাগলো, ---- কি ব্যাপার ওনি কি আমাকে বাঁধা দিবেননা! মা কে পশ্রয় দিয়েছি যে কারনে সেই প্লান টা কি আমার সফল হবেনা!!!!
এমন সময় হঠ্যাৎ ইমাদ উপর থেকে নাজিফাকে বললো ---- দাঁড়া ও!
নাজিফা আনন্দ চোখে ইমাদের দিকে চেয়ে রইলো। ইমাদ নিচে নেমে এসে নাজিফাকে বললো ---- কোথায় যাচ্ছ তুমি?
----- আপনি বুঝি জানেন না।
,ইমাদ নাজিফার হাত ধরে,,,,,
---- তুমি আমার স্ত্রী, অতএব তোমাকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নেওয়ার অধিকার রাখেনা।
নাজিফার মা তখন রেগে বললো --- কিন্তু বাবা তুমি তো ওকে ভালোবাসোনা, তাইতো মোহন ওকে এখন ও ভালোবাসে ওকে আবার ফিরে পেতে চায় তাই আমি....
---- চুপ থাকুন কে বলেছে আমি ওকে ভালোবাসিনা, আমি ওকে.........
চুপ হয়ে যায় ইমাদ, নাজিফা করুন চাহনিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো ---- কি হলো চুপ হয়ে গেছেন কেন প্লিজ কথা বলুন, প্লিজ বলুন।।।।।
---- কি, কিছুনা ।
নাজিফার মায়ের দিকে ইমাদ আঙ্গুল তুলিয়ে---- লজ্জা লাগেনা আপনার এই চিন্তা ভাবনা করতে , আপনি আমার ওয়াইফ কে বাহিরের একটি লোকের হাতে তুলে দিবেন!!! কে মোহন, মোহনের সাথে নাজিফার কোনো সম্পর্ক নেই। নোহন ছিলো নাজিফার অতীত আর আমি নাজিফার বর্তমান।
নাজিফার দিকে চেয়ে,,,,,,,
------ আর আপনি! আপনার মাকে পশ্রয় দিচ্ছেন, ওনি আপনার মা দেখে আর কিছুই বললাম না, মা ওনাকে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যেতে বলবেন।
এই বলে নাজিফা ইমাদকে নিয়ে উপরে চলে যায়।



নাজিফা বিছানায় বসে নিচের দিকে চেয়ে -------- আপনি কেন আমাকে যেতে দিলেন না????
ইমাদ হাঁটু গেড়ে বসে, নাজিফার হাঁটুতে হাত রেখে----- কেন বুঝচ্ছেন না আমি আপনাকে........
---- কি আপনি আমাকে????
---- সব কথা মুখে বলতে হয় তাইনা??????
-------- মানুষকে মনের সব কথা তার প্রিয় মানুষকে বলার সৎ সাহস থাকতে হয়, কেননা জিবনে যদি সেই মানুষটার সাথে চলতে হয় তাহলে এক আত্মা হয়ে যেতে হয়, ভালো বন্ধু হতে হয়।
তবেই দুজনে পৃথিবীকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে।।
( চলবে)
লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।।।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: