বুধবার

#নিয়তি( পর্ব--১৪) লিখা -- আসমা আক্তার পিংকি ।

#নিয়তি ( পর্ব--১৪)
লিখা -- আসমা আক্তার পিংকি

ইমাদের ঘরের সামনে এসে নাজিফা কিছুটা সংকোচ নিয়ে বললো---- আসবো?????
ইমাদ তখন মাএ গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।।।।
নাজিফার কন্ঠস্বর ইমাদের কানে যেতেই,, ছেলেটি একটু বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললো------ কি চাও আমার কাছে????
--- মানুষ নিমিষেই বদলে যায়।।। চল্লিশ বছর একসাথে সংসার করে ও স্বামী--- স্ত্রী দুজন-- দুজনকে চিনতে পারলোনা আর আমি কিনা এই কয়েকদিনে ওনার সামান্য ভালো আচরণে ওনাকে চিনে ফেলেছিলাম ভাবলাম।।। আসলে বোকার স্বর্গে বসবাস করা মানুষগুলোর দশা আমার মতোই হয়।
---- হ্যালো আপনাকে বলছি????? কি এই ঘরে কেন আসছেন, আর হাতে ওসব কি??
নাজিফা মুখে মৃদু হাসি নিয়ে---- না মানে আপনার জন্য রাতের ডিনার নিয়ে এসেছি।।।।
ইমাদ গম্ভীর স্বরে,----- Thanks But আমি খাবোনা।। বাহিরে থেকে খেয়ে এসেছি।
---- কেন মিথ্যে কথা বলছেন আপনি???
---- মানে ?????
---- দেখুন আমার সাথে রাগ করেছেন বলে কি খাবেন না এমন কথা কেন বলছেন??
ইমাদ রাগে তেড়ে এসে-- নাজিফার দিকে আঙ্গুল তুলে----- আপনি কে যে আপনার সাথে রাগ করে আমি খাবার খাবোনা,,,, আমার খিদে নেই তাই খাবোনা।
--- তাই বললে হয়।
এই কথা বলে নাজিফা সোজা ইমাদের রুমে ঢুকে যায়, খাবারটা বিছানার পাশে রেখে, একটু হাসি মুখে চেয়ারের মধ্যে রাখা তোয়ালে টা গোছাতে-- গোছাতে ---- নিন ইমাদ সাহেব এবার এই চেয়ারে ভদ্র ছেলেদের মতো বসে খাবারটা খেয়ে নিন।।
ইমাদ তখন টেবিলের উপর রাখা খাবারটাকে হাতে নিয়ে কোনোকিছু না ভেবেই নিচে ফেলে দিলো,,, তারপর জোরে একটা ধমক দিয়ে নাজিফাকে বললো----গেট আউট।।। আজকের পর আপনি আর কখনোই আমার রুমে আসবেননা।।।
.
.
.
নাজিফা ভয়ে-- ভয়ে মেঝে থেকে --- ভাঙ্গা প্লেট, গ্লাস উঠাতে লাগলো ।।।। ইমাদের দিকে চেয়ে করুন স্বরে বললো---- আজকে সারাদিন কিছুই খায়নি,,,৷ ভেবেছিলাম আপনি আসলে অতঃপর খাবো। কিন্তু তাও হলোনা,,,,,,,,,,
কথাগুলো শুনে ইমাদের খুব মায়া হলো নাজিফার উপর কিন্তু নিজের ইগোটা বজায় রেখে চওড়া গলায় নাজিফাকে বললো--- কে বলেছে এতো ন্যাকামি করতে,,,, আমি কি বলেছি আমার জন্য না খেয়ে পাগলামি করতে, যতসব, , গিয়ে খেয়ে নিন যান।।।
------ না খাবোনা দেখি আপনি ও কতক্ষন আপনার জেদটা বজায় রাখতে পারেন আর আমি ও কতক্ষন পারি।।।।
এই বলে নাজিফা বেখেয়ালে মেঝেতে পড়ে থাকা কাঁচের টুকরোতে হাত দিতেই হাতটা চরমভাবে কেটে যায়। ইমাদ তা দেখে এক কদম সামনে আসলে ও পরে নিষ্ঠুর মানুষের মতো পিছিয়ে যায়।।।
নাজিফা তা দেখে আর ও বেশি কষ্ট পেলো। ইমাদকে কোনোকিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।।।
.
.
.
নাজিফা চলে যেতেই ইমাদের কেন যেনো ভীষণ কষ্ট অনুভব হতে লাগলো।।। শুধু মেঝের দিকে তাকিয়ে নাজিফার রক্তগুলোর পানে চেয়েই রইলো।।
--- না এতোটা খারাপ আচরণ ও করা উচিত হয়নি আমার।।
.
.
রাত যখন দেড়টা বাজে ইমাদ চুপিচুপি মায়ের রুমে যায়,, গিয়ে দেখে নাজিফা সেখানে নেই।
কিছুটা বিস্মিত হয়ে,,,,,----- কি ব্যাপার ও কোথায় শুয়েছে???? নওরীন আর নাবার রুমে নয়তো।
ইমাদ দ্রুত নওরীন আর নাবার রুমে গিয়ে দেখে সেখানে ও নাজিফা নেই।
৷ -----এখানে ও নেই, তাহলে কোথায় ও????
ইমাদ একটু চিন্তায় পড়ে যায়,,,, --- আচ্ছা ও আবার বাড়ি থেকে চলে যায় নি তো?
গেলে তো ভালো তাতে আ,আ,আমার কি,,, কিন্তু নাবা তো ওকে অনেক ভালোবাসে,,,,, না,না, যায়নি হয়তো অন্য কোথাও আছে।
ইমাদ গেস্ট রুমে গিয়ে দেখে মেয়েটি সেখানে ,,, ইমাদ নাজিফার পাশে গিয়ে বসে মেয়েটির দিকে চেয়ে রইলো।।। হঠাৎ করে ইমাদের চোখ পড়লো মেয়েটির হাতের উপর,,,, হাতটা সত্যিই খুব বাজে ভাবে কেটে গেছে, ,,, হাত দিয়ে প্রচন্ড রক্ত পড়েছিলো যার প্রতিটি ফোঁটা মেঝেতে পড়ে রয়েছে।। কিন্তু শুকিয়ে গেছে রক্ত গুলো কিন্ত দাগটা এখনো ও শুকায় নি।।।।।।
৷ ইমাদ নাজিফার কান্ড দেখে ইমোশানাল হয়ে যায়,,,,,! ------ আজিব মেয়ে তো এ,,, মানুষ তো হাত কাটা গেলে সাথে-- সাথে ব্যান্ডেজ করে আর না হয় রক্ত পড়া বন্ধ করে,,, আর এ,,,,,,
এই বলে ইমাদ জোরে--- জোরে নাজিফাকে ডাকতে লাগলো-----এই মেয়ে,,, এই ।
নাজিফার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইমাদ ওর কপালে হাত দিয়ে আবার ডাকতে লাগলো।।
অমনেই নাজিফার ঘুম ভেঙে ইমাদের দিকে চোখ পড়তেই অবাক হয়ে যায়।
----- আপনি এখানে,,,,,
----- হ্যা এসেছি তোমার কোনো সমস্যা আছে?
----- না মানে আপনি এতো রাতে এই ঘরে।।
ইমাদ রেগে-- এটা আমার বাড়ি অতএব আমি যখন -- তখন যে কোনো ঘরে যেতে পারবো ওকে।।।। এনিওয়ে এই রক্ত দিয়ে আমাদের ঘরের মেঝেটা এতো নোংরা করেছো কেন????
নাজিফা মাথা নিচু করে ---- স্যরি, আসলে,,,,,,,
--- থাক - থাক আর এতো কৈফিয়ত দেওয়া লাগবেনা।
ইমাদ ডয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নাজিফার হাতটা ড্রেসিং করে দিলো।।।।
নাজিফা ইমাদের দিকে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।।
---- হে ইউ এতো হাসার কি হলো????
---- না মানে এতো উপরে-- উপরে রাগ দেখিয়ে কি লাভ বলুন যদি ভিতরের হৃদয় টা এতো নরম হয়।।।।
---- চুপ থাকুন মানবতার ক্ষাতিরে এইটুকু করেছি বলে আপনি আবার আমার হৃদয় নিয়ে গবেষণা করছেন এখন?
এই বলে ইমাদ চলে যেতে চাইলে নাজিফা ভারী কন্ঠে বললো----- এখনো ও কিছু খায়নি,,,,,,,,,,
ইমাদ ওর দিকে তাকিয়ে মনে--- মনে বললো---- এই মেয়েটি এতো মায়া লাগায় কেন???? এতো কিছু আমি ওকে বলি কিন্তু আমার প্রতি ওর বিন্দুমাত্র রাগ নেই, অভিমান নেই।।।।।।
------ কি হলো আপনি এখন ও কি খাবেন না? ওকে ফাইন খাওয়া লাগবেনা আমি ঘুমাই।।।।।
----- আচ্ছা আমার খাবারের সাথে আপনার সম্পর্ক কি????
---- ওটা বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ আপনাকে দিছে। যেদিন চলে যাবো সেদিন বুঝবেন।
নাজিফার এই কথায় ইমাদের কেন যেনো খুব রাগ হলো ----- এই আপনার সমস্যা কি,,, এতো পরিমান ফালতু কথা আপনি বলতে পারেন।।। আর কোনোদিন যেনো এসব কথা আমি না শুনি।।। এনিওয়ে আপনি ওয়েট করুন আমি খাবার নিয়ে আসছি।
---- খাবার আনা লাগবে না,,,,,
---- মানে???
নাজিফা হাত দিয়ে টেবিলের দিকে ইশারা করে---- ঐ যে খাবার রাখা আছে।
---- তার মানে খাবার এনে আপনি রেখে দিয়েছেন অথচ খাননি।
---- খায়নি কারন আমি জানতাম আপনি আসবেন আর তাই আপনার জন্য ওয়েট করতে- করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি নিজেই বুঝতে পারিনি।
.................
ছেলেটি যতো নাজিফাকে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে আল্লাহ পাক যে ওকে কি পরিমান ধৈর্য আর কোমলতা দিয়ে সৃষ্টি করেছে তা সত্যিই প্রশংসানীয় যোগ্য। এমন মানুষের জন্য সত্যি মনের মাঝে আলাদা একটা সম্মান ও মায়া জন্মে।
..
..
ইমাদ টেবিলের উপর থেকে খাবারটা নিয়ে নাজিফার কাছে গিয়ে বসে, কিছুসময় চুপ থেকে ভাতগুলো মাখতে--- মাখতে নাজিফাকে জিজ্ঞাসা করলো------ মোহনের সাথে ও কি এমন করতেন???
মোহন নামটা শুনতেই মেয়েটির চেহারাটা মলিন হয়ে যায়,,,৷ অতীতের ডায়রীটা মেয়েটি একদম খুলতে চায়না, কিন্তু তার বর্তমান যে তাকে সবসময় অতীতের ডায়রীটাই খুলতে বাধ্য করায়।
---- কি হলো কথা বলছেন না কেন????
----- আসলে ওই মানুষটার উপর আমি কখনোই অধিকার খাটায় নি।।।
--- কেন?
--- কারন ওকে কখনোই আমি ভালোবাসতে পারি নি।
----- তাহলে আমার উপর কেন অধিকার দেখাচ্ছেন??
---- এইটুকু বুঝেন না,,,,, নাকি না বুঝার অভিনয় করছেন???
ইমাদ আর কোনো কথাই বললো না, নিশ্চুপ হয়ে গেলো কেননা নাজিফার প্রশ্নের উওরটা ছেলেটার কাছে নেই।।।
-নাজিফার মুখের সামনে খাবার নিয়ে--- নিন খেয়ে নিন।
---- আজ তো আমি আপনার কাছে খায়িয়ে দেওয়ার আবদার করিনি তাহলে নিজে থেকে কেন খায়িয়ে দিচ্ছেন?
ইমাদ আমতা- আমতা করে--- জানীনা।।
---- জানার চেষ্টা করবেন, তাহলে অনেক কিছুর উওর ও পেয়ে যাবেন।
( চলবে)
লিখা -- আসমা আক্তার পিংকি।
( সামনে পরীক্ষা তাই দিতে লেট হচ্ছে দুঃখিত)

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: