শনিবার

পুলসিরাত পাড় হওয়া সর্বশেষ ব্যক্তি। জীবন-মৃত্যু-জীবন । পুলসিরাত কেমন হবে ...



পুলসিরাত অতিক্রমের ভয়াবহতা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৪৬ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ  Count : 118
   
হাশরের মাঠে মানুষের আমলনামা ওজন এবং হিসাব-নিকাশের পর সবাইকে বলা হবে, তোমরা এখন নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যাও। হাশরের মাঠ থেকে বের হয়ে গন্তব্যে যেতে একটি পুল স্থাপন করা হবে। আরবিতে পুলকে বলা হয় সিরাত। এটি হাশরের ময়দান থেকে জাহান্নামের ওপর দিয়ে জান্নাত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে এবং অনেক ভয়ঙ্কর হবে। ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে পুলসিরাত দেখিয়ে দিয়ে বলবেন, ‘এটা তোমাদের গন্তব্যে পৌঁছার পথ। এ পুল পেরিয়েই তোমাদের যেতে হবে।’ কিন্তু সবার জন্য পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। পাপী বান্দারা সেটাকে চুল থেকেও চিকন দেখতে পাবে। তাদের জন্য সেটি হবে অত্যন্ত ধারালো। তারা ওই পুলে আরোহণ করা মাত্রই তাদের পা কেটে নিম্নস্থ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর নেককারদের জন্য হবে সুপ্রশস্ত সুগম পথ। তারা তাদের নেকির তারতম্য অনুযায়ী গতিতে জান্নাতে পৌঁছে যাবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন আরিফ খান সাদ
পুলসিরাত অতিক্রমের পরীক্ষা
পুলসিরাত হচ্ছে জান্নাতে যাওয়ার পথে চূড়ান্ত পরীক্ষা। জাহান্নামিদের জন্য হাশরের মাঠ থেকে সরাসরি জাহান্নামের পথে নিয়ে যাওয়া হবে। আর যারা জান্নাতে যাবে তাদের জন্য এই ভয়ঙ্কর পথ অতিক্রমের পরীক্ষা হবে। মুমিন ও মুনাফিকদের এই পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যই তাদের ও শয়তানদের (হাশরের মাঠে) সমবেত করব, অতঃপর জাহান্নামের চারপাশে নতজানু অবস্থায় তাদের উপস্থিত করব। তারপর প্রত্যেক দল থেকে পরম করুণাময়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অবাধ্যকে আমি টেনে বের করবই। আমি পরিপূর্ণ অবগত তাদের সম্পর্কে, যারা জাহান্নামে দগ্ধীভূত হওয়ার অধিকতর যোগ্য এবং তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যাকে এই পুলসিরাত পার হতে হবে না। এটা তোমার প্রতিপালকের অবধারিত ফয়সালা। সেদিন আমি তাকওয়া অবলম্বনকারীদের নাজাত দেব। আর জালিমদের আমি সেখানে রেখে দেব নতজানু অবস্থায়।’ (সুরা মারয়াম : ৬৮-৭২)
পুলসিরাতে নবীদের প্রার্থনা
পুলসিরাতের কঠিন পরীক্ষায় সবাই খুব পেরেশান
থাকবে। নবীরাও সেদিন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে থাকবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তাতে রয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সব মানুষকে একত্র করে বলবেন, দুনিয়ায় তোমরা যে যে জিনিসের উপাসনা করেছিলে, সে তার সঙ্গে চলে যাও। অতএব সূর্যের উপাসনাকারী সূর্যের সঙ্গে, চন্দ্রের উপাসনাকারী চন্দ্রের সঙ্গে এবং মূর্তিপূজারি মূর্তির সঙ্গে চলে যাবে। অবশিষ্ট
থাকবে এই উম্মতের লোকেরা। তাদের মধ্যে মুনাফিকরাও থাকবে। তখন জাহান্নামের ওপর পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। সেদিন সর্বপ্রথম আমি সেই পুলসিরাত অতিক্রম করব। আর সেদিন সব রাসুলের দোয়া হবে ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিম, আল্লাহুম্মা সাল্লিম’, অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! রক্ষা কর, রক্ষা কর।’ (বুখারি : ৬২০৪; মুসলিম : ১৯৫)
কেমন হবে পুলসিরাত
পুলসিরাত হবে অনেক ভয়ঙ্কর। চুলের মতো সূক্ষ্ম ও চিকন হবে। তরবারির মতো ধারালো হবে। নিচে থাকবে জাহান্নাম। দুই পাশে থাকবে লোহার তপ্ত শলাকা। কোনো আলোর ব্যবস্থা থাকবে না। যার যার আমলের আলো দিয়ে সে পথ অতিক্রম করতে হবে। হজরত আবু সায়িদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! পুলসিরাত কেমন হবে? নবীজি বললেন, তা মসৃণ ও পিচ্ছিল হবে, তাতে থাকবে অসংখ্য লৌহ শলাকা ও আংটা। আর থাকবে অসংখ্য কাঁটাযুক্ত দাঁতালো মাথা।’ (বুখারি : ৭৪৩৯; মুসলিম : ১৮৩)। মুনাফিকদের এবং যেসব ঈমানদার গুনাহ করেছে তাদের জাহান্নাম থেকে উত্থিত সেসব শলাকা টেনে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পুলসিরাতের দুই প্রান্তে অসংখ্য আংটা যুক্ত করা থাকবে। আল্লাহ যাকে আদেশ করবেন তাকেই সে টেনে ধরবে এবং জাহান্নামে ফেলে দেবে।’ (মুসলিম : ১৯৫)। পুরো পুলসিরাত জুড়েই থাকবে অসংখ্য লৌহ শলাকা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পুলসিরাতে থাকবে কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের মতো অসংখ্য আংটা। তোমরা কি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ দেখনি? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসুলুল্লাহ! নবীজি বললেন, অবশ্যই সেসব আংটা হবে কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের মতো। তার পরিমাণ সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ (বুখারি : ৭৪৩৭; মুসলিম : ১৮২)। ভয়ঙ্কর এই পুল হবে তরবারির ধারের মতো চিকন। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পুলসিরাত হবে ধারালো তরবারি মাথার মতো সূক্ষ্ম ও তীক্ষè।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ৪/৬২৯)
ঈমানদারদের নূর দেওয়া হবে
হাশরের মাঠ থেকে রওনা হওয়ার সময় সবাইকে বিশেষ আলো দেওয়া হবে। প্রত্যেকেই যার যার আমল অনুপাতে আলো পাবে। সবাইকে তাদের নূর পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার ও মুনাফিক সবাইকে একটি করে নূর ও আলো দেওয়া হবে। প্রত্যেকেই যার যার আলো দিয়ে পুলসিরাত অতিক্রম করবে।’ (মুসলিম : ১৯১)। প্রত্যেকেই যার যার আমলনামা অনুযায়ী নূর দেওয়া হবে। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সবাইকে সবার আমল অনুপাতে নূর দেওয়া হবে। কারও সামনে পাহাড় পরিমাণ নূর দেওয়া হবে। কারও হাতে মশাল পরিমাণ নূর দেওয়া হবে। কারও নূর হবে একটি বৃক্ষের পরিমাণ। এভাবে সবচেয়ে কম নূর যাকে দেওয়া হবে তার নূর হবে পায়ের একটা আঙুলের মাথা পরিমাণ। একবার জ্বলবে একবার নিভবে। যখন আলো জ্বলবে তখন পথ চলবে, আর যখন নিভে যাবে তখন দাঁড়িয়ে থাকবে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ৩৪২৪)
পুলসিরাত অতিক্রমের অবস্থা
যাদের আমলের পরিমাণ বেশি তারা অতিদ্রুত চোখের পলকের মতো পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। আর যার আমল কম তারা হামাগুড়ি দিয়ে পার হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘সেদিন তুমি ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের দেখতে পাবে যে, তাদের সামনে ও ডান পাশে তাদের নূর ছোটাছুটি করছে। বলা হবেÑ ‘আজ তোমাদের সুসংবাদ হলো জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়, সেখানে তোমরা চিরস্থায়ী হবে। এটাই হলো মহাসাফল্য। সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও নারীরা ঈমানদারদের বলবে, ‘তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, তোমাদের নূর থেকে আমরা একটু নিয়ে নেই’, বলা হবেÑ ‘তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও এবং নূরের সন্ধান কর,’ তারপর তাদের মাঝখানে একটি দেওয়াল তুলে দেওয়া হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে। তার ভেতরের দিকে থাকবে রহমত আর বাইরের দিকে থাকবে আজাব। মুনাফিকরা মুমিনদেরকে ডেকে বলবে, ‘আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? তারা বলবে ‘হ্যাঁ, কিন্তু ‘তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। আর তোমরা অপেক্ষা করেছিলে এবং সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং আকাক্সক্ষা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল, অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ এসে গেল। আর মহা প্রতারক তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল। সুতরাং আজ তোমাদের কাছ থেকে কোনো মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না এবং যারা কুফরি করেছিল তাদের কাছ থেকেও না। জাহান্নামই তোমাদের আবাসস্থল। সেটাই তোমাদের উপযুক্ত স্থান। আর কতই না নিকৃষ্ট সেই গন্তব্যস্থল!’ (সুরা হাদিদ : ১২-১৫)
পুলসিরাত অতিক্রমের গতিবেগ
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেদিন কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ ঘোড়ার গতিতে, কেউ আরোহীর গতিতে, কেউ দৌড়িয়ে, আবার কেউ হাঁটার গতিতে পুলসিরাত অতিক্রম করবে।’ (তিরমিজি : ৩১৫৯)। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামের ওপর একটি পুল আছে, যা চুলের চেয়েও বেশি চিকন আর তরবারির চেয়েও বেশি ধারালো। এর ওপর লোহার শিকল ও কাঁটা থাকবে। মানুষ এর ওপর দিয়েই গমন করবে। কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বায়ুবেগে আর কেউ উত্তম ঘোড়া ও উটের গতিতে পুলসিরাত পার হবে। আর ফেরেশতারা বলতে থাকবে, হে প্রভু! সহিসালামতে অতিক্রম করাও, হে প্রভু! নিরাপদে পার করাও। কেউ নাজাত পাবে, কেউ আহত হবে, কেউ উপুড় হয়ে পড়ে যাবে আর কেউ অধঃমুখী হয়ে জাহান্নামে পড়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৪৮৪৭)
মুনাফিকদের পরিণাম
পৃথিবীতে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরআন ও হাদিসের বিধান অনুসারে জীবন পরিচালনা করেছে, তারা সহজেই সে ভয়ঙ্কর পুলসিরাত অতিক্রম করে জান্নাতে পৌঁছতে সক্ষম হবে। কিন্তু মুনাফিক ও পাপী বান্দারা সে পথ অতিক্রম করতে পারবে না। তারা পুলসিরাত থেকে পড়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। হজরত আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষকে পুলসিরাতের ওপর অতিক্রম করতে বলা হবে। তখন অপরাধীরা পুলসিরাতের দুই প্রান্তে জাহান্নামের অতলে একজনের ওপর আরেকজন পড়ে যেতে থাকবে। এভাবে জাহান্নামের শয্যা রচিত হতে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২০৪৫৭; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ১০/৩৬২)। পরে গুনাহগার ঈমাদারদেরক গুনাহ অনুপাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। আর মুনাফিকরা চিরকালের জন্য জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে। (আন নিহায়া, ইবনুল আসির : ৪/২৪)
সর্বশেষ পুলসিরাত অতিক্রমকারী
সবশেষে যে পুলসিরাত অতিক্রম করবে তার ব্যাপারে হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অতঃপর তোমাদের সর্বশেষ ব্যক্তি পেটে ভর করে করে পুলসিরাত অতিক্রম করবে। সে বলতে থাকবে, হে রব! আমাকে এত বিলম্ব করানো হলো কেন? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কেন তোমাকে বিলম্ব করাব? তোমাকে তো তোমার আমল বিলম্ব করিয়েছে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ৮৫১৯)



পুলসিরাত কেমন হবে,পুলসিরাত,জীবন মৃত্যু জীবন,pul sirat,পুলসিরাত পাড় হওয়া সর্বশেষ ব্যক্তি,Judgment day,md tamim,islamic video,islam,allah,quran,hadit,bangla waz,waz,Educational story,Pul Sirat,Pull Sirat ka rasta,pulsirat,Hadith,pul sirat in quran,pul sirat ka rasta,bridge of sirat,sirat,সিরাত,পরকালের জীবন,crossing the sirat bridge,jannah,jahannam,islamic reminder,Muhammad (saw),paradise,jannat,deener seba


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: