শুক্রবার

#নিয়তি ( পর্ব--৩) একটি ইসলামিক গল্প

#নিয়তি ( পর্ব--৩)
একটি ইসলামিক গল্প


সকালে নাজিফার মধুর সুরের  কোরআন পাঠ করা শুনে সালেহার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সালেহা চোখ খুলেই দেখতে পেলো  মেয়েটি কোরআন পড়ছে আর বিনিয়ে-- বিনিয়ে কাঁদছে।  সালেহা ওর পাশে গিয়ে বসতেই,  নাজিফা চোখের জল মুছে সালেহাকে বললো --- আম্মু আপনি নামাজ পড়ে নিন। 

নাজিফার এই ব্যাকটির মাঝে  সালেহা যে শান্তি সুখ পেলো তা অনেককাল আগেই ছেলেমেয়েদের বিপথে যাওয়ার ফলে হারিয়ে গিয়েছি ।  সালেহা ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নাজিফাকে বললো --- আচ্ছা নাজিফা তোমার কখনো  রবের উপর রাগ হয়নি???
---- কেন?
---- না মানে তিনি তোমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছে, অথচ তুমি তার হুকুম মেনে চলো,  তাকে ডাকো।
নাজিফা তখন হেসে বললো --- রবের উপর রাগ করা যায় না মা  কিন্তু অভিমান করা যায়,  যা নিমিষে আবার রবের সামান্য নেয়মত পেয়ে ভালোবাসায় পরিনত হয়। আর রব কখনো তার বান্দাদের কষ্ট দেয়না,  বরং পরীক্ষা করে দেখে তার বান্দা তাকে কত ভালোবাসে। তবে সবাইকে  পরীক্ষা করে না,  যারা তার হুকুম মেনে চলে,  তাকে ডাকে,  তার উপর ভরসা রাখে রব কেবলি তাদেরেই একটু বেশি  পরীক্ষা করে। কিন্তু তাই বলে কী আমি বলতে পারি আমার রব আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন??

মাশাআল্লাহ!  কী সুন্দর কথা।



--- আচ্ছা আম্মু  এ বাড়ির কেউ সকালের নামাজ পড়ে না?
সালেহা তখন একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো --- আমি হয়তো ভালো নয়রে মা , তাই হয়তো ছেলেমেয়ে গুলোকে রবের সাথে পরিচয় করাতে পারলাম না।
ফাহাদ মানে আমার বড় ছেলে ও তো কোনো কালেই মানুষ হয়নি, ওর কাছে জীবন মানে একটাই  তাই মাস্তি-- আড্ডা, আর গার্লফ্রেন্ড,  ভেবেছিলাম বিয়ের পর মানুষ হবে কিন্তু যাকে বিয়ে করলো,  সে নিজেই তো চাইনিজ, আমার ছেলেকে কী আর মানুষ করবে ও নিজেই.তো... ......
সালেহা চুপ হয়ে গেলো, তারপর ঠোঁটের কোনে ঠুনকো হাসি ফুটিয়ে বললো-- অবশ্য অন্যের মেয়েকে কী বলবো,  আমার নিজের মেয়ে নিতুকেই তো আজ অবদি ঠিক করতে  পারলাম না। মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম যাতে মেয়েটি  একটু ঠিক হয় কিন্তু কোথায় কার ভালো দিন --- দিন আর ও বেশি বেহায়াপনা হয়ে গেছে। পড়ালেখা ও বন্ধ করে দিয়েছে। 
নাজিফা তখন একটু ক্ষীণ কন্ঠে বললো --- আর মা ওনি???
--- কে ইমাদ?  জানীস মা ও আমার গর্ব করার সন্তান ছিলো।  কখনো  ওর ভিতরে আমি সামান্যটুকু ও অনৈতিক কাজ দেখিনি । ছোটবেলা থেকেই ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ,  আদর্শ বান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে,  ও অনেক ভালো একজন  ডাক্তার ও।  কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না,  কাল যে মানুষ টা আমির ছিলো, আজ সে ফকির হয়ে গেলো।  ইমাদের ও তাই হলো,  মিতুর মৃত্যুটা ও ঠিক মেনে নিতে পারছেনা।  মানবেই বা কীভাবে আমার ছেলেটা যে ওকে খুব ভালোবাসতো কিন্তু নাবা হওয়ার সময় ওর মারা যাওয়াটা আমার ছেলেটাকে এতোটাই পাথর  বানিয়ে দিয়েছে যে ও এখন ভুল করে ও আল্লাহ কে ডাকে না। 
----- নাজিফা তখন শান্ত  কন্ঠে বললো --- আসলে মা আমরা না আমাদের রবকে বুঝতেই পারিনা,   দুনিয়ার সামান্য ভালোবাসায় কত পরীক্ষা দিতে হয়,
কিন্তু তারপর ও আমরা প্রিয়মানুষকে ভালোবাসি,  ওকে নিয়ে থাকতে চাই, 
  আর যখন কথায় -- কথায় কেউ বলে  --- আমি রবকে ভালোবাসি,তখন কেন মা ওনি আমাদের পরীক্ষায় ফেললে আমরা ওনাকে ভুলে যাই??
সালেহা চুপ করে থাকে,  কেননা এর উওর হয়তো সালেহার কাছে ও নেই।  আমরা মানুষরা তো এমনেই।


সকাল নয়টায় ইমাদ বাচ্চাদেরকে নিয়ে নিচে নামে,  নাজিফা রান্না ঘর থেকে একটু আড় চোখে চেয়ে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হলো,  হঠ্যাৎ কী যেনো মনে করে নাজিফা আবার ইমাদের দিকে তাকালো,  তারপর সহসা বলে উঠলো ---- মাশাআল্লাহ,  ছেলেরা ও এতো সুন্দর হয়।  সত্যিই মানুষটা অনেকটাই সুন্দর। 
ইমাদ নিচে নামতেই  সালেহাকে দেখলো সোফায় বসে আছে ,  সালেহার কাছে গিয়ে বললো--- মা, নাবা আর নওরিনকে রেডি করে দেও,  স্কুলের জন্য। 

সালেহা ছেলের সাথে কোনো কথা না বলেই নাবা আর নওরিনকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
ইমাদ তখন চারপাশে তাকিয়ে নাজিফাকে খুঁজতে থাকে,  হঠ্যাৎ চোখ পড়ে রান্নাঘরের দিকে।  আর দেখতে পেলো বিশাল ঘোমটা দিয়ে কেউ একজন রুটি বানাচ্ছে।  ছেলেটি বুঝতে পারলো,  ও নাজিফা। অতঃপর ওর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো।  নাজিফা কোনো কথাই বললো না,  রুটি বানাতে লাগলো।  ইমাদ তখন বারবার কাশি দিতে লাগলো।  নাজিফা তা ও কোনো কথা বললো না। 
ইমাদ তখন একটু রেগে গিয়ে বলতে লাগলো ----- কী মানুষ রে বাবা!! সেই কখন থেকে কাশি দিচ্ছি অথচ এক গ্লাস পানি ও দিচ্ছেনা। 
নাজিফা তখন গম্ভীর কন্ঠে বললো ----- হাতের সামনেই পানি,   একটু নিয়ে নিলেই তো হয়। 
ইমাদ রেগে গিয়ে বলতে লাগলো ---- এভাবে বলার কী আছে,  আমি দেখতে পায় নি তো। 
এই বলে পানি খেতে লাগলো।  এক গ্লাস নয়,  তিন-- চার গ্লাস পানি খেয়ে ফেললো।  নাজিফা তখন বলতে লাগলো ------ এতো পানি খেলে তো পরে নাস্তা খেতে পারবেন না ।
--- খাবো না,  তাতে আপনার কী??আমি এতোক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে আছি,  কই একটি বার ও তো বললেন না কিছু লাগবে কীনা??? বা আমাকে কী কিছু বলবেন? ?

---- হাসালেন আমার সাথে আবার আপনার কী কথা??

-- ইমাদ তখন আর ও এক গ্লাস পানি খেয়ে বলতে লাগলো ---- ইয়ে মানে আমি তো খুব ভালো ছেলে বুঝলেন  কখনো কোনো মানুষকে কষ্ট দেইনা বুঝলেন ,  আমার আবার মানুষের প্রতি খুবেই দয়া,  এতো দয়া, এতো দয়া যে আমি মাঝেমাঝে রাস্তায় তো পথশিশুদের দেখলে দুঃখ করি।  তো বুঝলেন আমি মানুষকে কষ্ট দেইনা।
---- এতো ঘুরিয়ে- পেছিয়ে না বলে কী বলতে চান সেটা বলুন। 
----- ইয়ে মানে,  আপনি ও তো মানুষ আপনাকে ও তো কষ্ট দেওয়া উচিত নয়,  তো.....
---- তো কী?
---- তো,  মা,মানে কালকে রাতে আপনাকে ইয়ে মানে ডিভোর্সি বলার জন্য স,স,স্যরি।
এই বলেই ছেলেটি নিমিষে কোথায় যেনো চলে গেলো। 


স্যরি শব্দটি নাজিফার কানে যেতেই।, নাজিফা অবাক হয়ে গেলো --- ইমাদ সাহেব আমাকে স্যরি বললেন!!!  আদৌ  কী আমি ঠিক শুনেছি? অবশ্য ছেলেটি একটা স্যরি বলতে গিয়ে কত সংকোচ যে করলো,  বাট শেষে স্যরিটা বললো,  আসলেই ওনি ভালো তবে নিজের ভালোটাকে মানুষের সামনে প্রকাশ করতেই ভুলে গেছে,  এই যা।
ঠোঁটের কোনে মলিন হাসি ফুটিয়ে মেয়েটি ভাবতে লাগলো ----- এতো কটু কথা বলার পর ও যখন মানুষটা একবার স্যরি বললো তাও এতো সংকোচ করে তখন অভিমানগুলো সত্যিই নিমিষে অজানা  দেশে পাড়ি দিলো।


এই ভেবে নাজিফা আবার রুটি বানাতে লাগলো।  এমন সময় সালেহার মেয়ে নিতু কানে হেডফোন দিয়ে নিচে নামলো,  নাজিফাকে রান্না ঘরে দেখতে পেয়ে বলতে লাগলো---- এই যে একটু তাড়াতাড়ি হাত চালান, সকালের নাস্তা কী দুপুরে খাওয়াবে??
ওমনেই ফাহাদের বউ নাইট ড্রেস পরে নিচে নেমে নিতু কে বলতে লাগলো ---- Good morning নিতু ,   What's happen???? 
---- আর বলোনা খুব ক্ষুদা পেয়ে গেছে বাট দেখো ওকে ও এখন ও নাস্তায় বানাইনি। 
----- কী করে পারবে বল,  এসবের জন্যইতো সংসার করতে পারেনি।
----- ঠিক বলেছো, দেখো আমার কী পরিমান ক্ষুদা লেগেছে। 

সালেহা তখন বলতে লাগলো ---- আহারে আমার মেয়েটার যে  কী  ক্ষুদা লেগেছে।
সালেহাকে দেখতে পেয়ে নিতু চুপ হয়ে যায়।  সালেহা তখন নাবা আর নওরিনকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে নিতুর সামনে এসে বললো ---- তা মা আপনার আজকে এতো তাড়াতাড়ি ক্ষুদা পেয়ে গেলো,  আপনি তো নবাবজাদি,  দুপুর ১২ টা ছাড়া আপনার ঘুমেই ভাঙ্গেনা,  আর একটা ছাড়া আপনার সকালের নাস্তায় হয়না।  তা আজকে আপনি এতো তাড়াতাড়ি উঠলেন যে???
নিতু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো,  ফাহমিদা তখন বলতে লাগলো --- থাক না মা এসব কথা।
---- তুমি চুপ করো, তোমরা দুজনেই তো একই ঘাটের মাঝি, তুমি ও দেখি আজকে এতো তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসলে??? আর তেমাকে না বলেছি এসব নাইট ড্রেস পরে নিচে নামবেনা। 
---- উফ!  মা এটা ফ্যাশন। 



।---- এই ফ্যাশন করতে গিয়ে  এই বাড়ির বড় বউয়ের সম্মানটা আবার হারিয়ে ফেলে ও না। মা খাবার হয়ে গেছে সবাইকে বসতে বলুন।
নাজিফার   মুখ থেকে এমন উক্তি শুনে ফাহমিদা রেগে গিয়ে নাজিফাকে বলতে লাগলো ---- যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা,  এসেছো এখন ও একদিন ও হয়নি আর এখনি আমার সাথে এরুপ আচরণ!!! 
--- কেন বৌমা ও কী ভুল বলেছে?? ও তো ঠিকেই বলেছে,  তুমি ইমাদের সামনে এসব পড়ে হাঁটলে, বড় ভাবি হিসেবে তোমাকে মানায়???
----- আজকে ইমাদ  নিচে আসুক তারপর দেখাচ্ছি মজা। 

হঠ্যাৎ ইমাদ সিড়ি দিয়ে নামতে--- নামতে বলতে লাগলো --- কী হয়েছে?? এতো চেঁচামেচি কেন?

( চলবে)
লিখা--- আসমা আক্তার পিংকি।

( এই যে বুবুরা ভালো-- মন্দ কমেন্ট না করতে পারলে 😞,প্লিজ Next লিখ ও না,  বিরক্ত লাগে অনেক যখন গল্পে কোনো মন্তব্য না দেখে শুধু next- next দেখি)


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: