নিয়তি-২( পর্ব--১)
--- নাজিফা আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে চাই ,,, বিয়ের এক বছর তো হয়ে গেছে এখন আর আমার তোমাকে ভালো লাগেনা,,, আমার Girlfriend আছে এন্ড আমি তাকে বিয়ে করতে চাই,
সো এবার বলো তাহলে তুমি কি আমায় অনুমতি দিবে???? তুমি কি আমায় ডিভোর্স দিবে, এন্ড আমার Girlfriend আছে সেটা মেনে নিবে!!
ভোরের রৌদ্রের স্পর্শে ইমাদের ঘুম ভাঙতেই, এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে নাজিফা ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।
ইমাদ কিছুটা অবাক হয়ে ---- কি হলো হাসছো কেন???
----- তোমার প্রশ্ন শুনে,,, তোমার লাইফ, তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো, তুমি একশো একটা বিয়ে করতে পারো,,, এতে আবার আমার থেকে অনুমতি নিচ্ছো কেন???
ইমাদ রেগে নাজিফার হাতটা গিয়ে শক্ত করে ধরে ----- তুমি কোন ধাতু দিয়ে গড়া বলোতো,,, তুমি কি আমায় একটু ও ভালোবাস ও না???
----- হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন???
----- কেন আবার আমি বিয়ে করবো বলেছি,, আমার প্রেমিকা আছে বলেছি কিন্তু তবুও তুমি হাসিমুখে আমার সাথে কথা বলছো আর শুধু কথাই না আমাকে অনুমতি ও দিচ্ছ!!!! আসলে তুমি আমায় ভালোবাসই না, যদি বাসতে তাহলে এসব বলায় এতোক্ষনে আমার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে।।
নাজিফা ইমাদের গম্ভীর চেহারায় হাত বুলিয়ে ---- আগে বলোতো সকাল-- সকাল ঘুম থেকে উঠে এমন আজগুবি প্রশ্ন করেছো কেন??? সত্যি - সত্যি কি কেউ আছে???
ইমাদ নাজিফাকে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে ওর হাঁটুতে মাথা রেখে---- আছে তো শুধু নাজিফা নামের এক পরী, এমন পরী আর লক্ষী বউ থাকতে কেউ কি অন্য নারীর দিকে নজর দিতে পারে।
---- তাহলে!!!
---- আরে আর বইলোনা, আমার এক বন্ধু নতুন বিয়ে করছে কিন্তু ওর বউ ওর সাথে কথা বলা তো দূরে থাক ওর থেকে সবসময় একশো হাত দূরে থাকে,, তাই ও এক মেয়েকে ওর Girlfriend সাজিয়ে ওর সাথে ফোনে কথা বলা শুরু করে , ওকে বাসায় নিয়ে আসে,,, এক পর্যায় বউকে বলে দেয় এই মেয়েকে বিয়ে করবে,, ব্যস বউ ওমনেই রেগে ওর শার্টের কলার ধরে কান্না করতে-- করতে বলে--- তুই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করিস তাহলে আমি তোকে ও মেরে ফেলবো তার পর আমি নিজেও মরবো।।।
আহা!! কত্ত ভালোবাসা রাহুল যখন এসে আমার সাথে শেয়ার করলো তখন আমি ও একটু ভাবলাম তোমাকে পরীক্ষা করে দেখি আমি বিয়ে করবো বললে তুমি কি করো । কিন্তু,, ধ্যাত।।।
.
.
.
ইমাদ বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে নাজিফা ওর হাতটা শক্ত করে ধরে --- ভালোবাসি বলা মানে কি জানো?? একটা মানুষকে বিশ্বাস করা, একটা মানুষকে নিজের অভ্যাসে পরিনত করা,একটা মানুষের হাসির কথা, সিরিয়াস কথা, মনের কথা, ওর হৃদয়ের ব্যাথাটা সবকিছু উপলব্ধি করা,,,, আর আমি তাই পেরেছি,, তাই তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই আমি জানি তুমি কি করতে পারো আর না পারো,, তোমার কথার ধরনেই আমি বুঝতে পারি কোনটা সিরিয়াস কথা, কোনটা মিথ্যে কথা,, আর কোনটা হৃদয়ের কথা।।।
আর অভিনয় টা তুমি করতো পারোনা,, তাইতো সবথেকে বোকমিটা করেছো। কি বোকামি করলে জানো??? এই যে অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারটা।। আমি তো তোমার কাছে তোমার এমন কেউ লাগি যে তুমি জীবনে অন্য কাউকে স্থান দিতে আমার অনুমতি চাইছো তাহলে আমি কেন ভাববো যে এই কথাগুলো সত্যি,,, কেন ওই মেয়ের মতো শার্টের কলার টেনে ধরে বলবো--- তুই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করিস তাহলে তোকে ও মেরে ফেলবো তারপর আমি নিজে ও মরবো।।
আমি যে এটা বলতে পারবোনা,,, কেননা আমি কখনোই ভুল করে ও কল্পনা করিনা তুমি অন্য কারো হতে পারো,,, কারন অনেক কাল আগেই তোমাকে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে খরিদ্দার করে নিয়েছি। তো ওখানে কে ভাগ বসাতে আসবে বলো হুম, যে আসবে ওকেই মেরে ফেলবো তোমাকে কেন মারবো বলো।
..
...
ইমাদ ছলছল চোখে নাজিফার দিকে চেয়ে রয়েছে,,, কি প্রানবন্ত একটা চেহারা,, কি অমায়িক একটা মেয়ে ওর হাসি, ওর কথা, আর ওর ভালোবাসা যেনো আলাদা একটা পৃথিবীতে আমাকে নিয়ে যায়,,, খুব সহজেই মেয়েটি আমার মন থেকে মিতুকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এখন আর মিতুকে ভুল করে ও বোধ হয় মনে পড়েনা। মেয়েটির ভালোবাসার কি শক্তি খুব সহজেই ও আমাকে এতোটাই গ্রাস করে ফেলেছে যে ওর সামান্য তম অনুপস্থিতি ও আমি সইতে পারিনা।।
নাজিফা হাসিমুখে --- কি হলো ইমাদ সাহেব ওমন ড্যাবড্যাব চেয়ে কি দেখছেন?? বিয়ের তো একবছর পার হয়ে গেলো এখন ও দেখার শেষ হয়নি????
যান তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন,, আমি নাস্তা বানাতে যাচ্ছি। আজকে নামাজটা পড়ে কেন জানি ঘুমিয়ে পড়লাম আবার,,, এখন কত্ত রাজ্জের কাজ পড়ে আছে,, নাবা, নওরিন উঠেছে কিনা দেখে আসি।
..
...
নাবা,নওরিন মামুনিরা উঠো,,,, তাড়াতাড়ি স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।।
নওরিন চোখ কচলাতে -- কচলাতে--- আসসালামুআলাকুৃম মামুনি।।
---- ওয়ালাইকুম আসসালাম,, নেও তাড়াতাড়ি বোনকে নিয়ে ঘুম থেকে উঠো বাবাইর অফিস আছে তো, তোমাদের স্কুলে দিয়ে এসে অফিসে যেতে হবে তো।
--- জ্বি মামুনি,, তুৃমি যাও আমি ওকে ওঠাচ্ছি।।
নাজিফা স্নিগ্ধ মুখে নওরিনের দিকে চেয়ে রইলো, এই এক বছরে মেয়েটি কতো পরিবর্তন হয়ে গেছে, এখন ও মনে আছে বিয়ের পর আমকে মা বলে শিকার করা তো দূরে থাক বন্ধু ভাবতে ও ওর কষ্ট হতো আর আজ সেই মেয়েটি আমাকে সহসা নিজের মা ভাবে,, হ্যা আমিই ওদের মা,, আচ্ছা জন্ম দিলেই সে শুধু মা হয়??? না কখনোই না,, মা হতে হলে লাগে ভালোবাসা, স্নেহ আর মায়া সমন্বয় এক ব্যক্তি, আর আমি শুধু ওদের মা হতে নিজেকে ও ভাবে গড়ে নিয়েছি।।
---- কি হলো মামুনি তুমি কি ভাবছো???
নওরিনের কথায় নাজিফা ভাবনার জগত থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসে--- অ্যা, না মা কিছুনা, তাড়াতাড়ি নিচে আয় তোরা।।
.
.
.
রান্মাঘরে কাজের মেয়ে রহিমার সাথে হাতে-- হাত লাগিয়ে কাজ করছে নাজিফা।
রহিমা তাড়াতাড়ি করো,, আজকে এতো লেট হয়ে গেছে যে.....
----- আফা এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে সবে তো মাত্র সাড়ে - সাতটা বাজে,,৷ ভাইজান আর মামুনিরা বের হইতে তো এখন ও দেড়ঘন্টা বাকি।
---- শুধু কি ভাইজান আর মামুনিরাই বের হবে, এ বাড়িতে আর ও লোক আছে না,,,,
---- ও বুঝছি কার কথা কও,, কালকে বড় ভাইজান বলেছে না আজ সকাল আটটায় কোথায় যাবে,, তুমি তার জন্য এতো তাড়াহুড়ো করছো তাইনা?????
---- হ্যা,,নে আর কথা না বাড়িয়ে কাজ কর।
---- মানে কি তুমি দেখোনা যার স্বামী সেই মহিলাটি আরামে ঘুমাচ্ছে,,, আর তুমি ছোট ভাইয়ের বউ হয়ে ওনার জন্য এতো ব্যস্ত হচ্ছো!!!!!
---- তো কি হয়েছে,,, দেখো রহিমা তুমি যদি কারো জন্য সামান্য তম কিছু করো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাহলে রাব্বুল আলামীন তোমার প্রতি সত্যি অনেক সন্তুষ্টি হবে। আর সবসময় সবকিছু ভাগ করতে নেই৷ বুঝেছো।।।
অমনেই নাজিফার শাশুড়ি সালেহা বেগম,,, নিচে নামতে--- নামতে--- এমনে -- এমনে বলি এ আমার ঘরের আলো,,, এই আমার সংসারকে শান্তির পথে রাখবে।
---- আসসালামু আলাইকুম আম্মু,, শুভ সকাল।
----- ওয়ালাইকুম আসসালাম,,, শুভ সকাল। তা মা তুৃমি আর কতো দিন এভাবে সবকিছু এক হাতে সামলাবে???
--- যতোদিন না ফাহমিদা ভাবি এই সংসারকে নিজের সংসার মনে করে আমার সাথে সবকিছু ভাগ করে না নিচ্ছে ততদিন।
---- তোমার সাথে কথাই আমি পারবোনা।
.
.
.
আটটা বাজতেই ফাহাদ নিচে নেমেই--- কই কিছু নাস্তা আছে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,,,,,
নাজিফা হাসিমুখে --- এইতো ভাইয়া দিচ্ছি ।
ফাহাদের ও ইদানিং নাজিফার প্রতি একটা মায়া পড়ে গেছে, মেয়েটাকে এতোকিছু বলি তাও এই সংসারকে, সংসারের মানুষগুলোকে কিভাবে আপন করে নিচ্ছে,,,, আর আমাকে ও যখন ভাইয়া বলে ডাকে আলাদা একটা টান চলে আসে ওর প্রতি।
---- কি হলো ভাইয়া এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন,,,, এই নিন তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলুন আপনার নাকি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
---- হুম।
সালেহা বেগম উপরের দিকে তাকিয়ে দেখছে নিতু ওয়েস্টার্ন পোশাক পড়ে সাজুগুজু করে নিচে নামছে।
সালেহা বেগম চেঁচিয়ে-- চেঁচিয়ে --- আবার সেই পোশাক পড়ছো, এই একটা বছর তোমার পিছনে মেহনত করতে- করতে আমার বউ টা ক্লান্ত হয়ে গেছে তবুও তুমি শুদ্রালে না!!
---মা সক্কাল,সক্কাল আমার মন-- মাইন্ড নষ্ট করো না তো,,, এনিওয়ে তোমার সাথে এখন তর্ক করলে আমার দেরি হয়ে যাবে,, আমি আসছি।
--- দাড়াও নিতু।
নাজিফার গলার স্বর শুনে মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে --- ওফ, এই মেয়েটা আমায় শান্তি দিবেনা।
---- কোথায় যাচ্ছো তুমি এই সকাল-- সকাল???
--- সেটা কি তোমায় বলতে হবে??
--- হ্যা বলতে হবে।
--- কে তুমি, তুমি আমার কি হও যে তোমাকে আমার সবকিছুর কৈফিয়ত দিতে হবে??
.
.
---- আমি তোমার ভাবি হই,, আর তুমি আমার ননদ হও বিধেয় তুমি কোথায় যাও, কেন যাও সেটা জানার আমার একটু হলে ও অধিকার আছে।
---তুমি সেটা মনে করলে ও আমি মনে করিনা যে তোমার কোনো রাইট আছে কজ আমি তোমাকে আমার কেউই মনে করিনা। এনিওয়ে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।
মেয়েটি দিনকেদিন কেমন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। ইদানিং সেই সকালে বের হয় আর রাতে আসে,,,, কোথায় যায়,কি করে কিছুই বুঝিনা,, কোনো খারাপ সঙ্গে আবার পড়লো না তো!!!!
----- মা আমি গেলাম এই বলে ফাহাদ বের হতেই দরজার সামনে নাজিফাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে--- ধন্যবাদ সকাল-- সকাল ঘুম থেকে উঠে আমার জন্য নাস্তা করার জন্য।
বিয়ের পর এই প্রথম ফাহাদ এতো সুন্দর করে নাজিফার সাথে কথা বলেছে। ব্যাপারটি সত্যি নাজিফার ভালো লাগার একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে।
.
.
ইমাদ খেতে -- খেতে--- মা নিতু কই??
--তুই জানিস না কই? ইদানিং ওর ভাবসাব আমার ভালো টিকছে না৷ তোকে কতো বার বললাম ওর জন্য একটা ভালো ছেলে খুজতে৷
---- আমি খুজে আনলে কি হবে মা যদি তোমার মেয়ের কোনো পছন্দ থেকে থাকে।
--- ওর আর পছন্দ,,, সেই তো কানে দুল, নাকে দুল পরা ছেলেকেই । তুই এতো কিছু ভাবিস না ওর জন্য ছেলে খোজ, ভালো দেখে।
---- ঠিক আছে তুমি যেহুতো বলছো আমি দেখবো।
নাজিফা নাবা কে খাওয়াতে- খাওয়াতে --- মা আপনি না বলছেন আজকে কে আসবে।
কে আসবে গো??
ইমাদ বিস্মিত কন্ঠে-- কে আসবে মা,কই তুমি তো আমায় বললে না।।
সালেহা হেসে- হেসে--- কে আর আসবে তোর ওই খালাতো বোন মায়া।
মায়া নামটা শুনতেই ইমাদ কাশতে-- কাশতে --- নাজিফা একটু পানি দেও তো।
---- হ্যা দিচ্ছি, হঠাৎ কি হলো তোমার?
--- কিছুনা আর মা ওর আসার কি দরকার??
---- আজব ইমাদ মেয়েটি কতো বছর হলো আমাদের বাড়িতে আসেনা, ও এখন ও নাজিফাকে পর্য়ন্ত দেখেনি আর তুই বলছিস ও আসবেনা!!
--ইমাদ চেয়ার থেকে উঠে-- ধ্যাত মা সকাল- সকাল তুমি আমার মাইন্ড টাকে খারাপ করে দিয়েছো, এই নাবা নওরিন চল তাড়াতাড়ি চল।
নওরিন একটু গোমরামুখে --- বাবা খাবোনা??
--- আর খাওয়া লাগবেনা, যে আসছে কপালে যে কি আছে আল্লাই জানে।
নাজিফা ইমাদের দিকে চেয়ে -- ও হঠাৎ এমন আচরণ করছে কেন??? এই মায়া,নামটা শুনে এমন করার কি হলো???
( চলবে)
লিখা-- আসমা আক্তার পিংকি।।
( নিয়তি গল্পটার প্রতি সবার এতো ভালোবাসা দেখে,, এবং গল্পটার প্রতি আলাদা একটা টান চলে আসছে তাই ২ সিরিজ নিয়ে আসলাম, যারা নিয়তি--১ টা পড়তে চান তারা আমার টাইমলাইনে সবগুলো পর্ব পাবেন।
0 coment rios: