মঙ্গলবার

সুন্নত জিন্দার মিশন। পর্ব ০৫

সুন্নত জিন্দার মিশন। পর্ব ০৫

খালিদ নামাজ পড়ে এসে দেখে যে রিমা ঘুমিয়ে পড়ে.খালিদ তখন রিমার মুখের দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকে , কি সুন্দর মেয়েটি. শ্যাম বর্ণের হলেও আলাদা একটি মায়া আছে. (বস্তুত প্রত্যেক ছেলের কাছে তার স্ত্রী ই সেরা সুন্দরি.. সে চামড়ায় সুন্দর হোক আর কালো হোক) খালিদ বলতে থাকে এই যে মেম, আপনাকে সত্যি খুব ভালোবাসে ফেলছি যেমন টি হযরত ফাতেমা রাঃ কে আলী রাঃ ভালোবাসতেন. আপনি কি আমায় ভালোবাসেন.??(একটু নিচু আওয়াজে)


হঠাৎ কানে আসে মুয়াজ্জিন এর সেই মধুর ডাক. আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর......
খালিদ রিমার কপালে আলতো করে একটু আদর দিয়ে মসজিদে রওনা হয়
নামাজ পড়ে এসে সে কোরআন মাজিদ গুন গুন করে পড়তেছে.(অন্যদিন একটু জোড়েইই পরে কিন্তু আজ যেন রিমার ঘুমের ডিষ্টার্ব না হয় তাই গুন গুন করে পড়তাছে.)
রিমার ঘুম থেকে উঠে দেখে খালিদ কোরআন মাজিদ পড়ে. তাই আর খালিদকে কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়. রিমা ফ্রেস হয়ে রুমে আসে আজ তার মন অন্য রকক খুশি কাজ করতাছে. কারন সে আজ প্রথম মেসওয়াক ব্যবহার করেছে..
খালিদঃ ঘুম কেমন হলো.
রিমাঃ আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো, আপনি মনে হয় রাতে একটুও ঘুমান না তাই না..?
খালিদঃ না মানে... ও কিছু না (মুখের ভিতর রেখে)
রিমাঃ মুখের ভিতর রেখে কি বলেন. খাটে গিয়ে একটু ঘুমান. চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে গেছে.
খালিদ:না.. আমিতো খাটে ঘুমাবো না.(একটু কোহতুহল করে)
রিমাঃ তাহলে.??
খালিদঃ আমি আমার বউ এর কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই.
রিমাঃ এই যে মিস্টার আমি কিন্তু অসুস্থ(হায়েজরত)..
খালিদঃ তাতে কি নবীজী সঃ ও আয়েশা রঃ এর কোলে মাথা রেখে ঘুমাইছেন উনি তখন অসুস্থ ছিলেন.
রিমাঃ অনেক কিছু জানেন দেখি. আচ্ছা আর কি কি জানেন স্ত্রী হায়েজরত অবস্থার ব্যপারে.
খালিদঃ কই আর অনেক কিছু জানি. ওলামায়ে কেরামের ওয়াজ নসীহত শুনে উনাদের সাথে থেকে আর বই পত্র পড়ে কিছু জেনেছি.
রিমাঃ কি কি জেনেছেন..?
খালিদঃ বেশি কিছু না. এই যে
কোলে মাথা রাখা,
আয়েশা রঃ পাত্রের যে অংশে মুখ লাগিয়ে পানি খেতেন নবীজী সঃ ও ঐ অংশে মুখ লাগিয়ে পানি খেতেন,
আয়েশা রাঃ হাড়ের যে টুকরা চুষতেন নবীজী সঃ ও সেই হাড় আবার চুষতেন ইত্যাদি
এসব প্রত্যেক ঘঠনার সময় আয়েশা রাঃ হায়েজরত ছিলেন.
রিমা: আলহামদুলিল্লাহ আপনি দেখি অনেক কিছুই জানেন.তো আপনি কার কার ওয়াজ বেশি শুনেন.
খালিদঃ আমি হাফিজুর রহমান হুজুরের ওয়াজ ভালোবাসি. জানেন যখন শয়তানের ধোকায় প্রবল গুনাহ করতে ইচ্ছে করে তখন আমি চরমোনাই পীর সাহেব হুজুর বা হাফিজুর রহমান হুজুরের বয়ান শুনি. বিশেষ করে জাহান্নামের বয়ান. এসব বয়ান শুনলে আর গুনাহ করতে আর মন চাই না.. আল্লাহর আযাব জাহান্নামের ভয় চলে আসে.
রিমাঃ আমি ও মাঝে মাঝে হাফিজুর রহমান হুজুরের বয়ান শুনি. আসুন আপনি না আমার কোলে মাথে রেখে ঘুমাবেন.
তারপর খালিদ রিমার কোলে মাথা রাখে.রিমা তার হাত দিয়ে খালিদের মাথার চুলগুলো আস্তে টেনে দেয়..
খালিদঃ আমি তো আপনাকে চুলগুলো টানতে বলিনাই আপনার কষ্ট হবে ভেবে.. আপনি কিভাবে বুঝলেন আমার চুলগুলো টেনে দিলে আমার ভালো লাগতো...?
রিমাঃ স্ত্রী হয়ে যদি আপনার এসব মনের কথা না বুঝতে পারি... কেমন স্ত্রী হলাম হুম...(খালিদের আস্তে নাক চেপে ধরে)
খালিদঃ আমার মনের আর কি কি বুঝেন আপনি.??
রিমাঃ অনেক কিছু বুঝি.. এখন একটু ঘুমান তো, চোখ দুটো বন্ধ করুন..
খালিদ চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে.
অপর দিকে রিমা মাওলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করে. সে জানে না মাওলা তার কোন নেক আমলের বিনিময়ে খালিদের মত এত সুন্দর ধার্মিক ছেলে কে তার বর হিসেবে নির্বাচন . খালিদ তো জেনারেল শিক্ষত.এখন পাশের এলাকায় একটা দোকান করে. কিন্তু এত কিছু সে জানল কিভাবে...? তখন মনে হলো খালিদ তো বলল সে পীর সাহেব হুজুর আর হাফিজুর রহমানের বয়ান বেশি শুনে. তখন মনে মনে রিমা ঐ হুজুরদের জন্য দোয়া করে.
অবশ্য রিমা খেয়াল করছিল খালিদের টেবিলের উপর মুজাহিদ প্রকাশনির কয়েকটি বই ফাজায়েলে তালিম, মমিনের হাতিয়ার, তাছাড়া হেমায়েত উদ্দিনের আহকামে জিন্দেগি, সহ আরো অনেক গুলো কিতাব.
ছেলেটি জেনারেল শিক্ষিত হয়েও ধর্মীয় ব্যপারে এত কিছু জানে সত্যি অবাক করার মত. এই গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রিমার চোখ থেকে ১/২ ফোটা পানি খালিদের মুখের উপর পড়ে, সাথে সাথে খালিদ চোখ খুলে দেখে রিমা কাঁদছে..
খালিদঃ কি ব্যপার আপনে কান্না করছেন কেন..?আপনার কি কোন কষ্ট হচ্ছে.??(উঠে বসতে বসতে)
রিমাঃ না. এমনে...
খালিদঃ আপনি কি আমার কোন আচরনে কষ্ট পেয়েছেন..?
রিমাঃ আরে না. কি যে বলেন..
এই নিন বালিশ, সারা রাত একটু ও ঘুমান নাই. এখন একটু ঘুমান তো. আমি বরং দেখে আসি মা( শাশুড়ি) কি করে..
এই বলে রিমা উঠে চলে যাওয়ার সময় হঠাৎ আটকে গেলো. কে যেন পিছন থেকে তার হাত ধরে রাখছে.. পিছনে ফিরে দেখে খালিদ তার হাত ধরে রাখছে.
রিমাঃ কি ব্যাপার. আমাকে যেতে দিন. মা কি করে দেখে আসি...?
খালিদঃ চলে যাচ্ছেন.???
রিমাঃ আরে আমি কি একেবারের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি. মাকে সাহায্য করতে যাচ্ছি...
খালিদঃ যাওয়ার আগে কি একটু আদর করে দেওয়া যায় না.????
তারপর রিমা খালিদের কপালে আদর করে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়. খালিদ ঘুমানোর চেষ্টা করে..
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
শিক্ষা
১) মেসওয়াক করা সুন্নত. এবং নারী পুরুষ সকলের জন্য এটা দায়েমী সুন্নত. মেসওয়াক করলে ৮০ টির বেশি ফায়দা পাওয়া যায়.
২) স্বামি স্ত্রী একে অপরের সাথে সোহার্দ্যপূর্ণ কথা বলা সুন্নত.স্বামি স্ত্রী একে অপরের দিকে তাকিয়ে যখন হাসে নবীজী সঃ বলেন আল্লাহ তাদের দিকে তাকিয়ে হাসেন.. (সুবহানাল্লাহ)
৩)প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ উপর ব্যক্তির সাথে হাসিমুখে কথা বলা. এটা সুন্নত.. মুসলমানের হাসি টাও ইবাদত
৪)স্ত্রী হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস ব্যতিত, স্ত্রীরর সাথে সকল ধরনের হাসি তামাশা, স্ত্রীর তৈরী করা রান্না খাওয়া,একই পাত্রে খাবার/পানি খাওয়া, স্ত্রী কোলে মাথে রেখে ঘুমানো ইত্যাদি করা যায়.
কুসংস্কার
অনেকে মনে করেন স্ত্রী হায়েজরত অবস্থায় স্ত্রী সাথে এক খাটে ঘুমানো যাবে না. স্ত্রীর হাতের তৈরি করা জিনিষ খাওয়া যাবে না.. ইত্যাদি কুসংস্কার... এগুলো আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে..




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.