#মেয়েদের কি হাত ঢেকে রাখতে হবে? - ইসলাম কি?
.
.
"সকল প্রশংসা আল্লাহর।
.
জ্বি, একজন মহিলার উচিত নিজের হাত ডেকে রাখা, কেননা হাত আওরাহ'রই অংশ। আল-'আল্লামা ইবনে আল-কুদামাহ আল-মুকনি'তে, এবং আল-মারদাওয়ীও আল-ইনসাফে (১/৪৫২) উল্লেখ করেছেন যে - একজন স্বাধীন নারী সম্পুর্ণ 'আওরাহ, এমনকি তার আঙুলের নখ এবং চুলও। উক্তি শেষ।
.
শাইখ আল-ইসলাম ইবনে তাইয়িমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন যে, এটা আল-সাহিহ দ্বারা প্রমাণিত যে, ইহরামে মহিলাদের নিকাব ও হাত মোজা পরার অনুমুতি নেই। এটিও এমন একটি বিষয় যা, ইহরামের বাহিরে থাকা মহিলাদের জন্য যে হাত মোজা পড়ার প্রচলন ছিল তারই ইঙিত করে। এটি ইঙিত করে যে, তারা নিজেদের মুখ ও হাত ডেকে রাখতেন। মাজমো আল-ফাতাওয়া (১৫/৩৭১-৩৭২)।
.
অতএব আপনার জানা উচিত যে, মহিলাদের আদেশ করা হয়েছে তারা গায়রে মাহরামদের সামনে নিজেদের হাত ডেকে রাখেন, কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, উনাকে এর জন্যে হাত মোজাই ব্যবহার করতে হবে। তিনি নিজের পরহিত কাপড়ের অংশও হাতের উপরে টেনে নিয়ে তা ডেকে রাখতে পারেন।
.
আর, উনার যদি কখনো হাত মোজা পড়ার প্রয়োজন দেখা দেয় আর যদি তা উনার জন্য কিছুটা কষ্টসাধ্য কিন্তু সম্ভবপর হয়, তাহলে উনার জন্য উচিত হবে হাত মোজা পরিধান করা আর এ কজের জন্য প্রতিদান প্রত্যাশা করা। কেননা প্রতিদান কষ্টের মাত্রা অনুযায়ীই দেয়া হবে, যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম-এর হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে।
.
এবং আল্লাহই ভাল জানেন।"
#মুফতি মামুনুর রশিদ
৷৷ •••• পর্দা সংক্রান্ত জরুরী মাসায়িল ••••
__________♪♪♪_________
মহিলাদের পর্দা করার সময় ও পরিমাণঃ
মেয়েরা যখন কারীবুল বুলুগ বা বালেগা হওয়ার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে; অর্থাৎ, তারা নিজেরা কামভাব অনুধাবন করতে পারে এবং তাদের দিকে তাকালে অন্য পুরুষের মনে কামভাব সৃষ্টি হয়, তখন থেকেই তাদের জন্য পর্দা করা জরুরী হয়ে পড়ে।
(আহসানুল ফাতাওয়া, ৮/ ৩৭)
.
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.বলেন, গায়র মাহরাম অনাত্মীয় হলে তাদের থেকে সাত বছর পূর্ব হতেই পর্দা করা উচিত এবং গায়র মাহরাম আত্মীয় হলে সাত বছর থেকেই পর্দা করা উচিত।
.
কারণ, অনেক ক্ষেত্রে সাবালিকা মহিলা সামনে আসা-যাওয়া করাতে এ পরিমাণ ফিতনার আশংকা থাকে না, যে পরিমাণ আশংকা থাকে কারীবুল বুলুগ মেয়েদের সামনে আসা-যাওয়া করাতে।
(ইসলাহে খাওয়াতীন-৩৭২)
.
মেয়েদের পর্দার পরিমাণ বা ক্ষেত্র দুটিঃ-
.
এক. মাহরাম পুরুষ যথা বাপ, ভাই প্রমুখ হতে পর্দা করা।
.
দুই. গায়র মাহরাম পুরুষ যথা চাচাত ভাই, খালাত ভাই ইত্যাদি হতে পর্দা করা।
.
এখন মেয়েদের পরস্পর পর্দা বা সতর যতটুকু তথা নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত, মাহরাম পুরুষদের ক্ষেত্রে ততটুকু পরিমাণসহ পেট ও পিঠ ঢেকে রাখতে হবে।
অর্থাৎ, মাহরাম পুরুষ বাপ, ভাই, ছেলে ইত্যাদি হতে পুরা শরীর ঢাকা যেমন ফরয নয় তেমনিভাবে পূর্ণ শরীর খোলারও অবকাশ নেই; বরং পেট পিঠসহ নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা জরুরী। অবশিষ্ট অংশ মাহরাম থেকে ঢাকা জরুরী নয়।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়া৬/৩৭৪, ৫/২১১২)
.
আর গায়র মাহরাম বা বেগানা পুরুষ তথা যাদের সাথে বিবাহ বৈধ তাদের সামনে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে পর্দা করা জরুরী। শরীরের কোন অংশ তাদের সামনে প্রদর্শন করা জায়েয নেই।
(কিফায়াতুল মুফতী, ৫/ ৩৮৭, ৩৮৯)
.
উল্লেখ্য, প্রথম যমানায় প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মহিলাদের মুখমণ্ডল ও দু’হাতের কব্জি, পায়ের পাতা খোলা রাখা তথা পর্দা না করারও অবকাশ ছিল। কিন্তু ফিতনার যমানা হিসাবে উলামায়ে মুতাআখখিরীনের ফাতাওয়া অনুযায়ী পর পুরুষদের সামনে মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীর ভালভাবে ঢেকে রাখা জরুরী।
(ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া-৪/১০৬, কিফায়াতুল মুফতী, ৫/ ৩৮৮)
.
মেয়েদের মুখমণ্ডলসহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে পর্দা করার ব্যাপারে ফকীহগণের উক্তি নিম্নে প্রদত্ত হলঃ
.
আল্লামা শামসুল আইম্মা সারাখসী রহ. লিখেন, নারীর মুখমণ্ডল দেখলে কু-খেয়াল ও কামভাব সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য নারীর কোন অঙ্গের দিকেই দৃষ্টিপাত করা জায়েয নয়।
(আল মাবসূত,১০/১৬০)
.
আল্লামা ইবনে আবিদ্বীন শামী রহ. লিখেন, বর্তমান ফিতনার যুগে কোন অবস্থাতেই নারীর কোন অঙ্গের দিকে দৃষ্টিপাত করা জায়েয নয়।
তবে অপরিহার্য কোন পর্যায়ে দৃষ্টিপাত করা ভিন্ন কথা।
যেমন চিকিৎসক, বিচারক বা সাক্ষী, যারা কোন ব্যাপারে নারীকে দেখে সাক্ষ্য বা ফয়সালা দিতে বাধ্য হয়।
(ফাতাওয়ায়ে শামী, ৬/ ৩৭০)
.
উক্ত কিতাবের নামায অধ্যায়ে বলা হয়েছে, নারীদের মুখমণ্ডল বেগানা পুরুষের সামনে খোলা নিষিদ্ধ।
(ফাতাওয়ায়ে শামী, ১/ ৪০৬)
.
হযরত মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. বলেন: চার মাযহাবের সকল ইমামের ঐকমত্যে মহিলাদের জন্য পর্দার কাপড়, বোরকা, বড় চাদর ইত্যাদি দ্বারা সমস্ত দেহ ও মুখমণ্ডল আবৃত করে রাখা অপরিহার্য।
(মা‘আরিফুল কুরআন, ৭/ ২২০)
.
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহিলাদের জন্য গায়র মাহরাম পুরুষদের সামনে বা রাস্তা-ঘাটে চলার সময় চেহারা খোলা রাখা নাজায়েয।
.
তেমনিভাবে উভয় হাতে মোজা পরিধান করে বের হওয়া এবং উত্তম হল পায়েও মোজা পরিধান করা, পা খোলা না রাখা।
.
(হিদায়া, ৪/৪৫৮, তালীফাতে রশীদিয়া,৪৮৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪/১২৪)
.
অবশ্য মহিলাদের নির্জনে নামায পড়ার সময় তার মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা সতর নয়। সুতরাং নামাযে তা ঢাকা জরুরী নয়।
(কিফায়াতুল মুফতী, ৫/৪৩১)
.
চলবে ইনশাআল্লাহ..........
0 coment rios: