শুক্রবার

# নিয়তি ( পর্ব--২) একটি ইসলামিক গল্প

# নিয়তি ( পর্ব--২)
একটি ইসলামিক গল্প

মিসেস সালেহা বেগমের চিৎকারে নাজিফা ভাবনার জগত থেকে বিদায় নিলো,   মিসেস সালেহা তখন নাজিফাকে চেঁচিয়ে -- চেঁচিয়ে বলতে লাগলো --- চুপ করে ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন???
ইমাদকে মুখের উপর কিছু বলে দিচ্ছ না কেন??? আর এভাবে বড় করে ঘোমটা দিয়ে রেখেছো কেন?? ঘোমটা টা সরাও।

ইমাদ তখন মাকে উদ্দেশ্য করে বললো --- না মা ওনি ঘোমটা সরাবেন না। 
---- মানে কী বলতে চাস তুই??

--- আমি বলতে চাই ওনাকে দেখার আমার বিন্দুমাত্র ও ইচ্ছে নেই,  সো প্লিজ ওনি যেনো আমার সামনে এট লিষ্ট মুখটা না দেখায়। 

----- দিন-- দিন তুমি এতো বিগড়ে যাচ্ছ কেন?? একটা মেয়েকে বউ করে  এনে ওকে পাপ্য সম্মান টুকু ও কেন দিচ্ছোনা তুমি???

---- কারন  এ বিয়েতে আমি রাজি নেই বলে,  মা প্লিজ তুমি এসব নিয়ে আর কথা বলোনা,  তোমার জীবনটা নাকি আমি শেষ করে দিয়েছি,  তুমি আমার কাছে বউয়ের আবদার করেছো,  তাই বিয়ে করলাম,  কিন্ত ওকে  আমার স্ত্রীর পরিচয় দেবার আবদারটা যদি ও করো আমি মরে গেলে ও রাখতে পারবোনা,  আর কেন পারবোনা সেটা ও তুমি ভালো করে জানো।

------ হে আমার রব আমাকে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়ার তৌফিক দান করো।  নিশ্চয় আপনি আমার জন্য উওম কিছু রেখেছেন,  নিশ্চয় আপনি ধৈর্যশীল দের পছন্দ করেন,  অতএব আমাকে তাদের ভিতরে  অন্তর্ভুক্ত করো। 

নাজিফার  এরুপ বিড়বিড়িয়ে  দোয়া করাটা  সালেহার কানে যেতেই,  ওনি নাজিফার  সামনে এসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো --- বাহিরে এভাবে দাড়িয়ে থেকে গুনগুন করেই  কী তুমি রাতটা কাভার করবে???
একটা কথা মনে রেখো নিজের অধিকার নিজেকেই আদায় করতে হবে কখনো ছেড়ে দিওনা। 


নাজিফা তখন ঠুনকো হেসে সালেহাকে বললো ---- আমি সবসময় এটা  বিশ্বাস করি যে  আর যাই হোক ভালোবাসা আর অধিকার কখনো জোর করে আদায় করা যায়না,  আর যে জোর  করে আদায় করে  সে সবচেয়ে বেশি বোকা।  আমি  সেই বোকাদের দলে অন্তর্ভুক্ত হতে চাইনা।  আমি ভালোবাসাকে ---- ভালোবাসা দিয়ে,  অধিকারকে--- অধিকার দিয়ে আদায় করবো।

ইমাদের  কানে নাজিফার কথাগুলো যেতেই ইমাদ  হেসে-- হেসে নাজিফাকে বললো --- সে স্বপ্ন আপনার কখনো পূরণ হবেনা।  এনিওয়ে মা অনেক রাত হয়েছে,  বাচ্চাদের এতো রাত অবদি জাগা ঠিক হবেনা,  তুমি প্লিজ ওনাকে নিয়ে এখান থেকে যাও, আমি নওরীন আর নাবাকে নিয়ে একটু ঘুমাবো।



--- মানে কী ইমাদ!!!! নাজিফা তাহলে কোথায় থাকবে???

---- মা তুমি আমাকে হাসালে,  দিন-- দিন তুমি এমন বোকা কেন যে হয়ে যাচ্ছ!!! আমাদের এতো বড় বাড়ি ,  এতে রুম থাকা শর্তে ও তুমি  ওনার শোয়া নিয়ে চিন্তা করছো!!!!
  এটা আমি মানতে পারছিনা ,  আসলে আমার মনে হয় তুমি ওনার এ ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়াটাই মেনে নিতে পারছোনা।  তাই  অজুহাত দেখাচ্ছ।

--- ঠিক তাই আমি ওর এ ঘর থেকে চলে যাওয়াটাই মেনে নিতে পারছিনা,  কারন এটা ওর অধিকার।
নাজিফা ওমনেই শাশুড়ির হাতটাকে আলতো করে ধরে বললো--- থাকনা 
, আমি না হয় অধিকারটা নাই বা চাইলাম।  একদিন ওনি নিজেই হয়তো এই অধিকারটা আমায় ফিরিয়ে দিবেন। 




মেয়েটির কথাগুলোয় বেশ মায়া আছে,  যা  সহসা যে কাউকে ওর মায়ায় বাঁধতে পারে ।  কিন্তু নিয়তির পরিহাসে আজ মেয়েটি সমাজের কাছে বড্ড বেশি তুচ্ছ ,  তবে ওকে যে চিনেছে সেই ঝিনুকের ভিতরে মুক্তোর সন্ধান পেয়েছে।  যেমন পেয়েছি  আমি,  এই ভেবে সালেহা ঠোঁটের কোনে একটা শান্তির হাসি ফুটিঁয়ে,  নাজিফা কে বললো --- তুই আমার এই সংসারকে আলোর পথে আনবি,আর সাথে  আমার এই ছেলেটাকে ও একদিন নিজের মতো করে গড়ে নিবি  ।  তুই যেমন স্রষ্টা কে ভালোবাসিস, এই সংসারের মানুষগুলোকেও তার প্রতি ভালোবাসায় মগ্ন করবি।  আর আমি তোকে কথা দিচ্ছি আজ যারা তোকে এ ঘর থেকে বের করে দিলো,  একদিন তারাই তোকে এ ঘরে ঠাঁই দিবে।



এই বলে সালেহা নাজিফার হাতটা ধরে ওকে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। ইমাদ মেয়েদের নিয়ে দিব্যি নিজের ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দেয়।  ছেলেটার এরুপ আচরণ হয়তো নাজিফার কাছে ছেলেটিকে অমানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।  কিন্তু উপরওয়ালা জানে ছেলেটি কতটা কষ্টে--- দিন-- দিন এমন অমানুষ হয়ে গেছে। 
প্রতিরাতে জেগে থাকা বালিশ,  আর জানালার ফাঁক দিয়ে বাহিরে দেখা সোডিয়ামের আলোয় জানে--- ছেলেটি কতরাত হাহাকার করে কেঁদেছে। আজ ইমাদের চোখে পানিই নেই, অশ্রুটাও আজ হারিয়ে গেছে।  কিন্তু এতো  কঠিন বাস্তবতার মাঝে ও প্রিয়মানুষের শেষ আমানত টুকু তাকে আজ ও বাচিঁয়ে রেখেছে।  নওরীন আর নাবার চেহারাগুলো আজ ও ইমাদকে হাজারো কষ্টের মাঝে বলতে বাধ্য করে--- এইতো আমি সুখে আছি, এইতে আমি ভালো আছি। 


নাজিফাকে সালেহা বিছানার উপর বসিয়ে,  রান্না ঘরে গেলো খাবার আনতে। সালেহা খাবার এনে দেখে মেয়েটি এখন ও মাথায় এক হাত ঘোমটাটা দিয়ে বসে আছে।  সালেহা নাজিফার কাছে গিয়ে কোনে কথা না বলেই,  নাজিফার ঘোমটা টাকে সরিয়ে ফেললো। 


অতঃপর দেখলো মেয়টি কান্না করে চোখ দুটোকে লাল করে ফেলেছে।  সালেহা অভিমান করে বললো --- এটাই করতে পারবে তাছাড়া আর কিছুই করতে পারবেনা। 
নাজিফা চোখের জল মুছতে--- মুছতে বললো ---- মানে????
---- মানে আমরা মেয়েরা কান্না ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনা।  শুনো একটা কথা মাথায় রাখবে তোমার সুখ তোমার নিজেকে আদায় করে নিতে হবে বুঝলে। 
নাজিফা অবাক হয়ে গেলো --- আসলেই ওনি কী আমার শাশুড়ি!!!!  দুনিয়াতে কত রকমের মানুষ কেউ শাশুড়ি নামক জল্লাদ আর কেউ শাশুড়ি নামক মা। 
---- তা এভাবে কী চুপ করে বসে থাকলেই হবে??ক্ষুদা লাগেনি??
---- এ্যা, ইয়ে মানে লেগেছে তো। 
----যাও হাত -- মুখ ধুয়ে এসো,  আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি। 


নাজিফা হাত-- মুখ ধুয়ে আসলে,  সালেহা বেগম নিজ হাতে ওকে খাওয়াতে গেলে,  ও কান্না করে দেয়।  সালেহা তখন আলতো করে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলে--- কী হয়েছে মায়ের কথা মনে পড়ছে???
নাজিফা তখন  কাঁদতে-- কাঁদতে বলে--- মা কখনোই  এমন ভালোবাসেনি যে তাকে মনে পড়ার কথা।
--- তাহলে কাঁদছিস কেন???
---- আপন মা না হয়ে ও কেউ একজন মায়ের মতো ভালোবাসায়। 
--- পাগলি,  নে খেয়ে নে।
নাজিফা যখন ভাতের প্রথম লোকমা মুখে নিলো,  তখন ওর নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ মনে হলো।  এই প্রথম কেউ একজন ওকে এতো ভালোবাসলো।  নিজের মা ও কখনো এভাবে আদর করেনি। 

আসলে পৃথিবীতে একজন কে দিয়ে সকলকে বিবেচনা করা উচিত নয়।  পৃথিবীর সব মায়েরা যেমন এক হয় না,  ঠিক তেমনি পৃথিবীর সব শাশুড়িরা  ও এক হয়না।
---- কী রে মা কী ভাবছিস??
--- না,  কিছুনা,  আচ্ছা আমি কী আপনাকে মা বলে ডাকতে পারি?
--- এ মা! এ আবার কী কথা,  আমি তো তোর মায়েই।
কথাটি শুনে নাজিফা মিসেস সালেহার দিকে ভ্যালভ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
--- কী হলো ওভাবে চেয়ে আছিস কেন??
--- না, কিছুনা।
---নে ঘুমিয়ে পড়, কাল থেকে দেখবি এই বাড়ির নাটকীয়তা।
হুম দেখতে তো আমাকে হবেই,  আর সাথে মানুষগুলোকে ও পরিবর্তন করতে হবে।
( চলবে)
লিখা --- আসমা আক্তার পিংকি।
প্রথম পর্বটা আপনারা আমার টাইমলাইনে পাবেন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: