সুন্নত জিন্দার মিশন। পর্ব ০৬
Md Abdul Kaiyum
রিমা রান্না ঘরে গিয়ে দেখে খালিদের বোন ( আয়েশা),বড় ভাবি আর উনার মা সকালের নাস্তা তৈরী করছে. আয়েশা রুটি বেলেদিচ্ছে আর খালিদের মা রুটি তা দিচ্ছে আর বড় ভাবি ডিম ভাজার জন্য পেয়াজ কাঁচামরিচ ইত্যাদি কাটছে.
রিমা প্রথমে সালাম দেয়.
খালিদের মা:ওয়ালাইকুমুসসালাম বউমা.. এসো এসো বসো. তো কেমন আছো মা...
রিমাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আপনারা কেমন আছেন মা. আব্বা কি ঘুমে.??
খালিদের মাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি, খালিদের আব্বু তো নামাজ পড়ে এসে একটু ঘুমানোর অভ্যাস আছে, তাই এখন একটু ঘুমাচ্ছে.
রিমাঃ আপু, এই দিকে দিন রুটি গুলো আমি বেলে দিই. আপনি একটু বিশ্রাম নিন.(আয়েশাকে লক্ষ করে)
আয়েশাঃআরে না ভাবি.. অনেকদিন মা বাবার খেদমত করার শুযোগ হয়নি. এখন একটু করতে দিন. আমি যাওয়ার পর না হয় আপনি করিয়েন।
খালিদের মাঃবউ মা, তুমি বরং ঐ পীড়ি টা টেনে বসো. তোমার সাথে গল্প করি..
রিমাঃ মা.. আপনি বরং এখানে বসুন. আমি ঐখানে বসি রুটি গুলো আমি তা দেখি আর সাথে সাথে কথা বলি.
খালিদের মাঃ না... মা.. যতদিন আল্লাহ সুস্থতা দিছে ততদিন একটু একটু কাজ করি.. তা ছাড়া কাজ করলে শরীর ভালো থাকে. তুমি বরং ঐখানে বসো.
রিমাঃআচ্ছা ঠিক আছে মা...
খালিদের মাঃতা মা.. আমার ছেলেকে কেমন লাগলো.??
রিমাঃ আলহামদুলিল্লাহ্. খুব ভালো
তারপর নাস্তা তৈরী করতে করতে নানা বিষয়ে কথা বলে.রিমার কাছে খালিদের ফ্যামিলির সবার কথা ভালো লাগে.যদিও রিমা জানতো খালিদের ফ্যামিলি খুব ভালো. কারন সে তার প্রথম বিয়ে হওয়ার আগে অনেক বার এই বাড়িতে রিমা এসেছিল.. তবে এত ভালো কল্পনাও করে নাই.
কথা বলতে বলতে একসময় নাস্তা বানানো শেষ হয়. এই দিকে খালিদের আব্বাও ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিজ রুমে বই পড়ে.
তারপর সবাই রান্নাঘর থেকে নাস্তা নিয়ে খাবারের রুমে আসলো.
রিমাঃ মা... আমি আব্বু আর উনাকে (খালিদ) কে ডেকে নিয়ে আসি..?
খালিদের মাঃ খালিদ তো আসবে না.. তুমি বরং খালিদের আব্বু কে ডেকে নাও
রিমাঃ কেন মা...উনি আপনাদের সাথে খাবার খান না..?
খালিদের মাঃ না... অবশ্য এর একটা কারন আছে. আস্তে আস্তে পরে জানতে পারবে.সে আমাদের খাওয়া শেষ হলে পরে এসে নিজে নিজে খায়.তুমি বরং তোমার শুশুর কে ডেকে নিয়ে এসো.
রিমার মনের ভিতর একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে. কেন উনি একসাথে খান না. অথচ উনি সমাজ পরিবর্তন করতে চায়.. কিন্তু নিজের ঘরের মানুষের সাথে একসাথে খাবার খায় না..
রিমার ব্যপার টি আয়েশা খেয়াল করে.
আয়েশাঃ আসলে কি জানেন ভাবী.. প্রতিদিন বড় ভাবী আম্মু আব্বু কে খাবার বেড়ে দেয়. এবং বড় ভাবী তাদের সাথে একসাথে খায়. ভাইয়া তো পর্দার ব্যপারে খুব সতর্ক. উনি বড় ভাবির সাথে পর্দা করে চলে.তাই বড় ভাবী যখন খাওয়া শেষ করে রুমে যায় তখন ভাইয়া এসে খায়.
বড় ভাবীঃ আচ্ছা মা.. আজ আমি না হয় আমার খাওয়া রুমে নিয়ে খাই.খালিদ ভাই এসে আপনাদের সাথে বসুক.
খালিদের মা: কিন্ত তুমি তো প্রতিদিন আমাদের সাথেই খাও.. না মা খালিদ বরং পরে আসুক.তুমি আমাদের সাথেই থাকো...
বড়ভাবীঃ মা... খালিদ ভাই প্রতিদিন আমাদের জন্য কত সেক্রিফাইজ করে আজ না হয় আমি উনার জন্য সেক্রিফাইজ করি. একদিনের জন্যেই তো..
খালিদের মা:আচ্ছা ঠিক আছে মা.কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগতাছে.
বড়ভাবীঃ কাল থেকে তো আবার একসাথে খাবো ইনশাআল্লাহ...
এই বলে বড় ভাবী উনার খাবার বেড়ে নিয়ে উনার রুমে চলে যায়.. আর রিমার উদ্দেশ্যে বলে ভাবী আপনি বরং ভাইয়াকে এখানে নিয়ে আসুন. আমি আব্বু কে ডেকে দিচ্ছি..
রিমা ঘরে গিয়ে দেখে খালিদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে বই পড়ছে.
রিমাঃ আসসালামু আলাইকুম. ঘুম থেকে কখন উঠলেন..
রিমাঃ আসসালামু আলাইকুম. ঘুম থেকে কখন উঠলেন..
খালিদঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম, এই তো কিছুক্ষণ হলো..নাস্তা করেছেন.
রিমাঃ না. নাস্তা করার জন্যই তো আপনাকে ডাকতে আসছি.চলুন একসাথে নাস্তা করবেন.
খালিদঃ আপনি বরং আম্মাদের সাথে নাস্তা করুন. আপনি হয়তো জানেন না, আমি সবার পরে নাস্তা করি.
রিমাঃ হুম জানি, এবং এটাও জানি কেন সবার পরে নাস্তা করেন. আজ আপনার জন্য বড় ভাবী সেক্রিফাইজ করেছে. আজ উনি নাস্তা নিয়ে উনার রুমে চলে গেছেন. চলুন সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করতাছে.
খালিদঃ আচ্ছা চলুন..
খালিদঃ আচ্ছা চলুন..
তারপর খালিদ আর রিমা খাবার খাওয়ার রুমে আসলো.এর মাঝে খালিদের আব্বু চলে এসেছে.ডাক্তারের পরামর্শের কারনে উনারা(খালিদের পিতা মাতা) টেবিল চেয়ারে বসে খাবার খান. কিন্তু খালিদ এসে টেবিলের পাশে খাটের উপর বসে তাতে দাস্তরখানা বিছিয়ে বসলো.কারন সে সুন্নত তরিকায় খাবার খায়..রিমা এবার সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগলো, সেও কি খাটের উপর বসবে নাকি তার শাশুড়ির পাশে চেয়ারে বসবে. খালিদ ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছে
খালিদঃ আপনি আম্মুর পাশে চেয়ারে বসুন.
রিমা গিয়ে চেয়ারে বসলো. আয়েশা সবাইকে নাস্তা বেড়ে দিলো.সবাই নাস্তা করা শেষ হলে খালিদ তার পিতার দিকে লক্ষ করে বলেন.
খালিদঃ আচ্ছা আব্বু, আগামিকাল আমাদের বাড়িতে ওলিমার ব্যবস্থা করলে কেমন হয়..?
খালিদের বাবাঃ আমিও ব্যপারটা খেয়াল করছিলাম তোকে বলব বলব ভাবছিলাম...
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
শিক্ষা
১)সালাম দেওয়া সুন্নত.সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব.ঘরের ভিতর একে অপর কে সালাম দিবে.
যতবেশি একে অপরকে সালাম দিবে ততবেশি তাদের ভিতর মহব্বত সৃষ্টি হবে.
যতবেশি একে অপরকে সালাম দিবে ততবেশি তাদের ভিতর মহব্বত সৃষ্টি হবে.
২)ভাবীর সাথে পর্দা করা ফরজ. হাদিস শরীফে আসছে দেবর মৃত্যুর সমান.
৩) সেক্রিফাইজ বা অপরকে প্রধান্য দেওয়ার চেষ্টা করুন. অপরের জন্য নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ করার মানুষিকতা তৈরী করুন. কথায় আছে ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ.
৪)দস্তরখানায় খাবার খাওয়া সুন্নত.
শরীয়ত পরিপন্থী কাজ
আমাদের দেশে মনে করা হয়. দেবর আরর ভাবীর পর্দা করা লাগেনা.এটা মারাত্মক অন্যায় এবং মারাত্মক গুনাহের কাজ. আমাদের এগুলা পরিহার করতে হবে.