#বেটারহাফ_ফরেভার (পর্ব-০৫)
এর পর থেকে সিনহা প্রতিদিন ইয়াদকে নামাজের কথা মনে করিয়ে দিত।কখন কি করতে হবে সিনহা মেসেজ করে ইয়াদকে বলে দিত......কেয়ার করত অনেক ইয়াদকে.....আর এটাই ছিল সিনহার আরেকটা ভুল।
কিছু কিছু সময় শয়তান ভালো কাজগুলোকেই তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।সিনহার সাথেই একই জিনিষ টাই হয়েছিল।নামাজের কথা মনে করিয়ে দেয়া,হাদিস পরার কথা মনে করিয়ে দেয়া,,এগুলা এক একটা ছিল শয়তানের ফাদ...!!!
আর সেই ফাদে জেনে বুঝেই পা দেয় সিনহা....!!!
সিনহা জানত যে,এভাবে ইয়াদের সাথে কথা বলাও ওর জন্য হারাম + ফিতনার কারণ...।। তবুও সে করত।মানাতে পারত না নিজেকে...!!!
ও নিজেও বুঝতেছিল যে,ও শয়তানের ফাদে পা দিচ্ছে।তবুও যেন ওর কিচ্ছু করার ছিল না।ইমান টা ক্রমশ ওর দুর্বল হতে থাকে...!!!
এক পর্যায়ে ইয়াদের সাথে কথা ওর অইটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকে না.....
এই কথা, সেই কথায় আস্তে আস্তে ওরা অনেক গভীরে চলে যায়...!!!
সিনহা ওর বেপর্দায় তুলা ছবিগুলাও ইয়াদকে এখন দিতে দ্বিধাবোধ করে না...!!! বরং ইয়াদের জন্য সেজেগুজে ছবি তুলে সেগুলো দিত ইয়াদকে...!!!
ভিডিও কলে কথাও বলত....!!!
কিভাবে ও চেঞ্জ হয়ে যায় সেটা ও নিজেও বুঝতে পারে না...!!! সিনহা ওর বাবা-মার কাছ থেকে লুকিয়ে ইয়াদের সাথে কথা বলত।বাবা-মাকে জানাতো না....!!!
সিনহা ২-৩ মাসের মধ্যে রাতারাতি চেঞ্জ হতে থাকে.....!!! ইয়াদের প্রতি ইমোশনাল হয়ে যায়...!!! ইয়াদের সাথে প্রতিদিনই রাগ,অভিমান,খুনসুটি সব হয়...!!!
ইদানীং কাজিনদের সামনে মাথার কাপড় পরে গেলেও ওর খারাপ লাগে না...!!! বাইরে যখন হাত-পা মুজা পরে বের হয় তখন নিজের ভেতর কেমন যেন অপরাধবোধ কাজ করে....!!!
এত পবিত্র একটা ড্রেসের সম্মান যে ও রাখতে পারতেছে না....!!! ওর পরিহিত ড্রেসটা যতটা পবিত্র ও নিজে তো আর সেইরকম পবিত্র নেই...!!!
পবিত্র হিজাবের আড়ালে যে নোংরামি টা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে.....!!!
হুমম,,,,
নিজের অধঃপতনের ব্যাপারটা সিনহা লক্ষ্য করত।তবুও যেন কিছু করার ছিল না ওর...!!! শুধু নামাজে বসে মাঝে মাঝে খুব কাঁদত আর আল্লাহকে বলত যে,,,"আল্লাহ,,৬ টা খুব তাড়াতাড়ি পার করে দাও প্লিজ।ইয়াদের সাথে আমার এই হারাম রিলেশন টাকে খুব তাড়াতাড়ি তুমি হালালে পরিণত কর।ইয়াদকেই যে আমি চাই আল্লাহ....!!!"
ওদিকে ইয়াদ যে নিজেকে ২-৩ মাসে খুব একটা চেঞ্জ করতে পেরেছে তা নয়..!!! সিনহা ওকে ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে যতটা ইসলামিক কাজ করাতে পারে ততটুকুই....!!!
দেখতে দেখতে ৫ মাস চলে গেল....অথচ ইয়াদের তেমন কোনো পরিবর্তনই নেই...!!!
ইসলামের প্রতি এই ৫ মাসেও কোনো ভক্তি ভালোবাসা জন্মায় নি।নিজের ইচ্ছায় এখনো কোনো ইসলামিক কাজ করে না।নামাজের প্রতিও তেমন কোনো খেয়াল নেই ইয়াদের।ইচ্ছে হলে পরে নইলে পরে না।সিনহা যদি ধমক দিয়ে পরায়। তাহলে পরে...!!!
সিনহা এখন বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে...!!! এতটা ধাক্কানো যায় কাউকে....!!! কেউ যদি নিজে থেকে কিছু করতে না চায় তাহলে তাকে ধাক্কিয়ে কতটুকুই বা করানো যায়....!!! একদিন সিনহা আর ইয়াদের সাথে মিট করে....।অইদিন ইয়াদকে বলে,,,
সিনহা:তোমাদ প্রব্লেম কি বল তো...!!/??
ইয়াদ:কেন বাবুই...কি করলাম আমি...!!!???😔
সিনহা:ইয়াদ....!!! ৫ মাস রানিং...!!! অথচ,,,তোমার মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তনই নেই...!!! কিভাবে দাঁড়াবে আমার বাবার সামনে...!!!???
ইয়াদ:বাবুই...!!! বলছি তো আমি....তুমি কাছে না থাকলে কিছুই অইভাবে হবে না।তুমি যখন সবসময় আমার কাছে থাকবে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে বাবুই😍
সিনহা:চুপ থাকো😡।যেটাই বলি সেইটাই বিয়ের পর করব...!!!পাগল পাইছ আমাকে...!!!😡
ইয়াদ:বাবুই,,রেগে যাচ্ছ কেন...!!/???😔
সিনহা:বুঝো না কেন রেগে যাচ্ছি...!!???😡
ইয়াদ:বাবুই,,,তুমি কাছে না (সিনহা থামিয়ে দিল)
সিনহা:চুপ...!!! আর একবার এই কথাটা বলে দেখো....😡
ইয়াদ:সরি জান......😔
সিনহা:ধ্যাত..... 😡
ইয়াদ:আবার কি হল😕
সিনহা:ইয়াদ,,বি সিরিয়াস....!!! বুঝো না কেন আমার কথা....!!! কেন বুঝাতে পারতেছি না তোমাকে....!!! এত অবহেলা কর কেন সবকিছুকে...!!! তুমি কি ভাবছ...!!??? কিভাবে বাবার সামনে দাঁড়াবে তুমি...!!! কোন যোগ্যতা নিয়ে....!!! তুমি প্রতিষ্ঠিত না।এই ব্যাপারটা আমার বাবা সেক্রেফাইজ করছে...!!! ইসলামিক হবা না অইটা সেক্রেফাইজ করতে পারবে না।মাইন্ড ইট.....
ইয়াদ:আমি সব দেখবে সামলে নিব....☺
সিনহা:কচু পারবে তুমি কচু....!!! আমার লাইফটাই হেল হয়ে গেল তোমার জন্য.....😡।আর কত সহ্য করতে হবে আমাকে...!!! ভালো হবা না তুমি....!!!???😡
ইয়াদ:মিছামিছি রেগে যাচ্ছ এত😒।বললাম তো,,,তোমাকে আমার করেই ছাড়ব আমি।যেভাবেই হোক,,,আর তা না হলে মরে যাব।থাকব না এই দুনিয়ায়....😞
সিনহা:আবার ফিল্মি ডায়ালগ...!!!😠
ইয়াদ:😐😐😐😐
সিনহা:ধেৎ,, বাই......
রাগ করে সিনহা চলে গেল।ইয়াদের পিছু ডাকেও থামে নি সিনহা...!!!
দেখতে দেখতে ৬ মাসও শেষ হয়ে গেল।সিনহার বাবা গেল ইয়াদের বাসায়।ইয়াদের সাথে দেখা করতে।
ইয়াদের সাথে দেখাও হল,কথাও হল সিনহার বাবার....।।সেখানে উনি কিছু বললেন না।হাসিমুখে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলেন।
বাসায় এসে সিনহা আর সিনহার মাকে ডেকে বললেন,,,
বাবা:৬ মাস তো কাজে লাগিয়েছে বলে মনে হয় না....যেমন তেমনই,,, যতগুলা ইসলামিক প্রশ্ন করছি উলটা পালটা উত্তর...!!! মনের মত করে একটা উত্তরও দিতে পারে নাই।চেষ্টা করলে এই ৬ মাসে অনেক শিখতে পারত ও।ইসলাম নিয়ে চর্চা না করলে ইসলামের মোহাব্বত ভেতরে ঢুকবে কি করে...!!! ও তো চেষ্টাই করে নাই।আর সবচেয়ে অবাক হইছি তখন যখন ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে,,,(থেমে গেলেন বাবা)
মা:কি হল...??? থামলে কেন..!!/??
বাবা:এমনি,, ভাল্লাগতেছে না আর।সিনহা মা,,,ও তোর জন্য পারফেক্ট না রে,,,ডিনার শেষে ওদের বাসায় ফোন করে আমি না করে দিব। আল্লাহর কাছে দুয়া কর,,আল্লাহ তোকে যেন উত্তম স্বামী দান করেন.....
সিনহা:বাবা.....কোনোভাবেই কি সম্ভব না...!!!😔
মেয়ের এই কথায় বাবা-মা দুজনেই একটু অবাক হলেন....!!!
বাবা:হুমম।আমি যতটুক বুঝলাম,,,ছেলেটা ভাল হওয়ার না।অনেক কেয়ারলেস......
সিনহা:বাবা,,,বিয়ের পর তো ভাল হতেও পারে😞
মা-বাবা খেয়াল করলেন সিনহার চোখে পানি টলমল করছে....!!!
মা:এই সিনহা,,ব্যাপার কি বল তো...!!! কাঁদছিস কেন তুই...!!! ওর সাথে তোর কি এমন হইছে যে ওর জন্য কাঁদতে হবে....!!! তোদের মধ্যে কি কোনো রিলেশন ছিল....!!???
সিনহা:জানি না মা,,,কিচ্ছু জানি না আমি....
এটা বলেই সিনহা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওর রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিল....!!!
মা,বাবা দুজনেই ভ্যাবাচেকা খেলে গেল...!!! এমন টাইমে ইয়াদের বাবা ফোন দিল...!!!.
ইয়াদের বাবা:কিছু জানালেন না যে আর....!!!
সিনহার বাবা:আসলে ভাই,,,ডিসিশন টা পজিটিভ নিতে পারতেছি না।কারণ,,ইয়াদের সাথে কথা বলে তেমন ভাল লাগে নি.....
ইয়াদের বাবা অনেক কিছু বুঝালেন সিনহার বাবাকে।যাতে সে বিয়েতে রাজি হয়।কিন্তু,সিনহার বাবা এক কথা।সে অধার্মিক ছেলের কাছে মেয়েকে তুলে দেবে না....!!!
ওদিকে সিনহা কাঁদতে কাঁদতে ইয়াদকে মেসেজ দিয়ে বলল,,,
সিনহা:এবার তো খুশি তুমি...!!! এটাই তো চেয়েছিলে তাই না..??? এবার রাজি করাও আমার বাবা মাকে...!!! পারো না রাজি করাতে এখন....!!!
ইয়াদ:জান,,,তুমি চলে আসো জান,,,তোমার বাবা-মা পরে একাই মেনে নেবে....😞
সিনহা:চুপ,,,লজ্জা করে না এটা বলতে তোর...!!! ভাবিস না কখনো যে,আমার বাবা-মায়ের মনে কষ্ট দিয়ে তোর কাছে যাব....!!! আমার বাবা-মা আমার পৃথিবী। তুই জাহান্নামে যা গা...... নেক্সটে আর মেসেজ দিবি না আমাকে....যেটা চেয়েছিলি সেটাই হইছে।এবার পার্টি দে.....আল্লাহ হাফেজ
এটা বলেই সিনহা ইয়াদকে সব জায়গা থেকে কাঁদতে কাঁদতে ব্লক মেরে দিল।ইয়াদ কোনোভাবেই কন্টাক্ট করতে পারতেছে না সিনহার সাথে।পাগল পাগল লাগছে ওর....!!!
বাচ্চাদের মত কান্না করা শুরু করল মায়ের কাছে গিয়ে....!!! কাঁদতে কাঁদতে সিনহা যে ওকে ব্লক মেরে দিছে সেইটা বলল...!!!
(চলবে)
0 coment rios: