মঙ্গলবার

সুন্নত জিন্দার মিশন । পর্ব ০৯ । Md Abdul Kaiyum

সুন্নত জিন্দার মিশন পর্ব ০৯
Md Abdul Kaiyum

দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় খালিদ আবার সালাম দেয়
খালিদঃ আসসালামু আইলাইকুম
আয়েশা :ওয়ালাইকুমুসসালাম (দরজা খুলতে খুলতে)
দরজা খুলে আয়েশা দেখে যে খালিদের দুইহাতে ২টি বাজারের ব্যাগ নিয়ে হাজির।খালিদের পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে।
আয়েশাঃ ভাইয়া.... দাও দাও আমার হাতে দাও।

এই বলে আয়েশা খালিদের হাত থেকে বাজারের ব্যাগ ২টা তার হাতে নিয়া নেয়.রিমা তারাতারি খালিদের সামনে গিয়ে তার জামার ওড়না দিয়ে খালিদের মুখ মুছে দিবে এই মুহুর্তে আয়েশা পাশে দাড়িয়ে আছে এটা মনে পড়ে রিমা দাড়িয়ে যায়.একটু লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।আয়েশা মুচকি হেসে বাজারের ব্যাগ নিয়ে সোজা ভিতরের রুমে চলে যাচ্ছে।রিমাও মাথা নিচু করে আয়েশার পিছনে পিছনে হাঠা শুরু করতে যাবে তখনি খলিদ হাত ধরে ফেলে।
খালিদঃ কি.....মুছে দিবেন না????
রিমা পিছনে তাকিয়ে দেখে আয়েশাকে দেখা যায় কিনা.আয়েশা অন্য রুমে চলে গেলে রিমা তার ওড়না দিয়ে খালিদের কপালসহ সমস্ত মুখমণ্ডল মুছে দেয়।খালিদ এক অন্য রকম সুখ অনুভব করে।তার কাছে মনে হচ্ছে সে জান্নাতের সুখ অনুভব করছে।সে ভুলেই গেছে কিছুক্ষণ আগে যে তার উপর স্টিম রোলার গেছে।
রিমাঃ অনেক দখল গেছে.চলুন রুমে চলুন একটু বিশ্রাম নিবেন. আমি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসছি।
খালিদঃ আমি ঠান্ডা পানি খাই না.ঠান্ডা পানি খেলে আমার গলায় সমস্যা হয়।
রিমাঃ আচ্ছা তাহলে নরমাল পানি নিয়ে আসছি।
খালিদঃ ঠিক আছে।
রিমা খাবারের রুমে চলে যায় আর খালিদ তাদের রুমে চলে যায়. কিছুক্ষণ পর রিমা লেবুর শরবত নিয়ে রুমে এসে দেখে খালিদ খাটের উপর বসে আছে. বিদ্যুৎ না থাকায় সে হাতপাখা ঘুরাচ্ছে।
রিমাঃ এই নিন লেবুর শরবত. হাতপাখা এই দিকে দিন।
খালিদঃ না থাক আমি পারবো।
রিমাঃএই দিকে দিন আপনি অনেক ক্লান্ত।
খালিদঃ জাযাকুমুল্লাহ. আমি তো নরমাল পানি আনতে বলছিলাম.??
রিমাঃ আয়েশা আপা বলছে আপনি নাকি লেবুর শরবত পছন্দ করেন তাই. খেয়ে নিন।
খালিদ ঃ ডান হাতে গ্লাস নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে ৩ শ্বাসে গ্লাসের অর্ধেক শরবত পান করে। মাওলার শোকর আদায় করে
খালিদঃ"আলহামদুলিল্লাহ্‌ " এই নিন. বাকীগুলো আপনি পান করে নিন।
রিমাঃ আরে...আপনি অনেক কষ্ট করেছেন. আপনি খেয়ে পেলুন.
খালিদঃ স্বামি স্ত্রী একসাথে খেলে আল্লাহ বরকত দিবেন।আপনি যখন আপনার ওড়নার আচল দিয়ে আমার মুখ মুচে দিছেন. তখনই আমার সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই চলে গেছে. এই গুলো আপনি খেয়ে নিন।
খালিদ গ্লাসের যে অংশে মুখ লাগিয়ে শরবত পান করেছিল রিমাও গ্লাসের ঐ অংশে মুখ লাগিয়ে শরবত পান করে আল্লাহর শোকর আদায় করে।
রিমাঃ সবাইকে কি দাওয়াত দেওয়া শেষ.???
খালিদঃ "আলহামদুলিল্লাহ্‌ " মোটামুটি সবাইকেই দাওয়াত দেওয়া হলো. আপনাদের বাড়ি, আয়েশার শশুরবাড়ির, বড়ভাবিদের বাড়ি সবাইকে দেওয়া হয়ে গেলো আর নামাজ পড়তে গেলে বন্ধু কয়েকটাকে বলে দিব ইনশাআল্লাহ।
রিমাঃ আজ তো জুমাবার. তারাতারি গোসল করে নিন. সুরা কাহফ পড়বেন না?? জুমার দিনের বিশেষ আমল. দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাচার আমল।
খালিদঃ হুম. গোসল করে এসে মসজিদে যাওয়ার আগেই পড়ি. আপনি গোসল করেছেন??
রিমাঃ না।
খালিদঃ ও. আপনার তো জামা ই নাই. আচ্ছা বিকালে নিয়ে আসবো "ইনশাআল্লাহ " আপনার কি ধরনের জামা পছন্দ.??
রিমাঃ আচ্ছা জামার কথা পরে দেখা যাবে. আগে তারাতরি গোসল করে নিন. আযান দেওয়ার সময় তো হয়ে গেছে. সুরা কাহফ পড়বেন কখন.??
খালিদঃ আচ্ছা যাচ্ছি।
রিমাঃ আপনার ফোন টা যদি দিতেন. বাড়িতে ফোন দিতাম.আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলতাম।
খালিদঃ হ্যা নিশ্চয়. এই নিন।
খালিদ রিমার হাতে মোবাইল দিয়ে গোসল করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে যায়..
১৫-২০ মিনিট পর খালিদ গোসল শেষ করে আসে। ততক্ষনে রিমার কথা শেষ হয়ে যায়।
রিমাঃ আসছেন.. কই আপনার কাপড় গুলা দিন. আমি রোদে শুকাতে দিয়ে আসি।
খালিদঃ আপনার কষ্ট করতে হবে না আমি আসার সময় দিয়ে আসছি. আপনি কিন্তু বললেন না কি ধরনের জামা পছন্দ..?
রিমাঃ আপাতত জামা লাগবে না আব্বুকে বলে দিছি আগামিকাল এই বাড়ি আসতে আমার সব জামা একটা ব্যাগে করে নিয়ে আসতে।
খালিদঃ এটি কি বলেন... আপনার জন্য জামার ব্যবস্থা তো করা আমার কাজ. আপনার সব কিছুর দায়িত্ব আমি নিছি।
রিমাঃ হুম. আমি কি বলছি আমার দায়িত্ব অন্য কেহ নিচে। আপনার এই কয়েক দিনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে।আর আমার জন্য জামার কিনে বাড়তি খরচ করার দরকার নেই।তাছাড়া ঐ জামা গুলো ঐবাড়িতে পড়ে থাকার কোন মানে হয়।
খালিদঃ তারপরেও আব্বা (শশুর) আবার কি ভাববে।
রিমাঃ কিচ্ছু ভাববে না.আব্বুকে সব বুঝিয়ে বলছি। আপনি সুর কাহফ পড়ুন। আমি আপুরা কি করে দেখে আসি
খালিদঃ ঠিক আছে.
রিমা খাবারের রুমে গিয়ে আয়েশা আর বড় ভাবির সাথে বিভিন্ন কথা বলে আর তাদের কে মাঝে মাঝে কাজে সাহায্য করে।যদিও আয়েশা আর বাড়ভাবি বার বার নিষেধ করে.
আয়েশা: ভাবি... আযান দিয়া দিছে ভাইয়া এখন মসজিদে যাবে আপনি বরং দেখে আসুন ভাইয়ার কিছু লাগবে কিনা.ভাইয়া চলে গেলে আমরা একজন একজন করে গোসল করে নিবো ইনশাআল্লাহ.আজ এমনেও অনেক দেরী হয়ে গেছে.
রিমাঃ ঠিক আছে আপা
রিমার ঘরে এসে দেখে খালিদ সুরা কাহফ পড়া শেষ করে এখন পাঞ্জাবি পড়তেছে. খালিদ ডান হাত ডুকিয়ে তারপর বাম হাত ডুকিয়ে পাঞ্জাবি পড়তাছে রিমা তার সামনে গিয়ে দাড়ায়.. যখন খালিদ মাথা ডুকানো শেষ হলো রিমা তার হাত দিয়ে পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো লাগিয়ে দেয় এবং ভাজ পড়ে থাকা বিভিন্ন অংশ সোজা করে দেয়.খালিদ কিছু না বলে রিমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
রিমাঃ কি দেখছেন.?
খালিদঃ আপনাকে
রিমাঃ আমাকে দেখার কি আছে
খালিদঃ আপনি মানবী নন.. আমার মনে হচ্ছে আপনি জান্নাতের একটা হুর।
রিমাঃ কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচে করে ফেলে. তারপর টেবিল থেকে টুপি নিয়ে খালিদের মাথা থেকে পড়িয়ে দেয়.
খালিদঃ পাগড়ি লাগিয়ে দিবেন না..? নাকি পারেন না.?
রিমাঃ পারি, ছোট ভাইকে মাদ্রসায় যাওয়ার সময় প্রায় লাগিয়ে দিতে হয়.
তারপর রিমা পাগড়ি পাড়িয়ে দেয়..খুব সুন্দর দেখাচ্ছে খালিদ কে. চোখে সুরমা লাগানোর কারনে এত সুন্দর লাগছে যে রিমা অনেকক্ষন খালিদের দিকে তাকিয়ে থাকে.
খালিদ ও রিমার দিকে তাকিয়ে থাকে. কিছুক্ষণ পর রিমার হুশ আসে।
রিমাঃ এভাবে তাকিয়ে থাকলে নামাজ পড়তে যাবেন কখন. তারাতারি যান.আপারা আমার জন্য অপেক্ষা করতাছে. গোসল করতে হবে
খালিদঃ গোসল করবেন.?কিন্তু জামা??
রিমাঃ বড় ভাবি উনার একটা নতুন জামা আমাকে হাদিয়া দিবেন বলছিলেন.
খালিদঃ ও আচ্ছা তাহলে আমি যাই. ও আতর লাগিয়ে নি।
তারপর খালিদ আতর লাগায়..
খালিদঃ জানেন??
রিমাঃ কি.?
খালিদঃ মাঝে মাঝে নবীজি সঃ মসজিদে যাওয়ার আগে আয়েশা রাঃ কে চুমু দিতেন. এটা সুন্নত। আমি ওএই সুন্নত আদায় করতে চাই...
এই বলে রিমা কিছু বুঝে উঠার আগেই খালিদ রিমার কপালে চুমু খেয়ে দৌড দেয়..
রিমাঃ এই সাবধানে.......... ফি আমানিল্লাহ
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
শিক্ষা
১) স্বামি বাহিরের থেকে আসলে নিজের ওড়না বা অন্য তোয়ালে দিয়ে তার মুখ মুছিয়ে দেওয়া উচিত। তবে নিজের ওড়না দিয়ে মুছে দিলে মহব্বত বেশি হয়।
২) স্বামি বাহিরের থেকে আসলে তার জন্য ঠান্ডা পানি / শরবত ইত্যাদি ব্যবস্থা করা উচিত।
৩) তার গোসল কিংবা মুখ ধৌত করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ব্যবস্থা করা।(সাবান,গামছা,পানি)
৪)স্বামি গ্লাসের যে অংশে পানি খায় ঐ অংশে পানি খেলে মহব্বত বৃদ্ধি পায়. স্বামীরও উচিত স্ত্রী মুখ লাগালো অংশে মুখ লাগিয়ে পানি খাওয়া।
৫) যে কোন খাবার স্বামি স্ত্রী ভাগ করে খাওয়া উচিত।এতে আন্তরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
৬)স্বামির আয় ব্যয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের চাহিদা কথা বলা. এমন কিছুর আবধার না করা যাতে স্বামীর তা পূরণ করতে কষ্ট হয় বা অন্যায়ের আশ্রয় নেয়।
৭) জামা গায়ে দিতে ডান হাত আগে পড়া সুন্নত।
৮) পানি খাওয়া কয়েকটি সুন্নত
১) *পানির পেয়ালা দান হাত দিয়ে ধরা। - মুসলিম হা: নং ২০২০
২) *বসে পানি পান করা। -মুসলিম হা নং ২০২৪
৩) *বিসমিল্লাহ বলে পানি পান করা এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা।- তাবারানী হা নং ৬৪৫২
৪) *কমপক্ষে তিন শ্বাসে পান করা এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পানির পাত্র সরিয়ে রাখা। -বুখারী হা নং ৫৬৩১
৫) *পাত্র যদি এমন হয় যে ভিতরে দেখা যায় না তবে মুখ লাগিয়ে পানি পান না করা কেননা ভিতরে বিষাক্ত প্রাণী থাকতে পারে। -বুখারী হা নং ৫৬২৬
৬) *যে ব্যক্তি পান করাবে সে সবার শেষে পান করবে। -মুসলিম ৬৮১।
৭) পানি খাওয়া কয়েকটি সুন্নত
১) *পানির পেয়ালা দান হাত দিয়ে ধরা। - মুসলিম হা: নং ২০২০
২) *বসে পানি পান করা। -মুসলিম হা নং ২০২৪
৩) *বিসমিল্লাহ বলে পানি পান করা এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা।- তাবারানী হা নং ৬৪৫২
৪) *কমপক্ষে তিন শ্বাসে পান করা এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পানির পাত্র সরিয়ে রাখা। -বুখারী হা নং ৫৬৩১
৫) *পাত্র যদি এমন হয় যে ভিতরে দেখা যায় না তবে মুখ লাগিয়ে পানি পান না করা কেননা ভিতরে বিষাক্ত প্রাণী থাকতে পারে। -বুখারী হা নং ৫৬২৬
৬) *যে ব্যক্তি পান করাবে সে সবার শেষে পান করবে। -মুসলিম ৬৮১
জুমআর দিনের বিশেষ আমল
=====================
১. জুমু‘আর দিনে ৬টি বিশেষ আমল
ক. জুমু‘আর নামাযের উদ্দেশ্যে গোসল করা।
খ. আযানের পূর্বেই মসজিদে রওনা হওয়া।
গ. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
ঘ. ঈমাম সাহেবের কাছাকাছি বসা অর্থাৎ, স্থান পেলে ১ম কাতারে নতুবা ২য় কাতারে বসা।
ঙ. উভয় খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনা।
চ. খুতবার সময় কোন কথা বা কাজ না করা। ফায়দাঃ প্রত্যেক কদমে ১ বৎসর পর্যন্ত নফল রোযা রাখার ও ১ বৎসর নফল নামায পড়ার সাওয়াব পাওয়া যাবে। (তিরমিযী হাদীস নং:৪৯২)
জুমু‘আর দিনের অন্যান্য আমল
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
২. সূরা কাহাফ পড়া। (কমপক্ষে ১০ আয়াত) (মুসলিম হাদীস নং ৮০৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর-৩/৭৯) ফায়দাঃ দাজ্জালের ফিতনা হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
৩. সালাতুত তাসবীহ নামায পড়া। রাকা‘আতঃ এক সাথে ৪ রাকা‘আত অথবা, ২,২ রাকা‘আত করে পড়া।(আবু দাঊদ হাদীস নং ১২৯৭) ফায়দাঃ সকল প্রকার গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায়।
৪. উত্তম পোশাক ও খুশবু লাগিয়ে নামাযে আসা। (বুখারী হাদীস নং ৮৮৩, ৮৮৬) * খুশবু ব্যবহারে নিম্নোক্ত নিয়্যত করবে । * এটা হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত। * আমাদের শরীরের ঘামের গন্ধ হতে যাতে অন্যদের কষ্ট না হয়। * মুসলমান ভাইদের অন্তর খুশি করা। * হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন –“যারা গরীব, খুশবু কেনার টাকা নেই, তাদের জন্য গোসল হচ্ছে খুশবু।”
৫. দুই খুতবার মাঝে যখন ঈমাম সাহেব বসে তখন অন্তরে দু‘আ করা, মুখে নয়। (তিরমিযী হাদীস নং ৫২৮) ফায়দাঃ এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার ওয়াদা রয়েছে।
৬. আছরের পর ৮০ বার এই দুরুদ শরীফ পড়া- গুনাহ না থাকে
৮. এ দিনে অন্য দিনের তুলনায় বেশী দুরূদ পড়া। (আবু দাউদ হাদীস নং ১০৪৭)

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.