সুন্নত জিন্দার মিশন পর্ব ০৮Md Abdul Kaiyum
খালিদ সালাম দিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়.খালিদের বাবা সালামের জবাব দিয়ে স্থানীয় বাজারে হাটতে বের হোন.বড় ভাবি ইতিমধ্যে খাবারের রুমে এসে দেখে আয়েশা চায়ের কাপ, প্লেট ইত্যাদি ধৌত করে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখছে..
বড়ভাবীঃ আপা.... আমি তো আসতাছি...আপনি কষ্ট করতাছেন কেন.?? এই দিকে দিন আমি রাখি..
আয়েশাঃ আরে কিচ্ছু হবে না ভাবী. আমি রাখছি, আপনি বরং মাকে জিজ্ঞেস করুন আজ দুপুরের জন্য কি রান্না করতে হবে..
বড় ভাবীঃ ঠিক আছে আমি তাহলে জিজ্ঞেস করে আছি..
বড়ভাবী তার শাশুড়ির রুমের দিলে চলে যায়...
রিমাঃ আপা একটা কথা বলি...
আয়েশাঃ আরে ভাবি একটা কেন হাজার টা বলুন..
রিমাঃ সকালে আব্বা আর বড়ভাবীর রুমে গেলাম. দেখলাম দুজনেই বই পড়তেছে.. আপনাদের বাড়ির সকলেই কি সব সময় বই
পড়ে..?
পড়ে..?
আয়েশাঃ আরে ভাবি.... আপনাদের বাড়ি বলতাছেন কেন..?? বলুন আমাদের বাড়ি. মেয়েদের বিয়ের পর স্বামির বাড়ি হলো মেয়েদের সব চেয়ে আপন বাড়ি..
"""মেয়েরা শশুরবাড়িকে নিজের যত আপন বাড়ি ভাববে.শশুর বাড়ির মানুষ গুলো তত মেয়েদের আপন করে নিবে"""
এই কথা গুলো খালিদ ভাই আমার বিয়ের সময় আমাকে নসীহত করেছে..আমি ও আল্লাহর রহমতে তা পালন করার চেষ্টা করেছি.. তাই তো এখন আমি আমার শশুর বাড়ি তে শুধু তাদের পুত্রবধূ নই. শশুর শাশুড়ির একটা কলিজার টুকরা.
রিমাঃ আপা... আমিও এই বাড়ির কলিজার টুকরা হতে চাই।
আয়েশাঃ আমিও চাই আপনিও বড় ভাবির মত এই বাড়ির সকলের কলিজার টুকরা হয়ে উঠুন।আর হ্যাঁ.... বইয়ের কথা বলছিলেন না.এই বাড়িতে যে যখন ঈ সময় পায়, তখনঈ বই পড়ে বা মোবাইলে ওয়াজ শুনে. এখন কেউ আর টিভি দেখে না.
রিমাঃ টিভি এভাবে ফেলে না রেখে কাওকে তো দিয়া দিতে পারে..
আয়েশাঃ আম্মু চাইছিল একজন কে দিয়া দিত, কিন্তু
খালিদ ভাইয়ের কথা হচ্ছে ওকে এটা দেওয়া মানে গুনাহের কাজে সাহায্য করা. ঐ ব্যক্তি টিভিতে যত নাচ দেখবে তত গুনাহের ভাগ আমাদের ভাগেও আসবে. তাই টিভি এভাবে পড়ে রয়েছে.
খালিদ ভাইয়ের কথা হচ্ছে ওকে এটা দেওয়া মানে গুনাহের কাজে সাহায্য করা. ঐ ব্যক্তি টিভিতে যত নাচ দেখবে তত গুনাহের ভাগ আমাদের ভাগেও আসবে. তাই টিভি এভাবে পড়ে রয়েছে.
রিমাঃ ৩-৪ বছর আগেও এই বাড়ি ছিল অন্যান্য ৮/১০ টা বাড়ির মত. হঠাৎ এই কয়েক বছরে কিভাবে এত পরিবর্তন..?
আয়েশাঃ হঠাৎ নয় ভাবী.... আপনি যে এই ফ্যামিলিকে এত সাজানো গোছানো দেখতাছেন তা এমনি এমনি হয় নি... এর পিছনে রয়েছে খালিদ ভাইয়ের শ্রম,ত্যাগ,কুরবানি, আর চোখের পানি. কত রাত যে ভাইয়া তাহাজ্জুদের বিচানায় চোখের পানি ফেলেছেন তার হিসাব নেই. আল্লহর মেহেরবানীতে এই বাড়ি এখন কত সাজানো গোছানো.আলহামদুলিল্লাহ্..
এর মধ্যে বড়ভাবি চলে এসেছেন এবং রিমা আর আয়েশার কথা শুনতেছিলেন.. আয়েশার কথা যখন শেষ হয় তখন রিমা কে উদ্দেশ্য করে বড় ভাবি বলতে থাকেন
বড়ভাবীঃ জানেন ভাবি. খালিদ ভাই যখন হোষ্টেল থেকে এসে আমার সাথে পর্দা শুরু করে এবং আমাদের কে বলা শুরু করে এই করা যাবেনা, সেই করা যাবে না, তখন আমার খুব খারাপ লাগে. একদিন আমি আবু বক্কর আব্বুর (আবু বক্কর= বড়ভাবীর বড় ছেলে) সাথে খালিদ ভাইয়ের এসব আচরণ নিয়া ঝগড়া করি.পরে রিফাতের আব্বু আম্মাকে ব্যপার জানাইলে আম্মা একদিন খালিদ ভাইকে বাড়ি থেকে বাহির করে দেয়.. উনি ২ দিন বাড়িতে ছিলেন না,, মসজিদের মুয়াজ্জিনের সাথে ২ দিন মুয়াজ্জিন সাহেবের রুমে ছিলেন. পরে আম্মু আবার খবর দিয়ে বাড়িতে নিয়া আসেন.. তারপরেও খালিদ ভাই উনার আচরণ থেকে পিছ পা হোন নি, আবার আমার সাথে পর্দা করে, এই করা যাবে না, সেই করা যাবেনা. পরে আমরা উনাকে কোন গুরুত্ব দিতাম না, উনি উনারর মত চলতো..
একদিন রাতে আম্মা হঠাৎ টয়লেট যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠে, টয়লেটে যাওয়ার সময় আম্মা খেয়াল করলেন খালিদ ভাই যেন কান্না করতাছেন. আম্মা খালিদ ভাইয়ের রুমের দিকে চলে গেলেন. অন্যদিন উনার রুমের দরজাবন্ধ থাকলেও ঐদিন কেন জানি দরজা খোলা ছিল.(আল্লাহ চাইছেন তাই হইতো) আম্মা রুমের ভিতরে চলে গেলেন. গিয়ে দেখলেন খালিদ ভাই (কান্না কন্ঠে) আমাদের সকলের নাম ধরে ধরে হেদায়েতের জন্য দোয়া করছেন. আর কান্না করছেন. ঐ ঘঠনা আম্মা দেখে আম্মা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে খালিদ ভাইকে জাড়িয়ে ধরে উনিও কান্না শুরু করে দেয়..যদিও ঐ রাতের ঘটনা আমি আর রিফাতের আব্বু জানতাম না. পরে একদিন আমাকে আর রিফাতের আব্বুকে আম্মা উনার ঘরে ডেকে নিয়ে ঐ রাতের ঘঠনা খুলে বলেন. তখন থেকে আমাদের পরিবর্তন শুরু.
জানেন ভাবি আমার কারনে খালিদ ভাইকে আম্মা ঘর থেকে বাহির করে দেয়. অথচ খালিদ ভাই আমার উপর কোন রাগ বা কষ্ট নেন নি. বরং যখন শুনেছে আমরাও পরিবর্তন হতে চায়..তখন উনি খুশি হয়ে আমাকে অনেক গুলো ইসলামক বই আর একটি মেমরি কার্ড হাদিয়া দেন. যাতে বাংলাদেশের বড় বড় ওলামায়ে কেরামের ওয়াজ লোড করা ছিল. উনার ইচ্ছা আর আল্লাহর দয়াতে আমার ২টি ছেলে আবু বক্কর আর উমর এখন হেফজখানায় পড়তাছে আলহামদুলিল্লাহ্...
জানেন ভাবি... আপনার খুব ভাগ্য ভালো যে খালিদ ভাইয়ের মত একটা ছেলে কে জীবনসাথী হিসেবে পেয়েছেন. আমিও মাওলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ আমাকে খালিদ ভাইয়ের মত একটা ভালো মানুষকে আমার ভাই(দেবর)হিসেবে এক নেয়ামত দিয়েছে..
আয়েশাঃ জানেন ভাবি.. আল্লাহর দোয়া ও ভাইয়ার ইচ্ছাতেই আমার আলেমের ফ্যামিলিতে বিবাহ হয়েছে. যদিও প্রথমে আব্বা আম্মা রাজি ছিল না, কারণ আমার শশুর বাড়ির আর্থিক অবস্থা এত ভালো না.কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ ঐ বাড়িতে যাওয়ার পর বুঝলাম আল্লাহরর রহমত আর বরকত কাহাকে বলে. উনার অল্প ইনকামেও আমাদের সংসার সুন্দর ভাবে চলে যায়.কখনো কোন অভাব গায়ে লাগেনা.আমার সকল চাহিদা উনি পূরন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন.
এসব আলোচনা করতে করতে তিন জনের চোখ থেকে অনবরত পানি পড়তে থাকে.
হঠাৎ সামনের দরজা থেকে সালাম উচ্চারণ.. বুঝতে বাকি রইল না খালিদ এসেছে.. রিমা আর আয়েশা দরজা খুলতে সামনেত রুমের দিকে গেলো..
চলবে ইনশাআল্লাহ
শিক্ষা
১) অহেতুক গল্পগুজব না করে বই পড়ার অভ্যাস করুন
২) গান বাজনা হারাম কাজে সাহায্য করা উচিৎ নয়
৩)শশুর বাড়িকে নিজের আপন বাড়ি মনে করুন. শশুর বাড়ির মানুষ গুলোকে নিজের আপন মানুষ মনে করুন.এবং তাদের সাথে আপন মানুষের মত আচরণ করুন.দেখিবেন ইনশাআল্লাহ আপনি ঐবাড়ির শুধু পুত্রবধূ না ঐ বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাবেন. (যেমন টা আয়েশা তার শশুরবাড়ির কলিজার টুকরা হয়েছেন)
৪)কোন কাজ বা রান্নাবান্না করার আগে শাশুড়ির সাথে পরামর্শ করে নিবেন
৫)বিবাহ করার সময় পাত্র নির্বাচনে পাত্রের অর্থিক অবস্থান নয় পাত্রের ধার্মিকতারর অবস্থান যাচাই করুন.
৬) জাহিলি সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে গেলে নানাধিক থেকে বাধা আসবে, এমন কি পরিবার থেকেও বাধা আসতে পারে.হতাস না হয়ে হিম্মতের সাথে সামনে এগিয়ে চলুন.নামাজের পর আল্লাহরর কাছে কান্নাকাটি করুন.
৪)কোন কাজ বা রান্নাবান্না করার আগে শাশুড়ির সাথে পরামর্শ করে নিবেন
৫)বিবাহ করার সময় পাত্র নির্বাচনে পাত্রের অর্থিক অবস্থান নয় পাত্রের ধার্মিকতারর অবস্থান যাচাই করুন.
৬) জাহিলি সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে গেলে নানাধিক থেকে বাধা আসবে, এমন কি পরিবার থেকেও বাধা আসতে পারে.হতাস না হয়ে হিম্মতের সাথে সামনে এগিয়ে চলুন.নামাজের পর আল্লাহরর কাছে কান্নাকাটি করুন.