#নিয়তি-২(পর্ব--৪) । লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।
মায়া--- মা প্লিজ তুমি ভাবীকে ছাড়!!
শিউলি বেগম--- কিসের ভাবী??? নিজের প.....
শিউলি বেগম আর কিছু বলার আগে মায়া ওনার মুখ চেপে ধরে----মা তোমাকে আমার দিব্যি আর একটা কথা ও বলবেনা।
মা, মেয়ের মধ্যে কি কথা হচ্ছে নাজিফার সে দিকে খেয়াল নেই হাতের ব্যাথায় মেয়েটি প্রায় কান্না করে দিয়েছে।
মায়া তা দেখতে পেয়ে জোর করে শিউলি বেগমের হাতটা ছাড়িয়ে--- মা তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো দেখ ও কি পরিমান ব্যাথা পেয়েছে।।
নিতু--- আমি বুঝিনা এরুপ একটা থার্ড ক্লাস মেয়ের জন্য তোমার এতো দরদ কেন????
ফাহমিদা হেসে - হেসে ----পাগল ও নিজের ভালো বুঝে। এরুপ একটা নোংরা মেয়ের জন্য তুমি নিজের মায়ের সাথে ও খারাপ বিহেভ করছো!!!!
এই বলে,,
হঠাৎ দরজার দিকে তাকাতেই ফাহমিদার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। মুখটা কেমন যেনো বিষন্ন হয়ে যায়। হাত দিয়ে বারবার নিতুকে খোঁচানো শুরু করলো।
---কি হলো বৌ মনি এমন করছো কেন???
ফাহমিদা দরজার দিকে ইশারা করতেই , নিতু--- ভাইয়া তুই!!!! এতো তাড়াতাড়ি আজ চলে আসলি!!!
নিতুর গলার আওয়াজে নাজিফা ও দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ইমাদ দাঁড়িয়ে
রয়েছে। এক দৃষ্টিতে নাজিফার দিকে চেয়ে রয়েছে, চোখ দুটো লালচে রংয়ের হয়ে গেছে। ইমাদকে দেখে নাজিফা চোখ মুছে স্বাভাবিক ভাবে হাসতে চেষ্টা করলো।
ইমাদ বাড়িতে ঢুকে নিতুকে বললো--- এতো তাড়াতাড়ি না আসলে তো তোমাদের এসব কাহিনী দেখতে পেতাম না।
নাজিফা ইমাদের দিকে তাকাতে পারছেনা,,,, ---কি ব্যাপার!! ও কি কিছু দেখেছে! ওর চোখ দুটো তো সহজে এমন লাল হয়না আর তাছাড়া আমার দিকে এরুপ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে কেন!!!
শিউলি বেগম ইমাদের কথা শুনে ইমাদকে বলতে লাগলো--- ইয়ে মা,মা মানে তুই এতো তাড়াতাড়ি বাবা??
ইমাদ শিউলি বেগমের প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়ে উপরে চলে যায়।
.
.
.
নাজিফা সকলকে নাস্তা দিয়ে সন্ধে সাড়ে সাতটায় ইমাদের জন্য সামান্য কিছু নাস্তা নিয়ে টিপটিপ করে ঘরে ঢুকতেই দেখে পুরো ঘর অন্ধকার।
---কী ব্যাপার ইমাদ তুমি কই?? আর এভাবে ঘরের সব লাইট অফ করে রেখেছো কেন???
ইমাদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নাজিফা টেবিলের উপর নাস্তাগুলো রেখে ঘরের লাইট দেয়। লাইট দিতেই নাজিফা দেখলো ইমাদ গম্ভীর ভাবে বিছানায় শুয়ে রয়েছে।
নাজিফা ক্ষীণ কন্ঠে-- এভাবে শুয়ে আছো কেন??? আর এখন ও ড্রেস চেঞ্জ করলানা!! ও বুঝছি জামা- কাপড় আলমারী থেকে বের করে রাখিনি তাই?? দাঁড়াও আমি এখুনি বের করে দিচ্ছি।
এই বলে নাজিফা আলমারি থেকে জামা- কাপড় বের করে বিছানার উপর রেখে ---- এই নাও, যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো।
ইমাদ তা ও চুপ করে শুয়ে থাকে,,
--- কি হলো কথা বলছো না কেন?? আচ্ছা আগে নাস্তা করে নেও তারপর না হয় ফ্রেশ হবা। এই বলে নাজিফা নাস্তার প্লেট হাতে নিতেই হাতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো --- এতো জোরে কেউ কারো হাত চেপে ধরে,, আজকে সারারাত এর ব্যাথায় ঘুমাতে পারবোনা যদি মলম না লাগাই, কিন্তু মলম লাগাতে গেলে তো ইমাদ বুঝে ফেলবে আর একবার যদি জানতে পারে তাহলে তো আজকে রনক্ষেত্র হবে বাড়িতে,,, ভাগ্যিস শুধু ফাহমিদা ভাবীর কথাটাই শুনেছে,,,, ছোট মায়ের ঘটনা বোধহয় ও দেখেনি।যাক গে।
নাজিফা নাস্তার প্লেট নিয়ে ইমাদের সামনে গিয়ে--- এই নাও কিছু খেয়ে নেও।
ইমাদ ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো
--- কি হলো এভাবে চেয়ে আছো কেন?? আর চোখগুলো এতো লাল হয়ে আছে কেন? আজকে আবার কার উপর রাগ হয়েছে?
ইমাদ নাজিফার প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়ে ওর থেকে নাস্তার প্লেটটা নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিলো।
নাজিফা হতবাক হয়ে যায়।
ইমাদ নাজিফার দিকে চেয়ে --- তুমি আমার সাথে একদম কথা বলবে না।
এই বলে ইমাদ নিচে নামতেই নাজিফা লক্ষ্য করলো বিছানাটা রক্তে লাল হয়ে গেছে৷
নাজিফা কিছুটা ভয় পেয়ে ---- বিছানায় এমন রক্ত কেন???
কথাটা বলার পর পরেই নাজিফা দেখলো ইমাদ ভাঙ্গা কাঁচের প্লেটের সেই টুকরো গুলোর উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।
নাজিফা কাদো স্বরে ইমাদকে গিয়ে জড়িয়ে বিছানার উপর বসিয়ে,---- তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো!!!! এটা কি করলে এই বলে ইমাদের দিকে তাকাতেই দেখে ওর হাতে রক্ত আর রক্ত। নাজিফা বুঝতে পারলো না ইমাদের হাতে রক্ত আসলো কিভাবে,,, পা তো কাটা গিয়েছে এখন কিন্তু হাতে রক্ত কেন ? ওমনেই বিছানার সাথে থাকা ওয়ারড্রবের দিকে তাকিয়ে ইমাদকে
----- কাঁচের ফুলদানি টা কোথায়???
ইমাদ মাথা নিচু করে বসে রইলো৷
তার মানে ইমাদ নিচে যা হয়েছিলো সব দেখেছে!!!! এই একবছরে এই টুকু আমি বুঝতে পেরেছি মানুষটার বড্ড বেশি রাগ,,, আর আমার উপর রাগ উঠলে কিংবা অভিমান করলে ঘরের কিছুনা কিছু ভাঙবে সাথে নিজের হাত পা ও কাটবে।
নাজিফা রাগ মুখে--- তোমার সাথে এসব নিয়ে পরে হিসাব নিকাশ করছি আগে তোমাকে ট্রিটমেন্ট করে নেই।
.
.
নাজিফা ডয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে ব্যান্ডেজ করতে-- করতে--- আমাকে না মরলে তুমি শান্তি পাবা না,, তুমি তো চাও আমি যেনো তাড়াতাড়ি মরে যাই।
ইমাদ রেগেমেগে নিজের হাত সরিয়ে,--- তোমার আমাকে ব্যান্ডেজ করা লাগবেনা তুমি এখান থেকে যাও। একশো দিন নিষেধ করেছিলাম এ ধরনের ফালতু কথা বলতে না।
---- ডং করছো আমার সাথে,,,এই আমি ও তোমাকে একশোদিন নিষেধ করেছিলাম এরকম ফালতু কাজগুলো না করতে।
ইমাদ চেঁচিয়ে -- চেঁচিয়ে --- একশো বার করবো, হাজার বার করবো, লক্ষবার করবো, যতোদিন না তুমি শুদ্রাবে ততদিন করবো।
---- মানে????
----- মানে তুমি জানোনা??? তোমাকে আমি কতদিন বলেছি এভাবে আমার ফেমেলির মানুষগুলোর তিক্ত কথা শুনবে না।। ওদের অত্যাচার গুলো মেনে নিবেনা প্রতিবাদ করবে,,, তুমি তবুও আমার কথা শুনলে না,,, নিত্য দিন বৌ মনি আর নিতুর বাজে কথাগুলো শুনা যেনো তোমার একটা রুটিন হয়ে গিয়েছে, এখন তো আবার তাদের দলে যোগ দিয়েছে ছোট মা। এভাবে তোমার হাতটা চেপে ধরলো অথচ তুমি ওনাকে কিছুই বললেনা???
নাজিফা ইমাদের কথা শুনে নিজের হাতটা পিছনে লুকাতেই ইমাদ প্রচন্ড জোরে ধমকি দিয়ে--- হাত লুকিয়ে কি হবে তুমি কি মনে করছো আমি কিছু দেখিনি!!!!!
নাজিফা আমতা- আমতা করে--- তো, তো কি হইছে হাতে না হয় একটু ব্যাথা পেলাম এতে কি আর হবে?
---- আবার, আবার সেই ঘাড় ত্যাড়ামি করছো??? এই তোমার এসব স্বভাব কবে যাবে????
---- চুপ থাকো তুমি,,, আমার সাথে কেউ খারাপ আচরণ করলে তুমি কি চাও আমি ও তার সাথে খারাপ আচরণ করি!! যদি করি তাহলে ও আর আমার মাঝে তফাৎ কি থাকবে? আর তাছাড়া ওনি তোমার খালা হয় , বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড় ওনি আমার সাথে খারাপ কিছু করলে আমি ও কি বেয়াদবের মতো তার সাথে খারাপ কিছু করবো??
------ নাজিফা কেউ তোমাকে খারাপ কিছু বললে, তোমাকে অপমান করলে বিশ্বাস করো আমার মাথা ঠিক থাকেনা আর সবচেয়ে বেশি রাগ উঠে যখন দেখি তুমি নিশ্চুপে সেগুলো সহ্য করছো।।।
----- তাই বলে তুমি বোকার মতো নিজের হাত কাটবে?????? এই নিয়ে কয়টা ফুলদানি ভাঙছো তোমার খেয়াল আছে???
ইমাদ মাথা নিচু করে--- কালকে আরেকটা কিনে আনবো।।
নাজিফা অট্টহেসে---একটা কেন আনবা তুমি বরং পুরো ফুলদানির৷ দোকানটাই নিয়ে এসো, আর আমাকে কেউ কিছু বললে প্রতিদিন এভাবে হাত কেটো,,যত্তসব।।। এই তুমি আমাকে বকলে ও তো হতো,,, তা না করে কি করছো??
----- তোমাকে বকা,,, আসছে আরে তোমাকে আমি সারাদিন বকলে ও তুমি শুদ্রাবেনা। উল্টো বলবে ---থাক বললে কি হয়েছে।
---- চুপ থাকো তুমি একদম কথা বলবে না। আজকে দেখবো তুমি কি করে ভাত খাও।
ইমাদ মুচকি হেসে--- কেন তুমি খায়িয়ে দিবে।
---- ওলে বাবালে আমি খায়িয়ে দিবো,,, এই যে যাচ্ছি এই ঘর থেকে একমাস ও তোমার কাছে আমি আর আসবোনা। আমি আমার মেয়েদের সাথেই আজ থেকে থাকবো।
এই বলে নাজিফা চলে যেতে চাইলে, ইমাদ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে--- প্লিজ এসব বলো না।
--- তুমি আমার কথা না শুনলে আমি কেন তোমার কথা শুনবো।
ইমাদ ভ্রু কুঁচকে,---- তুমি কেন বুঝোনা নাজিফা কেউ তোমাকে কিছু বললে আমার ভীষন খারাপ লাগে।
-
--- তুমি কেন বুঝোনা এভাবে নিজেকে আঘাত করা উচিত নয়,এতে আল্লাহ পাক অনেক অসন্তুষ্ট হয়। আর তাছাড়া আমি কতটা কষ্ট পাই তুমি জানো????
.
.
ইমাদ কান ধরে --- স্যরি আর করবো মাফ করে দেও।
নাজিফা অভিমানি কন্ঠে--- এই শেষ বারের মতো মাফ করে দিলা।।
ইমাদ ওমনেই হেসে নাজিফার হাত ধরতেই, নাজিফা চিৎকার দিয়ে উঠলো।
--- দেখি হাতটা।
-নাজিফা হাত দেখাতেই,,, ইমাদ নিশ্চুপ ভাবে---- নাজিফা এভাবে মানুষের অপমান সহ্য করোনা, মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখো, অনেক তো মানুষের অপমান,মাইর ইভেন তোমাকে পণ্য করতে সুযোগ দিলে। এবার না হয় নিজেকে সম্মান করতে শিখো।
নাজিফা ইমাদের দিকে চেয়ে---- আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে, তাইতো মোহন আমাকে পণ্য বানিয়েছে দেখেই তো তাকে ছেড়ে আসতে পেরেছি আর আমার রব ধৈর্য ধারণ করেছি বলে তোমার মতো একটা মানুষকে দিয়েছে। যে আমাকে এতোটাই ভালোবাসে যে আমার সামান্য কষ্ট ও সহ্য করতে পারেনা।
ইমাদ নাজিফার মাথাটা নিজের বুকের মাঝে রেখে উপরের দিকে তাকিয়ে টপটপ করে দু ফোঁটা চোখের জল ফেলে দিলো। বাহিরে হিমহিম বাতাস বইছে নাজিফাকে বুকের মাঝে রেখে ছেলেটি যেনো আলাদা একটা শান্তি পায়।
স্বপ্ন দেখে এই মেয়েটি কে সে আর মিতুর মতো দূরে চলে যেতে দিবেনা,,, দুজনে এক কবরে সমাধি হবো তারপর একসাথে দুজনে জান্নাতের ছোট একটি কুঁড়েঘরে থাকবো হয়তো আমার গুনাহ বেশি কিন্তু রবের দয়ার চেয়ে তো বেশি নয়। তাই অবশ্যই আমার মন আমাকে স্বপ্ন দেখায় জান্নাতে যাওয়ার।
কেননা আমরা আমাদের রবের সম্পর্কে যে সুধারনা রাখি রব সেই ধারনার কাছে থাকে।
.
.
ইমাদ ঘরের লাইটটা বন্ধ করে দিলো, কেন জানি আজ ইমাদের খুব জানতে ইচ্ছে করছে ওই কবরে যদি নাজিফা এভাবে আমার বুকের মাঝে শুয়ে থাকে তাহলে কি আমার অন্ধকারে ভয় লাগবে!!!!!!! নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে!!!নাকি আমি সুখের কোনো রাজ্যে থাকবো।
নাজিফা ক্ষীণ কন্ঠে--- লাইটটা বন্ধ করে দিলে কেন???
---- মাঝেমাঝে এই গোলাকার পৃথিবী থেকে দূরে চলে যাওয়ার অনুভূতিটা খুব পেতে ইচ্ছে করে, অন্ধকারে থাকার অনুভূতিটা কেমন হবে জানতে ইচ্ছে করে তাই লাইটটা অফ করে দিলাম।
ইমাদের কথা শুনে নাজিফার বুক ধুকপুকানি করতে লাগলো, মেয়েটি শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলো,,, আসলে ছোট বেলা থেকে কারো ভালোবাসা পায়নি তো মেয়েটি , নিজের মা, বাবা প্রথম স্বামী কেউই তো মেয়েটিকে ভালোবাসলো না। তাই যেই মানুষটা একটু ভালোবেসেছে আজ সেই মানুষটার মুখে এমন অদ্ভুত কথাগুলো শুনতে সত্যিই ভয়, আর কষ্ট পাওয়ার কথা।
ইদানিং রাতে ও খুব খারাপ স্বপ্ন দেখছি ইমাদ আমার থেকে দূরে চলে যায়, ও আমাকে দূরে ঠেলে দেয় অনেক দূরে, অনেক।
আচ্ছা সে স্বপ্ন আবার সত্যি হবে না তো!!!!! আমি কি আবার এ কূল ও হারিয়ে ফেলবো!!!
0 coment rios: