#বেটারহাফ_ফরেভার (পর্ব-১৩)
একটি ইসলামি গল্প
গলাটা ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে সিনহা বিছানায় লুটিয়ে পড়ল....!!! ইয়াদ তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলে দিল।দরজা খোলার সাথে সাথেই ইয়াদের বাবা-মা তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে দেখে যে সিনহা এভাবে বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে....!!!
কিভাবে এটা হল জানতে চাওয়ায় ইয়াদ সত্যিটা বলে দিল।নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখে যে শ্বাস চলছে।তাড়াতাড়ি করে মাথায় পানি ঢেলে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করল ইয়াদের বাবা-মা।হসপিটালে এডমিট করানো হল সিনহাকে।অবস্থা খুবই খারাপ।গলা এত জোরে চেপে ধরেছিল যে হাতের ছাপটা স্পষ্ট ভাবে গলায় দেখা যাচ্ছে....!!!!
সিনহার বাসায় কাউকে জানানো হয় নি।উনারা টেনশন করতে পারেন।আর তাছাড়া যদি তাদের জানানো হয় তো মান-সম্মান কই থাকবে.....!!! কিভাবে তাদের বলবে যে ইয়াদ সিনহার এই অবস্থা করছে....!!!
সারাদিন ট্রিটমেন্টের পরও জ্ঞান ফেরে নি সিনহার।সন্ধ্যার দিকে জ্ঞান ফেরে....।। এখনো কথা বলতে পারছে না ভালোভাবে....!!! দুর্বল লাগে কথা বলতে গেলেই।সারাদিন তো এমনি কিছু খাওয়া হয় নি ওর।শুধু শরীরে যতটুক স্যালাইন দেয়া হয়েছে ততটুকুর এনার্জিই আছে ওর শরীরে।ডক্টর বলল আজকে বাসায় নেয়া ঠিক হবে না।কাল বিকেলের দিকে নিয়ে যেতে।
ইয়াদ সকাল থেকে একটুও সিনহাকে চোখের আড়াল হতে দেয় নি।একটু পর পরই কান্না করছে.....!!!
কি হয়েছিল ওর....!!! ও কেন এমন করল ওর কলিজাটার সাথে....!!! সিনহাকে কষ্ট দিলে কষ্টটা তো সিনহার চেয়ে ওর কলিজাতেই বেশি লাগে....!!! কিভাবে পারল মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিতে....!!! সিনহা তো ওর ভালোই চায় সবসময়। বাবা-মায়ের পর সিনহাই একমাত্র মানব যে নিঃস্বার্থ ভাবে ইয়াদের ভালো চায় সবসময়...!!! আর সেই সিনহাকেই আজ এভাবে কষ্ট দিল ও.....!!! নাহ.....!!! ও মানতে পারছে না কিছু....!!! একটু পর পরই কান্না করছে....!!! সিনহার কখন কি লাগবে না লাগবে সেটা খেয়াল রেখেছে হসপিটালে।
জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে তাড়াতাড়ি ও সিনহার কাছে যায়....!!! গিয়ে ওর হাতটা ধরেই কান্না করে দিয়ে বলে,,,
ইয়াদ:আমাকে ক্ষমা করে দাও জান...!!! আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি....!!! রাগে মাথা ঠিক ছিল না😭
সিনহার কোনো কথা বলার এনার্জি ছিল না। ও ঘৃণাভরা চোখে ইয়াদের কাছ থেকে হাতটা সরানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু পারছিল না। মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয় সিনহা....।। ইয়াদের মা তখন ওদের কাছে আসে।ইয়াদ ওর মাকে বলে,,,
ইয়াদ:আম্মু,দেখো সিনহা কথা বলছে না আমার সাথে....!!! কিছু বল ওকে।আমার কিছু ভাল লাগছে না আম্মু।
আম্মু:ওকে কিছু খাওয়াতে হবে।বাইরে গিয়ে কিছু ফল কিনে আন।ফলের রস খাওয়াবো.....
ইয়াদ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বাইরে গিয়ে ফল কিনে আনে।পরের দিন সিনহা মোটামুটি সুস্থ....!!! বিকেলেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় সিনহাকে।ইয়াদ অনেক বার সিনহার সাথে কথা বলার ট্রাই করেছে।সিনহা তেমন কোনো রেসপন্স করে নি....!!! বাসায় এসে রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় ইয়াদ সিনহার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে....!!!
ইয়াদ:বাবুই...!!! বাবুই প্লিজ।ক্ষমা করে দাও আমাকে😭
সিনহা:আরে আজিব...!!! সেই কখন থেকেই এক কথা বলে যাচ্ছ...!!! কিসের ক্ষমা ক্ষমা করছ পাগলের মত....!!! ভুল না করে কেউ ক্ষমা চায়....!!!???
ইয়াদ:প্লিজ জান,এভাবে বল না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে...!!! 😭
সিনহা:আমার কাছে কোনো ভুল কর নি তুমি ইয়াদ।বিলিভ মি😊
ইয়াদ:সিনহা,,,প্লিজ।এমন কর না।তুমি যা বলবে তাই শুনব এর পর থেকে।এভাবের মত মাফ করে দাও।
সিনহা:পাগল নাকি...!!! আমার কোনো কথাই আর তোমাকে শুনতে হবে না।তুমি তোমার মতই থাকতে পারো।বাধা দেব না।এখন সর তো।ঘুমাতে দাও আমাকে।টায়ার্ড লাগছে....!!!
এটা বলেই সিনহা অন্য দিকে মুখ ফিরে শুয়ে পরল....!!!
ইয়াদ অসহায়ের মত সিনহার দিকে তাকিয়ে রইল...!!!
কিচুক্ষন পর ইয়াদও সিনহার পাশে শুয়ে পরল....
কিন্তু আজ বুকটা বড্ড খালি খালি লাগছে....!!! সিনহা পাশে আছে কিন্তু ওর বুকে নেই....!!! যত যাই হোক,,,সিনহা কখনো ইয়াদের বুকে মাথা না দিয়ে ঘুমাই নি।হয়তো সিনহা ইয়াদের বুকে মাথা দিত।নইলে ইয়াদ সিনহার বুকে মাথা দিত।
কে কার বুকে মাথা দিবে এইটা নিয়ে মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগত দুজনের....!!!
তাই ওরা এই সিদ্ধান্ত নেয় যে,,,
সপ্তাহে ৪ দিন সিনহা ইয়াদের বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাবে।আর ৩ দিন ইয়াদ সিনহার বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাবে...♥
দুজন মিলে এই সিদ্ধান্ত নিলেও দেখা যেত বেশিরভাগ সময় সিনহাই ইয়াদের বুকে নিজের মাথাটা রাখত।বলত যে,,তোমার বুকে মাথা না রাখলে আমার ঘুমই হয় না....!!!
অথচ আজ...!!!
আজ মেয়েটা কিভাবে ওর বুকে মাথা না রেখেই ঘুমিয়ে পরছে....!!! একদম খালি খালি লাগছে বুকটা....!!!
নাহ,,,অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা....!!! এভাবে আর ওকে কষ্ট দেয়া যাবে না...!!!
এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ইয়াদও ঘুমিয়ে পড়ে...!!!
পরের দিন সকাল বেলা সিনহা অনেক ভোর থেকেই রান্নাবান্নার কাজে গেল....!!! অকে রান্নাঘরে দেখে ইয়াদ সিনহাকে বকাবকি করে বেডরুমে নিয়ে আসতে চায়....
ইয়াদ:এখনো সুস্থও হয় নাই।আর তুমি কিচেনে আসছ..!!???😡
সিনহা:আমি সুস্থই আছি।আপনার এত দরদ দেখানো লাগবে না।সরেন.....
ইয়াদ তবুও ওকে জোর করে রান্না ঘর থেকে সরাতে গেলে ও চিৎকার দিয়ে উঠে....!!!!
সিনহা:বলছি না তোমাকে সরে যেতে...!!!???😡 আমার মত আমাকে রান্না করতে দাও তাড়াতাড়ি.....
খুব মেজাজ দেখিয়ে কথাটা বলে সিনহা।ইয়াদ আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় সেখান থেকে।সিনহা রান্নাবাড়া ৮ টার আগেই শেষ করে।তারপর ওর বাসায় ফোন দেয়....
সিনহা:আসসালামু আলাইকুম....
বাবা:ওয়া আলাইকুমুসস সালাম মা।কেমন আছিস...???
সিনহা:আলহামদুলিল্লাহ্ ভাল আছি বাবা....তোমরা কেমন আছ??
বাবা:আলহামদুলিল্লাহ্ ভাল।
সিনহা:বাবা,,বাসায় যাব আমি।আমাকে এসে নিয়ে যাও....
বাবা:আজকেই আসবি...???
সিনহা:হুম।আজ এখনই যাব।তুমি তাড়াতাড়ি আসো....
বাবা:কোনো সমস্যা হইছে মা...??? কয়েকদিন আগেই তো এসে ঘুরে গেলি।এখন তোর শ্বশুর বাড়ির লোক কি তোকে আসতে দেবে....!!!???
সিনহা:হুম।দেবে......যেতে দিলেও যাব, যেতে না দিলেও যাব....
বাবা:কোনো ঝামেলা হইছে কি...???
সিনহা:এত কথা না বললে হয় না...!!??? থাক,,তোমাকে আসতে হবে না। আমি একাই আসছি.....আল্লাহ হাফেজ.....
এটা বলেই সিনহা ফোন কেটে দিল...!!! বাবা আবার কল দিল কিন্তু সিনহা রিছিভ করল না।তারপর সিনহার বাবা সিনহার শ্বশুরের ফোনে কল দিল।ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে বলল,,,
বাবা:সিনহা হঠাত করে এই বাসায় আসতে চাচ্ছে...!!! কিছু বুঝলাম না বেয়াই...!!!
শ্বশুর:সে কি....!!! কখন বলছে...!!!???
বাবা:এই মাত্র ফোন দিয়েছিল।কথা বলে বুঝলাম খুব রেগে আছে ও...!!! কাহিনী কিছু বুঝতেছি না....!!!
শ্বশুর বুঝতে পারল সিনহা কেন চলে যেতে চাচ্ছে....!!!
শ্বশুর:আসলে,,ইয়াদের সাথে তো একটু রাগারাগি হয়েছে সেজন্য আর কি বলেছে এটা...!!! পাগলি মেয়ে।আপনি চিন্তা করবেন না।আমি বুঝিয়ে বলছি।সব ঠিক হয়ে যাবে☺
শ্বশুর সিনহার বাবার সাথে কথা বলা শেষ করে সিনহাদের রুমে গেল,,,
শ্বশুর:কিরে মা...?? ইয়াদ কই...???
সিনহা কাপড় গোছগাছ করতে করতে বলল,,,
সিনহা:কি জানি আব্বু,, জানি না।রান্না করে এসে আর রুমে পাই নি ওকে।
আব্বু:তা তুই এগুলো কি করছিস...!!!???
সিনহা:দেখতেই তো পাচ্ছ.....
আব্বু:দেখ মা,,পাগলামি করিস না তো.....
সিনহা:এবার বাসায় একবারে যাব।তোমার ছেলে যে পর্যন্ত মানুষ না হতে পারবে সে পর্যন্ত আমি আসব না।আর তোমরাও আমাকে আনার ট্রাই করবে না।
আব্বু:দেখ মা,,এমন পাগলামি করার কোনো মানেই হয় না.....
সিনহা:আব্বু,,,আমার মত আমাকে যা করতেছি করতে দাও.....প্লিজ....এটা না করলে ও ঠিক হবে না।একটু দূরে থেকে কিছু বুঝাতে চাই ওকে।প্লিজ আব্বু,,,তুমি বাধা দিয়ো না।
আব্বু:এভাবে হয় না রে মা.....
এমন সময় শাশুড়ি আসল,,,
শাশুড়ি:কি কথা হচ্ছে...???
সিনহা:আম্মু আমি বাসায় চলে যাব....
আম্মু:মানে...???
সিনহা:হুম আম্মু।একবারে চলে যাচ্ছি.....
আম্মু:না,,,এখন তোর কোথাও যাওয়া হবে না......
সিনহা:আমি এখন কারো পারমিশনের অপেক্ষায় থাকব না।তোমরা পারমিশন দিলেও আমি যাব না দিলেও আমি যাব.....তোমাদের ছেলের সাথে থাকার আর কোনো ইচ্ছেই নেই আমার।যদি তোমাদের ছেলে যদি কখনো ভাল হতে পারে তো তখন তাকে বইলো আমাকে গিয়ে নিয়ে আসতে।এর আগে আমি আসব না আর.......
এটা বলেই সিনহা আর কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করে ডাইনিং রুমে চলে গেল।টেবিলে সবার জন্য খাবার সাজিয়ে সবাইকে খেতে বসার জন্য ডাকাডাকি শুরু করল।সবাই এসে খেতে বসল।ইয়াদ এখনো বাসায়ই আসল না...!!! কই গেল ছেলেটা....!!! ফোনটাও বাসায় রেখে গেছে....!!!
এদিকে সিনহা আর ওয়েট না করে তাড়াতাড়ি করে বের হতে লাগল।সিনহার শ্বশুর-শাশুড়ি আসল,,,তারা এসে বললেন,অন্তত ইয়াদ আসলে ইয়াদের সাথে দেখা করে যাও।এত তাড়াহুড়ারর কি দরকার....!!!???
কিন্তু সিনহা তা করবে না।ও এখনি বের হবে।দরকার নেই ওর সাথে দেখা করার...!!!
কারো কোনো কথা না শুনে বের হয়ে গেল বাসা থেকে।এমনি ও ওর শাশুড়িকে ভয় পায়।কিন্তু আজ সেই ভয়ও যেন উধাও হয়ে গেছিল....!!! ভেতরে ভেতরে ভয় লাগলেও বাইরে প্রকাশ না করে এমন জেদ দেখিয়ে চলে আসল.....!!! শাশুড়ির রাগী মুখটার দিকে একবার তাকায়ও নি।ও জানে,,তাকালেই ভয় পাবে...!!! কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।ওর জেদটা ওকে আজ উপরে রাখতেই হবে....!!! তো,,সিনহা বের হয়ে যাওয়ার আধা ঘন্টা পর ইয়াদ আসল বাসায়।এসেই সিনহাকে ডাকাডাকি শুরু করল,,,
ইয়াদ:সিনহা,,ওই সিনহা.....কই তুমি....???
ইয়াদের মা বলল,,,"চলে গেছে ও"
ইয়াদ:মানেহ...!!! কি বলছ আম্মু...!!??? কই গেছে ও...!!!???
আম্মু:ওদের বাসায়......
ইয়াদ:কিহহহ....!!! কেন গেল ও......!!! কবে আসবে....!!!??? আমাকে বলেও গেল না....!!!
আম্মু:বলে গেছে ও আর আসবে না।যেদিন তুই ভাল হবি,ওর মনের মত হতে পারবি সেদিনই নাকি আসবে.....!!!
0 coment rios: