#অবহেলা#১ম_পর্ব
হালকা লাল রঙের শাড়ি পড়ে বসে আছি বাসরঘরে। বাসরঘর বলাও চলে না এটা কোন ফুল, কোন ঘ্রান নেই। সাদামাটা রুমে আমি কনের বেশ ধরে একহাত লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছি নিজের নতুন স্বামীর অপেক্ষায়।আমার নতুন স্বামী যিনি উনি হচ্ছেন উকিল।উনিই আমার আর আলিফের মানে আমার প্রাক্তন স্বামীর সাথে ডিভোর্স করিয়েছিল।ভাগ্যের কি পরিহাস!তার সাথেই বিয়েটা হল।
আলিফ মানে আমার প্রাক্তন স্বামীর সাথে আমার বিয়ে পারিবারিকভাবে হয়েছিল।আলিফের বাবা আমার বাবার ছোটবেলার বন্ধু। তারা নাকি আগেই ঠিক করে রেখেছিল যদি একজনের মেয়ে হয় আর অন্যজনের ছেলে তাহলে দুইজনের বিয়ে দিয়ে পরম আত্মীয় হবে। আলিফ আমাকে বিয়ের আগে দেখে নেই শুধু আমার নামটা শুনেছিল নুর।আলিফ বিদেশ থেকে পড়াশুনা করে ডাক্তার হয়ে দেশে ফিরেই পরিবারের জোড়াজুড়িতে আমাকে বিয়ে করেছে। আমিও মনের এক কোনে আলিফের ছবি দেখে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আলিফের ছবিটি বইয়ের ফাকে লুকিয়ে রেখে রাত্রে দেখতাম আর হাসতাম।বাংলা ছায়াছবি,হিন্দি সিরিয়ালের মত আমার সংসার হবে তাই ভাবতে থাকতাম।স্বামী আদর করবে, দূরে গেলে রাগ হবে, কাছে থাকলে খুনসুটি হবে আরো কত কি!নাটক আর ছবি দেখতে দেখতে এমন হয়ে গিয়েছিলাম যে বাস্তবতার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম । বিয়ের প্রথম রাত্রে যখন আলিফ আমার ঘোমটা উঠাল। তখনি এক চিৎকার করে বাসার সবাইকে আলিফ জড়ো করে ফেলেছিল।কারন আমি কালো ছিলাম। হ্যা,কালো। এই দুনিয়ার না আমি অন্য গ্রহ থেকে এসেছি আলিফের কথাশুনে সেটাই মনে হচ্ছিল। একটা এলিয়েনের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। আলিফের ডাকে যখন সবাই আমার ঘরে আসল তখন আমি আবার ঘোমটায় নিজেকে আড়াল করলাম। আর আলিফের কথা শুনতে পেলাম ও বলছিল
-বাবা,এটা কি করলে!আমার সাথে এই কালো মেয়েটার বিয়ে দিলে। আমি কি ভালো কিছু ডিসার্ভ করতাম না??-এটা আবার কেমন কথা?নুর অনেক লক্ষী মেয়ে তুই শিক্ষিত হয়েও এই কথা বলছিস!ছিঃ ছিঃ
-বাবা আমি নুর নাম শুনে বুঝেছিলাম সুন্দরী মেয়ে হবে। কিন্তু এটা কি! আমার সাথে কি ওকে মানায়।
-ও তো ঠিকই বলেছে। আগেই বলেছিলাম আলিফ এই কালীটারে মাইন্না নিব না।
-চুপ থাক আলিফের মা।এটা কেমন কথা?
আমি আলিফের কথা শুনে ঘোমটার আড়ালে কাদছিলাম সেটা কেউ লক্ষ পর্যন্ত করল না। বাড়ির সবাই আলিফের কথায় সম্মতি দিচ্ছিল শুধু আলিফের বাবা বাদে। একটা মুহুর্ততে সিরিয়াল, ফিল্ম সবকিছু মাথা থেকে চলে গেল। চরম বাস্তবতায় ফিরে এসেছিলাম তখন। আমার কান্না কেউ দেখছিল না। এক পর্যায়ে আলিফ ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেল। আলিফের বাবা আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করল। উনি আমাকে মেয়ের মত ই ভালোবাসত কিন্তু স্বামীর ভালোবাসা না পেলে সব তুচ্ছ।তেমন ই চলছিল। দিনের আলোয় যতই আমাকে অপমান করত রাতের অন্ধকারে আমাকে ততটাই ভালোবাসত। এই হল পুরুষসমাজ।বিয়ের একমাস পর যখন আলিফকে বললাম আমি মা হতে যাচ্ছি সে সাফ জানিয়ে দিল এই কালো বাচ্চার বাবা সে হতে পারবে না মেরে ফেলতে।
যখন বাচ্চাটা রাখব বলে আমি জেদ করলাম আলিফ আমাকে এক চড় দিল আর আমি ছিটকে কাচের টেবিলের উপর পড়ে যাই সাথে আমার অনাগত বাচ্চাও হারাই।সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম আর ওর সাথে সংসার করব না।যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ তিন মাসে ডিভোর্স আর তখন জানতে পারলাম যেই উকিল আমার কেস নিয়েছে তার বউ আলিফের প্রেমিকা তাদের ও ডিভোর্স হয়েছে। আমার সাথে ডিভোর্স হওয়ার সাথে সাথে সেই মেয়ের সাথে আলিফ বিয়ে করে।
আমার এই নতুন স্বামীর ঘরে সেই মেয়ে দুই মেয়ে রেখে গেছে ।আমি ভাবি,, এটা কেমন নারী?সন্তানের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল!
কিন্তু নিজের সন্তান হারিয়ে মা হতে পেরেছিলাম একটা খুশি কাজ করছিল।
একজন পঞ্চম শ্রেনিতে পড়ে আর একজন দ্বিতীয় শ্রেনিতে পড়ে তন্নি ও তনু। আমি ঘরে আসতেই তাদের প্রশ্ন তার বাবার কাছে ছিল এই কালো মেয়েটি কে?
তার বাবা মানে তাইফ চুপ করে ছিল। কি বলবে আলিফকে শায়েস্তা করতে আমাকে বিয়ে করেছে তাইফ । কিন্তু তাইফ আমার আলিফের সম্পর্ক কেমন তা জানত না।বুঝেছে আমাকে বিয়ে করলে আলিফ আফসোস করবে।। বেচারা! আমার সাথে ফেসে গেল।
এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দরজার সামনে কারো পায়ের শব্দ শুনলাম।বুঝতে বাকি রইল না তাইফ।তাইফ ঘরে ঢুকেই দরজার খিল দিল।
মনে ভাবছিলাম আলিফের শাস্তি আমাকে দিবে নাকি?
তখনি তাইফ বলল,
-শুনুন একটা কথা বলতে চাই
আমি তখন খিলখিল হাসতে শুরু করলাম
-হাসছেন কেন?
-আমি আপনাকে স্বামির অধিকার দিতে পারব না এটাই বলবেন তো?
-তুমি কিভাবে বুঝলে!
-কালো মেয়েদের কেউ সেই অধিকার দিতে চায় না। আমার সেটা দরকার নেই। এক স্বামীর থেকে সব ট্রেনিং পেয়েছি অন্য স্বামীর ঘর কিভাবে করতে হবে তার।আমার দরকার নেই স্বামীর অধিকার।
-যাক বুঝলে ভালো।
তখনি দরজার ওপার থেকে ডাক আসছে।
-বাবা,,,,বাবা
তাইফ দরজা খুলতেই মেয়েগুলো ছুটে আমার কাছে এসে বসল।
তন্নি ছোট ও আমার কোলে বসল।তনু জিজ্ঞেস করল
-তুমি কে??
আমি চুপ রইলাম। তাইফ তখন উত্তর দিল
-ও তোমাদের মামুনি।
তনু তখন খলখলিয়ে হাসতে লাগল। মেয়েটার হাসি বেশ সুন্দর।
-না ও আমাদের মা না। ও কত কালো। আর আমি,তুমি বোন কত ফর্সা।
তন্নি গলা জড়িয়ে আম্মু ডাক দিল।মনে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছিল তন্নির ডাক শুনে।
তনুর কথা শুনে তাইফ তন্নিকে এক ধমক
-তোমাদের মা তোমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আর ও কালো এটা বলবে না, তনু। আল্লাহ সবাইকে সুন্দরভাবে বানিয়েছে।
তাইফের কথা শুনে চোখ ছলছল করছিল মনের কোনে একটা কিছু হচ্ছিল যেন সম্মান পেয়েছিলাম যেটা আলিফ দেয় নেই কখনো।
তনু তাইফের কথা শুনে তন্নির হাত আমার গলা থেকে টেনে নিয়ে গেল ওর সাথে যেতে যেতে বলল
-বাবা তুমি পচা।সৎ মা এসেই আমাদের বকা খাওয়াল।
তনুর কথা শুনে বুকে কষ্ট অনুভব হচ্ছিল। আমি আসতে না আসতেই ওদের বাবার সাথে ঝগড়া হল।
তাইফ তখন বলল
-কিছু মনে করবেন না। তনু একটু বেশি রাগ করলেও মনটা নরম। আর আপনার স্বামীর জন্য আমার জীবন বরবাদ হয়ে গেল।
-হুম সব দোষ আমার তাদের প্রেমটাও আমি করিয়েছি ঠিক না?
-হয়েছে ঘুমান।আমার মেয়েদের জন্য আপনাকে এনেছি। শুনেছি বাচ্চাদের দেখাশুনা করেন.
-তার মানে আয়া লাগত। বিয়ে না করে বললেই পারতেন আয়া হয়েই আসতাম।
-ভারী ঝগড়াটে তো আপনি আপ্নাকে যে রুম থেকে বের করে দিচ্ছি না এটাই অনেক।
-দেন সমস্যা নেই আয়া তো আমি।
-হয়েছে! আপনি খাটে ঘুমান আমি নিচে শুচ্ছি।
আরেকটা সম্পর্ক জানি
#অবহেলা
আমার এই নতুন স্বামীর ঘরে সেই মেয়ে দুই মেয়ে রেখে গেছে ।আমি ভাবি,, এটা কেমন নারী?সন্তানের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল!
কিন্তু নিজের সন্তান হারিয়ে মা হতে পেরেছিলাম একটা খুশি কাজ করছিল।
একজন পঞ্চম শ্রেনিতে পড়ে আর একজন দ্বিতীয় শ্রেনিতে পড়ে তন্নি ও তনু। আমি ঘরে আসতেই তাদের প্রশ্ন তার বাবার কাছে ছিল এই কালো মেয়েটি কে?
তার বাবা মানে তাইফ চুপ করে ছিল। কি বলবে আলিফকে শায়েস্তা করতে আমাকে বিয়ে করেছে তাইফ । কিন্তু তাইফ আমার আলিফের সম্পর্ক কেমন তা জানত না।বুঝেছে আমাকে বিয়ে করলে আলিফ আফসোস করবে।। বেচারা! আমার সাথে ফেসে গেল।
এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দরজার সামনে কারো পায়ের শব্দ শুনলাম।বুঝতে বাকি রইল না তাইফ।তাইফ ঘরে ঢুকেই দরজার খিল দিল।
মনে ভাবছিলাম আলিফের শাস্তি আমাকে দিবে নাকি?
তখনি তাইফ বলল,
-শুনুন একটা কথা বলতে চাই
আমি তখন খিলখিল হাসতে শুরু করলাম
-হাসছেন কেন?
-আমি আপনাকে স্বামির অধিকার দিতে পারব না এটাই বলবেন তো?
-তুমি কিভাবে বুঝলে!
-কালো মেয়েদের কেউ সেই অধিকার দিতে চায় না। আমার সেটা দরকার নেই। এক স্বামীর থেকে সব ট্রেনিং পেয়েছি অন্য স্বামীর ঘর কিভাবে করতে হবে তার।আমার দরকার নেই স্বামীর অধিকার।
-যাক বুঝলে ভালো।
তখনি দরজার ওপার থেকে ডাক আসছে।
-বাবা,,,,বাবা
তাইফ দরজা খুলতেই মেয়েগুলো ছুটে আমার কাছে এসে বসল।
তন্নি ছোট ও আমার কোলে বসল।তনু জিজ্ঞেস করল
-তুমি কে??
আমি চুপ রইলাম। তাইফ তখন উত্তর দিল
-ও তোমাদের মামুনি।
তনু তখন খলখলিয়ে হাসতে লাগল। মেয়েটার হাসি বেশ সুন্দর।
-না ও আমাদের মা না। ও কত কালো। আর আমি,তুমি বোন কত ফর্সা।
তন্নি গলা জড়িয়ে আম্মু ডাক দিল।মনে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছিল তন্নির ডাক শুনে।
তনুর কথা শুনে তাইফ তন্নিকে এক ধমক
-তোমাদের মা তোমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আর ও কালো এটা বলবে না, তনু। আল্লাহ সবাইকে সুন্দরভাবে বানিয়েছে।
তাইফের কথা শুনে চোখ ছলছল করছিল মনের কোনে একটা কিছু হচ্ছিল যেন সম্মান পেয়েছিলাম যেটা আলিফ দেয় নেই কখনো।
তনু তাইফের কথা শুনে তন্নির হাত আমার গলা থেকে টেনে নিয়ে গেল ওর সাথে যেতে যেতে বলল
-বাবা তুমি পচা।সৎ মা এসেই আমাদের বকা খাওয়াল।
তনুর কথা শুনে বুকে কষ্ট অনুভব হচ্ছিল। আমি আসতে না আসতেই ওদের বাবার সাথে ঝগড়া হল।
তাইফ তখন বলল
-কিছু মনে করবেন না। তনু একটু বেশি রাগ করলেও মনটা নরম। আর আপনার স্বামীর জন্য আমার জীবন বরবাদ হয়ে গেল।
-হুম সব দোষ আমার তাদের প্রেমটাও আমি করিয়েছি ঠিক না?
-হয়েছে ঘুমান।আমার মেয়েদের জন্য আপনাকে এনেছি। শুনেছি বাচ্চাদের দেখাশুনা করেন.
-তার মানে আয়া লাগত। বিয়ে না করে বললেই পারতেন আয়া হয়েই আসতাম।
-ভারী ঝগড়াটে তো আপনি আপ্নাকে যে রুম থেকে বের করে দিচ্ছি না এটাই অনেক।
-দেন সমস্যা নেই আয়া তো আমি।
-হয়েছে! আপনি খাটে ঘুমান আমি নিচে শুচ্ছি।
আরেকটা সম্পর্ক জানি
#অবহেলা
tag
0 coment rios: