#বিতর নামায কিভাবে পড়তে হবে তা নিয়ে অনেকেই কনফিউজড
তারা এই লিখা পড়লে ইনশাআল্লাহ ক্লিয়ার হবেন
♦ প্রথমে সংক্ষেপে নিয়ম উল্লেখ করছি -
বিতিরের নামায তিন রাকাত। দু'রাকাত পড়ে প্রথম বৈঠক অর্থাৎ বসে তাশাহুদ পড়ার
পর দাঁড়িয়ে যাবে এবং সূরা ফাতেহা ও অপর একটি সূরা পাঠ করে "আল্লাহু আকবার" বলে কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলে পুনরায় হাত বাঁধবে। অতঃপর দু'আ কুনূত পাঠ করে রুকু করবে, এভাবে তৃতীয় রাকাত পড়ে বসে তাশাহুদ, দুরুদ এবং দোয়া মাসূরা পড়ার পর সালাম ফিরিয়ে নামায সমাপ্ত করবে।
#বিস্তারিত -
♦ বিতর নামায তিন রাকাত♦
১. আবু সালামা (রহ) হযরত আয়েশা (রা) কে জিজ্ঞেস করেন- রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায কেমন ছিল? হযরত আয়শা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কেও প্রশ্ন করো না! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন’।
[সহীহ বুখারী হা.১১৪৭ সহীহ মুসলিম হা.৭৩৮]
এ হাদীসের বিশ্লেষণ করে ইমাম ইবনু আব্দিলবার রহ. বলেন: “তিনি চার রাকাত পড়ে ঘুমাতেন। তারপর আবার চার রাকাত পড়ে ঘুমাতেন। অতঃপর উঠে তিন রাকাত বিতর পড়েতন”। [আল ইস্তিয্কার ২/১০০]
২. আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন আমি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলাম: ‘নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরে কত রাকাত পড়তেন? তিনি উত্তরে বলেন: চার ও তিন, ছয় ও তিন, আট ও তিন এবং দশ ও তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তেরো রাকাতের অধিক পড়তেন না’।
হাদীসের আরবী পাঠ নিম্নরূপ:
بكم كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يوتر؟ قالت كان يوتر بأربع وثلاث، وست وثلاث، وثمان وثلاث، وعشر وثلاث، ولم يكن يوتر بأنقص من سبع ولا بأكثر من ثلاث عشرة . تعليق-٢
[সুনানে আবী দাউদ ১/১৯৩ হা.১৩৬২ শরহু মা‘আনিল আসার ১/২০১ মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯ হা.২৫১৫৯ আয়নী ও শুআইব আরনাউত এটিকে সহীহ বলেছেন]
ইমাম বুখারী রহ. এর উস্তাদ ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ্ বলেন ‘এ ধরণের হাদীসগুলোতে বিতরসহ রাতের পুরো নামাযকেই বিত্র শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে’। [সুনানে তিরমিযী হা. ৪৫৭ নং হাদীস পরবর্তী বক্তব্য দ্রষ্টব্য]
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. উপরোল্লিখিত হাদীসটি সম্পর্কে লেখেন:‘আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এবিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়, এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা যায়’। [ফাতহুল বারী ৩/২৫] (টীকা-৩)
আর এ হাদীসে সর্বাবস্থায় তিন রাকাত পৃথকভাবে পড়ার কথা উল্লিখিত হয়েছে, সুতরাং স্পষ্টতই বুঝা যায় এটিই প্রকৃত বিতর।
৩. সা‘দ ইবনে হিশাম হযরত আয়েশা সূত্রে বর্ণনা করেন: ইশার নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামায পড়তেন। অতঃপর আরো দুই রাকাত পড়তেন যা পূর্বাপেক্ষা দীর্ঘ হত। তারপর তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। তাতে মাঝে (অর্থাৎ দুই রাকাত শেষে) সালাম ফেরাতেন না। [মুসনাদে আহমদ হা.২৫২২৩] এর সনদ হাসান।
৪. হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন:
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে আট রাকাত নামায পড়তেন। অতপর তিন রাকাত বিত্র পড়তেন এবং ফজরের নামাযের পূর্বে আরো দুই রাকাত নামায আদায় করতেন’। [সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৭০৭ তহাবী ১/২০২ আল্লামা আয়নী রহ. বলেন: এটি সহীহ মুলিমের মানোত্তীর্ণ, নুখাবুল আফকার ৩/২৫১]
৫. শা‘বী রহ. বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. কে জিজ্ঞেস করেছি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামায কত রাকাত ছিল?
‘তাঁরা উভয়ে বলেন: (তিনি রাতে) মোট তের রাকাত (নামায পড়তেন)। প্রথমে আট রাকাত। অতঃপর তিন রাকাত বিত্র পড়তেন। আর ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেলে দুই রাকাত (ফজরের সুন্নত) আদায় করতেন। [সুনানে নাসায়ী আল-কুবরা হা. ৪০৮, ১৩৫৭ সুনানে ইবনে মাজাহ হা.১৩৬১ তহাবী ১/১৯৭ এর সনদ সহীহ, নুখাবুল আফকার ৩/২১১ সালাতুল বিত্র পৃ.২৬০]
৬. আলী ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁর পিতা ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে শয্যা থেকে উঠলেন। এরপর মিসওয়াক করলেন অযু করলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। এভাবে দুইদুই করে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। অতঃপর তিন রাকাত বিত্র পড়লেন। সবশেষে আরও দুই রাকাত নামায পড়লেন। [সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৭০৪ মুসনাদে আহমদ ১/৩৫০ হা.৩২৭১ তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২ শ্ুআইব আরনাউত বলেন: এর সনদ শক্তিশালী, মুসলিম শরীফের শর্ত অনুযায়ী]
সহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনায় রয়েছে:
‘অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে তিন বারে ছয় রাকাত নামায আদায় করলেন। প্রতি বারই মিসওয়াক ও অযু করেছেন এবং উপরিউক্ত আয়াতগুলো পড়েছেন। সবশেষে তিন রাকাত বিত্র পড়েছেন। [সহীহ মুসলিম ১/২৬১ হা.৭৬৩ সহীহ আবু আওয়ানা ২/৩২১]
সা‘দ ইবনে হিশাম হযরত ইবনে আব্বাসকে বিত্র নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে আয়েশা রা. এর কাছে পাঠান। আর বলে দেন: তিনি কি বলেন আমাকেও জানাবে। অতঃপর সা‘দ ইবনে হিশাম ফিরে এসে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরলেন। ইবনে আব্বাস রা. বললেন: তুমি সত্যি বলেছ। সুযোগ থাকলে আমি সরাসরি হযরত আয়েশা রা. এর কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনে আসতাম। [সহীহ মুসলিম হা.৭৪৬]
এতে স্পষ্ট হয়ে গেল রাসূলের বিত্র নামাযের বিবরণে হযরত আয়শা ও ইবনে আব্বাস উভয়ে একমত। হযরত আয়শা রা. এর বর্ণনায় যে অস্পষ্টতা রয়েছে তা ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনায় স্পষ্ট হয়ে গেল। অর্থাৎ নয় রাকাত নামাযের শেষ তিন রাকাত হল বিতর এবং আয়শা থেকে বর্ণিত সাদ ইবনে হিশামের হাদীসে অষ্টম রাকাতে বসা ও সালাম না ফিরিয়ে উঠে পরা,
এটি মূলত তিন রাকাত বিতরের দ্বিতীয় রাকাত।
#তিনটি সূরা দিয়ে তিন রাকাত বিতর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিত্র পড়তেন এবং তিন রাকাতে তিনটি সূরা তিলাওয়াত করতেন। যা সহীহ সনদে অনেক সাহাবী থেকে হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
নমুনা স্বরূপ কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরছি
১. হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতয় রাকাতে সূরা কাফিরুন, তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়তেন। ...’। একই হাদীসের অপর বর্ণনায়: ‘আর কেবল শেষ রাকাতেই সালাম ফিরাতেন’।
[সুনানে নাসায়ী ১/১৯১ হা.১৬৯৯ মুশকিলুল আছার ১১/৩৬৮ হাদীসটি সহীহ : আল্লামা আইনী, ইবনুল কাত্তান ও শায়খ শুআইব আরনাউত দ্র. আলওয়াহামু-ওয়াল ঈহাম ৩/৩৮৩। স্বয়ং আলবানী সাহেবও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন: র্ইওয়াউল গালীল ২/১৬৭]
২. সায়ীদ ইবনে জুবাইর রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন:
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিত্র পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। [সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৪২৭ সুনানে তিরমিযী হা. ৪৬২ সুনানে দারিমী হা.১৫৮৯ ইবনে আবীশাইবা ৪/৫১২ হা.৬৯৫১ মুসনাদে আহমদ হা.২৭৭৬ শুআইব আরনাউত বলেন: হাদীসটি সহীহ, ইমাম নববী বলেছেন, এ হাদীস সহীহ]
৩. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্যা রা.বর্ণনা করেন:
‘তিনি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিত্র পড়েছেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়েছেন।
[তহাবী ১/২০৫ হফেজ বদরুদদীন আইনী রহ. বলেছেন: এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, নুখাবুল আফকার ৩/২৭১, মুসনাদে আবীহানীফা:জামেউল মাসানীদ ১/৪১৪ সুনানে নাসায়ী হা.১৭৩৩ মুসনাদে আহমদ হা. ১৫৩৫৪ ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১০ হা. ৬৯৪৪ কিতাবুলআছার ১/৩২৬ শুআইব আরনাউত ও শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা এর সনদকে সহীহ বলেছেন। ইবনে হাজার আসকালানী র. আত-তালখীছুল হাবীরে বলেন:إسناده حسن ‘এই সনদ হাসান’]
উপরিউক্ত তিনটি বর্ণনাই নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসগণের মতে সহীহ। তাতে এ বিষয়ে কোনরূপ অস্পষ্টতা নেই যে, নবীজী তিন রাকাত বিতর পড়তেন। আর রাকাতগুলোর বিবরণে স্পষ্টই উল্লেখ আছে: প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়। অতঃপর অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ীন এভাবেই তিন রাকাতে বিতর পড়তেন।
এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রহ. সুনানে তিরমিযীতে সুস্পষ্টভাবে বলেন:
“সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী জ্ঞানীদের অধিকাংশই (বিতরে) সূরা আ‘লা’ কাফিরুন ও এখলাছ পড়াকেই গ্রহণ করেছেন। (তিন রাকাতের) প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা পড়বে।”
[সুনানে তিরমিযী-বিতরে কেরাত পাঠ অধ্যায়]
অনুরূপ ১৯ জন সাহাবী থেকে তিন রাকাত বিতরে তিন সূরা পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। [কাশফুস সিতর পৃ. ৪৭ আল হিদায়া ফি তাখরীজি আহাদীসিল বিদায়া ৪/১৪৮]
#সাহাবা-তাবেয়ীদের তিন রাকাত বিতর
সাহাবা-তাবেয়ীগণও তিন রাকাত বিত্র পড়তেন। নিম্নে কিছু আছার তুলে ধরা হল:
১. হযরত উমর রা. বলেন:
‘আমি তিন রাকাতে বিত্র পড়া ছাড়তে কখনোই পছন্দ করি না, যদিও এর বিপরীতে আমাকে লাল উট উপহার দেওয়া হয়’। [কিতাবুল আছার :জামেউল মাসানীদ ১/৪১৭ মুয়াত্তা মুহাম্মদ পৃ.১৪৯ কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/১৩৫]
২. যাযান রহ. বলেন:
أَنَّ عليا كان يُوتِرُ بثلاثٍ. تعليق-١٢
হযরত আলী রা. তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯১ হা.৬৯১৪ মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/৩৪ হা.৪৬৯৯]
৩. আব্দুল মালিক ইবনে উমাইর রহ. বলেন:
كان ابن مسعود يُوتِرُ بِثَلاَثٍ. تعليق-١٣
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯১ হা.৬৮৯৪ আল মুজামুল কবীর:মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/৫০৩]
৪. হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ র. বলেন:
أن أبي بن كعب كان يوتر بثلاث.تعليق-١٤
হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। এর সনদ সহীহ [মুসাননাফে আব্দুর রাযযাক ৩/২৬ হা.৪৬৬১]
৫. সায়ীদ ইবনে জুবাইর বলেন:
হযরত উমর রা. যখন হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. কে রমযানে (তারাবীহ ও বিত্র এর) ইমামতির আদেশ করলেন, তখন তিনি বিত্র নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা কাদর, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ। [সালাতুল বিত্র লিল মারওয়াযী:পৃ.২৭৯]
৬. হুমাইদ রহ. বলেন:
عن أنس رضي الله عنه قال: الوتر ثلاث ركعات، وكان يوتر بثلاث ركعات. تعليق-١٦
হযরত আনাস রা. বলেছেন: বিত্র নামায তিন রাকাত। তিনি নিজেও তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯১ হা.৬৮৯৩ তহাবী ১/২০২ সালাতুল বিত্র লিল মারওয়াযী: পৃ.২৬৪ এর সনদ সহীহ: আদদিরায়াহ, নুখাবুল আফকার ৩/২৮১]
৭. আবু গালিব রহ. বলেন:
كان أَبو أُمامة يُوتِرُ بِثَلاَثِ رَكَعَاتٍ. تعليق-١٧
হযরত আবু উমামা রা.তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/ ৪৯১হা.৬৮৯৬ তাহাবী শরীফ ১/২০২]
৮. আবু মানসূর বলেন:
قال : سألتُ عبدَ الله بن عباس رضي الله عنهما عن الوتر، فقال: ثلاثٌ.تعليق-١٨
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করেছি: বিত্র কয় রাকাত? তিনি বললেন: তিন রাকাত। [তহাবী ১/২০৩]
অনুরূপ তাবেয়ীদের মধ্যে সায়ীদ ইবনে যুবাইর, আলকামা, ইবরাহীম নাখায়ী, জাবের ইবনে যায়েদ, হাসান, ইবনে সীরীন, কাতাদাহ, বাকর ইবনে আব্দুল্লাহ আলমুযানী, মুয়াবিয়া ইবনে কুররা, ইয়াস ইবনে মুয়াবিয়া প্রমুখ থেকেও তিন রাকাত বিত্র পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।
♦বিতর নামায মাগরিবের মত দুই বৈঠকে ♦
(দ্বিতীয় রাকআতে বসে তাশাহুদ পড়তে হয়)
১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : وِتْرُ اللَّيْلِ ثَلاَثٌ كَوِتْرِ النَّهَارِ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ.تعليق-١
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দিনের বিত্র মাগরিব এর মত রাতের বিত্রও তিন রাকাত। [দারাকুতনী হা.১৬৭২]
হাদীসটি হাসান পর্যায়ের। তবে অনেকে এটিকে ইবনে মাসউদ রা. এর বক্তব্য হিসেবে সহীহ বলেছেন।
২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দিনের বিত্র হল মাগরিবের নামায। তোমরা রাতের নামাযকেও অনুরূপ বিত্র করে পড়।
[মুসনাদে আহমদ হা.৪৮৪৭ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য: শুয়াইব আরনাউত। ইবনে আবী শাইবা ৪/৪ হা.৬৭৭৩, ৬৭৭৮ আব্দুর রাযযাক হা.৪৬৭৫ তাবারানী: সগীর ও আওসাত। হাফেজ ইরাকী রহ. বলেন: এর সনদ সহীহ, আত্তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ পৃ.১৪৭ শরহুয্ যুরকানী আলাল মুয়াত্তা]
মুয়াত্তা মালেকসহ কোন কোন কিতাবে অন্য সহীহ সনদে একই কথা হযরত ইবনে উমরের বক্তব্যরূপে বর্ণিত হয়েছে। সম্ভবত বর্ণানাদুটিই (মারফু ও মাউকুফ) আপন আপন স্থানে সঠিক। আর যদি একে ‘মউকুফ’ তথা ইবনে উমরের বক্তব্যই বলা হয় তবু তা ‘মরফু’ হুক্মী বলে বিবেচিত হবে। কেননা একজন সাহাবী নামাযের মত একটি স্বতসিদ্ধ বিধানের ক্ষেত্রে না জেনে নিজের পক্ষ থেকে এরূপ বক্তব্য দিতে পারেন না। তাই ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন:
আমরা এ বর্ণনাটি গ্রহণ করি। যে ব্যক্তি ইবনে উমরের বক্তব্য অনুসারে বিতরকে মাগরিবের নামাযের অনুরূপ মনে করে, তার উচিত মাগরিবের মতই বিতর পড়া। যাতে দুই রাকাতের পর সালাম ফিরাবে না। এটিই ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মত। [মুয়াত্তা মালেক: ইমাম মুহাম্মদের বর্ণনা পৃ.১৪৯]
৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন:
الْوِتْرُ ثَلاَثٌ كَصَلاَةِ الْمَغْرِبِ وِتْرُ النَّهَارِ. تعليق-٣
অর্থ: দিনের বিত্র মাগরিব এর মত
রাতের বিত্রও তিন রাকাত ।
[ইবনে আবী শাইবা ৪/ হা.৬৭৭৯ আল মু‘জামুল কাবীর হা.৯৪২১-৯৪২২ এর বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের মানোত্তীর্র্ণ, মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ: হা.৩৪৫৫ বাইহাকী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। আস সুনানুল কুবরা ৩/৩০]
ইমাম বাইহাকী র.তাঁর সুনানে কুবরায় এর শিরোনাম দিয়েছেন: (باب مَنْ أَوْتَرَ بِثَلاَثٍ مَوْصُولاَتٍ بِتَشَهُّدَيْنِ وَتَسْلِيمٍ.) “দুই বৈঠক ও এক সালামে এক সাথে তিন রাকাত বিত্র অধ্যায়।” এটি বিতর নামাযের সেই পদ্ধতিই যা আমরা এখানে আলোচনা করছি।
৪. উক্বা ইবনে মুসলিম বলেন:আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে জিজ্ঞেস করলাম: বিত্র নামায পদ্ধতি সম্পর্কে। তিনি বললেন: তুমি দিনের বিত্র চেন না? বললাম হাঁ, মাগরিবের নামায। বললেন, ঠিক বলেছ। (রাতের বিত্রও ঠিক এরকমই)। [তহাবী ২/১৯৭]
৫. হাসান বছরী র. বলেন:
হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন এবং তাতে মাগরিবের মতই তৃতীয় রাকাতের আগে সালাম ফিরাতেন না। [মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা.৪৬৫৯-৪৬৬০ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য]
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:
বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা.তাঁর ইমামতিতে লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবীহ, অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়তেন। তাই অনেক উলামা মনে করেন তারাবীহর এটিই প্রকৃত সুন্নত। কারণ তিনি অনেক মুহাজির-আনছারের সামনে এ নামায পড়েছেন। তাঁদের কেউই এর বিরোধিতা করেননি বা একে ভুল আখ্যা দেননি।
[আল-ফাতাওয়াল কুব্রা:২/২৪৫]
৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন:
الوتر كصلاة المغرب.تعليق-٦
অর্থ: বিত্র নামায মাগরিবেরই অনুরূপ।
[মুয়াত্তা মুহাম্মদ পৃ.১৫০
কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/১৩৬]
৭. যিয়াদ ইবনে আবী মুসলিম র.বলেন:
আমি (প্রসিদ্ধ তাবেয়ী) আবুল‘আলীয়া ও খিলাসকে জিজ্ঞেস করলাম: বিত্র নামায কিভাবে পড়ব? তাঁরা উভয়ে বললেন: মাগরিবের নামাযে যা যা কর বিত্র নামাযেও তাই করবে। [ইবনে আবী শাইবা হা.৬৯০৯]
৮. আবুখাল্দা আবুল ‘আলীয়াকে বিত্র নামাযের তরীকা জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তরে বললেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন: বিত্র নামায মাগরিবের নামাযের মতই; পার্থক্য কেবল এতটুকু যে, আমরা বিত্রের তৃতীয় রাকাতে কেরাত পড়ি (যা মাগরিবে নেই)। এটি রাতের বিত্র, আর মাগরিব হল দিনের বিত্র। [তাহাবী-১/২০৬ সালাতুল বিত্র লিল মারওয়াযী পৃ.২৭৯। এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য: নুখাবুল আফকার ৩/২৭৯ এর সনদ সহীহ: আফগানী]
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনু আব্দিল বার রহ. বলেন
আর এ কথা সর্বজনজ্ঞাত যে, মাগরিবের নামায তিন রাকাত। তিন রাকাত পূর্ণ করেই তবে সালাম ফিরানো হয়। ঠিক তেমনি রাতের বিতরও। [আল-ইসতিযকার ৫/২৮৩]
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ বলে থাকেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের মত বিত্র পড়তে নিষেধ করেছেন, তাই বিত্র এক রাকাত পড়বে। আর তিন রাকাত পড়লেও দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে, অথবা দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক না করে সোজা দাড়িয়ে তিন রাকাত পূর্ণ করবে..
বিত্রের দুই রাকাতে মাগরিবের মতই বৈঠক হবে তবে সালাম ফিরাবে না; এর দলিল পূর্বে আলোচিত হয়েছে। #কিন্তু বিত্রকে মাগরিবের নামাযের মত পড়তে নিষেধ করার উদ্দেশ্য কি, এ বিষয়ে যথার্থ বক্তব্য হল:
বিত্রের ক্ষেত্রে শরীয়তের কাম্য এই যে, তা কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা।
এজন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ করেন:
لا توتروا بثلاث تشبهوا بصلاة المغرب و لكن أوتروا بخمس أو بسبع أو بتسع أو بإحدى عشرة ركعة أو أكثر من ذلك.تعليق-٩
অর্থাৎ তোমরা শুধু তিন রাকাত বিত্র পড়ো না, এতে মাগরিবের মত হয়ে যাবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিত্র পড়ো। [আলমুসাতদরাক ১/৩০৪ হা.১১৩৭ সুনানে কুবরা-বাইহাকী ৩/৩১, ৩২]
অর্থাৎ বিত্র এর আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়: দুই, চার, ছয়, আট, যত রাকাত সম্ভব হয় পড়ে নাও।
(বিত্র অধ্যায়ের (ক) এর দ্বিতীয় হাদীসে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার ও তিন, ছয় ও তিন, আট ও তিন, এবং দশ ও তিন: বিভিন্ন সংখ্যায় রাতের নামায পড়তেন, যেখানে তিন রাকাত ছিল বিত্র)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিত্র নামায সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত হযরত আয়েশা রা. বলেন:
لا تُوتر بِثَلاَثٍ بُتْرٍ، صَلِّ قَبْلَهَا رَكْعَتَيْنِ، أَوْ أَرْبَعًا.تعليق-١٠
অর্থাৎ শুধুই তিন রাকাত বিত্র পড়ো না। এটি অপূর্ণাঙ্গ নামায। বরং এর পূর্বে দুই বা চার রাকাত পড়ে নাও। [ইবনে আবী শাইবা, হা.৬৮৯৮ এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ]
নবীজীর বিত্র নামাযের প্রত্যক্ষদর্শী অপর সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন:
إنِّي لَأَكْرَهُ أَنْ يَكُونَ بَتْرَاءَ ثَلَاثًا، وَلَكِنْ سَبْعًا أَوْ خَمْسًا.تعليق-١١
অর্থাৎ রাতে শুধুই তিন রাকাত নামায পড়া আমি পছন্দ করি না। বরং অন্তত পাঁচ থেকে সাত রাকাত পড়া উচিত। [হাফেজ আইনী রহ. এটিকে সহীহ বলেছেন]
ইমাম তহাবী র. এই বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন:
তিনি আগে কোন নফল নামায না পড়ে কেবলই তিন রাকাত বিত্র পড়াকে অপছন্দ করেন। তাঁর মতে বিত্রের পূর্বে অন্তত দুই বা চার রাকাত নফল নামায পড়া উচিত। [তহাবী ১/২০৩]
♦ বিতিরের তিন রাকাতের মাঝে কোন সালাম নেই ♦
১. হযরত উবাই বিন কা’ব রা. বলেন: রাসূল ﷺ
বিতিরের ১ম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। আর শুধু শেষ রাকাতেই সালাম ফিরাতেন। সালামের পরে سبحان الملك القدوس দুআটি তিনবার বলতেন। (নাসাঈ: ১৭০৪)
হাদীসটির স্তর: সহীহ লিগইরিহী। আব্দুল আযীয বিন খালিদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী। আর আব্দুল আযীয বিন খালিদ مقبول “গ্রহণযোগ্য”। (তাকরীব: ৪৫৮৪) উপরন্তু, অন্যান্য সহীহ হাদীস দ্বারা এ হাদীসের বিষয়বস্তু সমর্থিত। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ নাসাঈ: ১৭০১)
২. হযরত আয়েশা রা. বলেন: রাসূল ﷺ
বিতির নামায ৩ রাকাত পড়তেন; যার শেষেই সালাম ফিরাতেন। আর এটা হযরত উমার রা.-এর বিতির ছিলো। মদীনাবাসী তাঁর থেকে এটাই গ্রহণ করেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১১৪০)
আহমাদ বিন সাহ্ল ও সালেহ বিন মুহাম্মাদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আহমাদ বিন সাহ্ল সম্পর্কে সিহাহ সিত্তায় যাদের বর্ণনা নেই সেসব নির্ভরযোগ্য রাবীদের তালিকা সম্বলিত কিতাবে আল্লামা কাসেম বিন কুতলুবুগা রহ. বলেন: قال الخليلي: ثقة متفق عليه. “আল্লামা খলীলী রহ. বলেন: তিনি সর্বসম্মতিক্রমে নির্ভরযোগ্য”। (রাবী নম্বর- ২৭১) আর সালেহ বিন মুহাম্মাদকে হাকেম নিজে হাফেজ বলেছেন। উপরন্তু, ইমাম জাহাবী রহ.ও এ হাদীসের ওপর কোন আপত্তি করেননি। সুতরাং হাদীসটি সহীহ।
৩. হযরত আয়েশা রা. বলেন: রাসূল ﷺ
বিতিরের দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরাতেন না।
(নাসাঈ: ১৭০১)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। ইসমাঈল বিন মাসউদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ইসমাঈল ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ৫৫০) আব্দুল কাদির আরনাউত ‘জামিউল উসূলের তাহকীকে বলেন: إسناده صحيح “হাদীসটির সনদ সহীহ”।
(জামিউল উসূল: ৪১৬৮)
৪. হযরত আয়েশা রা. বলেন: রাসূল ﷺ
বিতিরের দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরাতেন না।
(নাসাঈ: ১৬৯৮)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। ইসমাঈল বিন মাসউদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ইসমাঈল ثقةٌ নির্ভরযোগ্য। (তাকরীব: ৫৫০) সুতরাং হাদীসটি সহীহ। ইবনে হাযাম তাঁর ‘মুহাল্লা’ কিতাবের ২৯০ নম্বর মাসআলার অধীনে এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন: هَذَا كُلُّ مَا صَحَّ عِنْدَنَا “আমাদের নিকটে যা সহীহ তা এই”। (আল মুহাল্লা: আফযালুল বিতির অধ্যায়)
হাকেম আবু আব্দুল্লাহ তাঁর মুসতাদরাক কিতাবে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ [التعليق - من تلخيص الذهبي] على شرطهما “এ হাদীসটি বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ; কিন্তু তাঁরা কেউ এটা বর্ণনা করেননি”। ইমাম জাহাবীও বলেন: এটা বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১১৩৯)
সারসংক্ষেপ : হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, বিতিরের তিন রাকাতের মাঝে কোন সালাম নেই; বরং দ্বিতীয় রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়ে রাসূল ﷺ
তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তৃতীয় রাকাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন।
এর বিপরীতে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে উঠে আর এক রাকাত পড়ার আমলও বর্ণিত আছে। (বুখারী: ৯৩৭) কিন্তু অধিক সংখ্যক সহীহ হাদীসের বিবরণ এবং সাহাবায়ে কিরামের মাঝে ব্যাপক প্রচলনের কারণে আমরা দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক এবং শেষ রাকাতে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে তিন রাকাত বিতির পড়ার আমল গ্রহণ করে থাকি।
♦ দোয়ায়ে কুনুত
পড়ার পূর্বে তাকবির বলে হাত উঠানো ♦
১. আলী রাযিঃ থেকে বর্ণিত,
তিনি সালাতুল বিতর-এর
শেষে রাক’আতে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। এরপর তিনি রুকুর আগে রাফুল ইয়াদাইন করতেন এবং কুনুত পাঠ করতেন।
(বুখারী তার রাফুল ইয়াদাইন
বিষয়ক পুস্তিকায়।
তিনি হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন।)
২. তাবিয়ী আবূ উসমান আন্
নাহদী বলেন, আমরা উমর
রাযিঃ এর নিকট আসতাম।
তিনি মুসাল্লীদের
ইমামতি করতেন। অতঃপর
তিনি রুকুর সময়
আমাদেরকে নিয়ে কুনুত পাঠ
করতেন এবং দুই হাত উঠাতেন এমনকি তার দুই তালু দেখা যেত এবং তাঁর বাজু দুইটি বের করতেন।
(বুখারী তার রাফুল ইয়াদাইন বিষয়ক পুস্তিকায়
এবং তিনি হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন।)
৩. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রাযিঃ থেকে বর্ণিত যে,
তিনি দুয়াকুনূত পড়ার আগে দুহাত উঠাতেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাঃ ৪/৫৩১;
হাদীস ৭০২৮নতুন সংস্করণ।)
৪. ইমাম বুখারীর
‘রিসালা রাফয়িল
ইয়াদাইনে (পৃ. ২৪) আছে-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের শেষ
রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন, এরপর রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ
করতেন।
(রিসালারাফয়িল
ইয়াদাইনে’ (পৃ. ২৪) )
ইমাম তহাবী রাহ. বলেন,
বিতর নামাযে কুনূতের
তাকবীর হল এই
নামাযে একটি অতিরিক্ত
তাকবীর। যারা রুকুর
পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন
তাদের ইজমা রয়েছে যে, এই তাকবীরের
সাথে রাফয়ে ইয়াদাইন(হাত উত্তোলন)ও করতে হবে। (তহাবী ১/৩৩২)
সুতরাং কুনুতের এই অতিরিক্ত
তাকবীরের ব্যাপারে যত
হাদীস বা আছার
আছে সবগুলোতে হাত
উঠানো উদ্দেশ্য।
৫. আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত,
মাসরূক রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও
ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য
শাগরিদগণ বলেছেন,
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.
শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন
আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন।
(শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪
আরো দেখুন : মুসান্নাফ
ইবনে আবীশায়বা ২/৩০৭)
এই রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করার পর ইমাম তহাবী রাহ. বলেন,
‘এ ধরনের বিষয় যুক্তি ও
ইস্তিম্বাতের ভিত্তিতে বলা (বা করা) যায় না। তা একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত
হতে পারে। (শরহু মুশকিলিল
আছার ১১/৩৭৪-৩৭৫)
ইমাম তহাবী রাহ. আরো বলেন,
হযরত ওমর ফারূক রা.-এর আমলও
এ পদ্ধতি সমর্থন করে। কারণ
তিনি ফজরের নামাযে রুকুর
আগে যখন কুনূত পড়তেন তখন কুনূতের জন্য তাকবীর দিতেন।(শরহু মুুশকিলিল আছার ১১/৩৭৫-৩৭৬)।
♦ এক রাকাত বিতর পড়া ♦
ইমাম ইবনুছ ছালাহ বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবলই এক রাকাত বিতর পড়েছেন এর কোন প্রমাণ নেই। [আততালখীছুল হাবীর ২/৩১ কাশফুস সিতর পৃ.৩৮] (টীকা-১)ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুধু এক রাকাত বিতর বিষয়ে কিছু বর্ণিত হয়নি। [শরহু মাআনিল আসার হা.১৬০৯] ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. শুধু এক রাকাত বিতর পড়াকে মাকরুহ বলেছেন। [আল-আউসাত:ইবনুল মুনযির ৫/১৮৪, মাসাইলে আহমদ: ইবনে হানী ১/৯৯]
কেবল হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রা. এর একটি বর্ণনায় রয়েছে: “যে চায় এক রাকাতও বিতর পড়তে পারবে”। ইমাম নাসায়ী হাদীসটি বর্ণনা করেই বলেন: এ ক্ষেত্রে মওকুফ বর্ণনাটিই সঠিক হওয়ার অধিক উপযুক্ত। [সুনানুল কুবরা হা.১৪০৬] বরং অধিকাংশ ইমাম এটিকে মউকুফ্ তথা সাহাবীর কথা বলে আখ্যায়িত করেছেন। [আততালখীছুল হাবীর ২/৩৭] তাছাড়া এ হাদীসের একটি বর্ণনায় রয়েছে:ومن شاء أومأ إيماء‘যার ইচ্ছা এক রাকাত পড়ে নেবে, আর যার ইচ্ছা ইশারা করে নেবে’। [সুনানে নাসায়ী হা. ১৭১৩ এর সনদ সহীহ, সুনানে নাসায়ী কুবরা হা. ১৪০৬, সহীহ ইবনে হিব্বান হা.২৪১১ আসসুনানুল কুবরা ও সুনানে সগীর:বাইহাকী হা. ৪৭৭৯-৮০ ও মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা.৪৬৩৩]
তাহলে কি এক রাকাতও না পড়ে কেবল ইশারা করে নিলে বিতর আদায় হয়ে যাবে? এ কারণে আমাদের ধারণামতে এ বর্ণনাটি মুতাশাবিহ (রহস্যাবৃত) এবং আমলযোগ্য নয়। এর প্রকৃত রহস্য আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।
# সাহাবীগণের এক রাকাতে বিতর পড়া বিষয়ক কয়েকটি বর্ণনা:
১ . হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছের এক রাকাত বিতর পড়ার কথা শুনে ইবনে মাসউদ রা. বলেন: “এক রাকাত বিতর কখনো যথেষ্ট হবে না”। [কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনা, ১/১৯৩, ১৯৭ তাবারানী: মাজমাউজ যাওয়াইদ, হা. ৩৪৫৭ হাইছামী বলেন: এর সনদ হাসান মুয়াত্তা মুহাম্মদ হা.২৬৪]
ইমাম মালেক সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ ও উসমান রা. এর এক রাকাত বিতর প্রসঙ্গে বলেন: (وقال مالك بن انس ومن اخذ بقوله ليس العمل عندنا على ان يوتر بواحدة ليس قبلها شفع) যে তাঁর কথা গ্রহণ করে তার জানা দরকার যে, আমাদের এতদঅঞ্চলে তথা মদীনায় দুই রকাত যুক্ত করা ছাড়া শুধু এক রাকাতে বিতর আদায় করার উপর কোন আমল নেই।
[কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলুল মদীনা. ১/১৯৩]
