বুধবার

#নিয়তি( পর্ব--১৩) লিখা--আসমা আক্তার পিংকি

#নিয়তি( পর্ব--১৩)
লিখা--আসমা আক্তার পিংকি


ইদানিং ইমাদের মনটা সারাদিন খুব খারাপ থাকে, সারাদিন কিছু অজুহাত খোঁজে নাজিফার সাথে কথা বলতে। কিন্তু নাজিফা সহজে ইমাদের কাছে ও আসেনা। আজ সকাল -- সকাল ইমাদের ঘুম ভাঙতেই সে দেখে নাজিফা তার পাশে নেই। বিস্মিত কন্ঠে নাজিফাকে ইমাদ ডাকতে লাগলো কিন্ত কোনো সাড়াশব্দ নেই।
----- কি ব্যাপার আমি এতো ডাকছি, তা ও আসছে না!!!!!
ইমাদ বিছানা থেকে নেমে, সোজা নিচে চলে গেলো। গিয়ে দেখে নাজিফা রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছে, পাশে নওরীন বসে রয়েছে আর নাজিফার সাথে কিছুসময় পর -- পর কথা বলছে ----- আচ্ছা মামুনি তুমি কালকে রাতে আমাদের সাথে শুয়েছো কেন?????
---- কি করবো বলো মা,তোমার বাবাই যে ঘুৃেম প্রচন্ড নাক ডাকে।
কথাটি ইমাদের কানে যেতেই আচমকা কন্ঠে নাজিফার দিকে চেয়ে বললো ---Excuse me,,,,,,,,, আমি নাক ডাকি!!!!!!!!!!
নাজিফা একটু হেসে------ তো কি আমি মিথ্যে বলছি?????
---- হ্যা বাবাই তুমি নাক ডাকো......
ইমাদ গরম চোখে নওরীনের দিকে তাকিয়ে------ ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে, তুই কখনো শুনেছিস আমার নাক ডাকার অভ্যাস আছে????
--- না তবে এখন তো মামুনির কাছে শুনেছি।।।।
এই বলে নওরীন আর নাজিফা খিলখিল করে হাসতে লাগলো, ওদের হাসির আওয়াজে উপর থেকে ফাহাদ তিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো ---- বাহ!!!! নওরীন ভালোই তো সহজে মানুষকে ভুলে যেতে পারিস।।।
নওরীন হাসি মুখটাকে ফ্যাকাসে করে--- মানে বড় আব্বু!!
ফাহাদ একটু অট্টহাসি দিয়ে----- মাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি!!!! মায়ের জায়গায় খুব সহজে এই মেয়েটিকে স্থান দিলি!!!
ফাহাদের পাশে ফাহমিদা দাড়িয়ে নেইলকাটার দিয়ে নখ কাটতে -- কাটতে,,,,, ------ ভুলবেনা,,,, ফাহাদ তোমার ভাইয়ে ও তো মিতুকে খুব সহজে ভুলে গেলো। এই সেই ইমাদ যে মিতুকে ছাড়া কিছুই বুঝতোনা, মিতুর মৃত্যুর পর ইভেন ওয়াদা ও করেছিলো আর কোনোদিন বিয়ে করবে না, আর আজ সে ছেলেই নাকি এভাবে পাল্টে গেলো।।।।।
.
.
.
ইমাদ ফাহমিদার কথাগুলোতে নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করলো--- সত্যিই তো আমি এতো তাড়াতাড়ি মিতুকে ভুলে গেলাম!! আমি যে মিতুকেই শুধু ভালোবাসি তাহলে কেন নাজিফার জন্য আমার এতো কাকুতি-- মিনতি। কেন নাজিফাকে আমি এতো গুরুত্ব দিচ্ছি???? আমি তো তাহলে মিতুকে ঠকাচ্ছি, ,,,, আমার ভালোবাসাকে ছোট করে ফেলছি???
ফাহমিদা নিচে নেমে এসে ইমাদের সামনে দাঁড়িয়ে----- আচ্ছা ইমাদ তুৃমি কি সত্যি মিতুকে কখনো লাভ করেছো????
ইমাদ আমতাআমতা করে--- কে কে কেন তোমার এটা মনে হচ্ছে বৌ মনি????
---- না আসলে তোমার ভালোবাসাটা এতোটাই পানসে যে মানুষটা মরে যাওয়ার সাথে -- সাথে তুমি তাকে ভুলে গেলে?? তার জায়গায় অন্য কাউকে স্থান দিলে?? আদৌ কি এটাকে কি রিয়েল লাভ বলে নাকি ফেইক বলে??? তুমিয়ে ভাবো --- যাকে ছাড়া একটা সময় তুৃমি কিছু বুঝতে না আজ তাকেই তোমার সারাদিন একবার ও মনে পড়ে না।।।।। যার ছবি দেখলে একটা সময় তার বিয়োগ বেদনায় কাঁদতে,,,, আজ তার জন্যই দু'ফোঁটা চোখের জল ও ভুল করে ঝরে পড়ে না।।।।
ব্যাপারটা তোমাকে এখন আর ভাবায় না তাইনা, আসলে তুমি কখনোই মিতুকে ভালোবাসোনি...............
ইমাদ ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে কান্নামাখা কন্ঠে ----- ঠিকেই তো আমি এমন ভুল কিভাবে করলাম,,, আমি কেমনে ওকে ভুলে আছি.....
এই বলতে -- বলতে ইমাদ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। নাজিফা কাঁদতে-- কাঁদতে ইমাদের পিছু যেতে চাইলেই ফাহমিদা নাজিফার হাতটা শক্ত করে ধরে--- আমাকে সেদিন জ্ঞান দিয়েছিলে না এবার বুঝো আমি কি, কি করতে পারি।।।। দেখো আজকে সারাদিন ও ইমাদ বাসায় আসে কিনা।।
.
.
.
এই বলে ফাহমিদা ফিকফিক হেঁসে ফাহাদকে বললো---- চলো ফাহাদ রুমে যাই এখনো বুয়ার যে রুটি বানানো হয়নি,,,,,,,
যাওয়ার সময় নওরীন কে উদ্দেশ্যে করে ফাহমিদা বললো-- আর হ্যা নওরীন তুই যে একে মামুনি বলে ডাকিস তুই জানীস এতে তোর মা কতোটা কষ্ট পাচ্ছে কবরে।।।। তুই ও তোর মাকে ভুলে গেলি।
ফাহমিদার কথায় নওরীনের মনটা ঘুরে গেলো। নওরীন ও ঘরের দিকে চলে গেলো। সবাই যখন নাজিফাকে একা করে চলে গেলো,, মেয়েটি তখন নিচে বসে পড়লো ---- উপরে দিকে তাকিয়ে কাঁদতে -- কাঁদতে সৃষ্টিকর্তাকে বললো--- আর কতো আমার পরীক্ষা নিবা তুমি??? আল্লাহ বলতে পারো কেন আমার সাথে এমন হচ্ছে, শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবসি বলে আমি মোহনের কাছে এতো অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছি,লোকমুখে এতো কথা শুনেছি। তোমাকে সবসময় বলেছি --- আল্লাহ জীবনে এমন একজন মানুষের সাথে দেখা করাও যে আমাকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে, যে একজন ভালো মানুষ হবে।। অবশেষে তুমি দেখা করালে এমন একটা মানুষের সাথে আশার আলো জাগালে মনে এখন আবার তুমিয়ে তা নিভিয়ে দিতে চাচ্ছো,,, আমি কি করবো বলো,,,, আমি কি করবো।।।।
.
.
.
মেয়েটি বুকের চাপা কষ্ট গুলো আজ আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক তো হলো সেগুলো চেপে রেখে কষ্ট পাওয়া,,,, ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি রেখে এক জীবন এভাবে পার করা। কিন্তু দিনশেষে যখন সূর্য টা অস্তমিত হয় তখন সত্যিই ভাবতে হয় মেয়েটি -- জীবনে কারো ভালোবাসা পেলোনা , না বাবার, না মায়ের, না স্বামীর, আর না এই পৃথিবীর কারো। কিন্তু তবুও মেয়েটি ঠকে গিয়ে নিজেকে জিতিয়ে দেয় এই ভেবে যে কারো না পেলে ও যে মহান আল্লাহ পাকের ভালোবাসা পেয়েছি ওটাই আমার জন্য যথেষ্ট।।
কিন্তু আজ আর পারলোনা মনকে বুঝাতে। কেননা মেয়েটি যে ইমাদকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে। নিজের মনের সবটুকু রং দিয়ে যে সে ইমাদকে নিজের করে নিয়েছে ।।।
সালেহা বেগম নাজিফার গুনগুনিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে বাহিরে এসে দেখে-- নাজিফা মেঝেতে বসে কাঁদছে। চোখের জলগুলো অনায়াসে গড়িয়ে পড়ছে।।।
সালেহা একটু চমকে গিয়ে--- নাজিফা মা তোর কি হয়েছে???? তুই কেন এভাবে কাঁদছিস???
মায়ের মতো শাশুড়ির এমন কাকুতি কন্ঠ নাজিফার কানে যেতেই নাজিফা এক লাফ মেরে উঠে পড়লো। সালেহাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো--- মা ইমাদ, ইমাদ.....
--- হ্যা কি হয়েছে বল?
--- মা ইমাদ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।।
--- কিন্তু কেন???
নাজিফা তখন সবকিছু খুলে বলতেই সালেহা ক্ষীণ কন্ঠে বললো---- এরা আমার ছেলেটাকে ভালোভাবে বাঁচতে দিবেনা।
নাজিফা কাঁপা - কাঁপা কন্ঠে--- মা প্লিজ তুমি এভাবে বলোনা। তুমি বরং ওকে একবার ফোন দিয়ে বলো--- বাসায় ফিরে আসতে,,, তুৃমি তো মা তোমার কথা শুনবে হয়তো.........
সালেহা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে --- না রে মা..... ও আজ সারাদিন ও বাড়ি ফিরবেনা।।।
---- মা তুমি একবার চেষ্টা করোনা.....৷
--- তুই যেহুতে বলছিস তাহলে আমি ফোন দেই...
এই বলে সালেহা বেগম ফোন দিলো। ফোনের ওপাশে রিং হলো,,,, কিন্তু ফোন ধরার মানুষটা হয়তো ইচ্ছে করেই ফোন ধরলো না।
সালেহা নিরাশ হয়ে--- ফোন ধরছে না।।।। নাজিফা চুপ হয়ে সালেহার দিকে চেয়ে রইলো।।।।
.
.
.
সন্ধের দিকে ইমাদ বাড়ি ফিরতেই সালেহা ওর সামনে গিয়ে,,, কিছুটা রেগে বললো--- সারাদিন কোথায় ছিলিস???আমি এতোবার তোকে ফোন করলাম তুই কেন ফোন ধরলি না।।।
ইমাদ গম্ভীর কন্ঠে --- ইচ্ছে করেনি তাই ধরিনি মা। আর তাছাড়া আমি আগে ও তো এমন ছিলাম, হঠাৎ বাড়ি থেকে চলে যেতাম,,, তুমি ফোন দিতে যখন দেখতে আমি ধরতাম না তখন বুঝে নিতে আমি মিতুর কবর যিয়ারত করতে গিয়েছি তাহলে আজ কেনো এতো চিন্তা, প্রশ্ন???
-
--- কারন সেদিন মিতু ছাড়া তোর জীবনে কেউ ছিলোনা,কিন্তু আজ নাজিফা তোর জীবনে এসেছে। মিতু আজ তোর অতীত এবং নাজিফা তোর বর্তমান, ভবিষ্যৎ।।।
ইমাদ চেঁচিয়ে -- চেঁচিয়ে সালেহাকে বললো----ব্যস মা তুমি অনেক করেছো, কিন্তু আর নয়। তোমার কারনে আমি মিতুকে পর্যন্ত ভুলে গিয়েছি। মা একটা কথা নাজিফাকে মাথায় ঢুকিয়ে নিতে বলো--আমি কখনোই ওকে স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবোনা। আর কখনোই ভালোবাসতে পারবো না।
এই বলে ইমাদ উপরে যেতেই নাজিফা ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। কাজল লেপটানো চোখ দুটো আশ্রুজলে ইমাদের দিকে চেয়ে আস্তে - করে বললো--- যদি কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা নাই দিতে পারেন তাহলে কেন মায়ের সাথে চলে যেতে দিলেন না??? কেন এভাবে আমাকে মায়ার জালে আটকে দিলেন? কেন এতো মায়া দেখালেন???
.
.
.
নাজিফার প্রশ্নের উওর ইমাদ দিতে পারলো না। কেননা সে নিজেই জানেনা কোন মায়াজালে সে আটকে পড়েছে।।।।
কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে চোখ লাল চে করে নাজিফাকে বললো--- জানীনা।।।।।
এই বলে উপরের দিকে নিজের ঘরে চলে গেলো।।। নাজিফা ইমাদের চলে যাওয়ার দিকে অনিমেষ ভাবে চেয়ে রইলো।।
.
.
.
রান্নাঘরে এসে নাজিফা নিজেকেই নিজে বলতে লাগলো ---
ইমাদের সাহেবের মনটা হয়তো তখন খুব খারাপ ছিলো তাই এইভাবে আচরণ করেছে। এখন হয়তো মন- মানসিকতা আবার ঠিক হয়ে গেছে,,,,,,,,, এখন আমার সাথে ভালোভাবেই কথা বলবে এই ভেবে নাজিফা সমস্ত কষ্ট দূরে সরিয়ে,,,,, ইমাদের জন্য রাতের খাবার নিয়ে উপরে গেলো।।।
(চলবে)
লিখা--আসমা আক্তার পিংকি।।।।
ইদানিং ইমাদের মনটা সারাদিন খুব খারাপ থাকে, সারাদিন কিছু অজুহাত খোঁজে নাজিফার সাথে কথা বলতে। কিন্তু নাজিফা সহজে ইমাদের কাছে ও আসেনা। আজ সকাল -- সকাল ইমাদের ঘুম ভাঙতেই সে দেখে নাজিফা তার পাশে নেই। বিস্মিত কন্ঠে নাজিফাকে ইমাদ ডাকতে লাগলো কিন্ত কোনো সাড়াশব্দ নেই।
----- কি ব্যাপার আমি এতো ডাকছি, তা ও আসছে না!!!!!
ইমাদ বিছানা থেকে নেমে, সোজা নিচে চলে গেলো। গিয়ে দেখে নাজিফা রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছে, পাশে নওরীন বসে রয়েছে আর নাজিফার সাথে কিছুসময় পর -- পর কথা বলছে ----- আচ্ছা মামুনি তুমি কালকে রাতে আমাদের সাথে শুয়েছো কেন?????
---- কি করবো বলো মা,তোমার বাবাই যে ঘুৃেম প্রচন্ড নাক ডাকে।
কথাটি ইমাদের কানে যেতেই আচমকা কন্ঠে নাজিফার দিকে চেয়ে বললো ---Excuse me,,,,,,,,, আমি নাক ডাকি!!!!!!!!!!
নাজিফা একটু হেসে------ তো কি আমি মিথ্যে বলছি?????
---- হ্যা বাবাই তুমি নাক ডাকো......
ইমাদ গরম চোখে নওরীনের দিকে তাকিয়ে------ ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে, তুই কখনো শুনেছিস আমার নাক ডাকার অভ্যাস আছে????
--- না তবে এখন তো মামুনির কাছে শুনেছি।।।।
এই বলে নওরীন আর নাজিফা খিলখিল করে হাসতে লাগলো, ওদের হাসির আওয়াজে উপর থেকে ফাহাদ তিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো ---- বাহ!!!! নওরীন ভালোই তো সহজে মানুষকে ভুলে যেতে পারিস।।।
নওরীন হাসি মুখটাকে ফ্যাকাসে করে--- মানে বড় আব্বু!!
ফাহাদ একটু অট্টহাসি দিয়ে----- মাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি!!!! মায়ের জায়গায় খুব সহজে এই মেয়েটিকে স্থান দিলি!!!
ফাহাদের পাশে ফাহমিদা দাড়িয়ে নেইলকাটার দিয়ে নখ কাটতে -- কাটতে,,,,, ------ ভুলবেনা,,,, ফাহাদ তোমার ভাইয়ে ও তো মিতুকে খুব সহজে ভুলে গেলো। এই সেই ইমাদ যে মিতুকে ছাড়া কিছুই বুঝতোনা, মিতুর মৃত্যুর পর ইভেন ওয়াদা ও করেছিলো আর কোনোদিন বিয়ে করবে না, আর আজ সে ছেলেই নাকি এভাবে পাল্টে গেলো।।।।।
.
.
.
ইমাদ ফাহমিদার কথাগুলোতে নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করলো--- সত্যিই তো আমি এতো তাড়াতাড়ি মিতুকে ভুলে গেলাম!! আমি যে মিতুকেই শুধু ভালোবাসি তাহলে কেন নাজিফার জন্য আমার এতো কাকুতি-- মিনতি। কেন নাজিফাকে আমি এতো গুরুত্ব দিচ্ছি???? আমি তো তাহলে মিতুকে ঠকাচ্ছি, ,,,, আমার ভালোবাসাকে ছোট করে ফেলছি???
ফাহমিদা নিচে নেমে এসে ইমাদের সামনে দাঁড়িয়ে----- আচ্ছা ইমাদ তুৃমি কি সত্যি মিতুকে কখনো লাভ করেছো????
ইমাদ আমতাআমতা করে--- কে কে কেন তোমার এটা মনে হচ্ছে বৌ মনি????
---- না আসলে তোমার ভালোবাসাটা এতোটাই পানসে যে মানুষটা মরে যাওয়ার সাথে -- সাথে তুমি তাকে ভুলে গেলে?? তার জায়গায় অন্য কাউকে স্থান দিলে?? আদৌ কি এটাকে কি রিয়েল লাভ বলে নাকি ফেইক বলে??? তুমিয়ে ভাবো --- যাকে ছাড়া একটা সময় তুৃমি কিছু বুঝতে না আজ তাকেই তোমার সারাদিন একবার ও মনে পড়ে না।।।।। যার ছবি দেখলে একটা সময় তার বিয়োগ বেদনায় কাঁদতে,,,, আজ তার জন্যই দু'ফোঁটা চোখের জল ও ভুল করে ঝরে পড়ে না।।।।
ব্যাপারটা তোমাকে এখন আর ভাবায় না তাইনা, আসলে তুমি কখনোই মিতুকে ভালোবাসোনি...............
ইমাদ ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে কান্নামাখা কন্ঠে ----- ঠিকেই তো আমি এমন ভুল কিভাবে করলাম,,, আমি কেমনে ওকে ভুলে আছি.....
এই বলতে -- বলতে ইমাদ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। নাজিফা কাঁদতে-- কাঁদতে ইমাদের পিছু যেতে চাইলেই ফাহমিদা নাজিফার হাতটা শক্ত করে ধরে--- আমাকে সেদিন জ্ঞান দিয়েছিলে না এবার বুঝো আমি কি, কি করতে পারি।।।। দেখো আজকে সারাদিন ও ইমাদ বাসায় আসে কিনা।।
.
.
.
এই বলে ফাহমিদা ফিকফিক হেঁসে ফাহাদকে বললো---- চলো ফাহাদ রুমে যাই এখনো বুয়ার যে রুটি বানানো হয়নি,,,,,,,
যাওয়ার সময় নওরীন কে উদ্দেশ্যে করে ফাহমিদা বললো-- আর হ্যা নওরীন তুই যে একে মামুনি বলে ডাকিস তুই জানীস এতে তোর মা কতোটা কষ্ট পাচ্ছে কবরে।।।। তুই ও তোর মাকে ভুলে গেলি।
ফাহমিদার কথায় নওরীনের মনটা ঘুরে গেলো। নওরীন ও ঘরের দিকে চলে গেলো। সবাই যখন নাজিফাকে একা করে চলে গেলো,, মেয়েটি তখন নিচে বসে পড়লো ---- উপরে দিকে তাকিয়ে কাঁদতে -- কাঁদতে সৃষ্টিকর্তাকে বললো--- আর কতো আমার পরীক্ষা নিবা তুমি??? আল্লাহ বলতে পারো কেন আমার সাথে এমন হচ্ছে, শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবসি বলে আমি মোহনের কাছে এতো অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছি,লোকমুখে এতো কথা শুনেছি। তোমাকে সবসময় বলেছি --- আল্লাহ জীবনে এমন একজন মানুষের সাথে দেখা করাও যে আমাকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে, যে একজন ভালো মানুষ হবে।। অবশেষে তুমি দেখা করালে এমন একটা মানুষের সাথে আশার আলো জাগালে মনে এখন আবার তুমিয়ে তা নিভিয়ে দিতে চাচ্ছো,,, আমি কি করবো বলো,,,, আমি কি করবো।।।।
.
.
.
মেয়েটি বুকের চাপা কষ্ট গুলো আজ আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক তো হলো সেগুলো চেপে রেখে কষ্ট পাওয়া,,,, ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি রেখে এক জীবন এভাবে পার করা। কিন্তু দিনশেষে যখন সূর্য টা অস্তমিত হয় তখন সত্যিই ভাবতে হয় মেয়েটি -- জীবনে কারো ভালোবাসা পেলোনা , না বাবার, না মায়ের, না স্বামীর, আর না এই পৃথিবীর কারো। কিন্তু তবুও মেয়েটি ঠকে গিয়ে নিজেকে জিতিয়ে দেয় এই ভেবে যে কারো না পেলে ও যে মহান আল্লাহ পাকের ভালোবাসা পেয়েছি ওটাই আমার জন্য যথেষ্ট।।
কিন্তু আজ আর পারলোনা মনকে বুঝাতে। কেননা মেয়েটি যে ইমাদকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে। নিজের মনের সবটুকু রং দিয়ে যে সে ইমাদকে নিজের করে নিয়েছে ।।।
সালেহা বেগম নাজিফার গুনগুনিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে বাহিরে এসে দেখে-- নাজিফা মেঝেতে বসে কাঁদছে। চোখের জলগুলো অনায়াসে গড়িয়ে পড়ছে।।।
সালেহা একটু চমকে গিয়ে--- নাজিফা মা তোর কি হয়েছে???? তুই কেন এভাবে কাঁদছিস???
মায়ের মতো শাশুড়ির এমন কাকুতি কন্ঠ নাজিফার কানে যেতেই নাজিফা এক লাফ মেরে উঠে পড়লো। সালেহাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো--- মা ইমাদ, ইমাদ.....
--- হ্যা কি হয়েছে বল?
--- মা ইমাদ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।।
--- কিন্তু কেন???
নাজিফা তখন সবকিছু খুলে বলতেই সালেহা ক্ষীণ কন্ঠে বললো---- এরা আমার ছেলেটাকে ভালোভাবে বাঁচতে দিবেনা।
নাজিফা কাঁপা - কাঁপা কন্ঠে--- মা প্লিজ তুমি এভাবে বলোনা। তুমি বরং ওকে একবার ফোন দিয়ে বলো--- বাসায় ফিরে আসতে,,, তুৃমি তো মা তোমার কথা শুনবে হয়তো.........
সালেহা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে --- না রে মা..... ও আজ সারাদিন ও বাড়ি ফিরবেনা।।।
---- মা তুমি একবার চেষ্টা করোনা.....৷
--- তুই যেহুতে বলছিস তাহলে আমি ফোন দেই...
এই বলে সালেহা বেগম ফোন দিলো। ফোনের ওপাশে রিং হলো,,,, কিন্তু ফোন ধরার মানুষটা হয়তো ইচ্ছে করেই ফোন ধরলো না।
সালেহা নিরাশ হয়ে--- ফোন ধরছে না।।।। নাজিফা চুপ হয়ে সালেহার দিকে চেয়ে রইলো।।।।
.
.
.
সন্ধের দিকে ইমাদ বাড়ি ফিরতেই সালেহা ওর সামনে গিয়ে,,, কিছুটা রেগে বললো--- সারাদিন কোথায় ছিলিস???আমি এতোবার তোকে ফোন করলাম তুই কেন ফোন ধরলি না।।।
ইমাদ গম্ভীর কন্ঠে --- ইচ্ছে করেনি তাই ধরিনি মা। আর তাছাড়া আমি আগে ও তো এমন ছিলাম, হঠাৎ বাড়ি থেকে চলে যেতাম,,, তুমি ফোন দিতে যখন দেখতে আমি ধরতাম না তখন বুঝে নিতে আমি মিতুর কবর যিয়ারত করতে গিয়েছি তাহলে আজ কেনো এতো চিন্তা, প্রশ্ন???
-
--- কারন সেদিন মিতু ছাড়া তোর জীবনে কেউ ছিলোনা,কিন্তু আজ নাজিফা তোর জীবনে এসেছে। মিতু আজ তোর অতীত এবং নাজিফা তোর বর্তমান, ভবিষ্যৎ।।।
ইমাদ চেঁচিয়ে -- চেঁচিয়ে সালেহাকে বললো----ব্যস মা তুমি অনেক করেছো, কিন্তু আর নয়। তোমার কারনে আমি মিতুকে পর্যন্ত ভুলে গিয়েছি। মা একটা কথা নাজিফাকে মাথায় ঢুকিয়ে নিতে বলো--আমি কখনোই ওকে স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবোনা। আর কখনোই ভালোবাসতে পারবো না।
এই বলে ইমাদ উপরে যেতেই নাজিফা ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। কাজল লেপটানো চোখ দুটো আশ্রুজলে ইমাদের দিকে চেয়ে আস্তে - করে বললো--- যদি কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা নাই দিতে পারেন তাহলে কেন মায়ের সাথে চলে যেতে দিলেন না??? কেন এভাবে আমাকে মায়ার জালে আটকে দিলেন? কেন এতো মায়া দেখালেন???
.
.
.
নাজিফার প্রশ্নের উওর ইমাদ দিতে পারলো না। কেননা সে নিজেই জানেনা কোন মায়াজালে সে আটকে পড়েছে।।।।
কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে চোখ লাল চে করে নাজিফাকে বললো--- জানীনা।।।।।
এই বলে উপরের দিকে নিজের ঘরে চলে গেলো।।। নাজিফা ইমাদের চলে যাওয়ার দিকে অনিমেষ ভাবে চেয়ে রইলো।।
.
.
.
রান্নাঘরে এসে নাজিফা নিজেকেই নিজে বলতে লাগলো ---
ইমাদের সাহেবের মনটা হয়তো তখন খুব খারাপ ছিলো তাই এইভাবে আচরণ করেছে। এখন হয়তো মন- মানসিকতা আবার ঠিক হয়ে গেছে,,,,,,,,, এখন আমার সাথে ভালোভাবেই কথা বলবে এই ভেবে নাজিফা সমস্ত কষ্ট দূরে সরিয়ে,,,,, ইমাদের জন্য রাতের খাবার নিয়ে উপরে গেলো।।।
(চলবে)
লিখা--আসমা আক্তার পিংকি।।।।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: