মঙ্গলবার

সুন্নত জিন্দার মিশন পর্ব ০৭

সুন্নত জিন্দার মিশন পর্ব ০৭

Md Abdul Kaiyum

খালিদঃ আমার খেয়াল ছিল আমাদের পাশের এলাকার মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ৪০-৫০ জন এতিম ছাত্র আছে তাদের যদি দাওয়াত দেওয়া যায়..... কি বলেন বাবা...
খালিদের বাবাঃ তা করা যায়.. তবে বাবা.. আমরা তো সমাজে বাস করি সমাজের গন্য মান্য ব্যক্তিদের কেও তো দাওয়াত দেওয়া জরুরী.
খালিদঃ তা তো অবশ্যই, এলাকায় ধনী গরীব মিলে ১৫-২০ জনকে দাওয়াত দেওয়া যায় .. মা আপনার খেয়াল কি..??


খালিদের মাঃ আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার ব্যপারে কি ফিকির করলি..
খালিদঃ মা... আমার খেয়াল ছিল কাকা, মামা, ফুফাদের মধ্যে সকল মুরুব্বিদের দাওয়াত দেওয়া...
খালিদের মাঃ তাহলে তোর ফুফু খালা, মামি,কাকিদের ব্যপারে.???
খালিদঃ আসলে মা... এখন যদি সবাইকে একসাথে দাওয়াত দিই.তাহলে পর্দার বরখেলাফ হবে ফেতনার সৃষ্টি হবে. তাই আমার খেয়াল এখন সকল মুরুব্বিদের দাওয়াত দিই.. পরে ঘরোয়া ভাবে কাকি মামিদের দাওয়াত দেওয়া যাবে.কারন ওলীমার আয়োজন করা সুন্নত কিন্তু পর্দা ফরজ..সুন্নত আয়োজন করতে গিয়ে ফজরের সমস্যা হোক এটা আমি চাই না..
খালিদের মাঃ ঠিক আছে বাবা, তুই যেভাবে ভালো মনে করিস.. ও হ্যা... অবশ্যই বড় বউমা, ছোটো বউমার বাড়িতে দাওয়াত দিতে হবে..
খালিদঃ হুম মা, তা আমার স্মরণে আছে. আচ্ছা তোর কোন পরামর্শ দেওয়ার আছে...?(আয়েশার দিকে উদ্দেশ্য করে)
আয়েশাঃ না ভাই.. আপনারা যা পরামর্শ করছেন এটাই ভালো হচ্ছে.
খালিদঃ হযরত (আয়েশার বর) আজ না আসার কথা..?
আয়েশাঃ আজ তো শুক্রবার. উনাকে জুমা পড়াতে হবে.আজ আসবে না. কাল বিকালে এসে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে..
খালিদঃ বিকালে কেন.. উনাকে সকালেই চলে আসতে বল.. তারপর অনুষ্ঠান শেষ হলে না হয় বিকালে যাওয়ার ফিকির করিস..
আয়েশাঃ আচ্ছা উনাকে ফোন দিয়ে উনার সাথে পরামর্শ করে দেখি..ইনশাআল্লাহ
খালিদঃ আচ্ছা আমিও একটা ফোন দিবো, ও হ্যা তোর শশুর কে দাওয়াত দেওয়া যায় কিনা..
আয়েশাঃ দিলে তো ভালো হয়. তবে মনে হয় না আসবেন.. গলকাল কথা হয়েছে, ডাইবেটিস নাকি বেড়েছে.
খালিদঃ দাওয়াত দেওয়া জরুরী. শরীর ভালো থাকলে ইনশাআল্লাহ আসবে.. আপনার কি খেয়াল(রিমা কে উদ্দেশ্য করে)
রিমাঃ না.. আপনারা পরামর্শ ভিত্তিক যা মনে করেন, তাই করেন.
খালিদঃ কষ্ট করে একটা কাজ করুন. বড় ভাবীর রুমে যান.. বড় ভাবীর কোন খেয়াল/পারামর্শ আছে কিনা, উনি কাওকে দাওয়াত দিতে চাচ্ছে কিনা যদি জেনে আসতেন.?
রিমাঃ ঠিক আছে আমি যাচ্ছি..
খালিদঃও.... বলবেন বড় ভাইয়াকে ১ দিনের ছুটি নিয়ে হলেও আসতে বলতে. আমিও ফোন দিবো ইনশাআল্লাহ.
তারপর রিমা বড় ভাবীর রুমের দিকে চলে যায়...
রিমাঃ আসসালামু আলাইকুম.. ভাবী আসি...?
বড় ভাবীঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম, হ্যা ভাবী আসুন আসুন
রিমাঃ কি করেন ভাবী..
বড় ভাবীঃ এই তো বই পড়ি...
রিমাঃ কি বই এটা. নাম কি.??
বড়ভাবীঃ মহিলাদের মুক্তিরর উপায়.(মাওলানা তারিক জামিল সাহেব)
রিমাঃ ও.. যাই হোক যেটার জন্য আসছিলাম. আপনাদের ভাই আগামিকাল ওলীমার আয়োজন করতেছে.এই ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ জানতে চাইছে.
বড়ভাবীঃ হুম, এটা তো সুন্নত. করা দরকার..
রিমাঃ আপনি কাওকে দাওয়াত দিবেন কিনা সেটা জানতে চাইছে..
বড়ভাবীঃ আব্বু কে দাওয়াত দিলে ভালো হতো.. তাহলে আব্বুকেও এই সুযোগে দেখতে পেতাম.
রিমাঃহুম, আপনার আব্বুকে দাওয়াত দেওয়ার ব্যপারে উনারা কথা বলেছিলো... আর বড় ভাইয়াকে ফোন দিতেন. উনি যেন ১দিনের জন্য হলেও ছুটি নিয়া আসেন.. আর আপনাদের ভাই ও ফোন দিবে বলেছিল।
বড়ভাবীঃ ঠিক আছে, আমি ফোন দিচ্ছি. ইনশাআল্লাহ
রিমাঃ ভাবী তাহলে আসি। আসসালামু আলাইকুম
বড়ভাবীঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম
তারপর রিমা বড়ভাবীর রুম থেকে খাবার খাওয়ার রুমে আসে যেখানে তারা পরামর্শ করতেছিল..
খালিদঃ ভাবি কি বলছে..
রিমাঃ বলছে উনার আব্বুকে যদি দাওয়াত দিতেন তাহলে উনিও উনা আব্বুকে দেখার সুযোগ হতো.আর বড় ভাইয়াকে ফোন দিবে বলছে..
খালিদঃ ঠিক আছে.. তাহলে মা আমি উঠি. যাই বাবুর্চি কাকার সাথে কথা বলি, ১০০/১২০ জনের এরেজমেন্ট করতে কি কি করতে হবে কি কি লাগবে তা জেনে আসি..আসসালামু আইলাইকুম
চলবে ইনশাআল্লাহ
শিক্ষা
১)ওলিমার আয়োজন করা সুন্নত
২)কোন কাজ করতে পরামর্শ ভিত্তিক করা উত্তম.
বলা হয় যে.. মাসওয়ারা করা
আল্লাহরর হুকুম.
নবীজির সুন্নত.
মু মিনের সিফাত.
৩)সুন্নত কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যদি ফরজের সমস্যা হয়. তাহলে সুন্নত ছেড়ে দেওয়া উত্তম.
৪) কারো ঘরে বা রুমে প্রবেশ করতে সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা.
৫) যদি কোথাও বেড়াতে যাইলে তাহলে বাড়িতে নিয়মিত খোজ খবর রাখা..(আয়েশা তার শশুরের খোজ খবর নিলেন)
বিয়ের পরের দিন ও ওলিমা সংক্রান্ত কিছু তথ্য
সকালে মেহমানের সাথে সালাম করবে এবং দোয়া করবে, ওলীমা হিসেবে রুটি,গোসত,
দেখুন, ইবনু সাদ ৮/১০৭
ইমাম নাসায়ী ৬৬/৭ পৃষ্ঠা।
ওলীমা ৩দিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে এটা সুন্নাহ। বিয়ের পরের দিনেই ওলীমার জন্য দাওয়াত দেওয়া সুন্নাহ।
দেখুন বুখারী ৯/ ১৮৯-১৯৪।
ওলীমার জন্য সৎ ব্যক্তিদের দাওয়াত করা হোক সে ধনী কিংবা গরীব
রসুলুল্লাহ সা বলেন তুমি শুধুমাত্র মুমিন ব্যক্তির সাথী হবে এবং শুধুমাত্র আল্লাহভীরুরা তোমার খাদ্য খাবে। দেখুন আবু দাঊদ,তিরমিযি, হাকিম, ৪/১২৮.
গোস্ত ছাড়াও ওলীমা জায়েজ। বুখারী ৭/১৯২. মুসলিম ৪/১৪৯!
নিজের মাল দ্বারা ওলীমায় শরীক হওয়া সুন্নাহ। বুখারি ৭/৩৮৭.
শুধুমাত্র ধনীদেরকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হারাম।
দেখুন মুসলিম ৪/১৫৪
বায়হাকী ৭/২৬২.
ওলীমার দাওয়াতে যাওয়া ওয়াজিব।
তোমাদের কাউকে যদি ওলীমাতে দাওয়াত দেয়া হয় সে যেন তাতে আসে,যে ব্যক্তি দাওয়াতে গেল না সে আল্লাহ এবং রসুলের অবাধ্য হল। দেখুন বুখারী ৯/১৯৮
(বি ঃ দ্র ঃ গোনাহের আশংকা থাকলে না যাওয়াতে দোষের নয় বরং উত্তম)
(বিঃদ্রঃকোন ভুল বা কোন কথা সন্দেহপ্রবণ হলে অবশ্যই জানাবেন ইনশাআল্লাহ ঠিক করে নিবো)

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.