শনিবার

#বেটারহাফ_ফরেভার  (পর্ব-০৯) ইসলামিক গল্প

#বেটারহাফ_ফরেভার  (পর্ব-০৯)
ইসলামিক গল্প

মেয়েদের সাথে কানেক্টেড থাকা নিয়ে সিনহার এলার্জি বেশি।
ফেবুতে কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড রাখা যাবে  না,কলেজের কোনো মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে খুব দরকার না হলে কথা বলা যাবে না,পাশের বাসার ভাবির সাথেও মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা যাবে না etc etc etc......

ইয়াদের এইসব একদম বিরক্ত লাগত...!!!

সমস্যা কি ফেবুতে মেয়ে এড থাকলে...!!??? তাদের সাথে  কথা না বললেই তো হল....!!! এড থাকুক সমস্যা কি...!!???
কলেজের ফ্রেন্ডস এক একটা আমার কলিজা।সে ছেলেই হোক আর মেয়ে।ওদের আমি ছাড়তে পারব না.....
আরে,,,পাশের বাসার ভাবি...!!! শিলা ভাবি...!!! ও আমার কত্ত ক্লোজ তুমি জানো...!!!???
রোজ কলেজ থেকে এসে ওর সাথে আড্ডা জমাতাম.....আর এখন বলছ ওর সাথে কথা বলা বাদ দিতে  হবে...!!! হাও নন-সেন্স সিনহা....!!! ভাবিদের সাথে দেবররা মজা টজা করবে এটা স্বাভাবিক....!!!

সিনহা ইয়াদকে বুঝাতে পারত না যে এটা ইসলামে হারাম...!!! ইয়াদের মাথায় ঢুকতই না এসব।ইয়াদকে বুঝাতে গিয়ে বুঝাতে না পেরে ও মাঝে মাঝে কান্না করে দিত জেদে...!!!

সিনহা:তুমি বুঝো না কেন যে এটা ইসলামে হারাম....!!! তোমাকে এত ভাবে বুঝাই বুঝো না কেন...!!???

ইয়াদ:অই তোমার সমস্যা কি হ্যা..!!??? এত চুলকানি ক্যান তোমার...!!!???😡

সিনহা:মানেহ....!!!???

ইয়াদ:আমার সামনে এত ইসলাম ইসলাম করতে আসবা না।এত ইসলাম মানতে পারব না।শুধু প্যারা আর প্যারা।সিনহা আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে....!!! একটু শান্তিতে থাকতে চাই😡

ইয়াদ ফোন টিপতে টিপতে কথাগুলো বলছিল।কথাটা বলেই ফোন বিছানার উপর আছাড় মেরে বারান্দায় চলে গেল।সিনহা আর কথা বলতে পারতেছে না।

সিনহা কিভাবে ওকে বুঝাবে যে এটা ইসলামে হারাম...!!???
আর কতভাবে বলবে...!!!???
আসলে কিই বা আর করার....!!! আল্লাহ তো কুরানে বলেই দিছেন যে,ভালোবাসার মানুষকে মন চাইলেই ইসলামের পথে আনা যায় না।আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত না আসা পর্যন্ত কিভাবে ইসলামিক হবে ইয়াদ...!!???

প্রতি রাতেই তাহাজ্জুদ নামাজ পরে ইয়াদের জন্য হেদায়েত প্রার্থনা করে সিনহা।আর পর্যন্ত হেদায়েত পায় নি ইয়াদ.....!!!!

শুয়ে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে পরে সিনহা।প্রায় ঘন্টাখানেক পর ইয়াদ রুমে এসে দেখে সিনহা ঘুমিয়ে পরেছে...!!! ওর মুখের দিকে তাকিয়ে  ইয়াদের বুঝতে দেড়ি হল না যে অনেক কান্না করেছে মেয়েটা...!!! চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে.....!!! চোখের পানি গালে পরে শুকিয়ে গেছে....!!! মুখটা কেমন শুকনো লাগছে সিনহার....!!! মুখের উপর একটা বালিশ নিয়েছিল সেই বালিশটাও মুখ থেকে সরে গেছে...!!!

মেয়েটার একটা অভ্যাস.....!!! মুখের উপর বালিশ নিয়ে চাপাকান্না করে.....!!! এমনভাবে কাদে.....!!! পাশে থাকলেও সহজে বুঝা যায় না যে কাঁদছে.....!!!

এর আগেও অনেকবার এমন করেছে ও।এটা তো আজ নতুন না।ইয়াদের সাথে ঝগড়া করে ইয়াদের পাশে শুয়ে থেকে মুখের উপর বালিশ দিয়ে অনেক কান্না করেছে সিনহা...!!! ইয়াদ বুঝতেও পারে নি।যখন কান্না করতে করতে ঢেকুর উঠে গেছে তখন ইয়াদ বুঝতে পেরেছে যে পাগলিটা কাঁদছে লুকিয়ে লুকিয়ে....!!!
তারপর ইয়াদ যখন কাছে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিত সিনহা আর বাধা দিত না ইয়াদকে।ইয়াদের বুকে মাথা গুজে জোরে কান্না কতে দিত....!!!

আজও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরল পাগলিটা....!!! খুব খারাপ লাগছে ইয়াদের....!!! ও এমনটা না করলেও তো পারত।সিনহা তো ওর ভালোই চায়।ও নিজেই তো বুঝে না।বুঝেও বুঝে না....!!!

সবে মাত্রই ঘুমিয়ে পরেছে....!!! ইয়াদ আর সিনহাকে ডাকল না।ওর কাছে গিয়ে শুয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় বুলি কেটে দিতে লাগল.....!!!!

সুখ-দুঃখ মিশিয়েই দিন চলছিল সিনহার।কষ্ট হত ওর পর্দা নিয়ে সবচেয়ে বেশি।পর্দা মেইন্টেইন করা অই বাসায় সবচেয়ে বড় প্রব্লেম ছিল....!!!
ওর শ্বাশুড়ি ছিল মডার্ন মহিলা।সাজুগুজু করে বাইরে বের হওয়া উনাদের কাছে নরলাম ব্যাপার।বাসায় পর-পুরুষ এলাও করাও নরলাম ছিল....!!! কিন্তু সিনহার জন্য এসব নরমাল ছিল না।এটা নিয়ে শ্বাশুড়ির সাথে মনমালিন্য হত....!!!
এমনকি ইয়াদের বড় ভাই ইফানের সামনেও সিনহা ঠিকমত পর্দা করতে পারত নাহ...!!!

পারবে কিভাবে...!!!???
এটার প্রতি তো কারো কোনো গুরুত্বই নেই...!!! শ্বাশুরি বলে যে,ইফান তোমার বড় ভাইয়ের মত।ওর সামনে এত ঘোমটাঘামটি দিয়ে থাকার কি আছে...!!!/???

বাসায় কোনো পুরুষ মেহমান আসলে সিনহা তাদের সামনে না আসাতে সেটা নিয়েও কথা শুনতে হয় সিনহাকে।অবশ্য সিনহার অভ্যাস হয়ে গেছে।এইসব কষ্ট সহ্য করার প্রস্তুতি নিয়েই তো ও এই বাড়িতে এসেছে ইয়াদের বউ হয়...!!!
সেই বিয়ের দিন থেকেই ওর যুদ্ধ শুরু হয়েছে,সেই বিয়ের দিন থেকেই ওর কথা শুনা শুরু হয়েছে....!!!!

বিয়ের দিন যখন সিনহা বের হওয়ার সময় বোরকা পরতে চায় তখন ইয়াদের মা সহ অন্যান্যরা বোরকা পরতে মানা করেছিল....!!!

নতুন বউ, বোরকা পরতে হবে কেন...!!??? বিয়ের দিন বোরকা না পরলেও চলে.....!!! এত বেশি ভাল না।সবসময় নরমাল থাকা ভাল......!!!!

এসব কথা শুনার পরও সিনহা পিছিয়ে যায় নি।পর্দার ব্যাপারে একটুও ছাড় দিতে রাজি না।ও জানে,,,আজ যদি ও ছাড় দেয় তো প্রতিবারই এভাবে ছাড় দিয়েই যেতে হবে....!!! প্রথম থেকেই ওর স্ট্রোং থাকা লাগবে।
তাই,সবার কথা অমান্য করেই ও বোরকা পরেছিল....!!!
এটা নিয়ে শ্বশুর বাড়ির সবাই একটু কানাঘুষা করেছে....!!!!

আবার বিয়ের দিন আরেক কাহিনী করেছে সিনহা....!!!
ইয়াদের বাসায় আনার পর যখন মুরুব্বিদের সামনে সিনহাকে নিয়ে যাওয়া হয় মুরুব্বিদের সালাম করার জন্য,তখন সিনহা পায়ে হাত দিয়ে সালাম না করে শুধু মুখে সালাম দেয়।ইয়াদকেও ও পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে দেয় নি।আগেই শিখিয়ে দিছিল পায়ে হাত দিয়ে সালাম না করে শুধু মুখে সালাম দিতে,,,

সিনহা:শোনো,বিয়ের অনুষ্ঠান যেদিন হবে সেদিন কিন্তু বড়রা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে বলবে।একদম এই কাজ করবে না।এটা কিন্তু হারাম।শুধু মুখে সালাম দেবে.....ওকে???

ইয়াদ:একদিন করলে কিছু হবে না বাবুই।অইদিন এটা না করলে বড়রা বেয়াদব বলবে

সিনহা:তুমি আব্বু আম্মুকে আগেই রেখো যাতে তারা মেনেজ করে নেয়....।। আমি কিন্তু কোনোভাবেই পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে পারব না। আগেই বলে দিলাম।এরপর যে যা ইচ্ছা আমাকে বলুক....!!!

ইয়াদ:হায় হায়....!!! এভাবে বলে না বাবুই।জেদ কর না....!!! এক দিনই তো.....

সিনহা:তুমি তোমার দিকটা কিভাবে মেনেজ করবে করে নিয়ো।আমি পারব না অইভাবে সালাম করতে।ব্যস....!!!

ইয়াদ এরপরে অবশ্য ওর মায়ের কাছে গিয়ে বলছিল সিনহার এসব কথা।তবে মা তেমন কোনো পাত্তা দেয় নাই।কিন্তু বিয়ের দিন তো সত্যি সত্যি সিনহা কারো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে  নি।যার কাছেই নিয়ে যায় সালাম করার জন্য তাকেই সে শুধু মুখে সালাম দেয়.....!!!!

এটা নিয়ে পরবর্তীতে ইয়াদের মা অনেক রাগারাগি করে।বিয়ের বাড়ির মুরুব্বিরাও সিনহাকে বেয়াদব ভাবে..:!!! সবার মুখে এক কথা....!!!
ইয়াদের বউ এমন জেদি,বেয়াদব হবে ভাবতে পারি নি।কিভাবে মুখের উপর সালাম করা ঠিক না বলে দিল....!!! মুরুব্বিদের একটুও সম্মান করল না....!!! ছিঃ ছিঃ ছিঃ...!!!!

এসব শুনে সিনহার অনেক খারাপ লাগছিল....!!! পরে ইয়াদের বাবা সবার মুখের কথার প্রতিবাদ করেছিল.....!!!!

ইয়াদের বাবা: আমার মেয়ে যেটা করেছে সেটাই ঠিক...!!! পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেই সে ভাল আর না করলেই বেয়াদব এমন তো না....!!! আপনাদের কাছে ভালো হওয়ার জন্য ও পাপী হবে কেন...!!??? আপনাদের কাছে এত ভাল হওয়ার দরকার নাই ওর।আল্লাহর কাছে ও ভালো থাকলেই হল।এরপর আমার এই মেয়ের ব্যাপারে যদি আর কোনো কানাঘুষা শুনছি তো খবর আছে বলে দিলাম...!!! ও এই বাড়ির বউ না।এই বাড়ির মেয়ে...!!! ও ভুল করলেও আমার মেয়ে।ভুল না করলেও আমার মেয়ে।ওর ব্যাপারে আর একটাও বেড কমেন্ট যেন আমি না শুনি....!!!

ব্যস....!!! থেমে গেল সব কানাঘুষা....!!!  এর পর আর কেউ অন্তত প্রকাশ্যে সিনহার ব্যাপারে খারাপ কিছু বলতে পারে নি।সিনহার অই সময়টাতে খুব ভাল লাগছিল....!!!
ও বুঝতে পেরেছিল যে,এই বাড়িতে আর কেউ ওর পাশে না থাকলেও ওর শ্বশুর ঠিকই ওর পাশে থাকবেন ইন শা আল্লাহ....!!!


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: