মঙ্গলবার

#নিয়তি-২(পর্ব--৩) । লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি

 #নিয়তি-২(পর্ব--৩) । লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।

---- ও তোমাকে বিয়ে দিতে, তোমার জন্য ছেলে দেখতে আমাদের তোমার থেকে অনুমতি নিতে হবে???-
--- হ্যা নিতে হবে মা, আমার ও তো পছন্দ -অপছন্দ থাকতে পারে।
----- তোমার যে কি পছন্দ সেটা আমার জানা আছে।-
--- মা প্লিজ তুমি আমাকে এভাবে অপমান করতে পারোনা।নাজিফা নিতুর কাছে গিয়ে-
-- আচ্ছা মা, ও যেহুতো বলছে ওর পছন্দ আছে তাহলে আমাদের উচিত সে সম্পর্কে জানা।
নিতু চেঁচিয়ে-- চেঁচিয়ে
---- ও প্লিজ তুমি আমাদের মা মেয়ের কথার মাঝে নাক গলাতে আসবেনা, তোমার জন্য আমার লাইফটা জাস্ট ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
ইমাদ----- নিতু অনেকক্ষন ধরে তোর বকবক শুনছি,,, আরে আগে দেখ সোহান ওর ভাইকে তোকে বিয়ে করাতে রাজি হয় কিনা! কি আছে তোর,,, ওই ছেলে আমেরিকা থেেকে পড়াশুনা করে দেশে ফিরেছে আর তুই,,,, মাদ্রাসায় দিয়েছে তোকে মানুষ হওয়ার জন্য আর তুই হয়ে গেলি অমানুষ,, পড়াশুনা তো সেই কবেই ছেড়ে দিলি,, আর বাকি অসভ্যতামির কথাগুলো আমি নাই বা বললাম।
এনিওয়ে, আমি এখন অফিসে গিয়ে সোহানের সাথে আলাপ করবো,, তারপর রাতে ফাহাদ ভাইয়া আর বৌ মনি বাড়ি ফিরলে সবার সামনে এসব নিয়ে কথা হবে এখন চুপচাপ রুমে যা। ..
---- মানে কি ইমাদ, তোর বোন এখন কিসের রুমে যাবে,,, আগে ওকে জিজ্ঞাসা কর ও কিসের চাকরি পেয়েছে যে সেই সকালে বের হয়ে যায় রাতে ফিরে। আর আজকে কেমনে-- কেমনে ওর দিলে রহম হয়েছে যে এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে।
---- কি রে মা যা বলছে তা সত্যি নাকি???? তুই নাকি ইদানিং রাত করে বাড়ি ফিরিস!!!
---- তাতে তোমার কি,,, তোমাকে আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়। নিতুর এমন কথায় ইমাদের প্রচন্ড রাগ হয়,,, নিতুর সামনে গিয়ে ওকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিতে হাত তুলতেই ইমাদের নাজিফার দিকে চোখ পড়ে।নাজিফা ইশারা দিয়ে না করতেই ইমাদ হাতটা নামিয়ে ফেলে।
--- ভাইয়া তুমি আমাকে থাপ্পড় মারতে আসছো!!!!! আমাকে,,, যেই বোন তোমার সবচেয়ে আপনজন ছিলো তাকে!!-
--- হ্যা কারন আমার সেই বোন আর তোর মধ্যে এখন আসমান- জমিন তফাৎ।
----না ভাইয়া তুমি ওই মেয়েটার কারনে আমাকে মারতে আসছো,,, আমি তোমাকে আর কখনো ভাই বলে ও পরিচয় দিবোনা।।
নিতু এই বলে কাঁদতে -- কাঁদতে উপরে চলে গেলো।
মায়া--- খালামনির নিতুর এরুপ অবস্থা কেন???
---- ও কোনদিন আবার ভালো ছিলো, ওর জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে।
অমনেই দরজার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে --- ভুল কি বলেছে ও তোরা ও তো পারিস বটে,, আর ইমাদ নতুন বউ পেয়ে কি বোনকে ও ভুলে গেছিস??
?মায়া,---- মা তুমি!!!!!!
---- হ্যা চলে আসলাম,, আসলে তোর খালার তো আমাকে মনেই পড়েনা।
সালেহা--- শিউলি তুই আয় ভিতরে আয়।
ইমাদ --- আসসালামু আলাইকুম ছোট মা ভালো আছো???
--- আর ভালো থাকা,, এতোদিন পরো ছোট মায়ের কথা মনে পড়লো।-
-- না ছোট মা আসলে কাজের......--- হইছে- হইছে আর এতো অজুহাত দেখানো লাগবেনা।
নাজিফা--- আসাালামু আলাইকুম।
..---- ওয়ালাইকুম আসসালাম। যাক এতোক্ষন পরে তোমার আদব- কায়দা উদয় হলো।
সালেহা--- শিউলি এটা ইমাদের বউ।
----২ য় নাম্বারটা তাইনা!!!!
নাজিফা কথাটা শুনে একটু মন খারাপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইমাদ তা দেখে নাজিফার সাথে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ---- সবার সব কথায় কান দিতে নেই,,, সবসময় নিজের মনের কথা শুনবে, আর সবসময় নিজের কাছের মানুষটার কথায় গুরুত্ব দিবে,, আর,বাকি কে কি বললো তা শুনে মন খারাপ করাটা কিন্তু বোকা মানুষের কাজ।
শিউলি--- এই যে ইমাদ নিতু কে এভাবে বকলি কেন?
ইমাদ শিউলি বেগমের গলার আওয়াজ পেতেই নাজিফার হাতটা ছেড়ে--- ওর কথাবার্তা চলাফেরার স্টাইল দেখছো তুমি???-
-- হ্যা তাতে কি হয়েছে,, এই বয়সে তো মেয়েরা এরকুম একটু করেই।
সালেহা--- শিউলি তুই এসব কি বলছিস!!!! কই আমাদের মায়া,তো কখনোই ওর মতো এমন চলাফেরা করেন। এখন তো জাপানে থাকে দেখ তবুও সেই আগের মতো আছে সাদামাটা ।।
শিউলি বেগম ঠুনকো হেসে---- ওর কথা বাদ দে ওর এরুপ চলাফেরার জন্যই তো জিবনে কিছু করতে পারলো না।
এই বলে ইমাদের দিকে চেয়ে---- নিজের পছন্দের মানুষটাকে ও না পেরেছে নিজের করে নিতে না পেরেছে অন্য কাউকে জিবনে স্থান দিতে৷ আর পছন্দের মানুষ তো অন্য কাউকে নিয়ে দিব্যি সংসার করছে,, শুধু আমার মেয়েটাই পুড়ে মরছে।
মায়া শিউলি বেগমের হাতটা টিপে ধরে--- কি হচ্ছে কি এসব মা,, তুমি এগুলো বলার জন্যই কি এখানে এসেছো????
শিউলি বেগম ফিসফিস করে ---- হ্যা এগুলো বলার জন্যই যে ছেলেটাকে তুই এতো ভালোবেসে এখন অবদি সংসারের মায়াজালে নিজেকে বাঁধতে পারিস নি,, সেই ছেলেকে আমি এতো সহজে সংসার করতে দিবোনা।
নাজিফা ইমাদের দিকে চেয়ে রয়েছে।। ইমাদ তা দেখে কিছুটা ভয়ে --- মা আমি আসছি,,, অফিসে অনেক কাজ পড়ে রয়েছে....
সালেহা--- ভালো করে তো খেলি ও না এখনি চলে যাবি???--- হুম, ছেট মা তোমার সাথে পরে কথা হবে।ইমাদ চলে যেতেই,,,
শিউলি বেগম --- এখন তো পালিয়ে যাওয়ার নাটক করবেই এ আর নতুন কি।।।
সালেহা বেগম ওনার মন অন্য দিকে ঘুরানোর জন্য --- তা হ্যারে শিউলি এতো বছর পর বোনের বাসায় এলি, কোথায় একটু শান্তিতে দুজনে সুখ- দুখের গল্প বলবো তা নয় তুই কি নিয়ে যে বকবক করছিস।
শিউলি বেগম গম্ভীর কন্ঠে--- কি নিয়ে পড়ে আছি তুই জানীস না আপা!! অবশ্যই তুইতো সবসময়ই সবকিছু জেনে ও না জানার ভান করিস এ আর নতুন কি। আর সুখ-- দুখের গল্প,, সেটা আর তোর সাথে এ জীবনে আমার হবেনা,,, তুই তো আমার মেয়ের জীবনটাই শেষ করে দিলি।
--- উফ মা! আসার পর থেকে তুমি এসব কি যে বলে যাচ্ছ,, তোমাকে এখানে আসতে কে বলেছে।
সালেহা বেগম শিউলির কানের কাছে মুখটাকে নিয়ে--- এভাবে প্লিজ কথা বলিস না এখানে নাজিফা আছে ওর খারাপ লাগতে পারে।
শিউলি বেগম চেঁচিয়ে - চেঁচিয়ে --- তাতে আমি কি করবো??? ওর খারাপ লাগা দিয়ে আমার কিছু যায় আসবে না। এই মায়া যা ব্যাগ গুছিয়ে নে আমি তোকে নিতে এসেছি।
নাজিফা --- ইয়ে মানে ছোট মা,, দেখুন অনেকটা পথ এসেছেন আপনি বসুন চা,নাস্তা খান পারলে কয়েকদিন থেকে ও যান, আর মায়া তো আজেই এসেছে আর এখনি ওকে নিয়ে যাবেন মানে??
--- হ্যা নিয়ে যাবো তাতে তোমার কেনো সমস্যা আছে???
--- না মানে....৷
--- চুপ থাকো,, আর এই মায়া তোকে আমি কতবার নিষেধ করেছি এই বাড়িতে আসতে না, তোর কাছে কোনোকালে আমার কথার কোনো দাম থাকবেনা??
সালেহা শিউলির হাতটা ধরে--- এমন করিস কেন বোন,,, কতবছর পর তুই আমার বাড়ি এলি,,, প্লিজ বোন কয়দিন থেকে যা।-
--- এতোদিন পরে আমার কথা মনে পড়লো আপা তোর!!! কই এতোদিন তো আমার কোনো খোঁজখবর নিলি না!-
-- সেটা তো তুই বন্ধ করে দিলি।
--- কেন বন্ধ করে দিয়েছি সেটা বল।
মায়া--- চুপ মা একদম চুপ আর একটা কথাও না,,, চলো উপরে চলো আর আমি এখানে সপ্তাহখানিক থাকবো, ভাবীর সাথে গল্পগুজব করবো, তুমি যেহুতো চলে এসেছো তুমি ও আমার সাথে সে কয়দিন না হয় থেকে যাবে। .
..--- না আমি থাকছি না ।
--- তুমি থাকবে সাথে তোমার ঘাড় ও থাকবে।
মায়া আর সালেহা শিউলিকে টেনে উপরে নিয়ে গেলো।
---- আচ্ছা ওনি এভাবে কথা বলছিলেন কেন?? আর কার জন্য মায়া এখন ও বিয়ে করেনি, ইমাদেই বা আজকে এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো কেন? ঠিক করে তো ভাত ও খায়নি। খারাপ কিছু হবেনা তো! হয়তো উওর গুলো নাজিফার জানা নেই, তাই মেয়েটি আর এসব নিয়ে ভাবলোনা।...
.
.
.
আকাশে অন্ধকারের ছোয়া,,সন্ধেতারার মিটি -- মিটি চাহনি,,, নাজিফা মাগরিবের নামাজ পড়ে তসবি হাতে বাহিরের পানে চেয়ে রয়েছে।
নিচ থেকে শিউলি বেগম--- এই ইমাদের বউ কই তুমি, সারাদিন কি ঘরেই পড়ে থাকবা,,, পায়ের উপর পা তুলেই খাবা।
শিউলি বেগমের গলার স্বর কানে যেতেই নাজিফা ঘর থেকে বের হয়ে গেলো, এদিকে ইমাদ বারবার ফোন করতে লাগলো,, কিন্তু নাজিফা শুনে ও রিসিভ করতে পারেনি।
নিচে এসে --- জ্বি ছোট মা ডেকেছেন???----- সেই কখন হলো ঘরে গেছো কি নাস্তা পানি কিছুই দিবানা,,, তোমার বড় জা বাহিরে থেকে কাজ করে এসেছে কোথায় তাকে তুমি একটু নাস্তা পানি দিবা তা না ঘরে বসে আছো....
।ফাহমিদা-- ওর কি সেই বোধ টুকু আছে,, ছোট মা?
সালেহা তসবি হাতে নিচে-- নামতে-- নামতে--- তা ফাহমিদা মা চাকরির টাকাগুলো বুঝি তুমি সংসার দেও, নাকি নাজিফাকে দেও যে সে বোধ টুকু ওর থাকবে???ফাহমিদা--- ওই যে এলেন ওনার বান্ধবি।
---- আর ও কি তোমাদের মতো বেনামাজি,,, ওর তো নামাজ- কালাম আছে,, নাবা- নওরিন কে দেখতে হয়, তোমার দ্বারা তো সন্তান পালন হবে না দেখেই সেই ছোটবেলায় আমার দাদু ভাইটারে হোস্টেলে দিয়ে দিয়েছো। তাই বলে কি সবাইকে তোমার মতো ভাবছো!!!!-
--- মা আপনি এভাবে একদম আমার সাথে কথা বলবেন না।
--- তুমি ও তাহলে নাজিফাকে এ বাড়ির চাকর না ভেবে ছোট বউ ভাবতে শুরু করো।
শিউলি--- বাবা আপা,, তোর দেখি এর প্রতি খুব দরদ। এতো দরদ দেখাইস না পরে এমন কিছু না করে ফেলে যে তোকে এর মাশুল দিতে হবে।
নাজিফা ---- মা প্লিজ এসব নিয়ে আর কথা বলোনা না আপনি ও বসুন আমি -- নাস্তা দিচ্ছি।
সালেহার ভীষণ অভিমান হলো নাজিফা এভাবে সবকিছু মেনে নিচ্ছে দেখে,---- আমি এখন কিছুই খাবোনা,,, আমার খিদে নেই।
এই বলে সালেহা ঘরে চলে যায়,
নিতু, ফাহমিদা আর শিউলি বেগম একসাথে বসে ---- ছোট মা বুঝলে,, আমার ভাই যে এই মেয়ের ভিতরে কি পেয়েছে আল্লাই জানে।
ফাহমিদা---- আরে বুঝিসনা নিতু ,, ইমাদ শোকে পাগল হয়ে গেছে তাই বুঝতাছেনা ও কার সাথে সংসার করছে। ..
নাজিফা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে সব শুনছে আর মিটমিট করে হাসছে,
নাবা গিয়ে ওর আঁচল ধরে টেনে ---- মা, ও মা ওরা এদব কি বদে???
--- ও কিছুনা এসব কথাই কান দিতে নেই। দেখনা মা কেমন ইগনোর করছি। আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে বড়দের কথাই বা শুনবে কেন?? যাও সোজা ঘরে গিয়ে আপুর কাছে পড়তে বসো, মামুনি কিছুক্ষনের মধ্যেই আসছি৷
নাজিফার কথাগুলো শিউলি বেগমের কানে যেতেই ,,, ওনি সোজা নাজিফার কাছে এসে শক্ত করে ওর হাতটাকে ধরে ---- এতো ভাব কিসের তোমার,,, কি আছে তোমার যে এমন ভাবে কথা বলছো তুমি ??
নাজিফার হাতে চুড়ি ছিলো ফলে হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছিলো তবুও মুখে হাসি নিয়ে নাবা কে বললো--- যাও তুমি ঘরে যাও মা।
নাবা একদৌড়ে চলে যেতেই নাজিফা শিউলি বেগমকে বললো--- ছোট মা আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছি প্লিজ ছাড়ুন। প্লিজ।
( চলবে)
লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

1 টি মন্তব্য:

  1. Best casinos accepting players from Australia December 2021
    A list of bk8 the best casinos 배당흐름 accepting Australians 룰렛배당 in 2021. ➤ Top Casino Sites ✓ Online Gambling ✓ Australian Casinos List ✓ Bonus Offers 🏆 Top 유흥 싸이트 Casino Bonuses: BetVictor🏆 Best Free Spins 솔레어 Casino: 888 Casino🏆 Best Payout Bonuses: LeoVegas Casino

    উত্তরমুছুন