২. হযরত মু‘আবিয়া রা. এক রাকাত বিতর পড়লে এক বর্ণনা অনুযায়ী ইবনে আব্বাস রা. এর কড়া সমালোচনা করেন। [তহাবী হা.১৭৫০] তাছাড়া উপরোক্ত উভয় বর্ণনাতেই হঠাৎকরে এক রাকাত বিতর পড়তে দেখে উপস্থিত তাবেয়ীগণ বিস্মিত হয়ে সাথে সাথে প্রশ্ন তুলেছেন। এতেও প্রমাণ হয়: এভাবে কেবল এক রাকাত বিতর সম্পর্কে তারা অবগত ছিলেন না ।
৩. হযরত উসমান রা. এক রাকাত বিতর পড়ার বিষয়টি ছিল অনিচ্ছাকৃত। এখানেও ঘটনা বর্ণনাকারী হযরত আব্দুর রহমান আত্তাইমী রা. একরাকাত বিতর পড়তে দেখে অবাক হন। পরক্ষণেই বলেন:(أوهم الشيخ) তিনি হয়ত ভুলে গেছেন। [তহাবী পৃ.২০৬]
৪. আর ইবনে উমর ও ইবনে আব্বাসের যে ‘মরফু’ রেওয়ায়াতে: একরাকাত পড়তে হুকুম করা হয়েছে মূলত সেগুলোতে শুধুই এক রাকাতকে পৃথক পড়তে বলা হয়নি। একই হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনাই এ বিষয়টি সুস্পষ্ট রয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: “নবীজীর "صل ركعة واحدة" “একরাকাত পড়ে নাও” -ধরণের আদেশ দ্বারা তিন রাকাত বিতরকে সালামের মাধ্যমে পৃথক করে পড়া এক সাথে পড়ার চেয়ে উত্তম হওয়ার প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়। কিন্তু এধরণের শব্দ থেকে মাঝের বৈঠকে সালাম ফেরানোর বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। এও সম্ভাবনা আছে: “এক রাকাত পড়ে নাও” কথার মর্ম হলো: পূর্ববর্তী দুই রাকাতের সাথে মিলিয়ে তিন রাকাত বিতর পড়ে নাও।
[ফাতহুলবারী ২/৫৯৩ বাবু মা জাআ ফিল বিতরি]
তাই হাদীস শাস্ত্রের দিকপাল মাদীনার ইমাম মালেক রহ. তাঁর সুপ্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছের এক রাকাত বিতর পড়ার কথা উল্লেখপূর্বক বলেন:
وليس على هذا العمل عندنا ولكن أدنى الوتر ثلاث
“আমাদের মদীনায় এর উপর আমল নাই। বরং সর্বনিম্ন বিতর তিন রাকাত”।
[মুয়াত্তা মালেক:বাবুল আমরি বিল বিতরি হা.৪০৭]
(এক রাকআত পড়লে হবে কিনা এটা মতভেদ পূর্ন বিষয়। যেসব দেশে পড়া হয় বা যে আলেমরা তার পক্ষে মত দেন তাদের পড়া ভুল হচ্ছে এটা বলা হবেনা।
এবং তাদের সমালোচনাও করা যাবেনা,
আমরা পড়ব কিনা বা পড়া ঠিক হবে কিনা সেটাই জানানো হচ্ছে )
বিতর তিন রাকআত এর কম বা বেশী পড়া ঠিক কিনা।
দোয়া কুনূত রুকুর আগে পড়তে হয় নাকি পরে
এমন কিছু ব্যাপারে আরো বিস্তারিত দলীল প্রমান সহ জানতে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ লুধয়ানবী রহঃ
এর দুইটি লিখাটা পড়তে পারেন।
★ http://ahlehaqmedia.com/113-2/
★ http://ahlehaqmedia.com/114-2/
[প্রখ্যাত আলেম,হাদিস বিশারদ
মাওলানা আব্দুল মতীন দাঃবাঃ এর লিখিত
দলিলসহ নামাজের মাসায়েল বই হতে
ও মাওলানা মুফতি গোলামুর রহমান দাঃবাঃ
এর লিখিত সলাতুন নবী
বই হতে উল্লেখিত]
#বই দুটি ডাউনলোড করে পড়তে পারেন..
আরো বিস্তারিত এবং অন্যান্য আরো ব্যাপারেও দলিল সহ লিখা আছে...
★ দলিলসহ নামাজের মাসাইল।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.abunayem.massailofprayerebook
★সলাতুন নবী বা নবিজির নামাজ
https://play.google.com/store/apps/details?id=kuet.md.kamrul.hasan.golap.solatunnabismfinal
বিঃদ্রঃ ভিন্ন কোন মত বা লিখা কেও উল্লেখ করতে যাবেন না, এতে অহেতুক কনফিউশন ক্রিয়েট হবে।
কারো অন্য কোন শাইখের লিখা ঠিক মনে হলে তা মানতে পারেন,কাওকে কিছু মানতে বাধ্য করা হচ্ছেনা।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিতর এর নিয়মকে ভুল বলে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তার জবাব দিতে এই লিখা।
যাদের জানার দরকার তারা যেন ক্লিয়ার হতে পারেন
0 coment rios: