মঙ্গলবার

#নিয়তি-২( পর্ব-৮) । লিখা- আসমা আক্তার পিংকি।

 #নিয়তি-২( পর্ব-৮) । লিখা- আসমা আক্তার পিংকি।

রাত প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে,, নাজিফা সালেহা বেগমের মাথার পাশে বসে রয়েছে,,,,, হঠ্যাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ---- সাড়ে তিনটা বেজে গেলো,,,, যাই দেখি ইমাদ ঘুমিয়েছে কিনা,, নিতুর চিন্তা করতে-- করতে ওর না আবার আরো শরীর খারাপ হয়ে যায়।
এই ভেবে নাজিফা গেস্ট রুমের দিকে যেতে লাগলো, যেহুতো সালেহা বেগম ওদের রুমে তাই ইমাদ আজ গেস্ট রুমে শুয়েছে। নাজিফা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো, আশ্চর্য কন্ঠে--- কি ব্যাপার নিতুর রুমে এখন ও লাইট জ্বলছে কেন!!!‌
এখনো মেয়েটি ঘুমায়নি, কি করছে?নাজিফা দরজার মধ্যে কান পাততেই ও পাশ,থেকে নিতুর কান্না মাখা কন্ঠে --- প্লিজ তুমি আমাকে নিয়ে যাও, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা৷ ফেমেলি আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।এই বলেই নিতু চুপ, নাজিফা বুঝতে পারলো মেয়েটি ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।
নিতু--- তুমি কি চাও আমি আত্নহত্যা করি?
আল্লাহ এসব কি বলছে নিতু!
আর কাকেই বা বলছে না আমাকে সব জানতে হবে যে করেই হোক।.
.সকাল বেলা পূর্ব পাশের আজানের ধ্বনিতে নাজিফা নামাজ পড়ে, চুপিচুপি নিতুর ঘরে যায়,, গিয়ে দেখে নিতু ঘুমে,,, নাজিফা বারবার ঘরের চারদিকে তাকিয়ে নিতুর ফোনটা খুঁজতে লাগলো, এভাবে কিছুসময় পার হওয়ার পর হঠাৎ চোখ পড়ে নিতুর বালিশের নিচের দিকে,, হাতটা ঢুকিয়ে যেই মাত্র ফোনটা নিবে অমনেই নিতু হাতটা ধরে ফেললো।
নাজিফার গলা শুকিয়ে গেলো, সত্যি কি নিতু জেগে গেছে, সে একটু গাঢ় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলো নিতু গভীর ঘুমে আছন্ন।
নাহ! তাহলে মেয়েটি ঘুমের মধ্যে হাতটা ধরেছে ।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সে ফোন হাতে নিতুর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। উত্তর দিকের ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফোন হাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো নাজিফা । কল লিস্টে একটি নাম্বার খুব বেশি। নাম্বারটি নাজিফার খুব পরিচিত, হ্যা নাজিফা এই নাম্বারটিকে চিনে, এর সাথে যে ওর অতীত মিশে আছে,, মিশে আছে অতীতের সেই জঘন্য দিন গুলো। আচ্ছা দিনগুলো কি আবার ফিরে আসছে, নাজিফা কি আবার সেই দিনগুলোর গভীর অতলে ডুবে যাবে!
ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে নাজিফা চিন্তার জগত থেকে বাস্তবতায় ফিরলো।
হ্যা সেই মানুষটায়,ফোন দিয়েছে যার কথা সে ভাবছিলো।
ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠটা বলে উঠলো--- হ্যা নিতু বাসার অবস্থা এখন কেমন??? তুমি ঠিক আছ তো????
কাঁপা - কাঁপা ওষ্ঠদ্বয়ে নাজিফা বলে উঠলো ------ আপনি কি মোহন?????
লোকটি কিছুক্ষন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো, তারপর উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো। কি বিদঘুটে সেই হাসি শব্দ ,,, এই হাসিটা নাজিফার কানে বাজে,, পুরনো অতীতের দরজাটা আজ বোধহয় আবার খুলে গেছে।
মোহন হাসি থামিয়ে নরম গলায়--- জান তুমি কেমন আছো????
নাজিফার ইচ্ছে করছিলো ফোনটা রেখে দিতে, এর মতো একটা অমানুষের সাথে কথা বলে নিজের রুচিবোধ কে নিচে নামানোর কোনো মানেই হয়না। তবে মানুষ মাঝেমাঝে চাইলেও অনেক কিছু করতে পারেনা।
নাজিফা ক্ষীণ গলায় --- আপনি কেন আমার ননদের সাথে কথা বলেন।
---শুধু কথা বলিনা জান লিটনের ফ্লাটে গিয়ে শরীরের ও গন্ধ নেই। তুমি তো জানো মেয়েদের প্রতি আমার কি আকর্ষন।
---- ওর সাথে ও আপনি নোংরামো করেছেন?????
--- নোংরামো বলছো কেন,,, আর তাছাড়া তুমি আমাকে আপনি বলছো কেন??? এতো তাড়াতাড়ি আমায় ভুলে গেলে??
--- আপনি আমার উপর শাস্তি নেওয়ার জন্য নিতুকে ব্যবহার করেছেন তাইনা????
---- হা, হা, হাসালে আমায়, দেখ জান আমি কিন্তু জানতাম না নিতু তোমার ননদ,,, ফেসবুকে তো ওর ছবি দেখে আমি ফিদা হয়ে যাই এর জন্য বিভিন্ন কৌশলে ওকে পটিয়ে ওর সাথে আমি দেখা করি,,, ওর ফেমেলি সম্পর্কে খোজ নেই, আলাপচারিতা হয়, তখন আমি জানতে পারি ও তোমার ননদ হয়। আর তোমার ননদ কে কি আমি এতো সহজে ছাড়তে পারি বলো?
---- আপনি ওর সাথে কি করেছেন???
---বোকা মেয়ে কোথাকার, তুমি জানো না আমি কি করতে পারি??? জানো তোমার ননদের বুকের বা পাশে একটা খয়েরী রঙের তিল আছে,,, তিলটা খুবেই সুন্দর,,, প্রতিদিন রাতে আমি সেই তিলকে দেখি সাথে ওর নগ্ন...........
নাজিফা ফোনটা রেখে দেয়,, ওর হাত- পা কাঁপছে ,, মনে হচ্ছে মাঘ মাসের শিতকালে সকাল- সকাল সে এক বালতি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে আসছে ।।
ইমাদ দরজা কপাট ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে , সেই দৃশ্য দেখে নাজিফা আঁতকে উঠল। .
.
মায়া ফজরের নামাজ পড়ে বিছানার উপর বসে কিছু একটা পড়ছে বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়ছে । এই ডিজিটাল যুগে যেখানে পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের সাথে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষ সহজে ফেসবুক, ওয়াটসআপ, টুইটারে কথা বলতে পারে সেখানে কিনা তাকে কেউ একজন চিঠি লিখেছে, তাও আবার সেই আশি নব্বই দশকের মতো বেশ গুছিয়ে। মায়া ভ্রু কুঁচকে চিঠিটা পড়ছে ----
প্রিয় মায়া, কেমন আছেন আপনি????
আপনি কি জানেন আপনি খুবেই রুপবতী একটি মেয়ে। আর রুপবতী মেয়েদের কিন্তু রাত- বিরাতে বাহিরে একা যেতে নেই।
ইতি।
অচেনা শহরের অচেনা মানুষ।
মায়া বুঝতে পারছেনা কে এই চিঠিটা লিখলো,,, লেখাগুলো অবশ্য খুব সুন্দর,,,, রাত - বিরাতে কোথাও যাওয়া বলতে,,, হ্যা মায়ার মনে পড়েছে সে কাল রাতে নীলফামারীতে তার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলো, ভেবেছে খুব তাড়াতাড়িই ফিরে আসবে কিন্তু বান্ধবী তার একদমেই ছাড়ছিলো না, রাতের খাবার শেষ করে তবেই বের হতে দিলো।
রাত তখন সাড়ে দশটা বাজে,,, সোডিয়ামের আলোয় একলা হাঁটছিলো মায়া আর বাসের সন্ধানে দূর থেকে দূরান্তে তার ক্লান্ত চোখ দুটো তাকিয়ে ছিলো।।।।
তখন কি এই অচেনা ব্যক্তিটি তাকে দেখেছিলো,,, সোডিয়ামের আলোয় নিশ্চুপ রাস্তায় হাঁটার সময় মায়ার কেন জানি মনে হচ্ছিল কেউ একজন তার পিছু নিয়েছে, অতি সাবধানে নিজের পা দুটো ফেলছে , যাতে কারো কান অবদি তার পা ফেলার শব্দ টা না পৌছাতে পারে, তবে মায়ার মনে আছে তার হৃদয় হাজার বার বলে ছিলো একটি বার পিছন ফিরে তাকাতে। কোনো এক অজানা ভয়ে শঙ্কিত হয়ে মায়া পিছু ফিরে তাকায়নি,,, তবে কি এই লোকটিই তাকে অনুসরণ করছিলো,,, কিন্তু এ কি করে এই বাড়ির ঠিকানা জানলো, নাম জানলো????
মায়ার মাথায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তবে সমস্ত প্রশ্নের আড়ালেও তার হৃদয় গহিনে হালকা ভালো লাগা কাজ করছে, কিন্তু কেন এই ভালোলাগা কাজ করছে, তা সে জানেনা।
থাক না কিছু ভালো লাগার কারন না জানাই উত্তম।
.
.
নাজিফা ইমাদকে দেখে হকচকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, নাজিফার মনে ভয় হচ্ছে ইমাদ কি সব শুনে ফেললো!!!!
---কি ব্যাপার সকাল- সকাল তোমার মুখটা এমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে কেন নাজিফা ???.
নাজিফা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে --- কই নাতো, তু, তু,তুমি এখানে কি করছো???
--- এরকম আমতাচ্ছো কেন??? আর তুমিই বা এতো ভোরে এই ঘরে কি করছো??? তোমার হাতে ওটা কি????
নাজিফা ফস করে নিশ্বাস ছেড়ে --- কিছু না,, আমার ভালো লাগছিলো না, তাই এ ঘর ওঘরে পায়চারী করছি।
--- সারারাত না ঘুমালে তো খারাপ লাগবেই। এসো ঘুমুতে এসো।
---হু, তুমি নামাজ পড়েছো।
--- হ্যা।
---ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।
ইমাদ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে নাজিফা পিছু ডাকলো।
---কিছু বলবে নাজিফা????
--- আসলে নিতুর বিয়ের ব্যাপারটা?
--- ও হ্যা আমি ওদের সাথে কথা বলেছি,,,ওরা বলেছে আজ বিকেলে এক পাক আসতে পারে।
--- হ্যা ওদের তাড়াতাড়ি আসতে বলো,, বিয়ে যতো তাড়াতাড়ি হবে আমি ততো নিশ্চিত হতে পারবো।
--- কিসের নিশ্চিত হতে পারবে????
নাজিফা ভেজা গলায়--- না কিছুনা,, তুমি যাও আমি আসছি।
ইমাদ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই নাজিফা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো,,, আঁচল দিয়ে শক্ত করে নিজের মুখটাকে চেপেঁ ধরলো না এই কান্নার শব্দ ইমাদের কান পর্যন্ত পৌছানো যাবেনা।
নিতুর ফোন বেজে উঠলো, নাজিফার বুক আবার ও ধ্বক করে উঠলো, স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে মোহনের ম্যাসেজ। ম্যাসেজ পড়তেই মুখের রং টা তার কালো হয়ে যায়।।।।
বড় কোনো বিপদ কি আসছে? ঘনিয়ে আসছে কি কোনো বিভৎস ঘটনা যা জীবন রং টা আবার পাল্টিয়ে দিবে!!
চলবে।
লিখা- আসমা আক্তার পিংকি।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: