আল্লাহ তায়ালা কি আমায় ভালোবাসেন না অপছন্দ করেন?
------
ইবনুল কায়্যিম (রহ) এর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, “কেউ যদি আল্লাহর নিকট নিজের অবস্থান দেখতে চায়, সে যেন দেখে আল্লাহ তাকে কী অবস্থানে রেখেছেন।” তিনি খুব সুন্দরভাবে বলছেন, একটিবার তাকিয়ে দেখুন আল্লাহ আপনাকে কোন অবস্থায় রেখেছেন? কিসে ব্যস্ত রেখেছেন! আপনার মধ্যে কোন কোন গুণের প্রকাশ পাচ্ছে? তাহলে বুঝতে পারবেন আল্লাহর নিকট আপনার মর্যাদা কেমন।
.
কুর’আন ও সুন্নাহতে কিছু নিদর্শন বর্ণিত আছে, যা দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ কাউকে ভালোবাসেন নাকি অপছন্দ করেন। এর কোন একটি উপস্থিত থাকলেই যে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় হবে এমন কথা নেই। হয়তো তার এমন কিছু ভালো কাজ আছে, যার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালোবাসেন। তবে সে যে মন্দ কাজটি করছে সেটা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা অপছন্দ করেন।একইভাবে এর মধ্যকার কোন গুণ উপস্থিত থাকলেই যে সে আল্লাহর প্রিয় পাত্র হবে এমনো কথা নেই। তবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সে গুণকে পছন্দ করেন।
.
যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন তাদের মধ্যে তিনি এই গুণগুলো ঢেলে দেন-
.
১) সে রাসূল (সা) কে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ করবে।
.
"বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন আর তোমাদের পাপ মাফ করে দেন। আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন ক্ষমাকারী, অতীব দয়ালু।" [ সূরা আলে ইমরান ৩:৩১]
.
২) সে মুমিনদের প্রতি নরম হবে আর
৩) কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে।
৪) জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহতে নিজেকে নিবেদিত করবে।
৫) আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই ভয় করবে না।
.
"হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।" [ আল মায়িদাহ ৫:৫৪]
.
৬) সে নফল ইবাদত বাড়িয়ে দিবে।
.
আল্লাহর জন্যই তারা
৭) একে অপরকে ভালোবাসবে,
৮) একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করবে,
৯) একে অপরকে উত্তম পরামর্শ দিবে,
১০) একে অপরকে সাহায্য করবে।
.
১১) আল্লাহ তায়ালা তাকে পরিক্ষায় ফেলবেন, আর সে ধৈর্য ধারণ করবে, যেমনটা হাদিসে এসেছে
.
"সবচেয়ে বড় পরিক্ষাই সবচেয়ে বড় পুরষ্কার এনে দেয়। আল্লাহ যখন কাউকে ভালোবাসেন, তিনি তাকে পরিক্ষা করেন। যে এ পরিক্ষা মাথা পেতে নেয়, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।"
.
.
আল্লাহ যাদের অপছন্দ করেন তাদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকট হয়ে দেখা দেয়-
.
১) পৃথিবীবাসী ও আসমানবাসীর অন্তরে আল্লাহ তায়ালা তার ব্যাপারে ঘৃণা ঢেলে দেন। সবাই তার প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করা শুরু করে। হাদিসে এসেছে-
.
"যদি আল্লাহ তায়ালা কাউকে ঘৃণা করেন, তখন তিনি জিবরাইল (আ) কে ডাকেন এবং বলেন, 'আমি অমুককে ঘৃণা করি, তাই তুমিও তাকে ঘৃণা করো।' জিবরাইল (আ) তখন তাকে ঘৃণা করেন। আর তিনি আসমানবাসীদের বলেন, 'আল্লাহ অমুককে ঘৃণা করেন, তোমরাও তাকে ঘৃণা করো।' তাই তারাও তাকে ঘৃণা করে, আর পৃথিবীতেও তাকে ঘৃণা করা হয়।"
.
২) আল্লাহ যা পছন্দ করেন সে তা অপছন্দ করে। আর আল্লাহ যা অপছন্দ করেন, সে তা পছন্দ করে।
৩) সে গুনাহ করে যেতেই থাকে। পথভ্রষ্টতায় ডুবে থাকে। একের পর এক সীমালঙ্ঘন করে।
৪) গুনাহ থেকে সে তওবা করে না, তওবা করার সুযোগও তার হয় না। এ অবস্থাতেই সে মারা যায়।
.
৫) সে মন্দ লোকদের সঙ্গ পছন্দ করে আর মুমিনদের পরিহার করে। (‘হুজুরগুলোরে দেখলেই বিরক্ত লাগে’- এমন কথা কে শুনেননি?)
৬) সে সলাতের ব্যাপারে অমনোযোগী হয়। আলসেমী করে তা ছেড়ে দেয়। সলাত তার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না।
৭) সে আল্লাহর হক্ক নষ্ট করে, তাঁর বান্দাদের হক্ক নষ্ট করে।
.
৮) পরকালের চিন্তা তার মাথা থেকে উধাও হয়ে যায়। কেবল সে দুনিয়া নিয়েই পড়ে থাকে।
৯) সে উপদেশকে ঘৃণা করে, যে উপদেশ দেয় তাকেও ঘৃণা করে। নিজে খুব বড় হয়ে গেছে কিংবা সব বুঝে ফেলেছে, এমনটা মনে করে।
১০) সে মুমিনদের প্রতি কঠোর স্বভাবের হয়। তাদের প্রতি বাজে ধারণা পোষণ করে। মুমিনদের কষ্টে তার কোন কষ্ট হয় না। অথচ কাফিরদের সামান্য কষ্টে তার বুক কেঁপে উঠে।
.
১১) আল্লাহ যেসব গুণ ঘৃণা করেন, তা অহরহই তার মধ্যে প্রকাশ পায়। যেমনঃ মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, গীবত করা, বেহুদা গল্প করা।
১২) সে নিজেকে জাহির করে। তার কথার মাঝে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ পায়।
১৩) সে নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে। একসময় সে প্রবৃত্তিকেই নিজের রব বানিয়ে ফেলে।
.
.
প্রতিদিন এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিজের সাথে মেলানো উচিত। আমি কি আল্লাহ তায়ালার পছন্দের তালিকায় আছি?
.
নাকি নিজের অজান্তেই তাঁর ঘৃণার পাত্র হয়ে গিয়েছি?
.
[IslamQA- এর দুইটি ফতোয়া অবলম্বনে ]
clctd
0 coment rios: