বুধবার

#নিয়তি পর্ব - ১৮ লিখা--আসমা আক্তার পিংকি

#নিয়তি পর্ব - ১৮

লিখা--আসমা আক্তার পিংকি


বন্ধুর সাথে কথা বলার পর থেকে মনের ভেতরে হাজারও জট পাকতে শুরু করে দিয়েছে ধ্রুবের। কেন জানি তার মনে হচ্ছে রূপা কিছুই করতে পারেনা। অপরদিকে তার বাবা-ভাইয়ের রক্তাক্ত চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠলেই রূপাকেই তাদের খুনী মনে হয়। এ কেমন দ্বীধায় পরে গেল সে? কোনটা সত্য? কোনটা মিথ্যা? কিছু বুঝতে পারছে না ধ্রুব। সবকিছু জট পেকে গেছে। এই বিষয়ে রূপার সাথে কথা বলতেই হবে তাকে।
- ভাইয়া, আমার কিছু টাকা লাগবে এই মুহূর্তে।
নিলুর কথায় চিন্তারাজ্যের বেড়াজাল ছিড়ে বেরিয়ে এল ধ্রুব। বলল,
- কত লাগবে?
হালকা কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিল নিলু। বলল,
- বেশি না ১২ হাজার দিলেই হবে।
চমকে গেল ধ্রুব। বলল,
- এত টাকা দিয়ে কী করবি?
নিলু আমতা আমতা করতে লাগল।
- ও-ওই.... আমি আজ শপিংমলে গিয়েছিলাম। ঘুরেফিরে দেখতে দেখতে একটা এক্সক্লুসিভ ড্রেস দেখে খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু দাম শুনেই কিনতে পারি নাই। তখন আমার কাছে এত টাকাও ছিল না যে কিনব। ভাইয়া ওই জামাটা আমার চাই-ই চাই। খুব সুন্দর ড্রেস-টা।
ধ্রুব বলল,
- তুই ওই মার্কেটের নামটা বল, আমি কালই গিয়ে কিনে আনব।
- না না ভাইয়া। তোর কিনতে হবে না। না... মানে আমি কাল ফ্রেন্ডসদের সাথে কিনতে যাবো বলে ঠিক করে এসেছি। এখন, কাল ওদের সাথে না গেলে রাগ করবে।
- ও। তাহলে তুই-ই গিয়ে কিনে আনিস। এই নে টাকা।
নিলু টাকাগুলো পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। বলল,
- থ্যাংকইউ ভাইয়া।
.
- হ্যালো! টাকা ম্যানেজ করা হয়ে গেছে।
- রিয়েলি? এত টাকা কোথায় পেলে?
- ভাইয়ার থেকে নিয়েছি। বলেছি, আমি একটা ড্রেস কিনব। তাই টাকা লাগবে।
- ও গ্রেড! ইউ আর অ্যা জিনিয়াস নিলু। সত্যিই তোমার কোনো তুলনা হয়না।
- আই নো দ্যাট!
- সরি গো জান। আমার জন্য তোমাকে আজ, তোমার ভাইকে মিথ্যা বলতে হয়েছে। আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি। সত্যিই টাকাগুলোর খুব দরকার আমার। কারণ, আমি একটা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। এইটা তো তুমি ভালোভাবেই জানো। মা-বাবার একমাত্র ছেলে আমি। তাদের সবকিছুই আমাকেই দেখতে হয়। আর ১২ হাজার টাকাগুলো তাদের জন্যেই তোমার থেকে নেয়া। এখন আপাতত, অফিস থেকে তেমন টাকা পায় না। ২-৩ হাজার মত পায়। তা দিয়ে আমাদের সংসার-টা টেনে নেয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে। ডক্টর বলেছেন বাবার নাকি হার্ট ছিদ্র হয়ে গিয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে কিছুই করতে পারছি না। ডক্টর বলেছেন, বেশি দেরী হয়ে গেলে বাবাকে আর....
বলেই থামল শরৎ। নিলু বলল,
- কত টাকা লাগবে বলো? আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তোমাকে হেল্প করার চেষ্টা করব।
শরৎ বলল,
- না নিলু। তুমি আমাকে অনেক হেল্প করেছো। আর না.....
- এবারও হেল্প করার একটা সুযোগ দাও। প্লিজজজজজ, বলো না অপারেশন করতে কত টাকা লাগবে?
শরৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
- দেড় লাখ! ও, তুমি চিন্তা করো না। আমি যেভাবেই হোক ম্যানেজ করে ফেলব।
নিলু বলল,
- কালই তুমি আংকেলকে হসপিটালে ভর্তি করাবে। আর টাকা নিয়ে একদমই টেনশন করতে হবে না তোমার। সবটা আমি সামলে নেব। তুমি শুধু কালই আংকেলকে হসপিটালে ভর্তি করাবে। ওকে? এখন বাই। খুব ঘুম পাচ্ছে। তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো। গুড নাইট।
শরৎকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কলটা রেখে দিল নিলু। মোবাইল-টা বিছানার উপর ফেলে দিয়ে আলমারির দিকে এগুলো সে। আলমারির উপরেই চাবি রাখা ছিল। সেখান থেকে চাবি-টা পেরে আলমারি-টা খুলে ফেলল নিলু। আলমারির ভিতরের ড্রয়ার-টা খুলতেই গহনা নজরে আসল তার। বাবা মারা যাবার আগেই ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে গহনাগুলো বানিয়ে রেখেছিলেন নিলুর জন্য। মেয়ের বিয়েতে যেন কোনো কমতি না হয়! এটা ভেবেই তিনি নিলুর জন্য সবকিছু করে রেখে গিয়েছেন। গয়নাগুলো আলমারি থেকে বের করে বুকে জড়াল নিলু। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে। বাবার শেষ স্মৃতি ছিল এই গহনাগুলো। নিলু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। দূর আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল তারার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
- সরি বাবা। আমি তোমার শেষ অবলম্বণটিও নিজের কাছে রাখতে পারলাম না বলে। তবে, আমি জানি বাবা, তুমি আমার উপর রাগ করোনি। তুমি আমার উপর রাগ করতেই পারো না। মনে আছে বাবা? তুমি না আমাকে সবসময় বলতে বিপদেআপদে অসহায়ত্ব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে! আমি সেটাই করছি বাবা। বাবা বলো, আমি ঠিক করছি না? হ্যা বাবা, তুমি ঠিক বলেছো। তোমার মেয়ে এখন বুদ্ধিমতী হয়ে গিয়েছে। মাও সবসময় এটাই বলে। জানো বাবা? মা প্রতিদিন রাতেই তোমার কথা মনে করে কাঁদে। সবার সামনে না, যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখনই মা কাঁদে। বাবা এটা কাউকে বলবে না ওকে? এইটা কিন্তু সিক্রেট।
এইটুকু বলেই থামল নিলু। দেখল, আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল তারা-টা চিকমিক করছে। বিস্মিত চোখে তাকাল নিলু। বলল,
- কিহ বাবা! তুমিও মা-কে কাঁদতে দেখেছো?
.
পরের দিন রাতে.....
রাতের আকাশে তারা-রা দল বেধে এদিকওদিক ছোটাছুটি করছে। এই যেন নিকষ কালো আধার আকাশে তাদের মেলা বসেছে। তার মাঝখান দিয়েই উঁকি দিচ্ছে গোলাকার চাঁদ! বাড়িতে থাকাকালীন এমন তারাভরা রাতের উজ্জ্বলিত চাঁদ দেখে দ্বীপকে নিয়ে প্রায়ই এটাসেটা ভাবতে বসতো রূপা। কাল কী পরে দ্বীপের সাথে দেখা করবে? শাড়ি পড়বে নাকি জামা? কী কালারের পড়বে? লাল নাকি নীল? এটাসেটা ভেবেই এক-একটি রাত পেরিয়ে যেত। সবকিছুই যেন ঘোরের মত কাজ করতো। দ্বীপ যে রূপার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হল একটাই? রূপার জন্য দ্বীপের মনে কী আদৌ জায়গা আছে? ছাদের রেলিং ঘেষে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রূপা। চোখ বেয়ে পড়তে আরম্ভ করেছে হাজারও নোনাপানির ঢেউ। এই নিঃসৃত অন্ধকারেও চোখের পানিগুলো চিকচিক করছে তার। রেলিং এর উপরে একটা ডায়েরি রাখা আছে। রূপা ডায়েরি-টা সেখান থেকে তুলে নিল। বুকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদতে লাগল সে। এই ডায়েরি-টা দ্বীপ জন্মদিন স্বরূপ গিফট দিয়েছিল তাকে। সেদিন থেকেই রূপা ডায়েরি-টা নিজের সাথেই রাখে। যত্নসহকারে যথাস্থানে রেখে দেয় সে। প্রয়োজন ছাড়া বের করে না। আজ কেন জানি ডায়েরি-টার কথা মনে পড়ল। মনটা কাঁচুমাচু করছিল দ্বীপকে নিয়ে কিছু লেখার জন্য। সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ধ্রুব এরও একই অবস্থা। তাই দেরী না করে পা টিপে টিপে ছাদে চলে এসেছে সে। ডায়েরির প্রথম পাতায় রাখা ছিল একটি কলম। কলমটাও দ্বীপই দিয়েছে তাকে। ছাদের মাঝখান দিকে একটা দোলনা পাতানো রয়েছে। রূপা সেখানে গিয়েই বসল। রূপা যখনই সময় পেত তখনই দ্বীপের সাথে কাটানো ভালো মুহূর্তগুলো নিয়ে লিখতে বসতো। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। ডায়েরির পাতায় কলম ছুয়ালো সে। লিখল,
“দ্বীপ! এই নামটি যতবার লিখেছি ততবারই আমার বুকের বামপাশে কাঁপুনি দিয়ে উঠেছে। এই নামটি শুধু একটি নামই না। এই নামটি হল ভালোবাসার নাম।”
এইটুকু লিখেই থামল রূপা। এরপর আবারও ডায়েরির পাতায় কলম ছুয়ালো সে।
“জানো দ্বীপ? প্রতিটা রাতেই আমি তোমার জন্য বালিশ ভিজিয়েছি। এমন কোনো রাত যায়নি যে আমি তোমার কথা ভেবে চোখের পানি ফেলিনি। ভাগ্যিস চোখের পানির দ্বিতীয়ত্ব কোনো রং হয়না। নাইলে নির্ঘাত ধ্রুবের সামনে ধরা পরে যেতাম। হ্যা ধ্রুব! উনি আমার স্বামী। আর আমি উনার বিয়ে করা বৈধ স্ত্রী। মুখে তিনবার কবুল বলে, রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে বিয়ে করেছি উনার সাথে। তিনবার কবুল বলে বিয়ে করে ফেলেছি বলে ভেবে নিওনা যে লোকটাকে আমি মনটাও সপে দিয়েছি। আমি তোমার মত অন্তত বেঈমান নই। হ্যা তুমি বেঈমান। বেঈমান না হলে সেদিন পারতে আমার হাতটা না ধরে পালিয়ে যেতে? কেন করলে এমনটা আমার সাথে? আমি কী দোষ করেছিলাম বলো? কী দোষ করেছিলাম? শুধু ভালোবেসেছিলাম বলে?”
আবারও থেমে গেল রূপা। হাত যেন চলছেই না তার। তবুও কষ্ট করে লেখার চেষ্টা করল,
“সেদিনের কথা মনে পড়ে তোমার? যেদিন আমার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছিল। সেদিনের কথা ভাবলে এখনও গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে আমার। নতুন মা আমার জন্য একটা ছেলে ঠিক করেছিলেন। ছেলে বললে ভুল হবে। তিন সন্তানের বাবা ছিলেন লোকটা। বয়স ৩৭। লোকটার স্ত্রী তৃতীয় সন্তান জন্ম দেয়ার পরই মারা গিয়েছিলেন। বাচ্চাটার বয়স ছিল তখন ৬ মাস। বাচ্চাটাকে তার ফুফু কিছুদিন মানুষ করেছিল। তার কিছুদিন পরই মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়। এরপর কিছুদিন ওই লোকটাই বাচ্চাটাকে মানুষ করলেন। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। বাচ্চাটা রোজরোজই কাঁদত। আর একটা পুরুষের কাছে বাচ্চাকাচ্চা মানুষ করা সহজ না। তাই ছেলের মা সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলেকে আবারও বিয়ে দেবেন। তখনি নতুন মায়ের বান্ধুবী মাকে খবর দেন। কারণ মা আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন আমাকে ভ্যান হোক কিংবা রিক্সা চালক, যাকে পাবেন তার সাথেই বিয়ে দিয়ে দেবেন। খবরটা শুনে তো মা কী খুশি। বাবাকে জানালে বাবা প্রথমেই না জানালেন। পরে মায়ের জোড়াজুড়িতে রাজি হতে বাদ্ধ হলেন বাবা। বিয়ের দিনটা চলে আসল। সেদিন জানো? আমার এই অসহায়ত্বের সময় কেউ পাশে ছিলনা। কেউ না। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কী দিয়ে কী করবো? আমার মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল আমি এই বিয়েটা কিভাবে আটকাবো?”
চোখের বৃষ্টিতে ডায়েরি-টা ভিজে সপসপে হয়ে গিয়েছে। আজ যেন অশ্রুজল গুলো বাঁধ মানছে না রূপার। তারপরও বিনা দ্বিধায় লিখতে লাগল সে। আজ যে মনের কথাগুলো তাকে লিখতেই হবে।
“ঘূর্ণিঝড় হলে যেমন সবকিছু ঘুরতে থাকে তেমনই সেদিন আমার মাথাটা একই ন্যায় ঘুরছিল। সবকিছুই যেন সেদিন শূণ্য লাগছিল। এরপর যখন কাজিনদের মুখে বর এসেছে! বর এসেছে! শুনতে পেলাম তখন যেন মনে হচ্ছিল কেউ আমার আত্মাটাই কেড়ে নিয়েছে। আমার মনে হচ্ছিল এই নরগ থেকে বাঁচার একটাই উপায় সুইসাইড। কিন্তু আমার ভাবনার উপর পানি ঢেলে দিয়ে সেই মুহূর্তে তুমি ফোন দিয়েছিলে। আশ্বাস দিয়েছিলে আমাকে নিয়ে দূর অজানায় পালিয়ে যাবে। সেদিন জানো? তোমার এই একটি কথায় আমার আত্মাটা ফিরে এসেছিল। মনে হচ্ছিল আমার মত ভাগ্যেবান ব্যক্তি এই পৃথিবীতে আর দুটো নেই। সেদিন তোমার কথায় আমি লোকভর্তি ঘরের ভিতর দিয়েই পালিয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমার সবকিছুই যেন ঘোর ঘোর লাগছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি তোমাকে পেতে চলেছি। কিন্তু যখন গিয়ে দেখলাম তুমি রাস্তার আশেপাশেও নেই, তখন মনের ভেতরে ভয় জাগতে শুরু করল। ভাবলাম এই বুঝি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি। হলো সেটাই। কিন্তু আমি তখনও দমে যায়নি। ঠ্যায় হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার জন্য। খানিকক্ষণ পর যখন জানতে পাররলাম আমাকে সবাই খুঁজাখুঁজি করছে। তখন আর দাঁড়াতে পারলাম না। নিজের সবটুকু বল দিয়ে ছুটতে লাগলাম। কোথায় যাচ্ছি? কোথায় থাকবো? তখন কিছুই মাথায় আসছিল না আমার। আমি শুধু একটা কথায় ভাবছিলাম আমাকে পালাতে হবে দ্বীপের জন্য হলেও আমাকে পালাতে হবে। সেদিন জানো? আমি আর দৌড়াতে পারিনি। মাঝরাস্তায় এসে হোচট খেয়ে নিচে পড়ে যায়। আরেকটু হলেই এক্সিডেন্ট করতাম তার আগেই রিহান, তোমার ছোট ভাই আমাকে বাঁচিয়ে নেয়। এরপর সে আমাকে আমার বান্ধুবি ত্রিশাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। রিহানের প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ। ও আমাকে কম হেল্প করেনি। ছেলেটার সাথে তারপর থেকে আর দেখাও হয়নি। তোমরা দুই ভাই-ই বোধয় এসাথেই হারিয়ে গিয়েছো। যাইহোক, এরপর আমি ত্রিশাদের বাসায় কাটিয়ে দিলাম। ওইদিকে আমাকে নতুন মা খুঁজতে খুঁজতে শেষমেশ ত্রিশাদের বাসায়-ই পেয়ে যায়। তারপর থেকেই শুরু হয় অত্যাচার। আমাকে ঘরে বন্ধি করে রাখা হলো। পচা পান্তাভাতও খেতে দেয়া হত। সব অত্যাচার অতিক্রম করার পর আবারও বিয়ে ঠিক হল আমার। কিন্তু বিশ্বাস করো, এই বিয়েটা আটকানোর কোনো উপায় ছিলনা আমার কাছে। আমাকে জোরপূর্বক বিয়েটা দিয়েছিলেন নতুন মা। এরপরও আমি দমে যায়নি। পালাবার জন্য বহুবার চেষ্টা করেছি কিন্তু সফল হতে পারিনি। এখানেও নতুন মায়ের মত আচরণ করতে লাগল ধ্রুব। কোনো না কোনো কারণে মারতে আরম্ভ করল সে। তখন এসব আর সহ্য হতো না। তাই বরাবরই পালাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু এবারও ধরা পড়ে গেলাম ধ্রুবের হাতে। এরপর থেকে আর কখনও পালাবার চেষ্টা করিনি। কোথায় গিয়ে থাকবো আমি? আমার যে থাকার মত কোনে জায়গা নেই। বাবার বাড়ি? কিন্তু আমার বাবা তো এখন আর আমার বাবা নেই। সে তো নতুন মায়ের কথমত চলে। আর নতুন মা তো আমাকে ওই বাড়িতে এক পা ও রাখতে দেবে না। থাকা তো দূরে থাক। আমার এখন থাকার জায়গা এইটাই। তবে, তুমি যতদিন না আমার কাছে ফিরে আসবে, ঠিক ততদিন আমি আজীবন তোমার জন্য এভাবে অপেক্ষা করবো। আমার ভালোবাসার উপর পুরো বিশ্বাস আছে। আমি জানি, তমি ফিরে আসবে। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে।”
এতটুকুই লিখে কলম-টা ডায়েরির প্রথম পাতায় রেখে বন্ধ করল রূপা। নিখুঁতভাবে দূর আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকাল সে। আজ পূর্ণিমারচাঁদ। হাজারও তারার মাঝে উজ্জ্বলিত চাঁদের দিকে তাকাতেই দ্বীপের হাঁসিমাখা মুখখানি দেখতে পেল সে। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণায় হাঁসির রেখা ফুঁটে উঠল রূপার।
চলবে
(অসুস্থতার কারণে এ'কদিন গল্প দিতে পারিনি। এখন ঘড়িতে 6:26 AM বাজে। এইমাত্র গল্পটা লিখে শেষ করলাম। আর এতদিন গল্প-টা না দেয়ার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
আর যাদের কাছে আমার গল্পগুলো স্টার জলসার সিরিয়ালের মত মনে হয়, তারা দয়া করে আমার গল্প হতে বিরত থাকুন। ধন্যবাদ।)

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: