মঙ্গলবার

#নিয়তি--২(পর্ব--৫) । লিখা--- আসমা আক্তার পিংকি।

 #নিয়তি--২(পর্ব--৫) । লিখা--- আসমা আক্তার পিংকি।

সকালের নাস্তা করতে বসে শিউলি বেগম নাজিফাকে বললো---- তা ইমাদ কই এখন ও নিচে নামছেনা কেন??
নাজিফা--- আসলে ছোট মা ওর শরীর আজ ভালো নেই তাই অফিসে ও যাবেনা।
সালেহা--- কি হয়েছে ওর???? কালকে রাতে ও দেখলাম নিচে আসলোনা,,, তুমি খাবার উপরে নিয়ে গেছো।
শিউলি বেগম কটু করে--- কি আর হবেরে আপা,,, তোর ছেলে এতোটাই বউকে ভাললবাসে যে আমি নাজিফাকে দু - চারটা কথা বলেছিলাম দেখে আমার সাথে অভিমান করে নিচে খেতে আসছে না।
সালেহা--- এটা তো ঠিক না নাজিফা,, ওনি বয়সে তোমার গুরুজন,, তোমাকে সামান্য কিছু তো বলতেই পারে এতে ওর এতো রিয়েক্ট করার কি আছে?
নাজিফা---- না মা আসলে কালকে রাত থেকে ওর প্রচন্ড জ্বর আর মাথা ব্যাথা,,, সকালে দেখেছিলাম জ্বরটা আরো বেড়ে গিয়েছে সারারাত আমি জল পট্টি দিয়ে ও কোনো কাজ হয়নি।
সালেহা উঁচু গলায়---- কি বলছো তুমি আগে বলবেনা আমায়,,, আর এতো জ্বর অথচ এখনো ডাক্তার ডাকোনি!!!!
শিউলি বেগম--- তাহলে বুঝ তোর ছেলেকে তোর কাছ থেকে কতটা দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।
সালেহা--- এটা তুমি ঠিক করলে না নাজিফা।
ফাহমিদা--- ও আবার কবে কোনটা ঠিক করে মা।
নাজিফা মাথা নিচু করে--- আসলে মা আপনার শরীর তো ভালো নেই, ইদানিং নিতুর টেনশান করতে-- করতে আপনার প্রেশার হাই হয়ে গেছে,,, ডাক্তার বলেছিলো আপনাকে যতোপারি টেনশান থেকে দূরে রাখতে তাই.......
সালেহা--- তাই তুমি আমায় কিছুই বললেনা।।। তা ডাক্তার খবর দিয়েছো???
--- হ্যা,মা।
.
.
উপর থেকে ইমাদের ডাক--- নাজিফা, নাজিফা।
শিউলি বেগম ঠুনকো হেসে--- দেখ আপা দেখ তোর ছেলে এখন আর অসুস্থ হলে ও তোকে ডাকেনা, তোর দাম ওর কাছে একটু ও নেই। এইতো শুরু আর ও কতকিছু দেখবি।
নাজিফা--- ছোট মা আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু ঠিক নয়৷ ওর হয়তো পানি, বা কিছু লাগবে তাই আমাকে ডেকেছে।।
--- দেখেছিস তোর বউ কেমন মুখের উপর কথা বলে,, আমি ভুল কি বললাম,,, তোর ছেলে অসুস্থ হয়েছে অথচ তোকে জানায়নি,,, তোর ছেলে অথচ তোকে ভুল করে ও একবার ডাকেনা ।
বউকেই ডাকছে...
সালেহা বেগম শিউলি বেগমের এসব কথায় নাজিফার উপর কিছুটা অভিমান করে খাবার ফেলে নিজের রুমে চলে যায়।
---মা প্লিজ এভাবে খাবার রেখে চলে যাবেন না।
---- আমার মনে হয় কি নাজিফা, ইমাদের কাছে আমার দাম সত্যিই এখন আর নেই।
.
.
.
সালেহার প্রস্থানের পর নাজিফা একটু রেগে গিয়ে---- ছোট মা এভাবে না বললেও পারতেন।
শিউলি বেগম--- দেখছোস ফাহমিদা আমার সাথে কি রুপ আচরণ করছে।
কালকে রাতে ওভাবে হাত ধরেছিলাম তা ও ওর শিক্ষা হয়নি।
এমন সময় নিতু ফোনে কথা বলতে- বলতে নিচে নামছে--- হ্যা তুমি ওখানেই থাকো আমি আসছি। আরে দূর কে আমাকে আসতে বাঁধা দিবে,,, শুনো আজকে কিন্তু সারাদিন আমি তোমার সাথে ঘুরবো।
আচ্ছা ঠিক আছে বাই।।
নাজিফা বিস্মিত কন্ঠে --- কার সাথে কথা বলছিলে নিতু????
নিতু---হাউ ডেয়ার ইউ!!!! তুমি আমার কাছে কৈফিয়ত চেয়েছো কার সাথে আমি কথা বলছি!!!!!
---- এতে কৈফিয়ত চাওয়ার কি হলো বলো, এতো সকালে বের হয়ে যাচ্ছ,, কোথায় যাচ্ছো জানতে তো আর দোষ নেই।।
শিউলি বেগম--- হ্যা দোষ আছে,, বাড়িতে এতো বয়স্ক লোক থাকতে তোমার মতো একটা পুচকি মেয়ে আমার ভাগনি কে জিজ্ঞাসা করছে ও কোথায় যাচ্ছে!!! এই নিতু তোর যেখানে ইচ্ছে তুই যা।
--- ছোট মা এটা কিন্তু আপনি ঠিক করছেন না।
---- সেট আপ!!! একটা কথা ও আর বলবেনা নাহলে কালকে রাতের মতো আমি আবার তোমার অবস্থা খারাপ করে দিবো।
.
.
.
.
নাজিফা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা ঘরে চলে গেলো।
গিয়ে দেখে ইমাদ জ্বরে প্রচন্ড কাঁপছে,,, নাজিফা আর ও একটা চাদর ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে ----- আর ও হাত কাটো আর এভাবে আমাকে কষ্ট দেও।
ইমাদ কাঁপা -- কাঁপা কন্ঠে---- নাজিফা আমার পুরো শরীরটা ব্যাথা হয়ে আছে, কেমন যেনো নিসঙ্গ লাগছে প্লিজ আমার পাশে একটু বসো,,, আর মা কোথায় মাকে প্লিজ আমার কাছে আসতে বলো।
---- সকাল থেকে একশো বারেই তো মাকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে বলছো, কিন্তু মা যদি এসে তোমার হাত আর পায়ের এই অবস্থা দেখে তাহলে বুঝতে পারছো তার প্রেশার কতোটা হাই হয়ে যাবে।
ওনি ভেবেছেন তুমি ওনাকে পর করে দিয়েছো, আমার উপর ভীষন অভিমান করে নাস্তা না খেয়ে উঠে চলে গেছে, কিন্তু আমি কি করবো বলো তোমার এই অবস্থা যদি ওনি দেখে তাহলে তো প্রচুর টেনশান করবে।
ওমনেই দরজার পাশ থেকে---সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না নাজিফা!!!!
নাজিফা বিস্মিত চাহনিতে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সালেহা বেগম,--- মা আপনি!!!!
---- হুম আমি। মা বলে কথা ছেলে অসুস্থ শোনার পর ও ছেলের উপর অভিমান করে মায়েরা কি দূরে থাকতে পারে। তাইতো ছেলেকে দেখতে চলে আসলাম আর সব শুনলাম।
সালেহা বেগম ঘরে ঢুকে নাজিফার হাত ধরে--- আমাকে ক্ষমা করে দিস।
--- এসব কি বলছেন মা,,, আপনিই তো আমাকে শাসন করবেন, বকবেন আবার ভালোবাসবেন।
সালেহা বেগম ইমাদের মাথার পাশে বসে,, কাদো স্বরে---- হাত আর পা টাকে এভাবে কাটলি কি করে????
ইমাদ আমতা- আমতা করে--- ও কিছুনা আসলে মা হাতের বাড়ি খেয়ে কাঁচের ফুলদানি টা নিচে পড়ে যায় ফলে পা কাটা যায়, আর কাঁচ গুলো উঠাতে গিয়ে হাতটা কেটে যায়।
-----এতো বড় হওয়ার পর ও এমন বেখেয়ালি!!!
সালেহা বেগমের কথা শেষ না হতেই মায়া দৌড়ে রুমে ঢুকে ইমাদের পায়ের কাছে বসে কাঁদতে -- কাঁদতে --- ই, ই,ইমাদ,ইমাদ তো,তোমার এই অবস্থা কি করে হলো??? তোমার হাতে এমন ব্যান্ডেজ কেন!!!
নাজিফা কিছুটা অবাক হয়ে যায়, মায়ার বিচলিত চেহারা আর এরুপ আচরণ নাজিফাকে সত্যিই খুব ভাবাচ্ছে।
---- খালামনি ইমাদের কি হয়েছে, ঘুম থেকে মাত্র উঠে নিচে নামতেই মা বললো ওর নাকি প্রচন্ড জ্বর। কিন্তু এখানে এসে তো দেখি ও ওর হাত-- পায়ে ব্যান্ডেজ।
.
.
.
.
সালেহা বেগম নাজিফার দিকে তাকিয়ে দেখলো নাজিফা চোখগুলো বড় - বড় করে মায়ার দিকে চেয়ে আছে।-
-- এই রে মায়ার এতো ইমোশন হওয়াটা তো নাজিফার মনে সন্দেহ জাগাতে পারে।
সালেহা বেগম হেসে- হেসে--- ইয়ে মানে মায়া আসলে ওই ফুলদানি পড়ে ওর পা টা কেটে গেছে আর হাতটা কাঁচ গুলো উঠাতে গিয়ে কেটে গেছে।
মায়া, চেঁচিয়ে -- চেঁচিয়ে নাজিফাকে উদ্দেশ্যে করে বললো---- এই তোমার ভালোবাসা,, যে ভালোবাসা নিজের প্রিয় মানুষের যত্ন নিতে পারে না সেটাকে আর যাই হোক সত্যি কারের ভালোবাসা বলেনা।
ইমাদ কথা বলতে পারছেনা, ছেলেটার নিশ্বাস নিতে ও প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে কিন্তু মায়ার এরুপ ব্যবহারে ইমাদ রেগে ওকে ধমকি দিয়ে বললো---- চুপ থাক মায়া, প্লিজ আমাকে নিয়ে তোর এতো ভাবার দরকার নেই আমাকে নিয়ে ভাববার মানুষ আছে৷ আর তুই কোন সাহসে আমার ওয়াইফের সাথে এমন ভাবে বিহেভ করছিস!!
সালেহা--- আহ ইমাদ!! বাদ দে তোর শরীর ভালো নেই,, নাজিফা তুমি ডাক্তারকে খবর দিয়েছো।
---- জ্বি মা আসলে ওনি একটা রোগীর চেকআপ করিয়ে বলেছেন আসবে। আর এই যে ওর জন্য গরম-- গরম পরটা ভাজা আর ডিম এনেছি,, এটা খায়িয়ে নাপা এক্সট্রা খাওয়াবো।
মায়া---- মানে কি!! তুমি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ওকে ঔষধ খাওয়াবে।
---- মায়া এতে রিয়েক্ট করার কি আছে??? একটা ছোট বাচ্চা ও তো জানে জ্বর হলে নাপা কিংবা প্যারাসিটেবল খাওয়ানো উচিত আর ডাক্তার ও বলেছেন নাপা খায়িয়ে দেখতে জ্বর কমে কিনা।
মায়া কাঁদো স্বরে--- তোমার যা খুশি করো, তুমি আমার ইমাদকে সত্যিই মেরে ফেলবে।
।।
এই বলে মায়া দুমদাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
নাজিফা ভ্রু কুঁচকে ---- আমার ইমাদ মানে!!!!!
সালেহা বেগম থরথর কন্ঠে--- ইয়ে, মা,মা মানে নাজিফা তুমি মায়া কি বললো তা নিয়ে পড়ে থাকবে নাকি ইমাদকে নাস্তা টা দিবে।
--- ও হ্যা দিচ্ছি ।
--- ঠিক আছে,,,ইমাদ তুই বিশ্রাম নে, মা তোর জন্য গরম -- গরম দুধ নিয়ে আসছি।
...সালেহা বেগম চলে যেতেই নাজিফা ইমাদকে বসিয়ে পরটা আর ডিম ভাজি মুখে দিতে গেলেই ইমাদ নাজিফার হাতটা ধরে------- মুখটা ওমন শুকনো কেন???
----- আমার ইমাদ মানে কি?????
ইমাদ আমতা-- আমতা করে--- নাজিফা আমার মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে, হাত টা প্রচন্ড ব্যাথা করছে প্লিজ মাথাটা একটু টিপে দিও।
নাজিফা বুঝতে পেরেছে ইমাদ প্রশ্নটা এড়িয়ে যেতে চাইছে। নাজিফার মুখটা বিষন্ন হয়ে গেলো, ইমাদকে আর কোনো প্রশ্ন না করে খাবারটা ওর মুখে দিতেই আবার ইমাদ নাজিফার হাত ধরে ---কি হইছে???
নাজিফা নিশ্চুপ ভাবে বসে রইলো।
--- রাগ করছো আমার সাথে???
নাজিফা মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
--- তাহলে মুখটা এমন গোমরা করে রেখেছো কেন???
---- প্রশ্নটার উত্তর দিলেনা তাই।।
৷---- তুমি কি আমায় বিশ্বাস করোনা!
---- নিজের থেকে ও বেশি করি।
---ব্যস তাহলে আমাকে সময় দেও পরে না হয় তোমাকে সব বলবো।
--- কিন্তু ভয় লাগে তুমি ও যদি মোহনের মতো আমার বিশ্বাসের, ভালোবাসার অসম্মান করো!!!!
ইমাদ নাজিফার গাল আলতো করে ছুয়ে --- দূর পাগলি,, সবাই কি আর এক হয়, সবার ভালোবাসা কি একই রকমের হয়।আমি কখনোই তোমার বিশ্বাস ভালোবাসার অসম্মান করবোনা।
নাজিফা ইমাদের হাতটাকে শক্ত করে ধরে--- এ কি তোমার জ্বর দেখি আর ও বেড়ে যাচ্ছে। নেও তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নেও..............
.
.
.
মায়া শিউলি বেগমের কাছে গিয়ে ওনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে-- কাঁদতে--- মা ইমাদ কি কখনোই আমায় বুঝবেনা,, কখনোই বুঝবেনা আমি ওকে কতোখানি ভালোবাসি,,, কতটা ভালোবেসে আমি এখন অবদি অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে পারছিনা।
শিউলি বেগম মায়ার চোখের পানি মুছতে-- মুছতে--- তুই মেয়ে আবার আমায় বলিস নাজিফার সাথে ভালো আচরণ করতে। আমি যেমন আগে মিতুকে দেখতে পারতাম না ঠিক তেমনি নাজিফাকে ও ঘৃনা করি।
ওকে দেখলে আমার গায়ে জ্বালা হয় মা জ্বালা,, তুই সারাটা জীবনেই ইমাদের কাছে প্রত্যাখান হয়ে এলি। অবশ্য ইমাদের কাছে শুধু বলি কেন তোর খালার কাছে ও প্রত্যাখান হয়ে এলি।
---- মা বিশ্বাস করো ইমাদকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারছিনা। আমি অনেক চেষ্টা করছি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে কিন্তু ওর চেহারাটা,,ওর ভালোবাসা আমাকে পাগল করে ফেলছে।
--- এভাবে বলিস না তুই। আমি এভাবে তোর জীবন টা শেষ হয়ে যাক দেখতে পারবোনা।
মায়া,পাগলের মতো শিউলি বেগমের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
শিউলি বেগম নিজের মেয়ের এই অবস্থা দেখে জোরে চিৎকার দিয়ে- দিয়ে---- আপা তুই আর তোর ছেলে এটা ঠিক করলি না। আমার মেয়ের জীবনটা এভাবে শেষ করে দিলি!!!!!
এই বলে হাতের কাছে থাকা ল্যাম্পপোস্টটাকে এক ধাক্কায় মেঝেতে ফেলে দিলো।
----- ল্যাম্পপোস্টটাকে এভাবে ভেঙে কি হবে, যদি আসল জায়গায় এই কোপ টা না মারতে পারো।
কথাগুলো শুনতে পেয়ে বিস্মিত চাহনিতে শিউলি বেগম দরজার দিকে তাকাতেই দেখে ফাহমিদা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
শিউলি বেগম চোখের জল মুছে--- তুমি!! তুমি এখানে, কি দেখতে এসেছো???
ফাহমিদা,কোনো কথা না বলে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো তারপর শিউলি বেগমের হাতটা শক্ত করে ধরে--- তোমার ক্ষতটাকে সারিয়ে দিতে এসেছি...-
--- মানে????
---- মানে আর কি,,,, তোমার মেয়ের সোজা পথটার মধ্যে কাটা হিসেবে যে রয়েছে আমি চাই তুমি তাকে উপড়ে ফেলো। এন্ড ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন দ্যাট আমি তোমাকে এটা করতে হেল্প করবো।
--- আমি বুঝলাম না।
---- ওকে তাহলে সোজা ভাবেই বলি,,, নাজিফাকেই যদি এই পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেই তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?????
( চলবে)
লিখা--- আসমা আক্তার পিংকি।
( খেলা হপ্পে, খেলা দেখতে থাকুন )




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: