শুক্রবার

বিবাহের মোহরানা কত দিতে হয়? স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যঃ


স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যঃ
বিবাহের মোহরানা কত দিতে হয়? স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যঃ


#১_সম্মান_প্রদর্শনঃ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন নারীদের অপেক্ষা পুরুষদের অধিক মর্যাদা ও সম্মান দান করেছেন। সে কারণে নারীরা পুরুষদেরকে সম্মান প্রদর্শন করবে এবং তাদেরকে মান্য করবে। এ মর্মে আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ
পুরুষগণ নারীদের ওপর কর্তৃতব করবে। কেননা, আল্লাহ্‌ তাদের একজনকে
অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (আন-নিসাঃ ৩৪)
আর পুরুষগণের জন্য তাদের (নারীদের) ওপর মর্যাদা রয়েছে। (আল-বাকারাঃ ২২৮)
#২_তত্ত্বাবধানঃ পুরুষ গৃহের কর্তা আর নারী গৃহের কর্ত্রী। অতএব, স্ত্রী স্বামীর তত্ত্বাবধান করবে, সন্তানগণের দেখাশুনা করবে এবং স্বামীর পরিবারবর্গকে হিফাজত করবে। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী। (বুখারী, মুসলিম)
#৩_আনুগত্য_স্বীকারঃ  স্ত্রী সর্বদা স্বামীর আনুগত্য স্বীকার করবে এবং তার হক আদায় করবে। স্বামীর নির্দেশ মোতাবেক চলাফেরা করবে। সর্বদা স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করবে। স্বামীর হক আদায় না করলে আল্লাহ্‌র হক আদায় হবে না। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
যার হাতে মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবন, তাঁর কসম করে বলতেছি যে, স্ত্রীলোক তাঁর স্বামীর হক
আদায় না করা পর্যন্ত তাঁর প্রভুর হক আদায় করতে পারে না। (হাযযায)
#৪_সতীত্ব_রক্ষাঃ স্ত্রী সর্বাবস্থায় তাঁর সতীত্ব রক্ষা করবে। একজন পুরুষ সর্ব্দা একজন চরিত্রবতী মহিলাকে বিবাহ করে। সুতরাং বিবাহের পর স্ত্রী সর্বদা তাঁর চরিত্র ও সতীত্ব হিফাজত করবে। স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রী তার চরিত্রকে সর্বতোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করবে। তাহলে স্বামী তাঁর উপর খুশি থাকবে। এ মর্মে আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ
সতীসাধ্বী রমনীগণ স্বামীদের অনুগত হয়। স্বামীদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহ্‌ যা হিফাজত করতে

আদেশ করেছেন্‌ তা সে হিফাজত করে। অর্থাৎ সে সংযত থাকবে। (আন-নিসাঃ ৩৪)
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
যদি স্বামী তাঁর স্ত্রীর নিকট হতে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে সে আন্তরিকতার সাথে
তাঁর আত্মাকে (সতীত্বকে) হিফাজত করবে। (ইবনে মাজা)

#৫_অনুমতি_গ্রহণঃ  স্বামী ব্যতীত ভিন্ন পুরুষের সাথে অর্থাৎ যাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা ও কথাবার্তা বলা হারাম, তাদের সাথে বিনা প্রয়োজনে বা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কথাবার্তা বলবে না। স্বামীর অনুপস্থিতিতে বিশেষ প্রয়োজনে ভিন্ন পুরুষের সাথে কথা বলবার সময় অতি সংক্ষেপে কথা বলবে। স্ত্রী মৃদু মিষ্টি স্বরে বা হাসি ঠাট্টা তামাসার সুরে ভিন্ন পুরুষের সাথে কথা বলবে না। কারণ, এতে আগন্তুক পুরুষ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর সতীত্ব হরণ করতে পারে। সে কারনে স্বাভাবিক অত্যন্ত সংক্ষেপে কথা বলবে। যেমন নবীর স্ত্রীগণকে সতর্ক করে আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ
যদি তোমরা আল্লাহ-ভীরু (রমণী) হও, তাহলে নরম সুরে (অন্য লোকের সাথে) কথা বলিও না। কেননা, যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে লোভ করতে পারে। অতএব, বিধিসম্মত সুন্দর কথা বলো। (আহযাবঃ ৩২)

#৬ধন_সম্পদ_হিফাযতঃ যদি স্বামী স্ত্রীর নিকট হতে দূরে অন্য কোথাও থাকে তাহলে স্ত্রী স্বামীর ধন-সম্পদ ও অন্যান্য সব কিছু হিফাজত করবে। কারণ, স্বামীর ধন-সম্পদ স্ত্রীর নিকট আমানত স্বরূপ। তবে স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রী স্বামীর ধন-সম্পদের কোন কিছু খরচ করতে পারবে না। আর যদি অত্যন্ত প্রয়োজনে কোন কিছু খরচ করে তাহলে যথাশীঘ্র স্বামীকে জানাতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
যদি স্বামী তাঁর নিকট হতে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে স্ত্রী স্বামীর সবকিছু হিফাজত করবে। (আবু দাউদ)
স্ত্রী তাঁর স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তাঁর স্বামীর ঘরের কোন কিছু খরচ করতে পারবে না। (তিরমিযী)

#৭_পর্দা_গ্রহনঃ নারীরা গৃহের সৌন্দর্য। সে কারণে তারা গৃহে অবস্থান করে গৃহের শ্রীবৃদ্ধি করবে। তবে প্রয়োজনবোধে তারা ইসলামী পর্দা মোতাবেক সংযত হয়ে বাইরে যেতে পারে। এ মর্মে আল্লাহ্‌ তা-আলা ইরশাদ  করেছেনঃ
আর তোমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান কর। তোমরা আগেকার বর্বতার যুগে (মহিলাদের) সাজ-গোজের
ন্যায় সাজ-গোজ করো না। (আল-আহযাবঃ ৩৩)

#৮_সুখ_দুঃখের_ভাগীঃ স্ত্রী স্বামীর প্রতি রাগ করবে না। স্বামীর খুশিতে খুশি এবং স্বামীর দুঃখে দুঃখী হতে হবে। স্বামী তাকে যা কিছু প্রদান করে, তাতে তাঁর খুশি থাকতে হবে। স্বামীর পছন্দসই কাজের জন্য সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

#৯_আহ্বানে_সাড়া_প্রদানঃ স্বামী স্বীয় প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকলে স্ত্রী স্বামীর ডাকে অবশ্যই সাড়া দেবে। এমন কি যদি স্ত্রী কোন জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকে তবুও স্বামীর আহ্বানে সাড়া দেয়া অত্যাবশ্যক। রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ
যখন স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজনে আহ্বান জানায় তখন তার আসা অত্যাবশ্যক। যদিও সে চুলায়
রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে। (তিরমিযী)

#১০_স্বামীর_গৃহ_ত্যাগ_না_করাঃ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক। যদি কোন সময় কোন কারণে অকারণে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ সংঘটিত হয় তাহলে স্ত্রী ধৈর্যের সাথে ঝগড়া বিবাদ এড়িয়ে চলবে এবং সুযোগ সাপেক্ষ স্বামীকে বুঝবে। এমতাবস্থায় রাগবশত স্বামীর গৃহ ত্যাগ করবে না। এমন কি যদি স্বামী স্ত্রীকে মার ধরও অত্যাচার করে তবুও স্ত্রী স্বামীর গৃহ থেকে চলে যাবে না।  বরং বিচার ও মীমাংসা করে একসাথে বসবাস করাই শ্রেয়। রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ
যখন স্ত্রী রাগবশত স্বামীর গৃহ থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও রাত যাপন করে, তখন ফেরেশতাগণ তাঁর (স্ত্রীর) ওপর লানত করতে থাকে। যতক্ষন না সে স্বামীর গৃহে প্রত্যাবর্তন করে। (আবু দাউদ)

#১১_অসন্তুষ্ট_না_রাখাঃ স্ত্রী স্বামীকে অসন্তুষ্ট রাখবে না এবং স্বামীর কথা অস্বীকার করবে না। স্বামীকে অসন্তুষ্ট রাখলে আল্লাহ্‌র ফেরেশতারা অভিশাপ দিতে থাকে। আর স্বামী সন্তুষ্ট থাকলে তাঁর জন্য জান্নাতের পথ সুগম হয়। এ মর্মে রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ
যখন কোন ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে, আর সে তা অস্বীকার করে এবং স্বামী অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত যাপন করে, তখন ফেরেশতারাগণ তাকে (স্ত্রীকে) অভিশাপ দিতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না সকাল হয়। (বুখারী, মুসলিম)

#১২_মোহরানার_ব্যাপারে_ইহসান_করাঃ বিবাহের মহরানা স্বামী তার স্ত্রীকে প্রদান করবে। স্বামী যদি গরিব হয় এবং মোহরানা পরিশোধ করতে অক্ষম হয়, তাহলে স্ত্রী স্বামীকে খুশী রাখবার জন্য ক্ষমা করে দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ তা-আলা বলেনঃ
এবং তোমরা নারীদেরকে তাদের মহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে। যদি তারা সন্তুষ্ট হয়ে মহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তাহলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে। (আন-নিসাঃ ৪)

#১৩_স্বামীর_মৃত্যুর_পর_তাঁর_প্রতি_কর্তব্যঃ সর্বোপরি স্বামীর মৃত্যুর পরও স্ত্রীর তাঁর স্বামীর প্রতি কর্তব্য রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী স্বামীর ধন-সম্পদ রক্ষা করবে। স্বামীর সুনাম রক্ষা করবে এবং তাঁর সন্তানদেরকে লালন-পালন করবে। স্বামীর আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে। স্বামীর অসম্পূর্ণ কাজ সমাধান করবে। যদি স্বামীর কোন ঋণ থাকে , তা পরিশোধ করে দিবে এবং সর্বদা স্বামীর মাগফিরাতের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দু'আ করবে।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, স্বামীর শান্তি, সন্তুষ্টি ও আরাম প্রদানের ব্যাপারে স্ত্রীর যথেষ্ট কর্তব্য রয়েছে। স্ত্রী সর্বদা স্বামীর মন রক্ষা করতে চেষ্টা করবে। স্ত্রীর নিকট স্বামীর অধিকার এত অধিক যে, বিবাহের পর হতে সে সর্বদা স্বামীর খিদমত করবে এবং স্বামীকে খুশী ও শান্তিতে রাখবে। বস্তুত, আল্লাহ্‌র ইবাদতের পরপরই স্ত্রীর নিকট স্বামীর অধিকার সর্বাপেক্ষা অধিক।
সংগ্রহীত


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: